ফ্রাঙ্কো-জার্মান চুক্তিতে গুরুত্ব পায়নি শরণার্থী ইস্যু
২২ জানুয়ারি ২০১৯
‘এলিসি চুক্তি'কে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেল ফ্রান্স ও জার্মানি৷ নতুন যে চুক্তি হয়েছে, তাতে ইইউ নীতি সংস্কার, অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও স্থান পায়নি শরণার্থী ইস্যু৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
বিজ্ঞাপন
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল মঙ্গলবার আখেনে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন করেছেন, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এর ফলে দুই দেশের নাগরিকদের জীবনমানের আরো উন্নয়ন সাধিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে ‘এলিসি চুক্তির' ৫৬তম বর্ষপূর্তিতে এই চুক্তি নবায়ন করা হলো৷
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে ম্যার্কেল বলেন,‘‘ এর মাধ্যমে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তি রচিত হবে৷ এর দ্বারা আমরা নিজেদের প্রতিশ্রুতিগুলোর প্রতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হবো, যা আমাদের সবধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে৷ আমরা হাতে হাত রেখে সব কঠিন চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করবো৷''
মাক্রোঁ বলেন, ‘‘এই চুক্তি সম্পর্কে যারা মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়াচ্ছে, তারা মূলতঃ অতীত অপরাধের পুনরাবৃত্তি করতে চাইছে৷''
এলিসি চুক্তি হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাত্র ১৮ বছর পর৷ ১৯৬৩ সালের ২২ জানুয়ারি তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গল এবং জার্মান চ্যান্সেলর কনরাড আডেনাওয়ের ঐতিহাসিক এলিসি চুক্তি সই করেছিলেন৷ ঐ চুক্তির ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন, সহযোগিতার অঙ্গীকার করা হয়েছিল৷ ঐ চুক্তির কারণে সেই সময় থেকে এ পর্যন্ত ৮৪ লাখ জার্মান ও ফরাসি তরুণ ‘বিনিময় কর্মসূচি'তে অংশ নিয়ে দুই দেশ সফর করেছেন৷
কীভাবে বড় হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন
১৯৫৭ সালে পশ্চিম ইউরোপের ছয় দেশ নিয়ে শুরু হয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এরপর থেকে এর পরিসর বেড়ে এখন ২৮টি দেশ এর সদস্য৷ বিগত বছরগুলোতে এই জোটের পরিসর কীভাবে পরিবর্তিত হলো তা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Diezins
১৯৫৭: ছয় দেশের নতুন ইউরোপ
রোম চুক্তি সই করার মধ্য দিয়ে ১৯৫৭ সালের ২৫ মার্চ জোট বাধে জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও লুক্সেমবুর্গ৷ সমন্বিতভাবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যে সুবিধা নেয়াই ছিল ইউরোপীয়ান ইকোনোমিক কমিউনিটি বা ইইসি নামের এই জোটের লক্ষ্য৷ ইইসি ও অন্য জোটগুলো মিলে কয়লা, ইস্পাত ও পরমাণু সহযোগিতায় একসঙ্গে কাজ শুরু করলে এর নাম হয় ইউরোপীয়ান কমিউনিটিস বা ইসি৷
ছবি: picture-alliance/AP Images
১৯৭৩: ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্ক
যুক্তরাজ্য শুরুতে গররাজি থাকলেও ষাট এর দশকে এসে যোগ দেয়৷ ফ্রেঞ্চদের বিরোধিতার কারণে প্রথম দু’বার তাদের যোগ দেয়ার প্রচেষ্টা সফল হয়নি৷ পরে অবশ্য প্যারিস তাদের আপত্তি তুলে নেয় এবং আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্কের সঙ্গে ১৯৭৩ সালে ইসি-তে যোগ দেয় যুক্তরাজ্য৷ তবে সেজন্য ১৯৭৫ সালে নিজ দেশে একটি গণভোটেরও আয়োজন করতে হয় ব্রিটিশদের, যেখানে সিংহভাগ মানুষ এর পক্ষে ভোট দেয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Lipchitz
১৯৮১: গ্রিস
ছয় বছর চেষ্টার পর ১৯৮১ সালে দশম সদস্য হিসেবে ইসি-তে যোগ দেয় গ্রিস৷ ১৯৭৪ সালে ভূমধ্যসাগরের দেশটিতে সামরিক স্বৈরশাসনের পতন ও গণতন্ত্রের পুনর্বহালের সময় চলমান টানাপোড়েন জোটে যোগ দেয়ার বিষয়টিকে বাধাগ্রস্ত করে৷ এমনকি এই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশটির জোটভুক্ত হওয়া নিয়ে মতভিন্নতা ছিল অন্য দেশগুলোর মধ্যে৷
ছবি: Getty Images/C. Furlong
১৯৮৬: স্পেন ও পর্তুগাল
