1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফ্যাসিবাদবিরোধী চলচ্চিত্র উৎসবে মানবাধিকার রক্ষার শপথ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩ ডিসেম্বর ২০২২

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছবির প্রদর্শনী কলকাতায়। একগুচ্ছ ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে সমকালের ভারতকে। এই মঞ্চ থেকে আওয়াজ উঠছে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার।

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সিনেমার মাধ্যমে
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সিনেমার মাধ্যমেছবি: Payel Samanta/DW

আগামী সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। প্রতি বছর এই দিনটিতে অধিকার রক্ষার শপথ নেয়া হয়। তার সপ্তাহখানেক আগে কয়েকটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সেই পর্বের আগাম উদযাপন কলকাতায়।

তিন ও চার ডিসেম্বর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী মহাজাতি সদনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফ্যাসিবিরোধী চলচ্চিত্র উৎসব। বিভিন্ন ভাষার ১৪টি কাহিনিচিত্র ও তথ্যচিত্র দেখানো হবে দুদিনের উৎসবে। আয়োজনে রয়েছে ফ্যাসিবাদ বিরোধীএকাধিক সংগঠন।

এই ছবিগুলির মাধ্যমে ভারতের সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতির বিভিন্ন পরিসরকে ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত কয়েক বছরে যে বিষয়গুলি আলোচনার কেন্দ্রে ছিল বা রয়েছে, তা হয়ে উঠেছে ছবির বিষয়। ছবি তৈরি করেছেন একঝাঁক প্রতিভাবান পরিচালক।

উৎসবের সূচিতে রয়েছে মুস্তাফা আমিনের "সিজ ইন দ্য এয়ার"। এর বিষয় কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলোপের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। অসমে এনআরসি প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক এখনো থামেনি। তাকে কেন্দ্র করে দেবশ্রী নাথের ছবি "নুর ইসলাম"। গোহত্যা রোখার নামে হিংসাকে বিষয় করেছে "লিঞ্চ নেশন"। পরিচালক শাহিন আহমেদ।

"আমাদের দেশে গত ৭৫ বছরে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে''

This browser does not support the audio element.

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থিদের পরাজয়ের পর দক্ষিণপন্থি শক্তির উত্থান হয়েছে। বিধানসভায় বামেদের কোনো প্রতিনিধিই নেই। দক্ষিণপন্থার উত্থানের কারণ খুঁজেছে দ্বৈপায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় ও কস্তুরী বসুর "বিড ফর বেঙ্গল"। 

কোভিড অতিমারি রুখতে লকডাউন করা হয়েছিল ভারতে। তার জেরে সাধারণ মানুষের জীবনে কতটা সংকট ঘনিয়েছে, তা বলা হয়েছে আদিত্য কাপুরের ছবি "দ্য সোশ্যাল ডিসট্যান্স"-এ।

উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে একতারা কালেকটিভ-এর "তুরুপ", দীপা ধনরাজের "উই হ্যাভ নট কাম হিয়ার টু ডাই", রীতেশ শর্মার "ঝিনি বিনি চাদরিয়া"। পরিচালক রীতেশ উপস্থিত রয়েছেন উৎসবে।

শুধু ছবির প্রদর্শনী নয়, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বার্তা দিতে থাকছে আলোচনাসভা। আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী প্রশান্ত ভূষণ, আদিবাসী অধিকারের পক্ষে লড়াকু সৈনিক হিমাংশু কুমার রয়েছেন আলোচক হিসেবে। সঙ্গে সাংবাদিক, অল্ট নিউজ-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহা ও মহম্মদ জুবেইর।

রয়েছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে সরব লিটল ম্যাগাজিন ও পত্রিকার পসরাছবি: Payel Samanta/DW

অনুষ্ঠানের অন্যতম বক্তা মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র। উৎসবের উপযোগিতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "হিটলার-মুসোলিনি-হলোকস্টের বিরুদ্ধে মানুষ মানবাধিকার রক্ষার শপথ নিয়েছিল। তারই ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তিন বছর পর ১৯৪৮ সালে ১০ ডিসেম্বরকে মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আমাদের দেশে গত ৭৫ বছরে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে শপথ নেওয়ার মঞ্চ এই উৎসব।"

দুদিনের অনুষ্ঠানকে আকর্ষণীয় করে তুলতে উৎসবের অঙ্গনে থাকছে রং-তুলির প্রতিবাদও। অভিজিৎ সেনগুপ্ত ও সোমশংকর রায় ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলছেন প্রতিবাদের ভাষা। রয়েছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে সরব লিটল ম্যাগাজিন ও পত্রিকার পসরাও।

অন্যতম আয়োজক কস্তুরী বসুর ছবি দেখানো হবে উৎসবে। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "শহরে চলচ্চিত্র উৎসব হয়। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মিছিল, সভা, আলোচনা হয়। কিন্তু এই বিষয়কে ঘিরে চলচ্চিত্র উৎসব হয়েছে বলে মনে পড়ে না। যেভাবে স্বাধীন চিন্তাভাবনাকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, তার বিরুদ্ধে এটা প্রতিবাদ।"

''স্বাধীন চিন্তাভাবনাকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে''

This browser does not support the audio element.

এই উৎসবের পরিপ্রেক্ষিতে উঠে আসছে "দ্য কাশ্মীর ফাইলস" ছবির কথা। এই সিনেমায় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপর অত্যাচারের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। খোদ কেন্দ্রীয় সরকার এই ছবির প্রচারে সহায়ক ভূমিকা নিচ্ছে। ফ্যাসিবিরোধী চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকদের প্রশ্ন, কেন সরকার এক বিশেষ ধরনের মতের পৃষ্ঠপোষকতা করছে? উল্টে ভিন্নমতকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

চলতি সময়ে উৎসবের আয়োজনকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্রবিদ্যার অধ্যাপক মানস ঘোষ। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ফ্যাসিবাদীরা শুধু প্রতিবাদীদের নিশানা করবে না। তারা ক্ষমতা বাড়াতে পারলে সাধারণ মানুষকেও আক্রমণ করবে। অতীতে জার্মানি, ইটালির অভিজ্ঞতা সেটাই বলে। এ সম্পর্কে জনতাকে সচেতন করতে এ ধরনের উৎসব জরুরি।"

অধ্যাপকের কথায় উঠে আসে পরিচালক আনন্দ পটবর্ধনের কথা। মানসের মতে, ফ্যাসিবাদ বিরোধী বিবিধ শিল্পমাধ্যমের মধ্যে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী পটবর্ধন। তাঁর পরিচালিত "রিজন" ছবির অংশও দেখানো হয়েছে উৎসবে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