ডাচ ভোটাররা তাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু ফরাসি ভোটাররাও কি সেই কাজ করতে পারবেন? ফ্রান্সের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চরম দক্ষিণপন্থি নেত্রী প্রথম টেলিভিশন বিতর্কে কোণঠাসা হলেন৷
বিজ্ঞাপন
নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, জার্মানি – ইউরোপের তিনটি দেশে এ বছরের নির্বাচন বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ কোন দল বা প্রার্থীর জয় হলো, সেটা বড় বিষয় নয় – বরং চরম দক্ষিণপন্থি, ‘পপুলিস্ট' শিবির কতটা জনসমর্থন আদায় করতে পারে, সে দিকেই সবার নজর৷ ব্রেক্সিট ও ট্রাম্পের নির্বাচনের পর নেদারল্যান্ডস-এর ভোটাররা খেয়ার্ট ভিল্ডার্সের জয় থামাতে পেরেছেন৷
এবার ফ্রান্সের পালা৷ জাতীয় ফ্রন্ট-এর নেত্রী মারিন ল্য পেন যাতে আগামী প্রেসিডেন্ট না হতে পারেন, বাকি প্রার্থীরা সেই চেষ্টাই করছেন৷ সোমবার সন্ধ্যায় প্রার্থীদের প্রথম টেলিভিশন বিতর্কে তারই লক্ষণ দেখা গেল৷ জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার এখনো মনস্থির করতে পারেননি৷ তাই তাদের মন জয় করার চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা৷
মারিন ল্য পেনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় আশা এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ অথচ তিনি দুই বড় দলের প্রার্থীই নন৷ সমাজতান্ত্রিক দলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদের প্রশাসনে তিনি অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন বটে, কিন্তু এর আগে সরাসরি ভোটে দাঁড়াননি৷ তিনি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলির ব্যর্থতার নজির তুলে দেশের বর্তমান সমস্যাগুলির সমাধানে নতুন দাওয়াই প্রয়োগ করতে চান৷ প্রতিদ্বন্দ্বী ল্য পেন-এর ইসলাম ও ইউরোপ-বিদ্বেষের তুমুল সমালোচনা করেন মাক্রোঁ৷ ল্য পেন-এর অভিযোগ, মাক্রোঁ বিভিন্ন বিষয়ে নানা মন্তব্য করলেও কোনো বিষয়ে স্পষ্ট সিদ্ধান্তের কথা বলেন না৷
দেশের দুই প্রধান দলের প্রার্থীদের অবস্থা বড়ই করুণ৷ রক্ষণশীল দলের প্রার্থী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ফ্রঁসোয়া ফিয়ঁ দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে জর্জরিত৷ তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তও চলছে৷ অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী বেনোয়া আমঁ বড়ই দুর্বল অবস্থানে রয়েছেন৷ সোমবারের বিতর্কের পর জনমত সমীক্ষায় তালিকার শেষে স্থান পেয়েছেন৷ তবে বামপন্থি প্রার্থী জঁ-লুক মেলাঁশঁ দ্বিতীয় স্থান দখল করে ফিয়ঁ ও ল্য পেনকে যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়েছেন৷
আগামী ২৩ এপ্রিল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে সব প্রার্থীরা আসরে নামবেন৷ তার দু'সপ্তাহ পর তালিকার শীর্ষের দুই প্রার্থীর মধ্যে সরাসরি লড়াই হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটে৷
ইউরোপের দক্ষিণপন্থিরা ঠিক কতটা উগ্র?
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্দা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন নীতি নিয়ে অসন্তোষ ও উদ্বাস্তু সংকটের ফলে ইউরোপ জুড়ে দক্ষিণপন্থি দলগুলির পালে হাওয়া লেগেছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/T. Frey
ফ্রাউকে পেট্রি, অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)
‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ দলের নেত্রী ফ্রাউকে পেট্রির মতে সীমান্তে বেআইনি অনুপ্রবেশ রোখার শেষ পন্থা হিসেবে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে পারে, কেননা ‘‘সেটাই আইন’’৷ ইউরোনিন্দুক এএফডি দল ধীরে ধীরে সরকার তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরোধী একটি শক্তিতে পরিণত হয়েছে৷ ২০১৬ সালের মার্চের রাজ্য নির্বাচনে এএফডি ২৫ শতাংশ অবধি ভোট পায় ও চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের নিজের প্রদেশের বিধানসভায় দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী হয়৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
