বিভিন্ন দেশে করোনার টিকা নেয়ার পর গ্রহীতাদের মৃত্যু ঘটছে এমন কিছু তথ্য অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে৷ এই ঘটনাগুলোর ‘ফ্যাক্ট চেক' বা তথ্য যাচাই করেছে ডয়চে ভেলে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের অনেক দেশেই এখন করোনার টিকাদান চলছে৷ যারা সেটি গ্রহণ করেছেন তাদের ক্ষেত্রে কেমন প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সেই দিকে নজর রাখছেন অনেকে৷ অনলাইনে এমন তথ্যও ছড়িয়ে পড়ছে যে, টিকা নেয়ার পর কারো কারো মৃত্যু ঘটেছে৷ জার্মানি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, বেলজিয়াম, পেরুর এমন কিছু খবর যাচাই করা হয়েছে৷ কথা বলা হয়েছে দেশগুলো স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, বিশেষজ্ঞের সঙ্গে৷
নরওয়ে: ‘নার্সিং হোমে ৩০ জনের মৃত্যু’
টিকা নেয়ার পর নরওয়ের নার্সিং হোমে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৩ টি মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করেছে নরওয়েজিয়ান মেডিসিন এজেন্সি৷ তার পরিপ্রেক্ষিতে তারা বলছে, যাদেরকে টিকা দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকেই গুরুতর অসুস্থ রোগী ছিলেন৷ নরওয়ের নার্সিং হোম ও এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৪৫ জন মারা যান৷ কাজেই টিকা দেয়ার সময়টাতেও এই মৃত্যুর সংখ্যা অস্বাভাবিক নয়৷ এর সঙ্গে টিকার কোন সম্পর্কও নেই৷
এই মৃত্যুর ঘটনাগুলো তদন্ত করে ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি বলেছে, তারা টিকা নিয়ে উদ্বেগের কারণ খুঁজে পাননি৷ রোগীরা আগে থেকেই যেসব রোগে ভুগছিলেন সেগুলোই মৃত্যুর জন্য বিশ্বাসযোগ্য কারণ বলে মনে করে সংস্থাটি৷
এই বিষয়ে ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের পিয়ার-রিভিউড জার্নাল মেডিক্যাল ট্রেইড জার্নালে একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে৷ সেখানে নরওয়েজিয়ান মেডিসিন এজেন্সির পরিচালক স্টাইনার মেডসেন উল্লেখ করেন, এই মৃত্যুগুলোর সঙ্গে টিকার কোন নিশ্চিত সম্পর্ক নেই৷ পরীক্ষা করে তারা যা পেয়েছেন তার ভিত্তিতে এই মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই৷
জার্মানিতে ‘টিকা নেয়ার পর মৃত্যু’
জার্মানিতে টিকাদান কর্মসূচির দায়িত্বে রয়েছে পল এরলিশ ইনস্টিটিউট৷ তারা দেশটিতে ১১৩ জনের মৃত্যুর খবর যাচাই করেছে৷ দেখা গেছে যারা মারা গেছেন তাদের সবার বয়স ছিল ৭৯ থেকে ৯৩ এর মধ্যে৷ টিকা নেয়ার এক ঘণ্টা থেকে ১৯ দিনের মাথায় মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটে৷ ১১৩ জনের মধ্যে ২০ জন মারা গেছেন করোনা আক্রান্ত হয়ে৷ ৪৩ জন মারা গেছে তাদের পূর্ব শারীরিক অবস্থার কারণে৷
জার্মান সম্প্রচারমাধ্যম এনটেভেকে প্রতিষ্ঠানটির মেডিক্যাল পণ্যের নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান ব্রিগিট্টে কেলার-স্টানিসলাভস্কি জানিয়েছেন, এই রোগীরা মূলত তাদের অসুস্থতার কারণেই মারা যান৷ বেশ কিছু রোগে তারা গুরুতর আক্রান্ত ছিলেন৷
ই-মেইলের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, যারা মারা গেছেন তাদের একজন ছাড়া বাকিদের মৃত্যুকালে ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরোপুরি তৈরি হয়নি৷ যেটি দ্বিতীয় টিকা নেয়ার সাত থেকে ১৪ দিনের মধ্যে শুরু হয়৷ কাজেই প্রথম টিকা নেয়ার পর অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারেন৷ এছাড়া ৩৩ জন আগে থেকেই নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন, যার সঙ্গে টিকার কোন যোগসূত্র নেই৷ ১০জন কোভিড-১৯ ছাড়া অন্য অসুখে মারা গেছেন৷ তবে ৫০টি মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পারেননি তারা৷
স্পেন: ‘টিকা নেয়ার পর কেয়ার হোমে নয়জনের মৃত্যু’
বায়োনটেক-ফাইজারের টিকা নেয়ার পর কেয়ার হোমে নয়জনের মৃত্যুর খবর বেরিয়েছিল স্প্যানিশ গণমাধ্যমে, যাদের প্রত্যেকেই আগে থেকে অসুখে ভুগছিলেন৷
