গত রোববার ফেসবুকের বিরুদ্ধে টেলিভিশনে মুখ খুলেছিলেন তিনি। এবার মার্কিন সেনেটে নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করলেন ফেসবুকের সাবেক ডেটা বিজ্ঞানী।
ছবি: Robert Fortunato/CBS News/60 Minutes via AP/dpa/picture alliance
বিজ্ঞাপন
ফেসবুক ক্ষতি করছে সমাজের। মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরিতে ইন্ধন দিচ্ছে। ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে ব্যাপক অংশের মানুষে কাছে। এমন পরিস্থিতি যে তৈরি হবে, অনেক আগেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তা জানতেন। কিন্তু পপুলার হওয়ার ঝোঁকে তারা এই বিষয়গুলিকে আমল দেয়নি। গত রোববার ফেসবুকের বিরুদ্ধে এমনই বোমা ফাটিয়েছিলেন ফ্রান্সেস হাউগেন। ফ্রান্সেস একসময় ফেসবুক সংস্থায় ডেটা বিজ্ঞানীর কাজ করতেন। তার দাবি, সে সময়ের বহু গোপন নথি তিনি দেখেছেন। ফেসবুকের প্রভাব সমাজের উপর কীভাবে পড়তে পারে, তার স্পষ্ট সতর্কবার্তা ছিল ওইসব নথিতে। কিন্তু ফেসবুক কখনোই তা আমল দেয়নি।
রোববার এক টেলিভিশন চ্যানেলের প্রাইমটাইম শোয়ে এই অভিযোগগুলি সামনে আনেন ফ্রান্সেস। এরপর মঙ্গলবার মার্কিন সেনেট তাকে ডেকে পাঠায়। সেনেটের সামনে অন রেকর্ড ফের তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। কংগ্রেস এবং সেনেটের সদস্যরা তা শোনেন।
ফেসবুক যখন সহিংসতার উৎস
বাংলাদেশে মাঝেমাঝেই ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সহিংসতা এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে৷ কখনো কখনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতেও পরিকল্পিতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই মাধ্যম৷ ছবিঘরে থাকছে সেরকম কয়েকটি ঘটনার কথা৷
ছবি: bdnews24.com
ফেসবুক বার্তার জেরে তাণ্ডব
ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম এবং মহানবীকে নিয়ে কথিত কটূক্তির জের ধরে বাংলাদেশে একাধিকবার সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় এক হিন্দু যুবকের ফেসবুক ম্যাসেজের জের ধরে ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর সৃষ্ট তাণ্ডবে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত চারজন৷ সেই যুবক আগেই থানায় তার ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক হওয়ার কথা জানিয়ে থানায় জিডি করেছিলেন৷ পুলিশও জানিয়েছে, সেই যুবকের একাউন্টটি হ্যাকড হয়েছিল৷
ছবি: bdnews24
ফেসবুকে সমালোচনা, পিটিয়ে হত্যা
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ৷ আর তাতেই ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার কয়েক সদস্য ২০১৯ সালের সাত অক্টোবর তাকে পিটিয়ে হত্যা করে৷ আবরার হত্যাকাণ্ডের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বুয়েট৷ ইতোমধ্যে অবশ্য আসামীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সেখানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
পদ্মা ‘সেতুর জন্য মাথার’ গুজব
২০১৯ সালের জুন-জুলাই মাসের দিকে ‘পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে’ বলে এক গুজব ফেসবুকের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ সেসময় ছেলেধরা সন্দেহে কয়েকজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: bdnews24.com
খালেদাকে নিয়ে গুজব, নিষিদ্ধ ফেসবুক একাউন্ট
বাংলাদেশের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে একাধিক ভুয়া খবর ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল৷ নিজস্ব তদন্তের ভিত্তিতে ফেসবুক সেসব খবরের প্রচার রোধে একাধিক একাউন্ট এবং পাতা নিষিদ্ধ করে৷ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন এসব গুজব ছড়াচ্ছিল বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি৷
ছবি: Bdnews24.com
শিক্ষার্থী ধর্ষণের গুজবে সংঘর্ষ
