নভেম্বর থেকে ফেসবুকসহ বেশ কিছু সোশ্যাল আপ এবং মিডিয়া বন্ধ আছে বাংলাদেশে৷ নিরাপত্তার কারণেই এগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার৷ কিন্তু এই নিরাপত্তা ঝুঁকি কবে কমবে এবং কবে ফেসবুক খুলে দেয়া হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়৷
পরবর্তীতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন এবং মঙ্গলবার এর জবাব পাওয়া গেছে৷ তারানা হালিম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমার পাঠানো চিঠির জবাবে আমার সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ দেখিয়েছে৷ চলতি মাসের ৬ বা ৭ তারিখে ঢাকায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছেন৷''
তথ্য গোপন রাখার সাতটি সহজ উপায়
আধুনিক প্রযুক্তির কারণে মানুষের সুযোগ-সুবিধা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে তথ্য চুরির ঘটনা৷ ফোর্বস জানাচ্ছে কোন সাতটি উপায়ে আপনি খুব সহজেই ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/davidevison
পাসওয়ার্ড নিজের কাছে রাখুন
কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের পাসওয়ার্ড যেন কখনই এক না হয়৷ আর ব্যাংক কার্ড-এর সঙ্গে যেন এই পাসওয়ার্ডের মিল না থাকে৷ এছাড়া কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে কোনো পাসওয়ার্ড লিখে রাখবেন না৷ এর ফলে আপনার তথ্য চুরির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়৷ বাড়ির বাইরে গেলে এগুলি ‘লক’ করে যাবেন৷
ছবি: Sergey Nivens - Fotolia.com
নামে ‘গুগল অ্যালার্ট’ ব্যবহার করুন
এটা খুব সহজ পন্থা, আপনি যদি দেখতে চান ইন্টারনেটে আপনার সম্পর্কে সবাই কী বলছে৷ সোজা এই ঠিকানায় যান – http://www.google.com/alerts এবং আপনার নাম লিখুন৷ তারপর আপনার নামের বিভিন্ন ধরন লিখে, তার আগে ও পরে ‘কোটেশন মার্ক’ জুড়ে দিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ব্যবহারের পর লক্ষ্য রাখা
আপনি যদি অন্য কারো কম্পিউটার বা ট্যাবলেট ব্যবহার করেন, তবে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন৷ আপনার পর যিনি সেটা ব্যবহার করবেন, তিনি যাতে আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে না পারে – সেটা খেয়াল রাখুন৷ আপনি যদি এটা করতে ভুলে যান, তাহলে ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে৷
ছবি: AFP/Getty Images
ফোন, ই-মেল বা জিপ কোড ব্যবহার করতে না দেয়া
অচেনা কোনো মানুষ এই নম্বরগুলো জানতে চাইলে, আপনারা দেবেন না৷ দেখা যায় কোনো অফিস তাঁর কর্মীর কাছ থেকে এ সব তথ্য চাইলে, অনেকেই সেচ্ছ্বায় তা দিয়ে দেয়৷ বহু অফিস এ নিয়ে একটি প্রোফাইল তৈরি করে৷ আপনার কিন্তু এ সব তথ্য না দেয়ার অধিকার আছে৷ তাই আপনি যদি এতে স্বাচ্ছ্বন্দ্যবোধ না করেন, তবে দেবেন না৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কার্ড নয় ক্যাশ
আপনি যদি চান আপনি যে পণ্যটি কিনছেন, সেই কোম্পানি আপনারা পরিচয় না জানুক, তবে নগদ অর্থে জিনিস কিনুন৷
ছবি: AP
ফেসবুকে নিরাপত্তার জন্য ‘ফ্রেন্ডস’ ব্যবহার করুন
ফেসবুকে সবসময় ‘সিকিউরিটি’ বা নিরাপত্তা পরীক্ষা করুন৷ পোস্ট করার পর লক্ষ্য রাখুন আপনি আপনার ছবি বা মন্তব্য ‘ফ্রেন্ডস’ করে রেখেছেন, নাকি ‘পাবলিক’ করেছেন৷ আপনি যদি ‘স্পেশ্যাল’ নির্বাচন করেন এবং ঠিক করে দেন কে কে আপনার পোস্ট দেখতে পাবে, তবে সেটা আপনার তথ্য নিরাপত্তার জন্য তুলনামূলকভাবে ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Bozoglu
‘হিস্ট্রি’ এবং ‘কুকিস’ মুছে ফেলুন
আপনি সবশেষ কবে এটা করেছেন? আপনি যদি নিশ্চিত না হন, ব্রাউজারে গিয়ে এটা পরিবর্তন করুন৷ ব্রাউজারের ‘প্রাইভেসি সেটিংস’-এ যান, সেখানে ‘নেভার রিমেমবার হিস্ট্রি’ নির্বাচন করুন৷ এর ফলে ইন্টারনেটে আপনাকে ‘ট্র্যাক’ করাটা হ্যাকারদের জন্য কঠিন হবে৷ এছাড়া আপনি ‘অ্যাড অন’-ও ব্যবহার করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/davidevison
7 ছবি1 | 7
প্রতিমন্ত্রী জানান, ‘‘ফেসবুক ইন্ডিয়ার পরিচালক আঁখি দাশ ই-মেলে জানিয়েছেন যে, ফেসবুকের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের কোনো একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশে আসবেন৷''
তারানা হালিম আরো বলেন, ‘‘ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছেন যে, তাঁরা আমাদের সব রকম কথা শুনবেন, সংস্কৃতিগত আচরণ এবং অভ্যাসগুলোর সঙ্গেও পরিচিত হবেন৷ আশা করছি ফেসবুক নিয়ে অগ্রগতি হবে৷''
