টেলিফোনে দীর্ঘ কথা বললেন জো বাইডেন এবং নরেন্দ্র মোদী। দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোদী।
বিজ্ঞাপন
মার্কিন সংবাদমাধ্যম তাঁকে জয়ী বলে ঘোষণা করার পরেই জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার গভীর রাতে ফের তাঁদের মধ্যে ফোনে কথা হয়েছে বলে টুইট করে জানিয়েছেন মোদী। মোদী-বাইডেনের ফোনে আলোচনার বিষয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে অ্যামেরিকাও। মোদী জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে সামরিক এবং অন্যান্য সম্পর্ক নিয়ে বাইডেনের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। বাইডেনের পাশাপাশি কমলা হ্যারিসকেও অভিনন্দন জানানোর কথা বলেছেন মোদী।
মার্কিন নির্বাচন: যে বিশ্বনেতারা এখনো বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানাননি
ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্রদের অনেকেই দ্রুত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ তবে, এখনো কিছু রাষ্ট্রনেতা আছেন যারা এই বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন৷
ছবি: Alexei Druzhinin/dpa/picture-alliance
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
বেইজিং জানিয়েছে যে মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া অবধি কাউকে অভিনন্দন জানাবে না দেশটি৷ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য করেছি বাইডেন নির্বাচনে বিজয় ঘোষণা করেছেন৷ আমরা যেটা বুঝতে পারছি তাহচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল দেশটির আইন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া অনুসরণের পর ঘোষণা করা হবে৷’’
ছবি: Ju Peng/Xinhua/picture-alliance
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন
পুটিনের মুখপাত্র দিমিত্রি প্যাস্কভ জানিয়েছেন যে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট আইনি জটিলতার নিরসন না হওয়া পর্যন্ত বাইডেনের জয় নিয়ে কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবে ক্রিমলিন৷ তিনি বলেন, ‘‘সেখানে নির্দিষ্ট কিছু আইনি প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে যার কথা বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যে জানিয়েছেন৷ ফলে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন, তাই আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগ অবধি অপেক্ষা করাটা যৌক্তিক মনে করছি আমরা৷’’
ছবি: Alexei Druzhinin/dpa/picture-alliance
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো
ডানপন্থি এই প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বের প্রথম নেতা হবেন যে ডনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাবে৷ তবে, বাইডেনের বিষয়ে চুপ রয়েছেন বলসোনারো৷ দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যামিল্টন ম্যুরাও এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমি মনে করি ভোট জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন হওয়া অবধি অপেক্ষা করছেন প্রেসিডেন্ট৷’’ ‘‘সময়মত’’ বাইডেনকে অভিনন্দন জানানো হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Marcos Corrêa/Presidência da República do Brasil
লোপেজ ওব্রাডোর জানিয়েছেন যে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট আইনি জটিলতার নিরসন না হওয়া অবধি বিজয়ীকে অভিনন্দন না জানাতে তার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ তিনি উল্টো প্রশ্ন করেছেন, ‘‘কীভাবে একজন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ঠিক করবে (মার্কিন নির্বাচনে) কোন প্রার্থী জয়লাভ করেছে?’’ তবে, তিনি তার বক্তব্যে বাইডেনকে ‘‘সম্ভাব্য বিজয়ী’’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷
ছবি: Reuters/H. Romero
উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন
মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি কিম৷ উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও এই বিষয়ে চুপ রয়েছে৷ ২০১৬ সালে ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার দু’দিন পর অবধিও চুপ ছিল পিয়ংইয়ং৷ অতীতে অবশ্য বাইডেনকে কিম ‘স্বল্প বুদ্ধির বোকা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন৷ জবাবে বাইডেন তাকে ‘গুণ্ডা’ বলেছিলেন৷
ছবি: Reuters/KCNA
স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জেনেজ জানিয়া
উগ্র ডানপন্থী ও অভিবাসনের বিরোধী হিসেবে পরিচিত স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জেনেজ জানিয়া মার্কিন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর দ্রুতই ডনাল্ড ট্রাম্পকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন৷ তবে ভোট গণনা প্রায় শেষ হওয়ার পর যখন বাইডেনকে বিজয়ী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তখন চুপ হয়ে গেছেন তিনি৷ জানিয়া শুধু এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আশা করছে তার দেশ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Leskovsek
6 ছবি1 | 6
নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ডনাল্ড ট্রাম্পের কূটনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ছিল। অনেকেরই অভিমত, ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। নির্বাচনের আগে শেষবার ভারতে সফর করেছিলেন ট্রাম্প। গুজরাতে 'নমস্তে ট্রাম্প' অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন মোদী। অন্য দিকে, মোদী যখন অ্যামেরিকায় গিয়েছিলেন, তখন ট্রাম্প আয়োজন করেছিলেন 'হাউডি মোদী'। গুজরাতের সভা থেকে মোদী মার্কিন ইন্দো-অ্যামেরিকান ভোটারদের কাছে ট্রাম্পের জন্য ভোটভিক্ষা করেছিলেন। ফলে জো বাইডেনের জয়ের পরে অনেকেই দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন।
মোদী অবশ্য কালক্ষেপ করেননি। বাইডেনের জয়ের পরেই তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তারপরেই মঙ্গলবার রাতের ফোন কল। মোদী লিখেছেন, ''দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে বাইডেনের সঙ্গে দীর্ঘ কথা হয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তন, সামরিক সুরক্ষা, করোনা পরিস্থিতি, অর্থনীতি-- সমস্ত বিষয়েই কথা হয়েছে।''
ফোন কলের কথা জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে অ্যামেরিকাও। সেখানে বলা হয়েছে ''মোদীর সঙ্গে বহু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বাইডেনের। দুই দেশের বাইরের এবং ভিতরের সুরক্ষা, গণতন্ত্র, জলবায়ু পরিবর্তন সহ একাধিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সুরক্ষা নিয়েও কথা হয়েছে দুইজনের।''
মঙ্গলবার সকালেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ডেমোক্র্যাটরা ভারতের কাছে 'স্ট্রেঞ্জার' নয়। এই বক্তব্যের মাধ্যমে বাইডেনের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। তারপরেই রাতে বাইডেনের ফোন আসে।
ট্রাম্পের আমলে চীন সংঘাতে অ্যামেরিকাকে পাশে পেয়েছে ভারত। বাইডেনের আমলেও অ্যামেরিকা সে ভাবেই ভারতের পাশে থাকবে কি না, সেটাই এখন দেখার।