1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিযুক্তরাষ্ট্র

ফ্যাক্ট চেক: জাতিসংঘে ট্রাম্প আবার অসত্য দাবি করলেন

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণে ডনাল্ড ট্রাম্প অনেক দাবি করেছেন। ডিডাব্লিউ-র ফ্যাক্ট চেক অনুসারে অনেক দাবি সত্য নয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ট্রাম্প একগুচ্ছ দাবি করেন, ফ্যাক্ট চেক বলছে, অনেকগুলি অসত্য বা বিভ্রান্তিকর। ছবি: POU/ROPI/picture alliance

মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সাধারণ পরিষদে এমন অনেক দাবি করেছেন যা ঠিক নয় বা বাড়িয়ে বলা। কিছু দাবি পুরোটাই অসত্য। তার কয়েকটি দাবি ফ্যাক্ট চেক করে দেখলো ডিডাব্লিউ

ট্রাম্প কি প্রেসিডেন্ট থাকার সময় সাতটি যুদ্ধ বন্ধ করেছেন?

দাবি: "আমি সাতটি যুদ্ধ বন্ধ করেছি...কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড, কসোভো ও সার্বিয়া, কঙ্গো ও রাওয়ান্ডা...পাকিস্তান ও ভারত, ইসরায়েল ও ইরান, মিশর ও ইথিওপিয়া এবং আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান।''

ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেক: মিথ্যা

ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে সাতটি সংঘাত থামিয়েছেন। বাস্তবে তার তালিকাভুক্ত অনেক সংঘাতের কোনো সমাধান হয়নি এবং এখনো পরিস্থিতি টালমাটাল। অন্য কিছু বিরোধের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা বিবাদিত।

মিশর ও ইথিওপিয়া কখনই ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকার সময় যুদ্ধে জড়ায়নি। তাদের বিরোধ ছিল ইথিওপিয়ার চারশ কোটি ডলারের রেনেসাঁ ড্যাম নিয়ে, যেখানে কায়রো ও খার্তুমের আশঙ্কা ছিল তারা নীল নদের জল কম পাবে। ২০২৫ সালের জুন মাসে আলোচনা ভেস্তে যায়। ট্রাম্প ঘোষিতভাবে মিশরের পক্ষে ছিলেন। তার জন্য মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফত্তেহ আল-সিসি তার প্রশংসাও করেন এবং ইথিওপিয়ার নেতারা তার বিরোধ করেন। ইথিওপিয়ার সঙ্গে মিশরের সংঘাত চরমে ওঠে এবং মিশর সোমালিয়াকে মদত দেয় বলে অভিযোগ।

সার্বিয়া ও কসোভো সরাসরি কোনো সংঘাতে জড়ায়নি। ট্রাম্প ২০২০ সালে যে চুক্তি করেছিলেন, সেখানে শান্তিপ্রতিষ্ঠা নয়, অর্থনৈতিক সম্পর্কই ছিল প্রধান। সার্বিয়া জানিয়েছিল, কসোভো আক্রমণের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। এবং সেখানে এখনো উত্তেজনা আছে, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষও হয়। ন্যাটোর শান্তিরক্ষী বাহিনী সেখানে মোতায়েন করা আছে। সার্বিয়া ও কসোভো নিজেদের মধ্যে শান্তিচুক্তিও করেনি।

ডিপিআর কঙ্গোয় ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে ২০২৪ সালে চুক্তি হলেও সহিংসতা এখনো জারি আছে।

বিশেষজ্ঞরা সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে, যে কোনো সময়ে তা আবার তুঙ্গে উঠতে পারে। ইসরায়েল ও ইরানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা নতুন করে সংঘাত দিয়ে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাতটি যুদ্ধ বন্ধ করার দাবি তাই তথ্যের তুলনায় ওভারস্টেটমেন্ট বা বাড়িয়ে বলার পর্যায়ে পড়ে।

জার্মানি কি গ্রিন এনার্জি ছেড়ে পমরাণু ও জীবাশ্ম জ্বালানির দিকে ঝুঁকেছে?

