প্যারিস মানেই ফ্যাশন, ফ্যাশন মানেই জাঁকজমক ও চোখ ধাঁধানো সৃষ্টি৷ তবে শুধু পোশাক নয়, ফ্যাশন ব্র্যান্ডের সদর দফতরের স্থাপত্যের মাধ্যমেও নিজস্বতা তুলে ধরার দৃষ্টান্তের অভাব নেই৷ ফলে অসাধারণ ভবন গড়ে উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
প্যারিসের বিখ্যাত ফ্যাশন কোম্পানি শানেলের নতুন সদর দফতর সত্যি নজর কাড়ার মতো৷ ‘দিসন্যোফ-এম' বা ‘উনিশ-এম' নামের ত্রিকোণ ভবনে ২৫,০০০ বর্গ মিটারেরও বেশি জায়গা রয়েছে৷ ২৪ মিটার উঁচু সিমেন্টের জাল গোটা ভবন ঘিরে রেখেছে৷ দেখলে দামি কাপড় মনে হবে৷ ফ্রান্সের স্থপতি রুডি রিচোটির মাথায় এই আইডিয়া এসেছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘শানেল ও কার্ল লাগারফেল্ডের সঙ্গে তুলনা চলেই আসে৷ এই দুই ব্র্যান্ডই টেক্সটাইল বা কাপড়ের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করেছে এবং অত্যন্ত অভিনব ও সূক্ষ্ম উপাদান কাজে লাগিয়েছে৷ নিজের কাজের মাধ্যমে তাদের সেই সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো আমার জন্য জরুরি ছিল৷ আমার তৈরি অনেক ভবনের নারীসুলভ চরিত্র রয়েছে৷ এই সিমেন্ট আমার কাছে অত্যন্ত সেনশুয়াল বা সংবেদনশীল ও নারীসুলভ৷ সিমেন্টের গঠন অনেকটা আমাদের ত্বকের মতো৷’’
সূক্ষ্ম জালের মতো সিমেন্টের প্রয়োগ এই তারকা স্থপতির বৈশিষ্ট্য৷ মার্সেই শহরের ‘ম্যুসেম' নামের মিউজিয়াম, প্যারিসে জঁ-বুয়্যাঁ স্টেডিয়াম বা লুভ্র মিউজিয়ামের নতুন ইসলামি শিল্পকলা বিভাগে সেই শৈলি ফুটে উঠেছে৷ শানেল কোম্পানির নতুন ভবনের কংক্রিটের তৈরি সরু স্তম্ভগুলি আদর্শ কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে দাবি করা হচ্ছে৷ কারণ ‘উনিশ-এম' ভবনে ভবিষ্যতে শিল্পকলার কারিগররা তাঁদের অভিনব ক্ষমতা প্রয়োগ করে ‘ওৎ কুতুয়র' বা উচ্চ মানের ফ্যাশন সৃষ্টি করবেন৷ রুডি রিচোটি বলেন, ‘‘কার্ল লাগারফেল্ড স্বয়ং বলেছিলেন, আমি শুধু বাইরের অংশ নিয়ে ব্যস্ত – এ ক্ষেত্রে যা হলো পোশাক৷ বাকি সব কিছুর দায়িত্ব সেই ব্যক্তির উপর, যে সেই পোশাক পরছে৷ আমিও সেভাবে এই ভবনের বাইরের অংশ তৈরি করে বড় বড় স্টুডিওর ব্যবস্থা করেছি৷ আমি চাই, মানুষ খুশিমনে সেখানে কাজ করুক৷ সিমেন্টের এই কাঠামো সূর্যের আলো এমনভাবে ফিল্টার করবে, যাতে অতিরিক্ত আলো না প্রবেশ করলেও ঘর যথেষ্ট উজ্জ্বল থাকে৷''
প্যারিসের নজরকাড়া ফ্যাশন অফিস
04:18
