করোনা-সংকটের মাঝেই জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার জন্য এসেছেন এক রুশ তরুণ৷ কিন্তু ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে আটকে দেয়া হয়েছে তাকে৷ তা সত্ত্বেও নিজ দেশে ফিরতে রাজি নন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
মিখায়েল নভোসয়িলভ যে-কোনো কিছুর বিনিময়ে জার্মানির বার্লিনে লেখাপড়া করতে চান৷ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই তাই বিশেষ বিমানে মস্কো থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি৷ কিন্তু বাধ সেধেছে জার্মান ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ৷ করোনা ভাইরাসের কারণে জার্মানিতে যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, সেগুলোর একটির কারণে তাকে দেশটিতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি৷ ফলে, বিমানবন্দরের ট্রানজিট জোনে আটকে আছেন নভোসয়িলভ৷ ফিরতি বিমান না থাকায় দেশেও ফিরতে পারছেন না তিনি৷
জার্মানিতে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে জীবন
করোনা-সংকট সত্ত্বেও জার্মানি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পথে ফেরার উদ্যোগ শুরু করছে৷ প্রথম পর্যায়ে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে৷ তবে প্রতিটি রাজ্য এ ক্ষেত্রে নিজস্ব পথ বেছে নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/A. Rentz
নতুন করে দৈনন্দিন জীবনের স্বাদ
প্রায় এক মাস কড়কড়ির পর জার্মানির মানুষ আবার কিছু স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছেন৷ কিন্তু দেশের সব প্রান্তে বিধিনিয়ম এক নয়৷ ১৬টি রাজ্য এ বিষয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷ কিছু রাজ্যে ২০শে এপ্রিল থেকে ৮০০ বর্গ মিটারের কম আয়তনের দোকানপাট খোলা হয়েছে৷ তবে এমন অভিজ্ঞতার জন্য বার্লিনের মতো কিছু রাজ্যের মানুষকে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে৷
ছবি: Reuters/A. Gebert
যত মত, তত পথ
জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া অবিলম্বে দোকানবাজার খোলার পথ বেছে নিয়েছে৷ বন শহরের অনেক মানুষ চুটিয়ে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন৷ আরো এক ধাপ এগিয়ে এ রাজ্যে এমনকি হবু মায়েদের প্রয়োজনীয় পণ্যের বড় দোকান খোলার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/A. Rentz
সাইকেল কেনার উৎসাহ
ডিন্সলাকেন শহরে সোমবার সাইকেলের দোকান খোলার পর নতুন সাইকেল কেনার আশায় অনেক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন৷ জার্মানির সব রাজ্যেই সাইকেল, বই ও গাড়ির দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ অন্যান্য দোকানের মতো এ ক্ষেত্রে আয়তন সংক্রান্ত কোনো বিধিনিষেধ থাকছে না৷
ছবি: Getty Images/L. Baron
ব্যবসা-বাণিজ্য আবার চালু
দোকানের মালিকরা আবার ক্রেতাদের স্বাগত জানাতে পেরে খুবই সন্তুষ্ট৷ বসন্ত উপলক্ষ্যে কিছু ছাড় দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন অনেকে৷ স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের লুডভিগসবুর্গ শহরে এক দোকানের সামনে লেখা আছে ‘‘আমরা ফিরে এসেছি৷ আপনাদের আবার দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে৷’’
ছবি: Getty Images/AFPT. Keinzle
আবার স্কুলে ফেরার আনন্দ
কিছু রাজ্যে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে আবার স্কুলে ফিরতে পারছে৷ বার্লিন, ব্রান্ডেনবুর্গ ও স্যাক্সনি রাজ্য বেশি বয়সের শিক্ষার্থীরা ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি ও মূল পরীক্ষার জন্য সোমবার থেকে স্কুল ভবনে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে৷ জার্মানির বেশিরভাগ রাজ্যে ৪ঠা মে থেকে শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগ পাবে৷ শুধু বাভেরিয়া রাজ্যে ১১ই মে পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Michael
চিড়িয়াখানা ও মিউজিয়ামও দরজা খুলছে
কড়াকড়ির কারণে জার্মানির চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কগুলিও বন্ধ রাখা হয়েছিল৷ কয়েকটি রাজ্যে সেই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে৷ মেকলেনবুর্গ-ওয়েস্টার্ন পমেরানিয়া, ব্রান্ডেনবুর্গ ও রাইনল্যান্ড প্যালেটিনেট রাজ্য চিড়িয়াখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এই তিনটি এবং আরো কিছু রাজ্যে মিউজিয়ামও খোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/L. Kuegeler
মাস্ক পরার চল বাড়ছে
কিছু মানুষ স্বেচ্ছায় প্রকাশ্যে মাস্ক পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ জার্মানির কিছু অঞ্চলে অবশ্য আরো বেশি মাস্ক-পরা মানুষ চোখে পড়ছে৷ দেশজুড়ে বাধ্যতামূলক না হলেও কয়েকটি রাজ্য ও পৌর কর্তৃপক্ষ এই নিয়ম চালু করছে৷ যেমন স্যাক্সনি রাজ্যে এপ্রিল মাস থেকে ট্রাম-বাস বা ট্রেনে এবং দোকানবাজারে মাস্ক পরা অথবা অন্য কোনো উপায়ে মুখ ও নাক ঢাকা বাধ্যতামূলক৷ বাভেরিয়াসহ আরো কিছু রাজ্যেও এমন নিয়ম চালু হয়েছে৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
ব্যবধান বজায় রাখুন!
গোটা দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না৷ বাসার মানুষ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে৷ যে সব দোকান খোলা হচ্ছে, সেখানেও নানাভাবে ক্রেতাদের মধ্যে এই দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/L. Baron
8 ছবি1 | 8
রাশিয়ার এই শিক্ষার্থী বার্লিনের হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেমিস্টার পড়তে চান৷ নতুন সেমিস্টার শুরুর কয়েকদিন আগে ১৭ এপ্রিল তিনি জার্মানিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি আছে এমন ১৩৩ রুশ নাগরিককে বয়ে আনা এক বিশেষ ফ্লাইটে ফ্রাঙ্কফুর্ট অবধি পৌঁছাতে সক্ষম হন৷ কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়, করোনা ভাইরাসের কারণে ১৭ মার্চ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের বিশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ কোনো কারণ দেখাতে না পারলে জার্মানিতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না৷
নভোসয়িলভ সার্বিয়ায় সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়ছেন৷ তিনি জানান, শীঘ্রই তার স্নাতক শেষ হয়ে যাবে৷ তাই এই সেমিস্টার বিদেশে পড়তে না পারলে ভবিষ্যতে তার পক্ষে এই সুযোগ নেয়া আর সম্ভব হবে না৷
এবারই প্রথম তাকে জার্মানিতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না, এমন নয়৷ গতমাসে বার্লিন বিমানবন্দরে তাকে আটকে দেয়া হয়েছিল, কেননা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি যে লেখাপড়ার সময় সেই শহরে বসবাসের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন তিনি৷ একটি চুক্তিপত্রে শুধুমাত্র একটি স্বাক্ষর ছিল না বলে সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল বলে দাবি করেছেন মিখায়েল নভোসয়িলভ৷
জার্মানির কেন্দ্রীয় পুলিশ জানিয়েছে, জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকির কথা বিবেচনা করে নভোসয়িলভকে জার্মানিতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না৷ তবে, বিমানবন্দরের কর্মীরা তাকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে বলে জানা গেছে৷