মারিন ল্য পেন, ন্যাশনাল ফ্রন্ট (ফ্রান্স)
ব্রেক্সিট ও যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় ফ্রান্সের ‘ফ্রঁ নাসিনাল’ বা ‘ন্যাশানাল ফ্রন্ট’-কে নতুন বেগ এনে দিতে পারে, বলে অনেকের ধারণা৷ জঁ-মারি ল্য পেন ১৯৭২ সালে দলটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ মারিন তাঁর বাবার কাছ থেকে দলের ভার নেন ২০১১ সালে৷ ন্যাশানাল ফ্রন্ট বা জাতীয় ফ্রন্টকে একটি জাতীয়তাবাদী দল, যারা অভিবাসন ও ইইউ বিরোধী প্রচারণায় অনুরূপভাবে সোচ্চার৷
ছবি: Reuters
গের্ট উইল্ডার্স, পার্টি অফ ফ্রিডম (নেদারল্যান্ডস)
ওলন্দাজ স্বাধীনতা দলের নেতা গের্ট উইল্ডার্স ইউরোপের বিশিষ্টতম দক্ষিণপন্থি রাজনীতিকদের মধ্যে গণ্য৷ ২০১৪ সালে তিনি একটি প্রকাশ্য জনসভায় প্রশ্ন তোলেন, জনতা দেশে বেশি না কম মরক্কান চায়৷ এ জন্য তাঁকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও, কোনো দণ্ড দেওয়া হয়নি৷ তাঁর দল ইইউ ও ইসলাম বিরোধী বলে পরিচিত৷ আগামী বছর নেদারল্যান্ডসে সংসদীয় নির্বাচন৷ জরিপে আপাতত উইল্ডার্সের দল এগিয়ে৷ বর্তমানে তাদের সংসদে ১৫টি আসন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Koning
নিকোস মিচালোলিয়াকোস, গোল্ডেন ডন (গ্রিস)
নিকোস মিচালোলিয়াকোস গ্রিসের নিও-ফ্যাসিস্ট দল ‘সোনালি সকাল’-এর প্রধান৷ ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁকে ও তাঁর দলের অন্যান্য বহু সতীর্থকে একটি অপরাধমূলক সংগঠন গঠনের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে নিকোস মিচালোলিয়াকোস-কে মুক্তি দেওয়া হয়৷ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সংসদীয় নির্বাচনে ‘সোনালি সকাল’ ১৮টি আসন জয় করে৷ দলটি অভিবাসন বিরোধী ও রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির পক্ষপাতী৷
ছবি: Angelos Tzortzinis/AFP/Getty Images
গাবোর ভনা, জবিক (হাঙ্গেরি)
হাঙ্গেরির অভিবাসন বিরোধী ও অর্থনৈতিক সংরক্ষণবাদী দল জবিক ২০১৮ সালের মধ্যে সরকারগঠনে সংশ্লিষ্ট হওয়ার আশা রাখে৷ তারা ইতিমধ্যেই হাঙ্গেরির তৃতীয় বৃহত্তম দল, ২০১৪-র নির্বাচনে তারা ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল৷ জবিক দল ইইউ-এর সদস্যতা সম্পর্কে গণভোট চায়৷ ২০১২ সালে জবিক সমকামী বিরোধী একটি বিল উপস্থাপন করেছিল, কেননা জবিক ‘যৌন বিচ্যুতি’ বা ভিন্নতাকে অপরাধ বলে ঘোষণা করার পক্ষে৷
ছবি: picture alliance/dpa
জিমি অকেসন, সুইডেন ডেমোক্র্যাটস
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর সুইডেন ডেমোক্র্যাটসদের নেতা জিমি অকেসন সুউডিশ টেলিভিশনের একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উভয় স্থানেই সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চ্যালেঞ্জ করে একটি আন্দোলন চলেছে৷’’ সুইডেন ডেমোক্র্যাটস-রা অভিবাসন সীমিত করতে চায়, তারা তুরস্কের ইইউ-তে যোগদানের বিরোধী ও সুইডেনের ইইউ সদস্যতা সম্পর্কে একটি গণভোট কামনা করে৷
ছবি: AP
নর্বার্ট হোফার, ফ্রিডম পার্টি (অস্ট্রিয়া)
অস্ট্রিয়ার জাতীয়তাবাদী ‘স্বাধীনতা দল’-এর নর্বার্ট হোফার সাম্প্রতিক রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ে মাত্র ৩০,০০০ ভোটে পরাজিত হয়েছেন সবুজ দলের প্রবীণ নেতা আলেক্সান্ডার ফান ডেয়ার বেলেন-এর কাছে৷ প্রথম পর্যায়ে হোফারই সর্বাধিক ভোট পেয়েছিলেন৷ ফ্রিডম পার্টির নেতা হোফার অস্ট্রিয়ার সীমান্ত আরো জোরদার করার জন্য আন্দোলন করছেন এবং অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা সীমিত করতে চান৷
ছবি: Reuters/L. Foeger
মারিয়ান কোৎলেবা, পিপলস পার্টি – আওয়ার স্লোভাকিয়া
কট্টর দক্ষিণপন্থি ‘গণদল – আমাদের স্লোভাকিয়া’-র নেতা মারিয়ান কোৎলেবাকে বলতে শোনা গেছে, ‘একটি অভিবাসীও বড় বেশি৷’ আরেকটি উপলক্ষ্যে তিনি ন্যাটো জোটকে একটি ‘অপরাধী সংগঠন’ বলে অভিহিত করেন৷ দলটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরো মুদ্রা এলাকা থেকে স্লোভাকিয়াকে বার করে আনতে চায়৷ ২০১৬ সালের মার্চ মাসের নির্বাচনে ‘আমাদের স্লোভাকিয়া’ দল আট শতাংশ ভোট পায় ও ১৫০ সদস্যের সংসদে ১৪টি আসন দখল করে৷