ফেসবুক থেকে তথ্য চুরি নিয়ে উত্তাল ভারত
২৪ মার্চ ২০১৮ফেসবুকের তথ্য পাচার, ঘুষ দেওয়া, রাজনীতিকদের ফাঁদে ফেলতে যৌনকর্মীদের কাজে লাগানোসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে যে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার বিরুদ্ধে, তাদেরই ২০১৯-এর ভোটপ্রচারের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে সাপে-নেউলে ঝগড়া শুরু হয়েছে ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে৷ ফেসবুকে নাগরিকদের দেওয়া ঠিকুজি-কোষ্ঠী নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানি রাহুল-মোদীদের বিক্রি করে দিচ্ছে!
ফেসবুক তথ্য চুরির ব্যাপারে সাকারবার্গকে সমন পাঠাতে পারে ভারত৷ এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ৷ ঘটনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে খোদ ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক সাকারবার্গ পর্যন্ত কার্যত হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়েছেন৷ বলেছেন, ‘‘ভুল হয়েছে৷ এমনটা আর হবে না৷''
ফেসবুকের দিকে নজর মার্কিন গোয়েন্দাদের৷ তদন্তে উঠে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য৷ কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ইলেকট্রনিক রেকডর্স সংস্থাটি লন্ডনের৷ এই সংস্থাটি ভারত সরকারের অনুমোদিত একটি সংস্থা, যার খদ্দেরের তালিকায় রয়েছে বিজেপি, কংগ্রেস এবং নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড৷ বিজেপির সহযোগী দল জেডিইউ নেতা কেসি ত্যাগীর ছেলে অমরিশ ত্যাগী এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত৷
লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে আরজেটি নেতা তথা বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব বলেন, ‘‘মহাজোটের আগে কে সি ত্যাগীর সঙ্গে একই গাড়িতে চম্পারন জেলায় একটি জনসভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলাম৷ তখনই পথে তিনি বলেছিলেন, তাঁর ছেলে অ্যামেরিকায় ট্রাম্পের হয়ে ‘ক্যাম্পেন ম্যানেজমেন্ট' করছেন৷ তিনি একটি তথ্য সংগ্রাহক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত৷ তারপর এখন ভারতে যখন এই নিয়ে শোরগোল হচ্ছে, তখন কে সি ত্যাগীর ছেলের সামনে আসা উচিত৷ পরে নীতীশ কুমারও নিজের প্রচারে যা যা করেছেন সবটাই কে সি ত্যাগীর সাহায্য নিয়ে৷''
মার্ক সাকারবার্গের দুনিয়াব্যাপী জনপ্রিয় সোশ্যাল সাইটের বিরুদ্ধে মিডিয়া রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর দাবি করা হয়েছে যে, তারা কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামে একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষক কনসালটেন্সি কোম্পানিকে অসংখ্য(কয়েক কোটি) ব্যবহারকারী সম্পর্কে তথ্য পাচার করেছে৷ সাম্প্রতিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে ভোটার সমীক্ষায় ফেসবুকের দেওয়া ওইসব তথ্য কাজে লাগায় কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা৷ একই অবস্থা ভারতেও৷
কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ অভিযোগ তুলেছেন, ফেসবুকের প্ল্যাটফর্ম অবাঞ্ছিত পদ্ধতিতে ব্যবহার করে ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷ কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সঙ্গে কংগ্রেসের যোগ আছে বলে তাঁর অভিযোগ৷ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কংগ্রেসের কাছে জানতে চাই, কংগ্রেস কি ভোটে জিততে তথ্য বিকৃতি, ও চুরির আশ্রয় নেবে? রাহুল গান্ধীর সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কী ভূমিকা?''
কম যান না কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী৷ তিনি সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করে দলটিকে ‘মিথ্যা তৈরির কারখানা' আখ্যা দিয়েছেন৷ টুইটে লিখেছেন, ‘‘বিজেপি-র ভুয়া খবর ছড়াতেই প্রকৃত খবর উধাও!' লিখেছেন, ‘এক সাংবাদিক ‘ব্রেকিং নিউজ' করেছেন, কীভাবে ২০১২ সালে কংগ্রেস সরকারকে পরাজিত করতে ‘কেমব্রিজ অ্যানালাইটিকা'কে টাকা দেওয়া হয়েছিল৷ আর এখন বিজেপি নিজের মন্ত্রীদের মিথ্যা বলতে ময়দানে নামিয়েছে৷ প্রচার করা হচ্ছে, ‘কেমব্রিজ অ্যানালাইটিকা'-র সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক ছিল৷'
জানা গেছে, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০১১২ নাগাদ ‘কেমব্রিজ অ্যানালাইটিকা'-র মূল কোম্পানি এসসিএল (স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন ল্যাবরেটরিজ' ভারতে নিজেদের ভিত তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷
২০১১ সালে ‘কেমব্রিজ অ্যানালাইটিকা'-এর তৎকালীন সিইও তথা ব্রিটেনের বাসিন্দা আলেকজান্ডার নিক্স আলেকজান্ডার ওকেজকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিলেন৷
ভারতীয় ‘ওবলেনো' কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারি ছিল তাঁদের৷ কেমব্রিজ অ্যানালাইটিকা-র বিরুদ্ধে ৫ কোটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছিল৷ কেমব্রিজ অ্যানালাইটিকা-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা অবনীশ রাই একটি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘‘ব্রিটেনের বাসিন্দা আলেকজান্ডার নিক্স ২০১৪ সালে কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ছক কষেছিলেন৷''
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সূরযেওয়ালা বলেছেন, ‘‘কেমব্রিজ অ্যানালিটিক যদি তথ্য-চোর কোম্পানি হয়, তাহলে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী টুইটারে তাকে ফলো করছেন কেন? বর্তমান সরকার ‘তথ্য চোর সরকার'৷ আইন মন্ত্রীর নাম মিথ্যামন্ত্রী হওয়া উচিত৷ ২০১০-এর বিহার নির্বাচনে এই দুটি কোম্পানিকে ভারতীয় জনতা পার্টি এবং জেডি(ইউ) কাজে লাগিয়েছিল৷ একথা অস্বীকার করতে পারবে না সরকার৷ এখন প্রশ্ন, রবিশঙ্কর প্রসাদ কি কেমব্রিজ অ্যানালিটিক ও তাদের ভারতীয় সহযোগী ওবিআইয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করবেন?''
কংগ্রেসের দাবি, কেমব্রিজের এ দেশের শরিক ওবিআই সাধারণ নির্বাচন ও হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খন্ড ও দিল্লি বিধানসভা ভোটে বিজেপির হয়ে কাজ করেছে৷ যার ফলে ২০১৪-তে ‘২৭২ প্লাস টার্গেট' হাসিল করতে সক্ষম হয়েছিল বিজেপি৷ তবে, অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ নিয়ে রাজনৈতির পারদ যতই চড়ুক, সাধারণ মানু্যের কাছে একটি বিষয় এখন অত্যন্ত পরিষ্কার, তা হল, ফেসবুক এবং সোশ্যাল সাইটগুলি মোটেই নিরাপদ নয়৷