তাঁর কথায়, ‘‘নারীর জন্য অবমাননাকর যা কিছু ফেসবুকে আছে, তা অপসারণ এবং সাইবার অপরাধ দমনেও আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো৷''
তবে প্রতিমন্ত্রী এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি যে, কবে ফেসবুক খুলে দেয়া হবে৷
সেটা কীভাবে সম্ভব? – এ কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ বিকল্প পথে নানা ‘ব্রাউজার' এবং অ্যাপ-এর মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার করছে৷ এটা স্বাভাবিকভাবেই সাইবার নিরাপত্তার জন্য হুমকি৷ যাঁরা এটা করছেন তাঁরা অনিরাপদ এবং সাইবার হুমকির মধ্যে আছেন৷ সরকারের সিদ্ধান্তে তাঁরা এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছেন৷''
ডার্কনেটের ব্যবহার বাড়ছে
বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন হওয়ার পরও তথ্য পাওয়া মুশকিল৷ নিরাপত্তা সংস্থাগুলি যে প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করছে, তাতে সব সময় তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় পাওয়া নাও যেতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Amir Kaljikovic
ইন্টারনেটে তথ্য
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রতিদিনই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কিছু না কিছু তথ্য যোগ করেন৷ স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনগুলোও ব্যবহারকারীদের ধারণার চেয়ে বেশি তথ্য নিয়ে থাকে৷
ছবি: imago/Schöning
মেটাডাটা
গুপ্তচর বিভাগ বেশি আগ্রহী ‘মেটাডাটা’ সম্পর্কে৷ নেট ব্যবহারকারী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য ওয়েবভিত্তিক বিষয়বস্তুর সঙ্গে পাওয়া যায়, যাকে বলা হয় মেটাডাটা৷
ছবি: Reuters
মেটাডাটার তথ্য
কে কাকে ই-মেল করছেন, সেই ব্যক্তির পরিচয়, সময় সম্পর্কে তথ্য থাকে মেটাডাটায় যা গুপ্তচর বিভাগ পেতে চায়৷ প্রেরক, ঠিকানা, তারিখ থেকে শুরু করে যে সার্ভার ব্যবহার করে ই-মেলটি করা হয়েছে, সেই তথ্যও এভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব৷
ছবি: Raigo Pajula/AFP/Getty Images
ডার্কনেটের ব্যবহার
ডার্কনেটের মাধ্যমে পরিচয় গোপন রেখে যোগাযোগ করা সম্ভব৷ প্রযুক্তিগত কারণে এখনো সরকার বা নিরাপত্তা কর্মীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডার্কনেট ব্যবহারকারীদের সনাক্ত করতে পারেন না৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
ফ্রিনেট
সবচেয়ে আলোচিত ডার্কনেটের নাম ফ্রিনেট৷ তাদের ওয়েবসাইটে গেলে বিনামূল্যে একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করা যায়৷
ছবি: Reuters
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য
ফেসবুক এবং টুইটারে একজন ব্যবহারকারী শুধু নিজের সম্পর্কে সাধারণ তথ্যই জানান না, তাঁরা তাঁদের পছন্দ, অপছন্দ, এমনকি বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও জানান৷ ব্লগে সমাজ সচেতনতা, মানবাধিকার, সরকার বিরোধী লেখাও লেখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাংলাদেশে ডার্কনেট
বাংলাদেশে ডার্কনেটের ব্যবহার আগে না হয়ে থাকলেও খুব শিগগিরই যে সেটা শুরু হয়ে যাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷
ছবি: Fotolia/Amir Kaljikovic
7 ছবি1 | 7
তিনি বলেন, ‘‘ফেসবুক বা অনলাইন বন্ধ করে নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা যাঁরা চিন্তা করেন, তাঁরা ভুল চিন্তার মধ্যে রয়েছেন৷ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয় আইন ও দক্ষতার মাধ্যমে৷ বরং এটা বন্ধ করে উল্টো ক্ষতি করা হচ্ছে৷ ইকমার্স বসে পড়ছে৷ এর প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতেও৷ এতে সাইবার জগতে দীর্ঘকালীন ক্ষতির মুখে পড়বো আমরা৷''
বাংলাদেশের এই তথ্য-প্রযুক্তিবিদ আরো বলেন, ‘‘এ সব করে বিদেশে আমাদের ভামমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে৷ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন ফেসবুক বন্ধ করে মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন৷ এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ৷ এবার যেন তিনি ফেসবুক খুলে দিয়ে ইকমার্স, আউটসোর্সিংসহ অর্থনীতির প্রাণ বাঁচান৷''
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ কোটিরও বেশি৷ এছাড়া ফেসবুক ব্যবহারকারী বাংলাদেশে রয়েছেন এক কোটির বেশি৷ সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এখন তা উভয়ক্ষেত্রেই অর্ধেকে নেমে এসেছে৷
আপনি কি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলি আবারো খুলে দেয়ার পক্ষে? লিখুন নীচের ঘরে৷