রবিবার থেকে দুই পর্বে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরু হচ্ছে৷ সে দেশের রাজনৈতিক কাঠামোর বিশেষত্ব কী? বাকি বিশ্বের কাছে এবারের নির্বাচনের গুরুত্বই বা কী?
বিজ্ঞাপন
রবিবার ২৩শে এপ্রিল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্ব৷ দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ই মে৷ প্রথম পর্বে ১১ জন প্রার্থীই প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ পাচ্ছেন৷ তাঁদের মধ্যে যে দুই প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন, তাঁদের মধ্যে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দ্বিতীয় পর্বে৷ কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি বৈধ ভোট পেলে অবশ্য দ্বিতীয় পর্বের প্রয়োজন হবে না৷ ফ্রান্সের বর্তমান রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ইতিহাসে অবশ্য আজ পর্যন্ত মাত্র এক বার এমনটা ঘটেছে৷
জনমত সমীক্ষায় আপাতত সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন দুই প্রার্থী৷ অথচ তাঁরা কেউই মূল স্রোতের দুই প্রধান রাজনৈতিক শিবির – রক্ষণশীল বা সমাজতন্ত্রী দলের নন৷ সবচেয়ে তরুণ প্রার্থী – মাত্র ৩৯ বছর বয়স্ক এমানুয়েল মাক্রোঁ মধ্যপন্থি প্রার্থী হিসেবে আসরে নেমেছেন৷ ‘এগিয়ে চলো' নামের এক আন্দোলনের নেতা তিনি৷ তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন চরম দক্ষিণপন্থি ন্যাশানাল ফ্রন্ট দলের নেত্রী মারিন ল্য পেন৷ তাঁদের ঠিক পরেই রয়েছেন রক্ষণশীল দলের প্রার্থী ফ্রঁসোয়া ফিয়ঁ৷ তারপর ব়্যাডিকাল বাম প্রার্থী জঁ লুক মেলাঁশোঁ৷ সমাজতন্ত্রী দলের প্রার্থী বেনোয়া আমোঁ সমর্থনের বিচারে খুবই পিছিয়ে রয়েছেন৷ শেষ পর্যন্ত যেই জয়ী হোন না কেন, তিনি আগামী ১৪ই মে-র মধ্যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ-এর কাছ থেকে কার্যভার গ্রহণ করবেন৷
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরেও গরম থাকবে ফ্রান্সের রাজনৈতিক জগত৷ কারণ তার ঠিক পর – অর্থাৎ ১১ ও ১৮ই জুন সংসদ নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে৷ এমানুয়েল মাক্রোঁ যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাঁর পক্ষে সংসদ নির্বাচনে লড়াই করা কঠিন হবে, কারণ মাত্র এক বছর আগে তাঁর আন্দোলন শুরু হয়েছিল৷ তার কাঠামো এখনো পাকাপোক্ত হয়নি৷ সংসদ নির্বাচনে প্রতিষ্ঠিত দলগুলির সম্ভাবনাই বেশি৷ সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সংঘাত অনিবার্য৷
ফ্রান্সের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আন্তর্জাতিক মঞ্চেও বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ প্রথমত, সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে এমন মাত্রার অনিশ্চয়তা এর আগে কখনো দেখা যায়নি৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যতও অনেকটাই এবারের নির্বাচনের উপর নির্ভর করছে৷ মারিন ল্য পেন-এর মতো ইইউ ও ইউরো-বিরোধী নেত্রী ক্ষমতায় এলে এই রাষ্ট্রজোটের মৌলিক কাঠামো বড় ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তাছাড়া নেদারল্যান্ডস-এ জনমোহিনী পপুলিস্ট রাজনৈতিক শক্তির পরাজয়ের পর ল্য পেন-এরও একই দশা হলে ইউরোপ হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে৷
অন্যদিকে মাক্রোঁ ইউরোপীয় ইউনিয়নের জোরালো প্রবক্তা৷ তিনি জার্মানির সমর্থন নিয়ে ইউরোপে সামাজিক সুরক্ষার কাঠামো আরও জোরদার করতে চান৷ তাঁর সম্ভাব্য জয়কে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক মহল৷
ইউরোপের দক্ষিণপন্থিরা ঠিক কতটা উগ্র?
