1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মোমবাতি মিছিল করলে সমাধান হবে না'

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

দিল্লির সাম্প্রতিক সহিংসতা ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের ইতিহাসে আরেকটা কালো অধ্যায় জুড়ে দিলো৷ কীভাবে মুছবে এই ক্ষত? কীভাবে ফিরবে পরস্পরের প্রতি আস্থা?

Indien Delhi Demonstration gegen Gewalt
ছবি: DW/P. Samanta

ভারতের রাজধানীতে গত কয়েকদিনের সহিংসতায় এখনো পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ আহতের সংখ্যা দু'শ'র বেশি৷ ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে ১৯৮৪-র শিখ নিধন, ১৯৯২-র বাবরি মসজিদ ভাঙা থেকে ২০০২ সালের গুজরাট গণহত্যা, এমন অনেক ইতিহাস লেখা হয়েছে কালো অক্ষরে৷ সেই তালিকায় জুড়ে গেল ২০২০-র ফেব্রুয়ারির দিল্লি৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে ঘিরে অনেকদিন ধরেই এর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল৷ শাহিনবাগের প্রতিবাদ এবং দিল্লির বিধানসভা ভোটে বিজেপির বিপুল পরাজয়ের পর মনে করা হয়েছিল, এবার নতুন আইন নিয়ে পিছু হটবে কেন্দ্রীয় সরকার৷ কিন্তু তার পরিবর্তে যে ঘটনাক্রম দেখা গেল, তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক৷

দিল্লিতে গুজরাট মডেল বাস্তবায়িত হয়েছে: ভদ্র

This browser does not support the audio element.

দিল্লির উত্তর-পূর্বাংশে একের পর এক এলাকায় আগুন জ্বলল নয়া আইনের সমর্থন ও বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে৷ রাস্তায় নেমে এলো দুই সম্প্রদায়ের মানুষ৷ তারপর রক্তপাত, ধর্মস্থানে হামলা, বাড়িঘর লুটপাট৷ আরো একবার সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে যে ক্ষত তৈরি হলো, তা কি সহজে দূর হবে? সকলেই আশাবাদী, ভালোবাসা দিয়ে ক্ষতে প্রলেপ দেওয়া সম্ভব৷ লেখক-সাংবাদিক চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘মানুষ অনেক অপ্রিয় জিনিস, এমনকি প্রিয়জন বিয়োগের যন্ত্রণাও বিস্মৃত হয়৷ এক্ষেত্রেও সেটা হতে পারে৷ তবে সেজন্য রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে, একই সঙ্গে আক্রান্ত মানুষের আশপাশে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদেরও যত্ন নিতে হবে৷''

মানবাধিকারকর্মী সুজাত ভদ্র-ও তাই মনে করেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশভাগের ইতিহাস বীভৎস৷ তা থেকে আমরা বেরিয়ে এসে একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তৈরি করেছি৷ আমরা পাকিস্তান বা বাংলাদেশ হয়ে যাইনি৷ এই ধরনের ঘটনা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে৷ সবচেয়ে বড় সম্বল হতে পারে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসা৷''

ভারতের রাজনীতি বেশ কিছুদিন ধরে উত্তপ্ত৷ নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিকপঞ্জি নিয়ে সুস্থ বিতর্ক হতেই পারে৷ কিন্তু তার পরিণতিতে এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষের রক্ত ঝরল কেন? সুজাত ভদ্রর মতে, ‘‘দিল্লিতে গুজরাট মডেল বাস্তবায়িত হয়েছে৷ রাষ্ট্র অনুমোদিত হিংসা চালানো হয়েছে একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে৷ পুলিশ-প্রশাসন সম্পূর্ণ হাত গুটিয়ে নিয়েছিল৷ তাই গণহত্যা হয়েছে৷'' চন্দ্রিলের মতে, ‘‘রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থে সাধারণ মানুষের মধ্যে সুপ্ত হিংসাকে জাগিয়ে তোলেন, তাদের লড়িয়ে দেন৷ এর সমাধান কী আমি জানি না৷ ফেসবুকে লিখে বা মোমবাতি মিছিল করে এর সমাধান হবে না৷ প্রশাসনকে অত্যন্ত দৃঢ় হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে৷ গোটা পৃথিবীতেই একই ধরনের রাজনীতি হচ্ছে৷ একটা সম্প্রদায়কে দেগে দিয়ে বলা হচ্ছে, এরা চলে গেলে স্বর্গরাজ্য নেমে আসবে, এটা দুঃখের বিষয়৷''

হিন্দুরাষ্ট্র তৈরির চেষ্টা সহজ হবে না: চন্দ্রিল

This browser does not support the audio element.

প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় উদ্বেগের সঙ্গে বলেন, ‘‘একটা আইনকে কেন্দ্র করে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে চলে যাচ্ছে৷ দুই পক্ষকে সংযত হতে হবে, কঠোর হাতে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে প্রশাসনকে৷ নইলে দিল্লির পুনরাবৃত্তি রোখা যাবে না৷''

ভারত কি ধাপে ধাপে একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে? চন্দ্রিল মনে করেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের পরিকল্পনা যা-ই থাক, মানুষ যদি এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করে, তাহলে সেটা সহজ হবে না৷ নির্দিষ্ট একটি ধর্মের নামে রাষ্ট্র ঘোষণা করাটা যে কঠিন, তা সাম্প্রতিক অতীতে দেশজোড়া প্রতিবাদ থেকেই বোঝা যাচ্ছে৷'' একই মত সুজাত ভদ্রের৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে হত্যা করে হিন্দুরাষ্ট্র তৈরির চেষ্টা চলছে. কিন্তু সেটা অত সহজ হবে না৷ সব সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিবাদ করছে৷ সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষের সমর্থন না থাকলে এটা হতো না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