ফেসবুক ‘লাইক' বলুন, আর টুইটার ‘ফলোয়ার' – দু'টোর প্রতিই মানুষের আগ্রহে কমতি নেই৷ কে কত বড় সেলিব্রেটি, বা কোন পণ্য কত বেশি জনপ্রিয়, সেসবের বিচারেও আজকাল বিবেচনায় আসে লাইকের সংখ্যা৷ এই লাইক কিন্তু বেশ সস্তায় বিক্রি হয়৷
বিজ্ঞাপন
ফেসবুকের বয়স প্রায় ১০ বছর হতে চললো৷ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ সাইট এটি৷ আর এই সাইট ঘিরে বাণিজ্যেরও শেষ নেই৷ ফেসবুকের সুবিধা শুধু জাকারবার্গ নয়, নিচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব বড় প্রতিষ্ঠান৷ হলিউড, বলিউড তারকারাও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই৷
মজার বিষয় হচ্ছে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ সাইটে নিজেদের শক্ত অবস্থান বোঝাতে অনেকে ‘ভুয়া লাইকও' কিনছেন৷ খুব সস্তায় ইন্টারনেটে বিকাচ্ছেও তা৷ কিন্তু নৈতিকতার প্রশ্নে ‘ভুয়া লাইক' কেনাটা প্রতিষ্ঠান বা তারকা সবার ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর৷
ইটালির নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং ব্লগার আন্দ্রেয়া স্ট্রোপা এবং কার্লা ডি মিশায়েলি হিসেব করে দেখেছেন, ২০১৩ সালে ভুয়া টুইটার ‘ফলোয়ার' বিক্রি করে ৪০ থেকে ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো আয় করেছে অনেক প্রতিষ্ঠান৷ ফেসবুকের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ২০০ মিলিয়নের মতো৷ শুধু লাইকই নয়, টাকার বিনিময়ে ওয়েবসাইট কিংবা ভিডিও-র জন্য ক্লিকও কিনছে অনেক প্রতিষ্ঠান৷
টাকা দিয়ে লাইক কেনার তালিকায় রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও৷ তাদের ফেসবুক পাতায় লাইকের সংখ্যা চার লাখের বেশি৷ লাইক বাড়াতে এই মন্ত্রণালয় কয়েক লাখ মার্কিন ডলার খরচ করেছে৷ ২০১৩ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পাতা সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল কায়রোতে৷
২০১৩ সালের আলোচিত দশ মন্তব্য
২০১৩ সালে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে বাংলাদেশে আলোচনায় ছিলেন অনেকে৷ কোনো কোনো মন্তব্য সাধারণ মানুষের হাসির খোরাকও হয়েছে৷ বাংলাদেশে আলোচিত দশটি মন্তব্য প্রকাশ করা হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
‘হরতাল সমর্থকদের নাড়াচাড়ায় ভবন ধস’
সাভারে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ২৪ এপ্রিল বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে জানতে পেরেছি৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷’’ রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ৷
ছবি: Reuters
‘আমার কাছে তথ্য আছে’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অত্যন্ত সক্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘‘আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আগামীবার আবার ক্ষমতায় আসবে৷’’ ২৩ জুলাই ঢাকায় এক আলোচনা সভায় একথা বলেন তিনি৷
ছবি: Sajeeb Ahmed Wazed
‘লোডশেডিং দিতে বলেছিলাম’
বিদ্যুতের প্রয়োজনীয় উৎপাদন নিশ্চিত হওয়ার পরও লোডশেডিং প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আমি নিজেই প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং দিতে বলেছিলাম৷ তা না হলে মানুষ ভুলে যাবে দেশে লোডশেডিং ছিল৷’’ ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট ঢাকায় কুড়িল উড়ালসেতু উদ্বোধনকালে একথা বলেন শেখ হাসিনা৷
ছবি: dapd
‘...তারা বাঙালি নয়’ (প্রতীকী ছবি)
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হকের একটি মন্তব্য আলোচনার ঝড় তোলে৷ ‘‘যারা ঘোমটা পরে, তারা বাঙালি নয়’’ – এ কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও, মিতা জানান, তিনি চোখ পর্যন্ত ঢেকে রাখার যে রীতি দেখা যাচ্ছে, তার সমালোচনা করেছিলেন৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি, তাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
‘২০ জন উপদেষ্টা’
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে থাকা উপদেষ্টাদের নিয়ে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন৷ ২১ অক্টোবর তিনি বলেন, ‘‘ওই দুই সরকারের ২০ জন উপদেষ্টার মধ্য থেকে বর্তমান সরকারি দল পাঁচজন এবং বিরোধী দল পাঁচজন সদস্যের নাম প্রস্তাব করবেন৷’’ কিন্তু গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপদেষ্টাদের মধ্যে মাত্র ১৪ জন এখন জীবিত আছেন৷ তাদের কয়েকজন আর উপদেষ্টা হতে রাজি নন৷
ছবি: Getty Images
‘...তেঁতুল বলি নাই’
