আফ্রিকা-জুড়ে একটা প্রচার চলে। পোলিও থেকে শুরু করে করোনা ভ্যাকসিনের আসল উদ্দেশ্য জন্মনিয়ন্ত্রণ। তা নিয়ে ফ্যাক্ট চেক।
বিজ্ঞাপন
এর আগে পোলিও থেকে শুরু করে অনেক ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই এই প্রচার হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে করোনা ভ্যাকসিন নিয়েও। আফ্রিকার অনেক দেশেই করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বিরূপ প্রচার শুরু হয়েছে। তাই এই ফ্যাক্ট চেক জরুরি।
করোনা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে আফ্রিকার মানুষের মনে কি কোনো সন্দেহ আছে?
ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেকঃ বিভ্রান্তিকর
কেনিয়ায় থাকেন এরিক মুগেন্ডি। তাঁর দাবি, ''আসলে বড় সমস্যা হলো, করোনা ভ্যাকসিন নেয়া নিয়ে আমরা একটা দ্বিধা দেখতে পাচ্ছি। এর কারণ, কর্তৃপক্ষ মানুষকে সচেতন করছে না।''
ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে কথা বলার সময় অনেক ক্ষেত্রেই ধর্মীয় উদাহরণ টেনে আনছেন সরকারি কর্তারা। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান বিচারপতি গত ১১ ডিসেম্বর কোভিড ভ্যাকসিনকে 'জন্তুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শয়তানের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া'-র সঙ্গে তুলনা করেছেন।
টুইটারের মাধ্যমেও অনেকে ভ্যাকসিন সম্পর্কে অবিশ্বাস ছড়াচ্ছেন।
এই ধরনের ঘটনা লোকের আস্থায় আঘাত করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু সম্প্রতি আফ্রিকার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রোটেকশন(সিডিসি)-এর সমীক্ষা অন্য কথা বলছে। আফ্রিকার ১৫টি দেশের ১৫ হাজার মানুষকে নিয়ে এই সমীক্ষা করা হয়েছিল। সেখানে ৭৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন, করোনা ভ্যাকসিন যদি নিরাপদ ও কার্যকর হয় তাহলে তাঁরা সেটা নেবেন।
বেশির ভাগ মানুষ ভ্যাকসিন নিতে চান। তবে এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের মানুষের মধ্যে সংখ্যার তারতম্য আছে। ইথিওপিয়া ও নাইজারের মতো দেশে ৯৪ ও ৯৩ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন নেয়ার পক্ষে। কিন্তু সেনেগালে ৬৫ শতাংশ ও কঙ্গোতে ৫৯ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন নেয়ার পক্ষে।
সমীক্ষা অনুযায়ী, ২৫ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনকে নিরাপদ নয় বলে মনে করেন। তা নিতেও চান না।
প্রধান বিচারপতির মতো ব্যক্তিত্বদের কথা মানুষ শোনে কেন? কারণ, তাঁদের উপর মানুষের আস্থা আছে। তাছাড়া ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাব আছে। ফলে লোকের মনে সংশয় বাড়ছে।
২০২০ সালকে যেভাবে মনে রাখবে ভবিষ্যৎ
ক্যালেন্ডার বদলানো আর আট-দশটা বছরের মতো নয় ২০২০৷ শুধু নিকট ভবিষ্যৎ নয়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বারবার গল্প হয়ে ফিরবে সালটি৷ সেই গল্পের বিষয়বস্তুগুলো কী হতে পারে দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/J. Malone
‘অজানা’ এক ভাইরাস এসেছিল
২০১৯ সালের শেষে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের মানুষেরা অজানা অসুখে ভুগতে শুরু করে৷ গণমাধ্যমে একটু-আধটু সেই খবর আসতে শুরু করলেও কে ভেবেছিল পরবর্তী এক বছর গোটা বিশ্বকে তা নাড়িয়ে দেবে! ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে উহানের স্বাস্থ্য কমিশন নিউমোনিয়া ছড়িয়ে পড়ার কথা জানায়৷ পাঁচ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই সংক্রান্ত প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
নাম সার্স-কোভ-টু
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই করোনা ভাইরাসের নাম দেয় সার্স-কোভ-টু৷ আর এর থেকে সৃষ্ট রোগের নাম কোভিড-১৯৷ ১২ জানুয়ারি ভাইরাসটির জিন রহস্য প্রকাশ করে চীন৷ তখন পর্যন্ত সেটি কিন্তু চীনবন্দিই ছিল৷ একদিন পরই প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে থাইল্যান্ডে৷ এরপর আর আটকে রাখা যায়নি ক্ষুদে সেই দানবকে৷