মরোক্কোর মারাক্কেশ শহরে ইভ স্যাঁ লোরঁ-কে উৎসর্গ করে তৈরি মিউজিয়াম স্থাপত্য ও ফ্যাশনের মেলবন্ধনের আরেকটি দৃষ্টান্ত৷ অলিভিয়ে মার্টি ও কার্ল ফুর্নিয়ে সেই ভবনের ডিজাইন করেছেন৷ সেখানে আন্দোলিত ও সরল রেখার সমাহার দেখা যায়৷ ভবনের বাইরের অংশ কাপড়ের রুক্ষ কাঠামোর কথা মনে করিয়ে দেয়৷ ভেতরের অংশ অনেকটা খানদানি পোশাকের মতো নরম ও মনোরম রংয়ের ঐকতান সৃষ্টি করে৷
প্যারিসে লুই ভুইতোঁ ফাউন্ডেশন ভবনে ফ্যাশনের বদলে শিল্পকলার প্রদর্শনী থাকলেও চোখ ধাঁধানো এই অট্টালিকা কোম্পানির প্রতীক হয়ে উঠেছে৷ ভবনটি নিজস্ব গুণেই এক শিল্পসৃষ্টি হয়ে উঠেছে৷ বাইরের অংশ অনেকটা জাহাজের মতো দেখতে৷ কোম্পানির প্রধান ব্যার্না আর্নো মার্কিন তারকা স্থপতি ফ্র্যাংক গেরি-কে এই ভবন ডিজাইনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন৷
এ ক্ষেত্রে স্পষ্ট বার্তা তুলে ধরা হয়েছিল – ‘সবই আসলে সম্ভব'৷ ব্যার্না আর্নোর উপদেষ্টা জঁ-পোল ক্লাভেরি বলেন, ‘‘এমন অনবদ্য প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রযুক্তিগত জ্ঞান আমাদের ছিল না৷ স্থপতির সৃজনশীলতার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সৃষ্টি করতে একশোরও বেশি ইঞ্জিনিয়ার মিলে দুই বছর কাজ করেছেন৷''
আগামী মার্চ মাসে শানেল ব্র্যান্ডের নতুন সদর দফতর উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে৷ স্থাপত্যের আরও একটি উজ্জ্বল নিদর্শন পেয়ে প্যারিসের মানুষ নিশ্চয় খুশি হবেন৷
কাটিয়া লিয়ার্শ/এসবি
জনপ্রিয় শিল্পীদের চুরি
গত কয়েক বছরে একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে গান এবং শিল্পক্ষেত্রে। মামলা হয়েছে। ক্ষতিপূরণও দিতে হয়েছে শিল্পীদের। দেখে নেওয়া যাক তেমনই কিছু ঘটনা।
ছবি: picture alliance/dpa/J.Lo Scalzo
নিকি মিনাজ বনাম ট্রেসি চ্যাপম্যান
সম্প্রতি একটি মামলা প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে নিকি মিনাজ গায়ক এবং গান লেখক ট্রেসি চ্যাপম্যানকে চার লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। মিনাজ 'সরি' বলে একটি গান তৈরি করেছেন। যেখানে চ্যাপম্যানের 'বেবি ক্যান আই হোল্ড ইউ' গানটির কিছু অংশ ব্যবহার করেছেন। চ্যাপম্যানের কাছে ওই অংশটি ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করেছিলেন নিকি। চ্যাপম্যান রাজি হননি। এরপরেই চ্যাপম্যান মামলা করেন।
ছবি: AP Photo/picture alliance
লেড জেপেলিন বনাম স্পিরিট
রক মিউজিকের ইতিহাসে 'স্টেয়ারওয়ে টু হেভেন' অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গান। কিন্তু তা কি সত্যিই জিমি পেজ এবং রবার্ট প্লান্টের লেখা ছিল? স্পিরিট ব্যান্ডের গিটারিস্ট এবং গায়ক রান্ডি উলফ এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ২০১৪ সালে। ২০২০ সালে অবশ্য অ্যামেরিকার একটি আদালত জানিয়েছে, উলফের গান থেকে স্টেয়ারওয়ে টু হেভেনের কোনো অংশ চুরি করা হয়নি। যদিও তাতেও বিতর্ক থামেনি।