টিকা নেয়ার পাঁচদিন পর তারা মাথা ব্যাথা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানান সেখানকার একজন পরিচালক৷ কিন্তু নয়জনেরই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরের জটিলতাগুলো ছিল৷ কেউ আক্রান্ত হওয়ার ৫-৬ দিনের মধ্যে টিকা নিলেও করোনার শারীরিক সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে৷ জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট বলছে, প্রথম ডোজের পর টিকার কার্যকারিতা শুরু হতেও ১০ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে৷ সেক্ষেত্রে টিকা নেয়ার পরও অনেকে আক্রান্ত হতে পারেন৷
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এই মৃত্যুর খবর ছাপা হয়েছিল৷ তবে তারাও খবরের শেষে উল্লেখ করেছে যে, মৃত্যুগুলোর জন্য টিকা দায়ী এমন কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি৷
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
করোনার টিকা কি হালাল, শিশু ও গর্ভবতীরা কি টিকা নিতে পারবে, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি, কতদিন স্বাস্থ্য়বিধি মানতে হবে- এমন সব প্রশ্নের উত্তর থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Leon Neal/Getty Images
কতগুলো টিকা অনুমোদন পেয়েছে
ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বায়োনটেক-ফাইজার, মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, এই তিন টিকার অনুমোদন দিয়েছে৷ এর বাইরে রাশিয়া স্পুটনিক ৫ ও চীন সিনোভ্যাক টিকার অনুমোদন দিয়েছে৷
ছবি: Sven Hoppe/dpa/picture alliance
পার্থক্য
বায়োনটেক-ফাইজার ও মডার্নার টিকা হচ্ছে এমআরএনএ টিকা৷ মডার্নার টিকা ঘরের রেফ্রিজারেটরে সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত রাখা যায়৷ বায়োনটেক-ফাইজারের টিকার মতো মডার্নার টিকাকে পরিবহনের সময় মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয় না৷ আর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি ভেক্টর ভাইরাস টিকা, যা সাধারণ রেফ্রিজারেটরে রাখা যায়৷
ছবি: ULMER Pressebildagentur/picture alliance
দ্বিতীয় ডোজে অন্য টিকা?
তিনটি টিকার ক্ষেত্রেই দুটো করে ডোজ দিতে হয় এবং ডোজ দুটো একই টিকার হতে হবে৷ কারণ দুই ডোজে দুই ধরনের টিকা নিলে কী হতে পারে সে বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য নেই৷
ছবি: TASR/dpa/picture alliance
করোনা হলেও টিকা নিতে হবে?
হ্যাঁ, নেয়া ভালো৷ কারণ একবার সংক্রমিত হলে পরে আর হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই৷
ছবি: Abdesslam Mirdass/Hans Lucas/imago images
কী অবস্থায় টিকা নেয়া যাবেনা?
করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় এবং সাধারণ সর্দি, কাশি ও জ্বর থাকলে সেই সময় টিকা নেয়া যাবে না৷ কোয়ারান্টিনে থাকার সময়ও টিকা নেয়া যাবে না৷ যাদের কোনো বিষয়ে অ্যালার্জি আছে তাদের বেশিরভাগই টিকা নিতে পারবেন৷
ছবি: Markus Schreiber/AP Photo/picture alliance
শিশুদের টিকা?
টিকাগুলো ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সিদের দেয়ার জন্য অনুমোদন পেয়েছে৷ শিশুদের টিকা দেয়ার বিষয়ে গবেষণা চলছে বলে জানিয়েছে জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
গর্ভবতীরা টিকা নিতে পারবেন?
‘জার্মান স্ট্যান্ডিং কমিশন অন ভ্য়াকসিনেশন’ বা স্টিকো গর্ভবতীদের টিকা নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেনা৷ আবার না-ও করছেনা৷ তবে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে যাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তারা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ঝুঁকি-লাভ বিবেচনা করে টিকা নিতে পারেন বলে জানিয়েছে স্টিকো৷ এদিকে, এমআরএনএ টিকা গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশ্বাস করেননা বিশেষজ্ঞরা৷ তবে এ বিষয়ে এখন প্রাণীর উপর গবেষণা চলছে৷
টিকা নেয়ার পর তিনদিনের মধ্যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে৷ যেমন টিকার স্থান ফুলে যাওয়া, মাথাব্য়াথা, জ্বর, দুর্বল লাগা ইত্যাদি৷ তবে দুদিনের মধ্যে এগুলো সেরে যাবার কথা৷
ছবি: Imago Images/M. Eichhammer
অন্য টিকা নিতে কতদিন অপেক্ষা?
ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, রুবেলা কিংবা টিটেনাসের টিকা নিতে চাইলে করোনার টিকা নেয়ার আগে বা পরে ১৪ দিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: imago/blickwinkel
টিকা হালাল?
ফাইজার, মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার মুখপাত্ররা টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে নিশ্চিত করেছেন তাদের টিকায় শূকরের কিছু নেই৷
ছবি: Dominic Lipinski/picture-alliance
টিকা নেয়ার পরও হাত ধোঁয়া, মাস্ক পরতে হবে?
টিকা আপনাকে কতদিন রক্ষা করতে পারে সে বিষয়ে এখনও কোনো গবেষণা নেই৷ তাই টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা চালিয়ে যেতে হবে৷
ছবি: Michel Kappeler/REUTERS
11 ছবি1 | 11
যুক্তরাষ্ট্র: ‘টিকা নেয়ার পর ১৮১ জনের মৃত্যু’
মূলত ভারতের কিছু গণমাধ্যম খবরটি প্রকাশ করে৷ এর সূত্র চিলড্রেন হেলথ ডিফেন্স নামের একটি টিকা বিরোধী সংগঠনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি, যারা এর আগেও ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য পরিচিতি পেয়েছে৷
এই পরিসংখ্যান, তারা ন্যাশনাল ভ্যাকসিন ইনফরমেশন সেন্টার থেকে নিয়েছে বলে জানানো হয়৷ প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা আছে যে কেউ তাদের কাছে তথ্য পেশ করতে পারে৷ তবে তাতে এটা নিশ্চিত হয় না যে টিকার কারণেই কারো মৃত্যু হয়েছে৷
বেলজিয়াম: ‘টিকা নেয়ার পর ১৪ জনের মৃত্যু’
বেলজিয়ামে টিকা নেয়ার পর ১৪ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল দেশটির ফেডারেল এজেন্সি ফর মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথ প্রোডাক্টস৷ তাদের প্রত্যেকের বয়স ছিল ৭০ এর উপরে, পাঁচজনের ৯০ এর বেশি৷ ব্রাসেলস টাইমস সংস্থাটিকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, এই মৃত্যুগুলো ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে এবং কোনটির সঙ্গেই কারণ হিসেবে টিকার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি৷
গত চার ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রতিবেদনেও সংস্থাটি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত দেশটিতে টিকা নেয়ার কারণে কেউ মারা গেছেন এমনটা ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়নি৷
সাইটানো হার্দিয়া ইউনিভার্সিটিতে চীনের সিনোফার্মের একটি টিকার ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারী একজন কোভিড-১৯ থেকে নিউমোনিয়া জটিলতায় ভুগে মারা যান খবর প্রকাশ করে রয়টার্স৷
তবে ট্রায়ালের ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায়, ঐ স্বেচ্ছাসেবীর উপর আসলে কোন টিকার প্রয়োগ হয়নি৷ কারণ তিনি প্লাসিবো গ্রুপে ছিলেন৷ পরে বিশ্ববিদ্যালয়ও বিবৃতিতে জানায়, অংশগ্রহণকারীর মৃত্যুর কারণ টিকা নয় যেহেতু তাকে আসল টিকা দেয়া হয়নি৷
প্লাসিবো পরীক্ষায় কাউকে এমন ঔষধ বা প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হয় যার কোন ঔষধি গুণাগুণ বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই৷ এর ফলে যাদের প্রকৃত ঔষধটি দেয়া হচ্ছে এবং যাদের দেয়া হয়নি এই দুই দলের মধ্যে প্রতিক্রিয়া যাচাই করা হয়৷
জর্ডান ভিল্ডন/ এফএস
করোনা ভ্যাকসিনের যত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বিশ্বের অনেক দেশে শুরু হয়েছে করোনার টিকাদান৷ তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী সেটি নিয়ে এখনও অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে সে সম্পর্কে কিছু তথ্য৷
ছবি: Robin Utrecht/picture alliance
সাধারণ প্রতিক্রিয়া
যেকোন টিকারই সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে৷ যেমন, শরীরে ইনজেকশন দেয়ার স্থানটি লাল হয় বা ফুলে যায়৷ তিনদিনের মধ্যে অবসাদ, জ্বর, মাথা ব্যাথা, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যাথা হতে পারে৷ তবে এর কোনটিই দীর্ঘস্থায়ী নয়৷ শরীরে টিকার কার্যকারিতা শুরু হলে অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ায় এমন প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক৷ অনুমোদন পাওয়া করোনা ভ্যাকসিনগুলোর ক্ষেত্রেও এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে৷
ছবি: Mark Lenninhan/AFP/Getty Images
গুরুতর প্রতিক্রিয়া