পাঁচ বছর পর জোটভুক্ত হয় স্পেন ও পর্তুগাল৷ গ্রিসের মতো তারাও ছিল নতুন গণতন্ত্রের দেশ৷ স্পেনের স্বৈরশাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো মারা যান ১৯৭৫ সালে৷ সে বছর পর্তুগালেও স্বৈরশাসক সরকারের পতনের পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: picture-alliance/G. Silva
১৯৯৫: অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড
ইসি আজকের দিনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে পরিণত হয় ১৯৯২ সালে মাস্ট্রিক্ট চুক্তি অনুযায়ী৷ ১৯৯৫ সালে নতুন রূপের এই জোটে যোগ দেয় অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড৷ শীতল যুদ্ধের সময় এই তিন দেশই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে৷ ফলে নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটো জোটভুক্ত হয়নি তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Bry
২০০৪: পূর্ব ইউরোপের দশ দেশ
২০০৪ সালের ১ মে ইইউ-তে সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণের ঘটনা ঘটে৷ চেক রিপাবলিক, এস্তোনিয়া, সাইপ্রাস, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, হাঙ্গেরি, মাল্টা, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও স্লোভেনিয়া যুক্ত হয়৷ এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য এটি একটি বিরাট উদ্যোগ ছিল৷ দুই দশক আগেও এই দেশগুলোতে কমিউনিজম ছিল৷ সেখান থেকে বেরিয়ে এসে গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদি রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছে এই উদ্যোগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০৭: রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া
২০০৪ সালেই রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া জোটভুক্ত হতে চেয়েছিল৷ কিন্তু জোট থেকে দেশ দু’টির বিচার বিভাগ ও রাজনীতিতে যে সংস্কারের শর্ত দেয়া হয়েছিল, তা পূর্ণ করতে দেরি হওয়ায় তাদের জোটভুক্তির প্রক্রিয়াও দেরি হয়৷ এই ব্লকের সবচেয়ে গরিব ও দুর্নীতিপরায়ণ দেশ এরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Donev
২০১৩: ক্রোয়েশিয়া
সবশেষ জোটভুক্ত দেশ ক্রোয়েশিয়া৷ স্লোভেনিয়ার পর রক্তক্ষয় করে যুগোস্লাভিয়া থেকে বেরিয়ে আসা দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ইইউ-তে যোগ দেয় তারা৷ যুগোস্লাভিয়া থেকে বিচ্ছেদ হওয়া আরো দু’টি দেশ মন্টেনেগ্রো ও সার্বিয়া ২০১২ ও ২০১৪ সাল থেকে জোটে যোগ দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/D. Puklavec
ভবিষ্যত: মেসিডোনিয়া ও আলবেনিয়া
২০১৮ সালের জুনে ইইউ সিদ্ধান্ত নেয় যে, আরো দু’টি বলকান দেশ, মেসিডোনিয়া ও আলবেনিয়াকে যুক্ত করার বিষয়ে কথাবার্তা শুরু করা যেতে পারে৷ তবে বসনিয়া-হ্যারৎসেগোভিনা ও কসভোর মতো অন্য যুগোস্লাভ দেশগুলোর বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Qian Yi
9 ছবি1 | 9
১৬ পৃষ্ঠার নতুন এই চুক্তিতে ম্যার্কেল এবং মাক্রোঁ নতুন অনেক দিক সংযুক্ত করেছেন৷ এগুলোর মধ্যে তরুণ সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচিসহ আছে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিতে পরিবর্তন৷ এছাড়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পরিবেশ ও জলবায়ু নীতিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷ তবে শরণার্থী ইস্যু তেমন গুরুত্ব পায়নি এতে৷
এছাড়া ফ্রাঙ্কো-জার্মান পার্লামেন্টারি চুক্তির আওতায় দুই পার্লামেন্টের মধ্যেও তথ্য বিনিময়ের অঙ্গীকার হয়েছে৷ পাশাপাশি ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার উন্নয়ন এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার বিষয়টিতে জোর দেয়া হয়েছে৷
দুই দেশের আইনপ্রণেতারা ‘ডিজিটাল ইউনিয়নের' উপর জোর দিয়েছেন৷ অর্থাৎ, মার্কিন জায়ান্ট অ্যাপল, গুগল ও অ্যামাজনের দৌরাত্ম্য কমাতে দুই দেশ ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের' ব্যাপারে একে অপরকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ এর মাধ্যমে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো এর আওতাভুক্ত হতে পারে৷