ছবি: picture-alliance/Photoshot
লানা ডেল রে বনাম রেডিওহেড বনাম দ্য হোলিস
লানা ডেলের গান 'গেট ফ্রি'য়ের সঙ্গে রেডিওহেডের গান 'ক্রিপ'এর বহু মিল। প্রায় সকলেই এ কথা স্বীকার করেন। রেডিওহেড তাই একাধিকবার দাবি করেছে, লানা ডেলের গানে তাদের ক্রেডিট দিতে হবে। কিন্তু রেডিওহেডের গানটি নিয়েও বিতর্ক আছে। বলা হয়, ১৯৭৪ সালে তৈরি হোলিসের গান 'দ্য এয়ার দ্যাট আই ব্রিদ' থেকে রেডিওহেড সুর এবং কথা চুরি করেছিল।
ছবি: Imago/PA Images/D. Lawson
স্যাম স্মিথ বনাম টম পেটি
২০১৪ সালে স্যাম স্মিথের 'স্টে উইথ মি' প্রচুরি বিতর্ক তৈরি করেছিল। শ্রোতাদের অনেকেই বলেছিলেন টম পেটির 'আই ওন্ট ব্যাক ডাউন'এর সঙ্গে স্যাম স্মিথের গানটির প্রচুর মিল। স্যাম স্মিথ গানের রয়্যালটি ভাগ করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এমন হতেই পারে।
ছবি: picture-allianc/empics/Y. Mok
রোবিন এবং উইলিয়ামস বনাম মারভিন গায়ে
রোবিন থিকে এবং ফ্যারেল উইলিয়ামসের 'ব্লার্ড লাইনস' খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু তখনই জানা যায়, গানটি মারভিন গায়ের 'গট টু গিভ ইট আপ' থেকে চুরি করা। রোবিন এবং উইলিয়ামসকে সাত মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানা দিতে হয়েছিল।
দুই সেকেন্ডের সাউন্ড ২০ বছরের মামলায় পরিণত হয়েছিল। প্রযোজক মোসেস দুই সেকেন্ডের একটি সাউন্ড নিয়েছিলেন বিখ্যাত জার্মান ব্যান্ড ক্রাফটওয়ার্কের 'মেটাল আফ মেটাল' থেকে। সাবরিনার একটি গানে তিনি সেটা ব্যবহার করেছিলেন। ইউরোপীয় কোর্ট পর্যন্ত সেই মামলা গড়িয়েছিল।
ছবি: picture-alliance/dpa/RMV via ZUMA Press/Mike Tudor
শাকিরা বনাম রামন আরিয়াস ভাস কুয়েজ
শাকিরাও চুরির অপরাধ থেকে মুক্ত থাকতে পারেননি। ২০১৪ সালে অ্যামেরিকার এক আদালত জানায়, তাঁর বিখ্যাত গান 'লোকা' রামন এরিয়াসের একটি গান থেকে চুরি করা। যদিও তার আগেই শাকিরার অ্যালবাম কয়েক লাখ বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।
ছবি: Getty Images/R.Juergens
ডিলানের নোবেল বক্তৃতা
মার্কিন সাংবাদিক অ্যান্ড্রিয়া পিটজার অভিযোগ করেন, বব ডিলানের নোবেল স্পিচের প্রথম ২০ টি বাক্য চুরি করা। বিখ্যাত উপন্যাস মবি ডিকের একটি অনলাইন ইন্টারপ্রিটেশন থেকে ডিলান ওই লাইনগুলি নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।