বিরল হলেও কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটার সম্ভাবনা থাকে৷ যেমন, যুক্তরাজ্যে টিকা কর্মসূচি চালুর পর ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুইজনের অ্যালার্জি দেখা দেয়৷ দেশটির কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সমস্যা যাদের আছে তাদেরকে সতর্ক করেছে৷ তবে সার্বিকভাবে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কারণেই করোনার বিভিন্ন টিকার অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি, যুক্তরাজ্যের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
ছবি: Robin Utrecht/picture alliance
টিকার উপাদান
সাধারণত টিকায় দুর্বল বা মৃত ভাইরাস থাকে৷ যার মাধ্যমে শরীর সেই ভাইরাসের বিপরীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে৷ তবে করোনার টিকাগুলোর মধ্যে কয়েকটি প্রথমবারের মতো এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি৷ এতে কোন ভাইরাস থাকে না৷ তার বদলে কোভিড-১৯ এর জীবাণুর ব্লুপ্রিন্ট বা প্রতিরূপ থাকে৷ তাই দুই ধরনের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দুই রকম হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Cairns
বায়োনটেক-ফাইজার
অনুমোদন পর্যায়ে বায়োনটেক-ফাইজার উদ্ভাবিত টিকার গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷ কোন কোন ক্ষেত্রে টিকা গ্রহীতা সাময়িক অবসাদ আর মাথা ব্যাথায় ভুগেছেন৷ এমআরএনএ ভ্যাকসিনটির ব্যবহার শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রে একজন ও ব্রিটিনে দুইজনের ত্বক লাল হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দেখা দিয়েছিল৷ যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদেরকে সতর্ক করেছে বিট্রিশ মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি৷
ছবি: Jacob King/REUTERS
মডার্না
বায়োনটেক-ফাইজারের মতোই এমআরএনএ ভিত্তিক মডার্নার টিকাটি৷ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই টিকাগ্রহীতাদের তেমন কোন সমস্যা হয়নি৷ হালকা যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে সেগুলো ছিল সাময়িক৷ তবে ১০ শতাংশ অবসাদে ভুগেছেন বলে জানিয়েছে একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষক প্যানেল৷ অল্প কয়েকজন রোগী অ্যালার্জি ও মুখের স্নায়ু নিষ্ক্রিয় হওয়ার মতো জটিলতায় ভুগেছেন৷ তবে কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি৷
ছবি: Dado Ruvic/Reuters
অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকা
অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে একজন মেরুদণ্ডের প্রদাহে ভুগেছেন৷ সেপ্টেম্বরে এই ঘটনার পর কিছুদিন ট্রায়াল বন্ধ ছিল৷ কিন্তু পরে একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেল পরীক্ষার পর জানিয়েছে সেটির কারণ ভ্যাকসিন নয়৷ এছাড়া টিকাটি নেয়ার পর ইনজেকশনের স্থানে ও পেশিতে ব্যথা, মাথাব্যাথা ও অবসাদগ্রস্ততার মতো সাধারণ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে৷ তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে তা তুলনামূলক কম ছিল৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Porzycki
স্পুটনিক ফাইভ
তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরুর আগে গত আগস্টেই নিজেদের টিকা স্পুটনিক ফাইভ এর অনুমোদন দেয় রাশিয়া৷ দুই ধরনের পরিবর্তিত অ্যাডেনোভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছে এতে৷ রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জ্বর, মাথাব্যাথার মতো টিকাটির কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে৷ তবে কোন গুরুতর প্রতিক্রিয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি৷ তবে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ না করার অভিযোগ রয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে৷
ছবি: Sergei Karpukhin/TASS/dpa/picture alliance
দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া
এখন পর্যন্ত যত তথ্য জানা গেছে সেগুলোর কোনটিই আসলে পরিপূর্ণ চিত্র তুলে ধরছে না৷ দীর্ঘ মেয়াদে টিকাগুলোর ব্যবহার মানবদেহে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে তা অজানা৷ সেটি হয়ত সামনের মাস বা বছরগুলোতেই পরিস্কার হবে৷