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্দা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন নীতি নিয়ে অসন্তোষ ও উদ্বাস্তু সংকটের ফলে ইউরোপ জুড়ে দক্ষিণপন্থি দলগুলির পালে হাওয়া লেগেছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/T. Frey
ফ্রাউকে পেট্রি, অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)
‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ দলের নেত্রী ফ্রাউকে পেট্রির মতে সীমান্তে বেআইনি অনুপ্রবেশ রোখার শেষ পন্থা হিসেবে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে পারে, কেননা ‘‘সেটাই আইন’’৷ ইউরোনিন্দুক এএফডি দল ধীরে ধীরে সরকার তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরোধী একটি শক্তিতে পরিণত হয়েছে৷ ২০১৬ সালের মার্চের রাজ্য নির্বাচনে এএফডি ২৫ শতাংশ অবধি ভোট পায় ও চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের নিজের প্রদেশের বিধানসভায় দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী হয়৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
মারিন ল্য পেন, ন্যাশনাল ফ্রন্ট (ফ্রান্স)
ব্রেক্সিট ও যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় ফ্রান্সের ‘ফ্রঁ নাসিনাল’ বা ‘ন্যাশানাল ফ্রন্ট’-কে নতুন বেগ এনে দিতে পারে, বলে অনেকের ধারণা৷ জঁ-মারি ল্য পেন ১৯৭২ সালে দলটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ মারিন তাঁর বাবার কাছ থেকে দলের ভার নেন ২০১১ সালে৷ ন্যাশানাল ফ্রন্ট বা জাতীয় ফ্রন্টকে একটি জাতীয়তাবাদী দল, যারা অভিবাসন ও ইইউ বিরোধী প্রচারণায় অনুরূপভাবে সোচ্চার৷
ছবি: Reuters
গের্ট উইল্ডার্স, পার্টি অফ ফ্রিডম (নেদারল্যান্ডস)
ওলন্দাজ স্বাধীনতা দলের নেতা গের্ট উইল্ডার্স ইউরোপের বিশিষ্টতম দক্ষিণপন্থি রাজনীতিকদের মধ্যে গণ্য৷ ২০১৪ সালে তিনি একটি প্রকাশ্য জনসভায় প্রশ্ন তোলেন, জনতা দেশে বেশি না কম মরক্কান চায়৷ এ জন্য তাঁকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হলেও, কোনো দণ্ড দেওয়া হয়নি৷ তাঁর দল ইইউ ও ইসলাম বিরোধী বলে পরিচিত৷ আগামী বছর নেদারল্যান্ডসে সংসদীয় নির্বাচন৷ জরিপে আপাতত উইল্ডার্সের দল এগিয়ে৷ বর্তমানে তাদের সংসদে ১৫টি আসন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Koning
নিকোস মিচালোলিয়াকোস, গোল্ডেন ডন (গ্রিস)
নিকোস মিচালোলিয়াকোস গ্রিসের নিও-ফ্যাসিস্ট দল ‘সোনালি সকাল’-এর প্রধান৷ ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁকে ও তাঁর দলের অন্যান্য বহু সতীর্থকে একটি অপরাধমূলক সংগঠন গঠনের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে নিকোস মিচালোলিয়াকোস-কে মুক্তি দেওয়া হয়৷ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সংসদীয় নির্বাচনে ‘সোনালি সকাল’ ১৮টি আসন জয় করে৷ দলটি অভিবাসন বিরোধী ও রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির পক্ষপাতী৷
ছবি: Angelos Tzortzinis/AFP/Getty Images
গাবোর ভনা, জবিক (হাঙ্গেরি)
হাঙ্গেরির অভিবাসন বিরোধী ও অর্থনৈতিক সংরক্ষণবাদী দল জবিক ২০১৮ সালের মধ্যে সরকারগঠনে সংশ্লিষ্ট হওয়ার আশা রাখে৷ তারা ইতিমধ্যেই হাঙ্গেরির তৃতীয় বৃহত্তম দল, ২০১৪-র নির্বাচনে তারা ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল৷ জবিক দল ইইউ-এর সদস্যতা সম্পর্কে গণভোট চায়৷ ২০১২ সালে জবিক সমকামী বিরোধী একটি বিল উপস্থাপন করেছিল, কেননা জবিক ‘যৌন বিচ্যুতি’ বা ভিন্নতাকে অপরাধ বলে ঘোষণা করার পক্ষে৷
ছবি: picture alliance/dpa
জিমি অকেসন, সুইডেন ডেমোক্র্যাটস
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর সুইডেন ডেমোক্র্যাটসদের নেতা জিমি অকেসন সুউডিশ টেলিভিশনের একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উভয় স্থানেই সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চ্যালেঞ্জ করে একটি আন্দোলন চলেছে৷’’ সুইডেন ডেমোক্র্যাটস-রা অভিবাসন সীমিত করতে চায়, তারা তুরস্কের ইইউ-তে যোগদানের বিরোধী ও সুইডেনের ইইউ সদস্যতা সম্পর্কে একটি গণভোট কামনা করে৷
ছবি: AP
নর্বার্ট হোফার, ফ্রিডম পার্টি (অস্ট্রিয়া)
অস্ট্রিয়ার জাতীয়তাবাদী ‘স্বাধীনতা দল’-এর নর্বার্ট হোফার সাম্প্রতিক রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ে মাত্র ৩০,০০০ ভোটে পরাজিত হয়েছেন সবুজ দলের প্রবীণ নেতা আলেক্সান্ডার ফান ডেয়ার বেলেন-এর কাছে৷ প্রথম পর্যায়ে হোফারই সর্বাধিক ভোট পেয়েছিলেন৷ ফ্রিডম পার্টির নেতা হোফার অস্ট্রিয়ার সীমান্ত আরো জোরদার করার জন্য আন্দোলন করছেন এবং অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা সীমিত করতে চান৷
ছবি: Reuters/L. Foeger
মারিয়ান কোৎলেবা, পিপলস পার্টি – আওয়ার স্লোভাকিয়া
কট্টর দক্ষিণপন্থি ‘গণদল – আমাদের স্লোভাকিয়া’-র নেতা মারিয়ান কোৎলেবাকে বলতে শোনা গেছে, ‘একটি অভিবাসীও বড় বেশি৷’ আরেকটি উপলক্ষ্যে তিনি ন্যাটো জোটকে একটি ‘অপরাধী সংগঠন’ বলে অভিহিত করেন৷ দলটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরো মুদ্রা এলাকা থেকে স্লোভাকিয়াকে বার করে আনতে চায়৷ ২০১৬ সালের মার্চ মাসের নির্বাচনে ‘আমাদের স্লোভাকিয়া’ দল আট শতাংশ ভোট পায় ও ১৫০ সদস্যের সংসদে ১৪টি আসন দখল করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
ফ্রান্সের নির্বাচনে কারা হবেন চূড়ান্ত প্রার্থী? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