ছবি: Reuters/NEXU Science Communication
নীরব ঘাতক
প্রথম ধরা পড়ার ৪৭ দিনের মাথায় চীনে ৬৬ হাজার মানুষকে ভাইরাস আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়৷ মারা যান ১৫০০ জন৷ শহর থেকে শহরে, দেশ থেকে দেশে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ে নভেল করোনা৷ সংক্রমণ বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে৷ মৃত্যুর খাতায়ও দৈনিক যোগ হতে থাকে কয়েক হাজার সংখ্যা৷ স্মরণকালে এমন মহামারির মুখোমুখি হয়নি মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Maohua
কাছে আসতে মানা
ঔষধ নেই, প্রতিষেধক নেই৷ কিভাবে রোখা যাবে এই ভাইরাসকে, সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে উঠে৷ দেয়া হয় মানুষে-মানুষে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ৷ ব্যবধান রাখতে হবে দেড় থেকে দুই মিটার, যার নাম দেয়া হয় ‘সামাজিক দূরত্ব’৷ গোটা পৃথিবীর চেহারা আর যোগাযোগের ধরনটাই রাতারাতি বদলে যায় তাতে৷
ছবি: Reuters/A. Kelly
হ্যান্ডশেকে বাধা
সৌজন্য হিসেবে হ্যান্ডশেক বা হাত মেলানোর রীতিকে বিদায় জানায় মানুষ৷ তার বদলে সৌজন্য আর উষ্ণতা প্রকাশের অভিনব সব উপায়ও তারা বের করে৷ কেউ মুষ্টিবদ্ধ হাত মেলায়, কেউবা কনুই, আবার হাতের বদলে পায়ে-পায়ে স্পর্শেরও চল দেখা যায়৷ তবে দূরে দাঁড়িয়ে মৌখিকভাবে সৌজন্য প্রকাশই নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়৷
ছবি: Reuters/FIDE/M. Emelianova
মাস্ক যখন পরিধেয়
মাস্ক পরলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায় কিনা শুরুতে এ নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল৷ কিন্তু একে একে সব দেশ জনপরিসরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সবার মাস্ক পরার পক্ষে মত দেয়৷ সংস্কৃতি ভেদে পোশাকে ভিন্নতা থাকলেও সারা বিশ্বেই মাস্ক হয়ে উঠে অপরিহার্য পরিধেয়৷
ছবি: Getty Images/NYFW - The Shows
যারা সুপারহিরো
করোনার বিরুদ্ধে এক অসম লড়াইয়ে নামতে হয় চিকিৎসকদের৷ দেশে দেশে নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাবের মধ্যেই অচেনা শত্রুর বিরুদ্ধে কঠিন এক যুদ্ধের মুখোমুখি হন স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ অন্যকে বাঁচানোর সেই চ্যালেঞ্জে অনেকেই জীবন দেন৷ লকডাউনে তাদের প্রতি নানা উপায়ে ধন্যবাদ আর ভালোবাসা জানাতে ভোলে না বিভিন্ন দেশের কৃতজ্ঞ মানুষেরা৷
ছবি: Reuters/S. Vera
বিচ্ছিন্ন পৃথিবী
এত কিছুর পরও ঠেকানো যায়নি সংক্রমণ, থামছিল না মৃত্যুর মিছিলও৷ লাগাম ধরতে দেশে দেশে চলে লকডাউন৷ সীমান্তে আরোপ করা হয় কড়াকড়ি৷ বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অর্থনৈতিক আর বিনোদনমূলক সব কর্মকাণ্ড৷ ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর পুঁজিবাজারগুলোর লেনদেনে লাগে সবচেয়ে বড় ধাক্কা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Camus
ব্যালকনি বা অনলাইন কনসার্ট
আশাহীন সময়েও মানুষ আনন্দে বাঁচার উপায় ঠিক খুঁজে নেয়৷ স্পেন, ইটালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ঘরবন্দি মানুষেরা ব্যালকনিতে কনসার্ট জমিয়ে ফেলে৷ অনলাইনে ডুব দেয়া মানুষকে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে নানাভাবে বিনোদিত করার চেষ্টা করেন তারকারাও৷
ছবি: AFP/P. Singh
প্রকৃতির ফুরসত
আধুনিক জীবনযাত্রার চাপে কোণঠাসা প্রকৃতি যেন এই দফা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে৷ বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ যখন ঘরবন্দি, তখন নিজেকে নতুন করে ফিরে পাওয়ারই তো তার সময়৷ কোনো কোনো নির্জন মহানগরীর বুকে এমনকি বুনো প্রাণীরাও নেমে আসে৷ আর গবেষণায় দেখা যায়, ২০২০ সালে বিশ্বের কার্বন নিঃসরণ সাত ভাগ কমেছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে নতুন রেকর্ড৷