হেফাজতে ইসলামের আমীর আহমেদ শফী এক ওয়াজ মাহফিলে ‘নারীদের তেঁতুল’ বলেন৷ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷ পরবর্তীতে ২ নভেম্বর চট্টগ্রামে এক সমাবেশে তিনি বলেন, ‘‘আমি মহিলাদের তেঁতুলের মতো বলেছি, তেঁতুল বলি নাই৷’’
ছবি: Mustafiz Mamun
‘ধ্বংস এখন অবধারিত’
সরকার গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের পর ব্যাংকটির ভবিষ্যত সম্পর্কে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের ধ্বংস অবধারিত হলো৷’’ ৬ নভেম্বর এক বিবৃতিতে একথা বলেন ইউনূস৷ গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাঁর বিরোধ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images
‘মানুষ থুতু দেবে’
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১১ নভেম্বর বলেন, ‘‘সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে গেলে মানুষ আমাকে থুতু দেবে না? এর চেয়ে জেলেই মরে যাওয়া ভালো৷’’ এই মন্তব্যের কয়েকদিন পর তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারকে সরাতে হলে নির্বাচন দরকার৷ নির্বাচনে না গেলে মানুষ থুতু দেবে৷’’ শেষ অবধি অবশ্য নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷
ছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images
‘আমরা আপনাদের তৈরি করেছি’
অবরোধের আগুনে পোড়া গীতা সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সব রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আমরা আপনাদের তৈরি করছি, আপনারা আমাদের তৈরি করেন নাই৷ আমাদের স্বামীরটা আমরা খাই৷ আপনারা আমাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন৷’’ প্রধানমন্ত্রী ১ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট পরিদর্শনে গেলে তাঁকে এসব কথা বলেন গীতা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
‘দিস ইজ বেয়াদবি’
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে স্মৃতিসৌধে যান নি ঢাকায় অবস্থানরত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতরা৷ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ইইউ রাষ্ট্রদূতদের এই আচরণ প্রসঙ্গে ১৯ ডিসেম্বর বলেন, ‘‘ইইউ রাষ্ট্রদূত স্মৃতিসৌধে গেলেন না, দিস ইজ বেয়াদবি, এক্কেবারে বেয়াদবি৷’’ এরকম বিভিন্ন মন্তব্য করে গত পাঁচ বছর ধরেই আলোচনায় আছেন মুহিত৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
10 ছবি1 | 10
মার্কিন বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটস প্রেস (এপি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হচ্ছে লাইক বা ‘ক্লিক বাণিজ্যের' আন্তর্জাতিক কেন্দ্র৷
ইউনিক আইটি ওয়ার্ল্ড নামের ঢাকার একটি সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি তাঁর খদ্দেরের সামাজিক যোগাযোগ পাতা ‘লাইক' করার জন্য অন্যদের পয়সা দিয়ে থাকেন৷ ফলে ফেসবুক, টুইটার বা গুগলের পক্ষে এসব লাইক ভুয়া হিসেবে গণ্য করা বেশ কঠিন৷
সাইফুল ইসলাম দাবি করেন, ‘‘যেসব একাউন্ট থেকে লাইক বা ক্লিক করা হয় – সেগুলো ভুয়া নয়, আসল৷''
ফেসবুকের সাম্প্রতিক হিসেবে দেখা গেছে, সাইটটি থাকা অনেক পাতাই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ঢাকা শহরে৷ ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির ফেসবুক পাতায় ভক্তের সংখ্যা প্রায় ৫১ মিলিয়ন৷ এই পাতা সবচেয়ে জনপ্রিয় ঢাকায়৷ একইভাবে ফেসবুকের নিজস্ব নিরাপত্তা পাতা এবং গুগলের ফেসবুক পাতাও লাইকের বিচারে সবচেয়ে জনপ্রিয় ঢাকায়৷
অবশ্য, ফেসবুক বা টুইটারে ব্যাপক জনপ্রিয় অধিকাংশ পাতা ‘ভুয়া লাইকে' ভরা – এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই৷ বরং লাইক বাড়ার পেছনে যৌক্তিক এবং বিশ্বাসযোগ্য কারণও থাকে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বার্গার কিংয়ের কথা৷ এই ফাস্ট ফুড চেইনের ফেসবুক পাতা কয়েক সপ্তাহ লাইকের বিচারের সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল পাকিস্তানের করাচিতে৷ মূলত পাকিস্তানে বার্গার কিং-এর কয়েকটি শাখা চালু হওয়ার পর এমনটা হয়েছিল৷
উল্লেখ্য, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের ফেসবুক পাতায় গত এক মাসে লক্ষাধিক নতুন ‘লাইক' যোগ হয়েছে৷ ‘ফেসবুক ইনসাইটস' অনুযায়ী, এসব লাইকের অন্যতম উৎস হচ্ছে ‘পেজ সাজেশন্স'৷ মূলত বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন নিয়ে ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় ব্যাপক আলোচনার সঙ্গে এই বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে৷