1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফ্রান্সের নির্বাচনে ল্য পেন মোটেই জয়লাভ করেননি

আন্দ্রেয়াস নল/এসবি২৩ মার্চ ২০১৫

ফ্রান্সের আঞ্চলিক নির্বাচনে ‘ন্যাশানাল ফ্রন্ট' দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে৷ আন্দ্রেয়াস নল অবশ্য মনে করেন, যে ইতিহাসে তাদের সেরা ফলাফল সত্ত্বেও দলের তেমন উৎসাহিত হবার কারণ নেই৷

Frankreich Paris Departementswahlen Marine Le Pen
মারিন ল্য পেনছবি: Kenzo Tribouillard/AFP/Getty Images

মারিন ল্য পেন প্রতীকী আচরণ ভালোই বোঝেন৷ দক্ষিণপন্থি ন্যাশানাল ফ্রন্ট দলের নেত্রী নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় তাঁর বার্তায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের যেভাবে অপমান করার চেষ্টা করলেন, তার মধ্যেই এর পরিচয় পাওয়া যায়৷ ‘ন্যাশানাল ফ্রন্ট ফ্রান্সের প্রথম দল' – এই স্লোগান নিয়েই গত বছর এই দল ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর প্রতিবাদি দলের তকমা ঝেড়ে ফেলে মূল স্রোতের রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছিলো৷ কিন্তু নির্বাচনের সন্ধ্যায় মারিন ল্য পেন-কে দাঁতে দাঁত চেপে মেনে নিতে হলো, যে তাঁর দল নিকোলা সার্কোজি-র রক্ষণশীল দল থেকে বেশ কয়েক শতাংশ কম ভোট পেয়েছে৷ অথচ জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী এতটা ফারাক হবার কথা ছিল না৷ তাই জয়ের উল্লাসের বদলে দলের নেত্রী সরকারের পদত্যাগের দাবির পুনরাবৃত্তি করে গেলেন৷

সাম্প্রতিক কিছু সাফল্যের পর বিরোধী দলের থেকে পিছিয়ে পড়া ন্যাশানাল ফ্রন্ট দলের জন্য সন্তোষজনক নয়৷ এটা স্পষ্ট, যে আগামী রবিবার দুই অবশিষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে রান-অফ ভোটে এই দক্ষিণপন্থি দল তেমন ভোট পাবে না৷

সরকারের জন্য আরও শিক্ষা

ন্যাশানাল ফ্রন্ট ধাক্কা খেলেও এই নির্বাচনে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েও সমাজতন্ত্রী দলের প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভাল্স-এর ভরাডুবি হয়েছে৷ জনমত সমীক্ষায় এ পূর্ববাণী তিনি খণ্ডন করতে পারেন নি৷ যদিও পরিস্থিতি মোটেই তেমন খারাপ ছিল না৷ কয়েক সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী ভাল্স ও প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ ইসলামপন্থি সন্ত্রাসের ফলে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় তাঁদের সক্রিয় ভূমিকার জন্য বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন৷ কিন্তু ভাল্স যেভাবে ন্যাশানাল ফ্রন্ট-কে শয়তানের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছিলেন, ভোটারদের তা পছন্দ হয় নি৷ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ফ্রান্সের সামনে বড় পরীক্ষা অপেক্ষা করছে৷ উলটে অনেক ভোটার মনে করেছিলেন, সরকারকে শিক্ষা দিতে গেলে ন্যাশানাল ফ্রন্ট দলকেই ভোট দেওয়া উচিত৷ শুধু শ্রমবাজারের পরিস্থিতি নিয়েই ভোটাররা উদ্বিগ্ন নয়, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত সমাজতন্ত্রী দলের ভাবমূর্তি সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্বলতার জন্যও অনেক ভোটার সরকারকে শিক্ষা দিতে চেয়েছেন৷

