ফেসবুকের কোম্পানি এখন থেকে মেটা হিসেবে পরিচিত হবে৷ বৃহস্পতিবারের এ ঘোষণাকে টুইটারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সাধারণ মানুষ বেশ হাসিঠাট্টার মধ্য দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন৷ এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি নিজেও এই ঠাট্টায় যোগ দিয়েছে৷
কিন্তু তাতে টুইটারে নানা ধরনের হাসি-ঠাট্টা থেমে থাকেনি৷
ফেসবুকের নাম ‘মেটা’ ঘোষণার পরপরই মার্কিন হ্যামবার্গার চেইন ওয়েন্ডিস টুইট করে ‘আমাদের নাম এখন থেকে মিট (মাংস)৷ নিজেদের ঘোষণাকে সত্য প্রমাণ করে টুইটার প্রোফাইলে নিজেদের নাম সত্যি সত্যিই Meat করে দিয়েছে ওয়েন্ডিস৷
টুইটটির নীচে অনেকেই ফেসবুকের নুতন নাম নিয়ে নানা মজার মজার মন্তব্য করেছেন৷ এই হাসিঠাট্টায় যোগ দিয়েছে কেবলই নাম পালটে ‘মেটা' হওয়া ফেসবুকের টুইটার হ্যান্ডেলও৷ ওয়েন্ডিসের টুইটের নীচে ‘মেটা’ লিখেছে, ‘নাইস টু মিট ইউ'৷ তবে সেখানে meet বানানটিকে লেখা হয়েছে meat হিসাবে৷
ফেসবুকের টুইটার হ্যান্ডেলের নাম পরিবর্তন করে এরই মধ্যে Meta করা হয়েছে৷
কোম্পানির নাম বদলে মেটা করলেও কোম্পানির অধীনে থাকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির নাম ফেসবুকই থাকছে৷ অনেক ব্যবহারকারী একটু উদ্বিগ্ন ছিলেন যে হয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নামও ‘মেটা’তে পরিবর্তন করা হবে৷ ফ্রান্সিস পোলস্কি নামের এক ব্যবহারকারী বলেছেন, ‘‘আপনি কীভাবে কাউকে বলবেন যে আপনি মেটাতে আছেন? একটি ড্রাগের মতো শোনায়৷’’
সামাজিক নেটওয়ার্কের নতুন নাম নিয়ে অনেকে হতাশাও প্রকাশ করেছেন৷
ম্যাক্স গফ নামে একটি হ্যান্ডেল থেকে করা টুইটে বলা হয়েছে, ‘‘কেন ফেসবুক ‘মেটা’ বেছে নিল? কারণ ‘মেহ' এরই মধ্যে নিয়ে নেয়া হয়েছে৷’’ স্যান্ডেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘মেহ' এর ভ্যারিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে এর জবাবে টুইট করা হয়েছে, ‘‘তুমি মিথ্যা বলোনি৷’’
তবে এই হাসি-ঠাট্টার মধ্যেও সমালোচকরা তাদের অবস্থান ধরে রেখেছেন৷
দ্য রিয়েল ফেসবুক ওভারসাইট বোর্ড নামে অ্যাক্টিভিস্টদের একটি টুইটার হ্যান্ডেল থেকে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা এখনও দ্য রিয়েল ফেসবুক ওভারসাইট বোর্ড নামেই আছি৷ অর্থহীন নাম পরিবর্তনে কিছু আসে যায় না৷’’
এডিকে/জেডএইচ (এএফপি)
পরবর্তী প্রজন্মের ইন্টারনেট ‘মেটাভার্স’
ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ মেটাভার্সকে বলছেন, পরবর্তী প্রজন্মের ইন্টারনেট৷ মাইক্রোসফট টিমসের মতো প্ল্যাটফর্ম আর ফোর্টনাইট, মাইনক্রাফট, রোব্লকসের মতো ভিডিও গেমে এখনই সেই ইন্টারনেটে স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে৷
ছবি: Andre M. Chang/ZUMAPRESS/picture alliance
মেটাভার্স কী?
