1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণের দাবি

২৪ অক্টোবর ২০১১

মেলা শব্দটি শুনলেই একটি উৎসবমুখর মিলনকেন্দ্রের ছবি সবার চোখের সামনে ভেসে উঠে৷ তবে মেলার অনেক ধরণ ও প্রকারভেদ রয়েছে৷ তবে ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলায় না গেলে যেন কখনও ভাবাই সম্ভব নয় যে, সেটার রূপ-রস কতটা ব্যাপক এবং বিশাল৷

Mitarbeiter des niederlaendischen Logistikunternehmens Centraal Boekhuis stehen am Mittwoch (12.10.11) auf der 63. Buchmesse in Frankfurt am Main an einem aus Buechern gebauten Tresen. Auf der Buchmesse sind noch bis Sonntag (16.10.11) rund 7.500 Aussteller aus etwa 110 Laendern vertreten. (zu dapd-Text) Foto: Sebastian Willnow/dapd
ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার লবিছবি: dapd

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন৷ পঞ্চদশ শতকে ফ্রাঙ্কফুর্টের অদূরে মাইন্সে ছাপাখানা আবিষ্কার করেন ইয়োহানেস গুটেনব্যার্গ৷ তখন থেকেই তিনি তাঁর আবিষ্কৃত ছাপাখানার উপকরণ এবং ছাপানো বই-পুস্তক বিক্রির জন্য ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে যেতেন৷ সেই থেকে ধীরে ধীরে জার্মানি ও ইউরোপের নানা প্রান্ত থেকে বই ও ছাপাখানার সাথে জড়িত মানুষ ফ্রাঙ্কফুর্টমুখী হতে শুরু করেন৷ এরপর ঐতিহাসিক পট পরিবর্তনের কারণে সেখানে বইপ্রেমীদের সমাগম বিভিন্ন সময় বাধাগ্রস্ত হলেও শেষ পর্যন্ত ১৯৪৯ সালে এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয় জার্মান প্রকাশক সমিতি৷ তবে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা আন্তর্জাতিক চেহারা পায় ১৯৬৪ সাল থেকে৷

অঙ্কুর প্রকাশনীর মেসবাহুদ্দীন আহমেদছবি: DW

কালক্রমে এই বইমেলায় যোগ হচ্ছে আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক নানা সুযোগ-সুবিধা ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো৷ বইমেলা শুনলেই অধিকাংশ মানুষ ভেবে থাকেন বই প্রদর্শনীর পাশাপাশি কেনা-বেচার সুযোগ নিশ্চয় সেখানে থাকবে৷ কিন্তু ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা এখন আর সেই পর্যায়ে নেই৷ এই মেলা পরিণত হয়েছে বইয়ের জগৎ নিয়ন্ত্রণকারী প্রকাশক ও লেখকদের মালিকানাধীন উপকরণসমূহ বাজারজাতকরণের স্থানে৷ বিশেষ করে কোন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান যদি কোন বই প্রকাশ কিংবা অনুবাদ করতে চায়, তাহলে সেই অধিকার তাকে কিনতে হবে স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান বা এজেন্টের কাছ থেকে৷ আর সেই অধিকার কেনা-বেচার জায়গা হলো এই বইমেলা৷ ফলে এটিকে অনেকে স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে তুলনা করেন৷ কারণ এই স্বত্বাধিকার কেনা-বেচায় প্রতিদিন এই মেলা প্রাঙ্গণে কোটি কোটি ইউরোর চুক্তি হয়ে থাকে৷