ছবি: picture-alliance/empics/P. Byrne
পড়তি ঢেউ
আক্রান্ত আর মৃত্যুর রেখাচিত্র জুন নাগাদ নামতে শুরু করে৷ ধীরে ধীরে লকডাউন তুলে নেয় দেশগুলো৷ শুরু হয় ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতায়াত৷ খুলে দেয়া হয় এয়ারপোর্ট৷ কিন্তু এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার পৌঁছে যায় মহামন্দার সময়ের পর সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক সাত ভাগে৷ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর দারিদ্র্য বিমোচনে বিগত দেড় দশকের অর্জন ম্লান হয়ে যেতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress/J. Merida
দর্শকবিহীন খেলা
আন্তর্জাতিক সিরিজ বা বিভিন্ন লিগের খেলা হবে, অথচ মাঠে দর্শক থাকবে না- অন্য সময় হলে এমন কথা বললে সেটি নির্ঘাত উদ্ভট শোনাতো৷ অথচ ২০২০ সালে ইউরোপীয় ফুটবল লিগ কিংবা আইপিএলসহ বিভিন্ন ক্রীড়া আসর অনুষ্ঠিত হয় স্টেডিয়ামে শূন্য বা সীমিত দর্শক উপস্থিতি নিয়ে৷
ছবি: Angel MartinezGES/picture alliance
দ্বিতীয় ঢেউ
শীতের মৌসুমে বিভিন্ন দেশে নভেম্বর থেকে নতুন করে বাড়তে শুরু করে করোনার প্রকোপ৷ এই ধাক্কায় আবার বিপর্যস্ত ইউরোপ৷ একে একে আবারো লকডাউনে ফিরে দেশগুলো৷ শুধু তাই নয় যুক্তরাজ্যে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়, যেটি আগের চেয়েও দ্রুত গতিতে সংক্রমণ ঘটায়৷এ কারণে নতুন করে ব্রিটেনের সঙ্গে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয় বিভিন্ন দেশ৷
ছবি: Sebastian Kahnert/dpa/picture alliance
অসম্ভবকে সম্ভব
একটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন থেকে শুরু করে পরীক্ষা- সবগুলো ধাপ পেরিয়ে সরবরাহ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগে৷ কিন্ত এক বছরের কম সময়ে একাধিক ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করেন বিজ্ঞানীরা৷ ডিসেম্বর থেকেই কয়েকটির প্রয়োগ শুরু হয় দেশে দেশে৷ করোনার অন্ধকার এক টানেলের যাত্রা দিয়ে ২০২০ সালের সূচনা হলেও, বিদায়টা হয় শেষ প্রান্তে টিকার আলোতে৷
এফএস/এসিবি
ছবি: Robin Utrecht/picture alliance
14 ছবি1 | 14
এই ভাইরাস কি ল্যাবরেটরি থেকে মানবশরীরে এসেছে? এর মধ্যে কি মাইক্রোচিপ আছে মানুষের গতিবিধির উপর নজর রাখার জন্য?
ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেক: অপ্রমাণিত।
অগাস্টে প্যান আফ্রিকান মেডিকেল জার্নালে একটা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, নাইজেরিয়ায় আশঙ্কা হলো, ''গণহারে এই ভ্যাকসিন দেয়ার ছুতোয় সামাজিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অরওয়েল কথিত মেকানিজমই নেয়া হচ্ছে।''
কেনিয়ার মুগেন্ডি ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, কিছু মানুষের ধারণা হলো, ভাইরাস হলো একটি বায়োলজিকাল অস্ত্র, আর এই ভ্যাকসিন দিয়ে আদতে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে আফ্রিকা অভিযান করবে বিদেশি শক্তি। সামাজিক মাধ্যমেও একই ধরনের বিশ্বাসের কথা কিছু মানুষ বলছেন।
সুইডেনের পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ বেন্টি গেলেটা বলেছেন, এই ধরনের দাবিগুলি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। সাধারণ মানুষের উচিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কথা বিশ্বাস করা। কারণ, অপ্রমাণিত কথায় বিশ্বাস করলে মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবেন। তখন তাঁরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এরকম কোনো তথ্য নেই যে, ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকরা লোকেদের বাণিজ্যিকভাবে প্রতারিত করবে।
এক বছরের মধ্যেই করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে আসা মানে কি তা অকালে তৈরি হওয়া?
ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেক: অপ্রমাণিত
ভ্যাকসিন তড়়িঘড়ি করে তৈরি করা হয়েছে এবং তার ফলে তা ঝুঁকিপূর্ণ বলে কেউ কেউ উদ্বেগ জানিয়েছেন।
বেন্টি মনে করেন, এরকম আশঙ্কা স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁর দাবি, এই ভ্যাকসিন কয়েকজন বৈজ্ঞানিক এবং কয়েকটি উৎপাদক সংস্থা তৈরি করেছে মনে করা ভুল হবে। ভ্যাকসিনকে নিরাপদ রাখার জন্য চেষ্টার কোনো ত্রুটি করা হয়নি। এই প্রক্রিয়াটি খুবই কঠিন।
এই ভ্যাকসিনকে টাইফয়েড, পোলিও, ইবোলার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। এই সব ভ্যাকসিন তৈরি করতে অনেক সময় লেগেছে। ৪০ বছরের মতো। তার তুলনায় কোভিড ভ্যাকসিন এক বছরের মধ্যে তৈরি হয়ে যাওয়ায় অনেকে অবাক হয়েছেন। সেখান থেকেই চক্রান্তের কাহিনির শুরু। নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, অনেক বছর ধরে করোনার সঙ্গে সম্পর্কিত সারস ভাইরাস নিয়ে প্রচুর কাজ হয়েছে। তাছাড়া করোনা নিয়ে কাজ করার জন্য সরকারগুলি প্রচুর অর্থ খরচ করেছে। বেসরকারি সংস্থাও গবেষণার কাজে অর্থ খরচ করেছে।
এরিকের মতো বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ভ্যাকসিন যেভাবে তৈরি করা হয়েছে তা নিয়ে ঠিকভাবে মানুষকে অবহিত করা হয়নি। যার জন্য এই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।
বেন্টিও স্বীকার করেন, মিডিয়ার মাধ্যমে যেভাবে সচেতনতা বাড়ার কথা ছিল, তা হয়নি। তার ফলে ভুলভাল ধারণা তৈরি হয়েছে।
করোনার টিকা বিতরণে জার্মানির পরিকল্পনা
করোনা ভাইরাসের টিকা পাওয়ার পর তা কীভাবে দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ এখনো কোনো টিকার কার্যকারিতা পুরোপুরি প্রমাণ হয়নি৷ কিন্তু জার্মানিতে কাদের, কখন এবং কীভাবে তা দেয়া হবে এরই মধ্যে সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’
জার্মানির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার নভেম্বরের শুরুতেই সারাদেশে কীভাবে ভ্যাকসিন দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা নিয়েছে৷ ‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’তে ১৫ পাতার পরিকল্পনা লেখা হয়েছে৷ যদিও টিকা পাওয়ার পর তা বিতরণের পরিকল্পনাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন তারা৷ তারপরও চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার সাথে সাথে বিশাল জনগোষ্ঠীকে যাতে এর আওতায় আনা যায়৷
ছবি: Joel Saget/AFP/Getty Images
পরিকল্পনার লক্ষ্য
টিকা কবে নাগাদ আবিষ্কার হবে এবং কী পরিমাণ উৎপাদন হবে, সেটা এখনও জানা যায়নি৷ কিন্তু টিকা হাতে আসার পর যাতে অন্য কোনো কারণে বিতরণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত না হয় সেটাই এই পরিকল্পনার লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Schmidt
কর্মপরিকল্পনা
টিকা দেয়ার জন্য কর্মপদ্ধতি এবং কাজের ধরন এরইমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভ্যাকসিনের জন্য ছয়টি কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে৷ এই কোম্পানিগুলোর কোনো ভ্যাকসিন বের করলে ইইউ-এর মাধ্যমে তা পাবে জার্মানি৷ তারপর কেন্দ্রীয় সরকার দেশের ৬০টি ভ্যাকসিন বিতরণ কেন্দ্রে তা পৌঁছে দেবে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
সাধারণ চিকিৎসকদের নাগালের বাইরে
পুরো ব্যাপারটি ঠিক করবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার৷ সাধারণ চিকিৎসকরা এটা বিতরণ করতে পারবেন না৷ ফলে ধরেই নেয়া যায়, প্রথম দফায় সবাই এই ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না৷ এছাড়া সাধারণ চিকিৎসকদের অফিসে এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সুবিধা নেই৷
ছবি: picture alliance/dpa
যারা প্রাধান্য পাবেন
বয়স্ক মানুষ এবং যাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে তারা এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন৷ এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মী এবং করোনা চিকিৎসার সাথে জড়িতরাও থাকছেন এই তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