আপনার একটি সাধারণ দিনের কথা ভাবুন৷ সারাদিন অফিসে একের পর এক মিটিং করলেন৷ এক ফাঁকে এক সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলে তার সঙ্গে সন্ধ্যায় কনসার্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন৷ এরপর কনসার্ট শেষ করে বাসায় ফেরার পথে দোকান থেকে টি-শার্ট কিনলেন৷ কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে, এর সবকিছুই আপনি করলেন ঘরে বসে! হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন, ঘরে বসে৷ এটাই মেটাভার্স৷
ছবি: Andre M. Chang/ZUMAPRESS/picture alliance
কীভাবে কাজ করে?
ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ মেটাভার্সকে বলছেন, পরবর্তী প্রজন্মের ইন্টারনেট৷ গত আগস্ট মাসে ফেসবুক ‘হরাইজন ওয়ার্করুমস’ চালু করেছে৷ এর মাধ্যমে ‘ওকুলাস কোয়েস্ট টু’ হেডসেট ব্যবহার করে একটি অফিসের কর্মীরা ঘরে বসে ভার্চুয়ালি মিটিং করতে পারেন৷ উপরের ছবিটা দেখলে কিছুটা ধারনা পাওয়া যাবে৷ আপনি যদি এতে অংশ নিতে চান তাহলে আপনার ‘ভার্চুয়াল অবতার’ তৈরি করতে হবে৷ ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহার করে এটা সম্ভব হবে৷
ছবি: Facebook/dpa/picture alliance
এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে
মেটাভার্সের বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে৷ তবে ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্স গত জুলাই মাসে জানিয়েছে, ২০২৪ সাল নাগাদ মেটাভার্সের বাজারমূল্য ৮০০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে৷ মেটাভার্সের সম্ভাবনা অনুমান করে ফেসবুক, মাইক্রোসফট, এপিক গেমসের মতো কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে এই খাতে বিনিয়োগ শুরু করে দিয়েছে৷ তবে এটি পুরোপুরি সফল হতে বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে সমন্বয় হতে হবে, যা একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে৷
ছবি: imago/Westend61
গেমাররা এখনই মেটাভার্সের মধ্যে আছেন
সেকেন্ড লাইফ (ছবি), ফোর্টনাইট, মাইনক্রাফট ও রোব্লকস ভিডিও গেমগুলো বিশ্বব্যাপী অনেক জনপ্রিয়৷ সেখানে গেমাররা একসঙ্গে কাজ করেন, একজন আরেকজনকে সহায়তা করেন, বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেন এবং বাস্তব জগতের টাকা দিয়ে ভার্চুয়াল পণ্য ও সেবা কেনেন৷ এসবকিছুই মেটাভার্সের অংশ৷ এছাড়া মাইক্রোসফট টিমস ও স্লেকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোও মানুষকে মেটাভার্সের ধারনার সঙ্গে পরিচিত করে তুলছে৷
ছবি: imago/Friedrich Stark
এনএফটি প্রযুক্তি
মেটাভার্সের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে ‘নন-ফানজিবল টোকেন’ বা এনএফটি৷ এ বছরের শুরুত কয়েকটি ছবি দিয়ে তৈরি একটি কোলাজের জেপিজি ফাইল ৫৮৯ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে৷ ইতিমধ্যে ডিজিটাল রিয়েল এস্টেট ও প্রোপার্টির এনএফটির বেচাকেনা শুরু হয়েছে৷ আর্ট ডিলার ‘সদবিস’ সম্প্রতি একটি ডিজিটাল রিয়েল এস্টেট কিনে সেখানে ভার্চুয়াল আর্ট শো করেছে৷
ছবি: DW
ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার
এনএফটি কেনা ও এর মালিকানার হিসাব এথারিয়াম ব্লকচেইনে রাখা হচ্ছে৷ এটা বিটকয়েনের পর সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্স ইথারের নেটওয়ার্ক৷ ফলে ভবিষ্যতে মেটাভার্সের মূল অবকাঠামো হয়ে উঠতে পারে এনএফটি ও এথারিয়াম৷