২০১৮ সালের আগস্ট মাসে নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে ঢাকার জিগাতলায় ছাত্রলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ সেসময় সেখানে শিক্ষার্থী নিহত এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ পরবর্তীতে অবশ্য প্রাণহানি বা গুজবের কোন সত্যতা মেলেনি৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
রংপুরে দাঙ্গা
ইসলামের মহানবীকে নিয়ে ফেসবুকে এক হিন্দু যুবকের পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দু পাড়ায় হামলার ঘটনা ঘটে৷ ২০১৭ সালের দশ নভেম্বরের সেই ঘটনায় এক ব্যক্তির মৃত্যুও হয়৷
ছবি: bdnews24.com
ফেসবুকে ছবি, তাণ্ডব
এক হিন্দু যুবক ফেসবুকে উস্কানিমূলক ছবি পোস্ট করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ত্রিশ অক্টোবর ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে তাণ্ডব চালায় একদল বিক্ষুব্ধ মুসলমান৷ সেসময় সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে৷
ছবি: Khukon Singha
ফেসবুকে গুজব, বৌদ্ধ পল্লিতে হামলা
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুতে ১৯টি বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুর করে উত্তেজিত মুসলমানরা৷ উত্তম কুমার নামের এক তরুণ ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননাকর পোস্ট দিয়েছেন এমন গুজবের ভিত্তিতে সেই হামলা চালানো হয়েছিল৷ তবে, পরবর্তীতে সেই তরুণের খোঁজ আর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
ফেসবুকের সাবেক ডেটা বিজ্ঞানীর বক্তব্য, অ্যালগোরিথমস কীভাবে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারে, এ বিষয়ে বহু আগেই সতর্ক করা হয়েছিল ফেসবুককে। ফেসবুককে ব্যবহার করে কীভাবে কিছু ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী বিভেদ এবং বিদ্বেষের বিষ ছড়াতে পারে, সে বিষয়েও রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু তারা তা আমল দেননি। সাকারবার্গ থেকে শুরু করে ফেসবুকের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা কেবল একটিই বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রেখেছিলেন। কীভাবে পপুলারিটি বাড়ানো যায়। এবং তা করতে গিয়ে সমাজের কথা তারা ভুলে গেছিলেন।
ফ্রান্সেসের অভিযোগ, ফেসবুক ছোটদের ব্যাপক ক্ষতি করছে। ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম ছোটদের নেশায় পরিণত হচ্ছে। যেভাবে ছোটবেলায় না বুঝে ছোটরা সিগারেটের নেশায় ডুবে যায়। পরে ছাড়তে চাইলেও ছাড়তে পারে না, তেমনই ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে নেশা হয়ে যাচ্ছে যুবসমাজের। আর এটাই চান ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী জেনারেশনের মধ্যেও তারা এভাবেই ফেসবুকের নেশা ঢুকিয়ে দিতে চাইছে।
ফ্রান্সেসের বক্তব্য, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার বয়স অন্তত ১৩ থেকে বাড়িয়ে ১৬ বা ১৮ করা উচিত।
সেনেটের প্রতিক্রিয়া
সাধারণত, মার্কিন সেনেটে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানরা কোনো বিষয়েই একমত হন না। কিন্তু এদিনে ফ্রান্সেসের কথা শোনার পর তারা কার্যত একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। দুই তরফেরই বক্তব্য, ফ্রান্সেসের কথাগুলি যুক্তিপূর্ণ। এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত এবং সমাজমাধ্যমগুলি কী পদক্ষেপ নিতে পারে, তা দেখা দরকার।
ফেসবুকের বক্তব্য
সেনেটে এই সভা হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরে একটি ব্লগ লেখেন ফেসবুকের প্রধানমার্ক সাকারবার্গ। ফ্রান্সেসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, কিছু যুক্তিহীন কথা বলেছেন ওই নারী। ফেসবুককে কলঙ্কিত করতেই এ কাজ তিনি করেছেন। তার প্রতিটি বক্তব্যকে খণ্ডন করা সম্ভব।