দাবি: "জার্মানি আবার জীবাশ্ম জ্বালানি ও পরমাণু শক্তির কাছে ফিরে গেছে। তারা গ্রিন এজেন্ডা ত্যাগ করে ভালো কাজ করছে।"

ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেট: বিভ্রান্তিকর

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে জার্মানি তিনটি পরমাণু শক্তিচালিত রিঅ্যাকটর স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়। ২০২২ সালে ইউরোপে জ্বালানি সংকটের সময় কয়লাখনিগুলি আবার চালু হয়, কিন্তু তারপর থেকে কয়লার ব্যবহার আবার কমছে। ২০২৪ সালে জার্মানির নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে ৬৩ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। তারা ক্লিন এনার্জির ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। 

রাশিয়ার গ্যাসের উপর থেকে নির্ভরতা কমাতে জার্মানি এলএনজি টার্মিনাল খুলেছে। কিন্তু তারা আর পরমাণু বিদ্যুতের কাছে ফিরে যায়নি।

নবায়নযোগ্য শক্তি কি কার্যকর নয় এবং বেশি অর্থ লাগে?

দাবি: "নবায়নযোগ্য শক্তি হলো একটা জোক। উইন্ড টারবাইন কাজ করে না। দামও অনেক বেশি। চীনে তা তৈরি হয়, কিন্তু তারা সেগুলি খুব কম ব্যবহার করে। "

ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেক: মিথ্যা

নবায়নযোগ্য শক্তি হলো বর্তমানে সবচেয়ে কম দামি শক্তির উৎস। ২০২৪ সালে ল্যাজার্ডের রিপোর্ট বলছে, সোলার বা সৌর এবং উইন্ড বা বাতাসের শক্তি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এখন জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় অনেক কম খরচে হয়। ফলে তা ট্রাম্পের দাবিকে খারিজ করে দিচ্ছে। ডিডাব্লিউ এবং অন্য সংস্থা অতীতে এ নিয়ে বারবার ফ্যাক্ট চেক করেছে।

চীন শুধু বিশ্বের মধ্যে প্রথম সারির টার্বাইন উৎপাদকই নয়, তারা উইন্ড পাওয়ার উৎপাদনের ক্ষেত্রেও এগিয়ে। ওয়ার্ল্ড উইন্ড এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের রিপোর্ট অনুসারে. চীন ২০২৪ সালে পাঁচশ গিগাওয়াটের বেশি উইন্ড পাওয়ার উৎপাদন করেছে।  ফলে ট্রাম্প যে বলেছেন, তারা উইন্ড এনার্জি খুব কম ব্যবহার করে তা ঠিক নয়।

ট্রাম্প কি জাতিসংঘের সদরদপ্তর পুনর্নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন?

দাবি: " আমি ৫০ কোটি ডলার দিয়ে জাতিসংঘের সদরদপ্তরের সংস্কার করতে চেয়েছিলাম। তার জায়গায় ওরা দুইশ থেকে চারশ কোটি ডলার খরচ করলো, বিপুল বেশি খরচ।"

ডিডাব্লিউ ফ্যাক্ট চেক: বিভ্রান্তিকর

ট্রাম্প অনেকদিন ধরে বলছেন, তিনি জাতিসংঘের সদরদপ্তরের সংস্কারের কাজটা প্রকৃত খরচের তুলনায় খুব কম অর্থ দিয়ে করে দিতে পারতেন। মার্কিন মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, ২০০১ সালে তিনি সংবাদমাধ্যমে তিনি এই ৫০ কোটি ডলারের হিসাব দেন। ২০০৫ সালে কংগ্রেসে তিনি দাবি করেন, ৭০ কোটি ডলার দিয়ে তিনমি এই কাজটা করতে পারতেন।

কিন্তু ডিডাব্লিউ ইউএন গ্লোবাল মার্কেটপ্লেস বা সরকারি প্রকিওরমেন্ট আর্কাইভে এমন কোনো নথি পায়নি যেখানে দেখা যায়, ট্রাম্পের সংস্থা এই প্রকল্পের জন্য কোনো দরপত্র দিয়েছে। জাতিসংঘ ২০০৭ সালে সুইডিশ সংস্থা স্কানস্কাকে কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার হিসাবে নিয়োগ করে।

এটা ঠিক জাতিসংঘের নিউ ইয়র্কের সদরদপ্তরের সংস্কার পরিকল্পনা বা ক্যাপিটল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণে দেরি হয়, খরচ বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও জাতিসংঘের দেয়া হিসাব বলছে, শেষপর্যন্ত চূড়ান্ত খরচ হয় ২১৫ থেকে ২৩১ কোটি ডলারের মতো। ট্রাম্প ঘোষিত চারশ কোটি নয়।

মনির ঘায়েদি/জিএইচ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