নিকোলা সারকোজিছবি: Dominique Faget/AFP/Getty Images

ফ্রান্সের সামনে অশান্ত সময়

সরকার ঘোষণা করেছে, সেই নেপোলিয়ানের আমলে দেশকে ছোট ছোট জেলা বা ‘দেপার্তেমঁ'-তে যেভাবে ভাগ করা হয়েছিলো, ২০২১ সালের মধ্যে তা দূর করে দেশকে কিছু বড় অঞ্চলে বিভক্ত করা হবে৷ কয়েক দশক ধরে কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক প্রশাসনের মধ্যে দায়িত্ব-বণ্টন নিয়ে লাগাতার বিরোধের পর এটা একটা যুগান্তকারী পরিবর্তন হতে পারে৷ বিশেষজ্ঞ ও শিল্প-বাণিজ্য জগতও এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে৷ কিন্তু সংসদে সমাজতন্ত্রী দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও কয়েক দিন আগে এর ঠিক বিপরীত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ ‘দেপার্তেমঁ' বা জেলার কাঠামো অক্ষত থাকবে৷ উলটে তারা আরও অধিকার পাবে৷ নির্বাচনের দিনেই সংসদে এই প্রশ্নে ভোটাভুটি হচ্ছিলো৷ ফলে সেটি নির্বাচনি পরিহাস ও সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারের দুর্বলতাই তুলে ধরেছে৷

বলা বাহুল্য, ন্যাশানাল ফ্রন্টের নেত্রী এমন সুযোগ হাতছাড়া করেন নি৷ অথচ দলের মূল বিষয় – অর্থাৎ অভিবাসন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অর্থনীতি ইত্যাদি এবারের নির্বাচনে তেমন গুরুত্ব পায় নি৷ তা সত্ত্বেও দল নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলো৷ তার উপর চরম দক্ষিণপন্থি বিদ্রোহী দল হওয়া সত্ত্বেও ন্যাশানাল ফ্রন্ট আইন মেনে যথেষ্ট নারী প্রার্থীর মনোনয়ন দিতে পেরেছিলো৷ এমনকি সরকারি সমাজতন্ত্রী দলও তা পারে নি৷

প্রেসিডেন্ট মারিন ল্য পেন?

সারা দেশে স্থানীয় পর্যায়ে ন্যাশানাল ফ্রন্টের উপস্থিতি বাড়ছে, নেত্রী হিসেবে মারিন ল্য পেন-এর জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে৷ তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী যখন ল্য পেন-এর প্রেসিডেন্ট হবার সম্ভাবনা সম্পর্কে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন, তখন সেটা বাড়াবাড়ি হয়ে যায়৷ ন্যাশানাল ফ্রন্টের ক্ষমতার সীমা আছে৷ শার্ল দ্য গোল-এর উত্তরসূরি দলের সম্মিলিত ক্রোধ সত্ত্বেও এটা ঘটনা, যে ল্য পেন-এর প্রেসিডেন্ট হবার সম্ভাবনা সত্যি বড় ক্ষীণ৷ ফ্রান্সের ভোটাররা ফরাসি প্রজাতন্ত্র ও ইউরোপীয় ভাবাদর্শ ছাড়ার মতো ধৃষ্টতা দেখাতে চান না৷

আন্দ্রেয়াস নল, ডয়চে ভেলেছবি: Privat

কিন্তু মারিন ল্য পেন আগামী মাসগুলিতে রাজনৈতিক মধ্যপন্থিদের আরও কাছে টানার চেষ্টা করবেন৷ বর্তমান নির্বাচনি প্রচারের সময়ই মূল বিষয়গুলি স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ রক্ষণশীল ইউএমপি দলের নেতা ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজি বিদেশিদের নিজস্ব সংস্কৃতির বদলে ফরাসি সংস্কৃতি গ্রহণ করার পক্ষে সওয়াল করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন৷ সাফল্যের জোয়ারে তিনি এই সব বিষয় হাতছাড়া করবেন না৷

২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ন্যাশানাল ফ্রন্ট শক্তিশালী হয়ে উঠলে তার পরিণাম কী হবে, তা সবাই জানে৷ ল্য পেন রান-অফ ভোট পর্যন্ত পৌঁছবেন এবং তারপর তাঁর পরাজয় হবে – এটা প্রায় নিশ্চিত৷ ফলে প্রথম পর্যায়েই এই নির্বাচনের ফয়সালা হয়ে যাবে৷ রান-অফ ভোটে ল্য পেন-এর প্রতিদ্বন্দ্বীরই জয়ের সম্ভাবনা বেশি৷ ফ্রান্সের কোন্দলে জর্জরিত বামপন্থি শিবিরের জন্য তা প্রায় মৃত্যুদণ্ডের সমান হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