1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফ্রাংকফুর্ট বইমেলা

দেবারতি গুহ১৯ অক্টোবর ২০১২

গত রবিবার শেষ হলো বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলা ফ্রাংকফুর্ট বইমেলা৷ দুঃখের বিষয়, এবারও বাংলাদেশের একটিও স্টল ছিল না সেখানে৷ যাদের আসার কথা ছিল, তারা সেখানে নেই৷ স্টল ছিল বন্ধ!

শুধুমাত্র শেষ দুটি দিনেই সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার আছে ফ্রাংকফুর্ট বইমেলায়৷ কিন্তু তারপরও এবারের বইমেলাকে মনে হলো খানিকটা নিষ্প্রাণ, লোকজন কম, কিছুটা যেন অবহেলিত৷ এই উপলব্ধি হয়ত শুধুই আমার৷ কিন্তু এত বড় একটা বইমেলা, যেখানে দেশ-বিদেশের প্রায় ৭,০০০ প্রকাশক, প্রকাশনা সংস্থা হাজির, সেখানে বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধিত্ব না দেখতে পেয়ে, হতাশ তো হবারই কথা!

কী আর করা, অগত্যা খোঁজ করি বাংলাভাষী মানুষের৷ পেয়েও যাই অনেককে৷ তাঁদেরই একজন সালাউদ্দিন মোহাম্মদ ফারুক, যিনি বইপ্রেমিক তো বটেই, আবার ডয়চে ভেলের একজন পাঠকও৷ তিনি বাংলাদেশের এই অনুপস্থিতি সম্পর্কে বললেন, ‘‘ভিসা অথবা আমলাতান্ত্রিক কোনো জটিলতা বা অন্য কোনো অপরাগতা – যাই হোক না কেন এটা কোনো ‘এক্সকিউজ'-ই না৷ এটা আমাদের ‘ওভারকাম' করা উচিত যেভাবেই হোক৷ কারণ এটা আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের উপস্থাপন করার খুব বড় একটা সুযোগ৷ তাছাড়া আমাদের সংস্কৃতি তো দুর্বল নয়৷ এরপরও যে আমরা এখানে অনুপস্থিত, এটা সত্যিই দুঃখজনক৷''

বইমেলায় ভারতের একটি স্টলছবি: DW

ফ্রাংকফুর্ট বইমেলায় ভারত থেকে এবার এসেছিল প্রায় ৪০টি প্রকাশনা সংস্থা৷ এদের মধ্যে ছিল জুবান এবং নিয়োগী বুকসের মতো প্রকাশনা৷ আর ছিলেন কলকাতা বইমেলার ‘পাবলিশার্স এবং বুকসেলার্স গিল্ড'-এর সাধারণ সম্পাদক ত্রিদীব কুমার চ্যাটার্জি৷ এবারের ‘থিম দেশ' নিউজিল্যান্ডের স্টল প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, ‘‘ওদের যে মেন অডিটোরিয়াম, যেখানে সমুদ্রের মতো সেই ঢেউ এবং তার সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের অ্যাবোরিজিনাল ‘ডান্স' ও তাঁদের ‘পারফরম্যান্স' চলছিল৷ ওখানকার সভ্যতার কথা বলা হচ্ছিল৷ অদ্ভুতভাবে সাজিয়েছিল৷ সমুদ্র, কখনও বা জলপ্রপাতের গর্জন...সব মিলিয়ে ‘অ্যামেজিং'৷''

ত্রিদীব বাবুর চোখেও অবশ্য বাংলাদেশের অনুপস্থিতিটা ধরা পড়েছে৷ তিনি বললেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে এখানে যমুনা প্রকাশনা, ঢাকা বুক করেছিলেন আমার পাশের স্টলটি৷ বেচারি...শুনলাম যে তাঁরা ভিসা পান নি৷ এবং এর ফলে তাঁরা আসতেও পারেন নি৷ অথচ তাঁদের স্টলটা এখানে পড়ে থাকলো৷''

তবে বাঙালির মান রাখতে প্রতিবারের মতো এবারও ফ্রাংকফুর্ট বইমেলায় হাজির ভারতের অন্যতম সংস্থা ‘আনন্দ পাবলিশার্স'৷ ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবীর মিত্র নিজেই তুলে ধরলেন ফ্রাংকফুর্ট বইমেলার অনন্যতা৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমি এখানে আসি আমার শিক্ষার জন্য৷ পৃথিবীতে বইয়ের যে নানা রকম ‘ট্রেন্ড', তার যে গতি-প্রকৃতি, এটা জানবার একমাত্র উপায় হচ্ছে এই ফ্রাংকফুর্ট বইমেলা৷''

বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলা হলেও, ফ্রাংকফুর্ট বইমেলায় কিন্তু বই নয়, বইয়ের রাইটস বা সত্ত্ব বিক্রি হয়৷ তাই সুবীর মিত্র জানালেন যে, তাঁরা তাদের প্রায় ৩,০০০ বইয়ের সামান্য একটা অংশই ফ্রাংকফুর্টে আনতে পারেন৷ সে জন্য বিক্রির কোনো প্রশ্নই ওঠে না৷ তবে বাংলা বই বিদেশি ভাষাতে অনুবাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আনন্দ৷ যেমন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি বই জার্মান ভাষায় অনুবাদের সম্ভাবনা রয়েছে, বলেন তিনি৷

এ কাজটা অবশ্য বেশ ক'বছর ধরেই করছে জার্মানিতে অবস্থিত প্রকাশনা সংস্থা ‘দ্রৌপদী'৷ এই সংস্থার প্রধান ক্রিস্টিয়ান ভাইস জানান যে, মহাশ্বেতা দেবীর বেশ কয়েকটি গল্প-উপন্যাসের পর আগামী বছর নবারুণ ভট্টাচার্য্যের ‘হারবার্ট' উপন্যাসটি অনুবাদ করতে চলেছেন তারা৷

এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ দেখি অতি চেনা একটা মুখ৷ আব্দুল্লাহ আল-ফারূক৷ একেবারে মুক্ত হয়ে ঘুরছেন৷ সাথে মাইক্রোফোন নেই, আমার মতো সাক্ষাৎকার নেবার, বাঙালি খোঁজার গরজ নেই৷ শুধুই বই দেখা, ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন লেখকদের কথা শোনা, তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং নির্মল আনন্দ উপভোগ করা৷ কিন্তু এরপরও বুঝলাম বাংলাদেশের অনুপস্থিতি তাঁকে ব্যথিত করেছে৷ তিনি বললেন, ‘‘এর কারণটা কী জানি না৷ তবে এ ব্যাপারটা আমরা বারবারই লক্ষ্য করেছি যে, বাংলাদেশের নাম আছে তালিকায়, তাদের জন্য স্টলও বরাদ্দ করা আছে, কিন্তু সেই স্টল বন্ধ৷ আমার যেটা মনে হয় যে, বাংলাদেশে বহু নামি প্রকাশক আছেন, তাঁরা যদি দলবদ্ধভাবে এই ফ্রাংকফুর্ট বইমেলায় আসার চেষ্টা করেন, তাহলে তার একটা সুফল ফলতে পারে৷''

আবারও এ সত্যটা প্রকট হলো৷ না, বাংলাদেশের কোনো স্টল নেই৷ কিন্তু কেন? মাইনৎস শহর থেকে আসা অপু আলম জানালেন নতুন এক তথ্য৷ বললেন, ‘‘বাংলাদেশের যে একমাত্র স্টল, সেই স্টলটা এসে বন্ধ পেলাম৷ শুনলাম যে তারা নাকি প্রথম দিন এসে একটু লোক দেখানো খুলে চলে গেছেন৷ তারপর আর আসেন নাই৷''

কারণ যাই হোক না কেন, বিশ্বের বৃহত্তম এই বইমেলায় বাংলাদেশের একটা প্রতিনিধিত্ব থাকলে ভালোই হতো৷ আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম, ক্যাটালগ নিতে পারতাম, আর এখানে যাঁরা প্রবাসী বাঙালি আছেন, তাঁদেরও নিশ্চয় ভালো লাগতো খুব৷

আশার বিষয় এটাই যে, আগামী বছর কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশই হলো ‘অতিথি দেশ'৷ তাই ত্রিদীব চ্যাটার্জি ভাষায়, কলকাতা বইমেলা ২০১৩ বিশেষ একটা মাত্রা আনবে এই উপমহাদেশে৷ সামগ্রিক বাংলা সাহিত্য ও প্রকাশনাকে একই সঙ্গে আমরা কলকাতার বুকে দেখতে পারবো৷ দুই বাংলা সেখানে এক হবে৷ হবে একত্র৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