বার্লিন
বার্লিনের স্থানীয় সরকার ছয়টি টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করছে৷ ফাইজার এবং বায়োনটেকের তথ্য অনুযায়ী, বার্লিনে প্রথম দফায় ৯ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ সে হিসেবে প্রথম দফায় বার্লিনের প্রতি ১০ জনের একজন টিকা পাবেন৷ একেকটা কেন্দ্রে দিনে তিন হাজার ৪০০ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করছে বার্লিন৷ এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হলো, ভ্যাকসিন যারা নিতে আসবেন তাদের লাইন এবং সময় নিয়ন্ত্রণ করা৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টিকা আসার পর
জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের ইনফেকশাস ডিজিজ সম্প্রতি জানিয়েছে, ভ্যাকসিন বিতরণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা, টিকা হাতে পাওয়ার পরই করা সম্ভব৷ যখন এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে এটা বিভিন্ন বয়সে কীভাবে কাজ করে, কতটা কার্যকর ও নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/ANE
৩০ কোটি ভ্যাকসিন
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান জানিয়েছেন, তারা চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য সবচেয়ে সেরা পরিকল্পনা করতে৷ ইইউ-এর মাধ্যমে ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়ে রেখেছেন তারা৷
ছবি: Tobias Schwarz/AFP
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
জার্মানির এথিক্স কাউন্সিলের প্রধান আলেনা বুইক্স জানিয়েছেন, কোন কোম্পানির ভ্যাকসিনে কী ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে, কোন বয়সের মানুষের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি হবে, সেটা আগে থেকে জানা সম্ভব নয়৷ আশা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় দফায় সাধারণ চিকিৎসকদের কাছে এই ভ্যাকসিন পৌঁছানো যাবে, তবে এরজন্য বিশেষ ফ্রিজের প্রয়োজন হবে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon
প্রয়োজন কর্মী
এই কাজে কেবল চিকিৎসক না, প্রয়োজন নিরাপত্তারক্ষী, গাড়িচালকসহ অন্যান্য কর্মী৷ সেজন্য সেনাবাহিনী এবং ত্রাণ সংস্থাগুলোর কাছে কর্মী চেয়ে আবেদন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
গ্রামগুলোতে টিকা সরবরাহের চ্যালেঞ্জ
শহরে যাতায়াত ও অন্য সুবিধা থাকলেও শহর থেকে যারা অনেক দূরে থাকেন, সেসব এলাকায় প্রবীণ মানুষ কীভাবে টিকা দান কেন্দ্রে পৌঁছাবেন সেটা একটা চিন্তার বিষয়৷
ছবি: picture-alliance/EibnerT. Hahn
11 ছবি1 | 11
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করার ক্ষমতা কি আফ্রিকার আছে?
ডিডাব্লিউর ফ্যাক্ট চেক: বিভ্রান্তিকর
বেন্টি জানিয়েছেন, যদি অনেক জায়গায় ভ্যাকসিন নিরাপদে রাখার মতো পরিকাঠামো না থাকে তাহলে সেটা নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয়। বায়োনটেক-ফাইজারের ভ্যাকসিন মাইনাস ৭০ ডিগ্রিতে রাখতে হয়। এই তাপমানে ভ্যাকসিন রাখা আফ্রিকার দেশগুলির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ এবং অনেকের কাছেই সেই পরিকাঠামো নেই। তবে মডার্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিরাপদে রাখতে মাইনেস ২০ এবং মাইনাস দুই থেকে আট ডিগ্রিই যথেষ্ট।
ফলে কেনিয়া সহ আফ্রিকার অনেক দেশই অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন চাইছে।
আফ্রিকা কবে ভ্যাকসিন পাবে, সেটাও বড় প্রশ্ন।
ক্যামেরুনের ভাইরোলজিস্ট জন এনকেগাসঙ জানিয়েছেন, আফ্রিকায় ভ্যাকসিন আগামী বছরের এপ্রিলের আগে আসবে বলে মনে হয় না। তবে কেনিয়া অ্যাস্ট্রোজেনেকার কাছে দুই কোটি ৪০ লাখ ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়েছে। সেটা তারা জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে পেয়ে যাবে।
এনকেগাসঙ সংবাদসংস্থা এপি-কে জানিয়েছেন, আফ্রিকার দেশগুলিতে ১৩০ কোটি মানুষ আছেন। তাঁদের ভ্যাকসিন পেতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যাবে।
এখনো পর্যন্ত আফ্রিকায় ২৫ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৬০ হাজার মানুষ।