জার্মানি আগামী বছরই ঋণ নেওয়া বন্ধ করার তোড়জোড় করছে, কিন্তু ফ্রান্স বাজেট ঘাটতির ঊর্ধ্বসীমা শিথিল করার ডাক দিচ্ছে৷ ইউরো এলাকার প্রবৃদ্ধির ধীর গতির পক্ষে-বিপক্ষে শোনা যাচ্ছে নানা যুক্তি৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানি আগামী বছরই নতুন করে কোনো ঋণ না নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে৷ যদিও ইউক্রেনের চলমান সংকটের ফলে সেই পরিকল্পনা নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন খোদ জার্মান অর্থমন্ত্রী ভল্ফগাং শয়েবলে৷ এ দিকে ফ্রান্সের নতুন অর্থমন্ত্রী ইউরো এলাকার বাজেট ঘাটতির নিয়ম শিথিল করার পক্ষে সওয়াল করেছেন৷ কিন্তু জার্মান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান এমন প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে বলেছেন, একক মুদ্রা এলাকার মধ্যে কড়া নিয়ম মেনে না চললে মুদ্রা হিসেবে ইউরো-র বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থ বিষয়ক কমিশনারও ফ্রান্স-কে এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত নন৷ উল্লেখ্য, সদস্য দেশগুলির বাজেট ঘাটতির ঊর্ধ্বসীমা ৩ শতাংশে বেঁধে দেওয়া আছে৷
ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ চলছে জার্মানিতেও
শুধুমাত্র উন্নয়নশীল দেশেই দারিদ্র্যমোচনে সহায়তা করছে না ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প৷ নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এই উদ্ভাবন এখন উন্নত বিশ্বেও গুরুত্ব পাচ্ছে৷ জার্মানি এক্ষেত্রে সৃষ্টি করেছে উদাহরণ৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images
সিলভিয়ার গল্প
বাড়িতে বাড়িতে চিঠিপত্র বিলি করতে করতেই জার্মানির সিলভিয়া হ্যোয়েনটিংগার একটি বিষয় লক্ষ্য করেন৷ অনেক বাড়ির ছাদে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল৷ তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে, এসব প্যানেল পরিষ্কার করা হয় কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ক্ষুদ্রঋণের সন্ধান পান তিনি৷
ছবি: privat
দু’হাজার ইউরো দিয়ে শুরু
সিলভিয়া আবিষ্কার করেন, সোলার প্যানেল পরিষ্কারের কাজ তেমন কেউ করছে না৷ অথচ মাত্র দু’হাজার ইউরো দিয়ে মেশিন কিনে এই কাজ করা সম্ভব৷ কিন্তু সাধারণ ব্যাংক এত কম টাকা ঋণ দিতে রাজি নয়৷ সিলভিয়া তখন ক্ষুদ্রঋণের সহায়তা নেন৷
ছবি: DW/G.Rueter
জার্মানিতে ক্ষুদ্রঋণ
২০১০ সালের আগ পর্যন্ত উন্নত অর্থনীতির কারণে জার্মানিকে ক্ষুদ্রঋণের অনুপযুক্ত মনে করা হতো৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন৷ ২০১০ সালে জার্মান সরকার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় এদেশে চালু হয় ক্ষুদ্রঋণ তহবিল৷ এই তহবিল থেকে ঋণ নেয়ার হার দ্রুতই বাড়ছে৷
ছবি: Fotolia/apops
ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছে ৬০টি প্রতিষ্ঠান
জার্মান মাইক্রোফিন্যান্স ইন্সটিটিউটের ইয়র্গ শ্যুলমান জানান, জার্মানিতে বর্তমানে ৬০টির বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা দিচ্ছে৷ তাদের ঋণ দেওয়ার পরিমাণ তিন হাজার থেকে ২০ হাজার ইউরোর মধ্যে৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Fotolia/Guido Grochowski
চাহিদা বাড়ছে
শুধু জার্মানি নয়, গোটা ইউরোপেই ক্ষুদ্রঋণের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে৷ মার্কিন পত্রিকা ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের’ এক জরিপ বলছে, ইউরোপে ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের চাহিদা এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে৷ শুধু স্পেনেই এই সময়ের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের সহায়তা নিয়েছেন ৭৫ হাজার ব্যবসায়ী৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/dpa