অবশ্য, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ভিত্তিক আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে ছাপানো বইয়ের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে ই-বুকের ধারা৷ ফলে ছাপানো বইকে এখন পাল্লা দিতে হচ্ছে ডিজিটাল প্রকাশনার সাথে৷ তাই বইয়ের প্রকাশনার মান এতোটা উন্নত করতে হচ্ছে প্রকাশকদের যাতে পাঠক এখনও ছাপানো বইয়ের দিকে ঝোঁকেন৷ সে কারণেই হয়তো ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলায় বিশেষভাবে চোখে পড়ে ছাপানো বইগুলোকে নানা ঢঙে উপস্থাপনার প্রচেষ্টা৷ এছাড়া শিশুদের বইগুলোতে নানা আকার-আকৃতি ও চমকের সমাহার৷ তবে এবারের বইমেলায় ই-বুকের ব্যাপকতার ফলে স্বত্বাধিকার আইন লঙ্ঘনের হার বৃদ্ধির বিষয়টি ছিল প্রায় সব আলোচনার আসরে৷ কারণ ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেকে অবৈধভাবে বই প্রকাশ ও বিনামূল্যে বই ডাউনলোড করে পড়ার সুযোগ নিয়ে থাকে৷ তাই সারাবিশ্বে ই-বুকের জগতে স্বত্বাধিকার আইনের যথাযথ প্রয়োগের পন্থা ও কৌশল নিয়ে বেশ বিতর্ক শোনা গেছে৷

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বাংলাদেশি দর্শকদের সাথে নাদিয়া আফরীন নূর, সোহরাব উদ্দীন সবুজ এবং আফজাল হোসেনছবি: DW

এছাড়া বইয়ের পাশাপাশি সময়ের বিবর্তনে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় জায়গা করে নিয়েছে চলচ্চিত্র ও কম্পিউটার প্রতিষ্ঠানগুলোও৷ এসব প্রতিষ্ঠানের স্টলগুলোর দিকে দর্শকদের আগ্রহের মাত্রা বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার পরিচালক ইউর্গেন বোস৷ বিশেষ করে তরুণ এবং প্রবীণদেরকেও বেশি করে দেখা গেছে জার্মান বেশ কিছু টেলিভিশন চ্যানেলের বই ও প্রকাশনা জগত নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানগুলোতে৷ প্রায় প্রতিটি হলেই বিশিষ্ট লেখক, সাহিত্যিকদের নিয়ে এসব আলোচনা পর্বের লাইভ সম্প্রচারের আসরে দেখা গেছে দর্শকদের ভিড়৷

এবারের বইমেলায় বিশ্বের ১০৬টি দেশ থেকে সাত হাজার ৩৮৪ টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে৷ পাঁচ দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক বইমেলায় দর্শক ছিল দুই লাখ ৮৩ হাজার৷ আয়োজকদের মতে, ২০১০ সালের বইমেলার চেয়ে এবার দর্শক বেড়েছে এক শতাংশ৷ যাহোক, সারাবিশ্বের এতো প্রতিষ্ঠানের সমাগম হলেও বাংলাদেশের কোন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ছিল না এবারের বইমেলায়৷ তাই বাংলাদেশের দর্শকদের মাঝে দেখা গেছে হতাশা ও আক্ষেপ৷ বইমেলায় উপস্থিত জার্মানির ডর্টমুন্ড ও স্টুটগার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা জানালেন তাদের মনোবেদনার কথা৷ তাঁরা সরকার ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আগামীতে এই মেলায় অংশগ্রহণে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান৷ অবশ্য কলকাতার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টলে বাংলা ভাষার বইয়ের সমারোহ দেখতে পেয়ে কিছুটা সান্ত্বনা খুঁজে পান মেলায় আসা বাংলা ভাষাভাষী মানুষ৷

বাংলাদেশের অঙ্কুর প্রকাশনীর পরিচালক মেসবাহুদ্দীন আহমেদ অবশ্য বলছেন, বাংলাদেশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা না পাওয়ার কারণেই এই বইমেলায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে অংশগ্রহণ সম্ভব হয় না৷ এই বইমেলায় যেহেতু বই কেনা-বেচা হয় না, তাই সরকারের আর্থিক সহযোগিতা ছাড়া এখানে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের যে কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই কষ্টসাধ্য৷ তবে আগামীতে বিশ্বের বৃহত্তম এই বইয়ের আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হলে সরকার এবং প্রকাশক সমিতি উভয় পক্ষকেই যৌথভাবে উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