সুদের হার লাভজনক নয়
ইয়র্গ শ্যুলমান জানান, জার্মানিতে ক্ষুদ্রঋণ দানের ক্ষেত্রে সুদের হার এখন মাত্র দশ শতাংশ৷ এই হার ঋণদাতাদের জন্য লাভজনক নয়৷ তবে সরকার এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে সহায়তা দিচ্ছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/dpa
সন্তুষ্ট সিলভিয়া
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে সোলার প্যানেল পরিষ্কারের কাজ শুরু করা সিলভিয়া হ্যোয়েনটিংগার কিন্তু সন্তুষ্ট৷ শুরুর দিকে বছরে আশিটির মতো কাজের অর্ডার পেতেন তিনি৷ এখন সেই অর্ডারের পরিমাণ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে৷ একেকটি অর্ডার থেকে তাঁর আয় তিন থেকে চারশো ইউরো৷ ফলে ঋণের টাকা শোধ করা কোনো বিষয়ই নয়৷
ছবি: Fotolia/Marco2811
ক্ষুদ্রঋণের জনক মুহাম্মদ ইউনূস
২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয় করেন মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক৷ বিশ্বের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে এই সম্মাননা অর্জন করে গ্রামীণ ব্যাংক৷ অধ্যাপক ইউনূস তাঁর ক্ষুদ্রঋণের ধারণা কাজে লাগিয়ে আশির দশকে ব্যাংকটি গড়ে তোলেন৷ বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের আরো অনেক দেশে সাফল্য দেখিয়েছে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প৷
ছবি: Getty Images
8 ছবি1 | 8
আসলে বাজেট ঘাটতি কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যয় সংকোচ কর্মসূচি নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক চলে আসছে৷ মূলত জার্মানির মতো কিছু দেশের চাপে অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে৷ অর্থাৎ ‘স্টিমুলাস প্যাকেজ' বা করের হার কমিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার পথে যাচ্ছে না ইউরো এলাকা৷
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইউরোপের পুঁজিবাজারে বেশ দরপতন ঘটেছে৷ এই সাময়িক অস্থিরতা সত্ত্বেও সার্বিকভাবে ইউরো এলাকা চাঙ্গা হয়ে উঠছে৷ সোমবার প্রকাশিত এক পূর্বাভাষ অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল ০.৪ শতাংশ৷ তবে বছরের বাকি সময় তা সামান্য কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে৷ বেকারত্বের হার কমারও তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ বিভিন্ন দেশে ব্যয় সংকোচ কর্মসূচির ফলে ক্রেতারা কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন৷ কিছু মহলের মতে, এর ফলে প্রবৃদ্ধির ধীর গতি দেখা যাচ্ছে৷
এদিকে ক্রাইমিয়ার পর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অস্থিরতার জের ধরে উত্তেজনা বাড়তে পারে, বাজারে এমন আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে৷ অ্যামেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রযুক্তিভিত্তিক কোম্পানিগুলির শেয়ারের দরপতন ঘটার ফলেও বাজার অশান্ত রয়েছে৷ মঙ্গলবার অবশ্য বাজার আবার কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে৷
নতুন প্রধানমন্ত্রী মাটেও রেনসি হাল ধরার পর থেকে ইটালি থেকে ইতিবাচক খবর পাওয়া যাচ্ছে, যদিও আগের সরকারগুলির সংস্কারের সুফল এবার পাওয়া যাচ্ছে৷ ঋণভার কমে ২.৮ শতাংশে নেমে গেছে৷ গ্রিস আবার বন্ড বাজারে প্রবেশ করবে বলে শোনা যাচ্ছিল৷ তবে তাতে কিছুটা বিলম্ব ঘটছে৷ সরকার ধীরে এগোতে চাইছে৷