মসজিদে আগুন লাগানোর চেষ্টা এবং দুই ব্যক্তিকে গুলি করার অপরাধে ফ্রান্সে ৮৪ বছর বয়সি এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
গত সোমবার ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর বাওয়ানের এক মসজিদের দরজায় আগুন লাগানোর চেষ্টা করেন ওই ব্যক্তি, এসময় দুজন তা দেখে ফেললে তাদের গুলি করেন তিনি৷
মসজিদে আগুন দেওয়ার চেষ্টা এবং ৭৪ ও ৭৮ বয়সি দুই ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে বুধবার ওই প্রবীণের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়৷ গুলিবিদ্ধরা বর্তমানে বাওয়ান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক৷
পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ না করলেও স্থানীয় গণমাধ্যম তাকে মেরিন লে পেনের ডানপন্থি জাতীয় ফ্রন্ট দলের ৮৪ বছর বয়সি প্রাক্তন প্রার্থী হিসাবে চিহ্নিত করেছে৷ এই পার্টির একজন মুখপাত্র জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএকে বলেছেন, ‘‘এটি সত্য, তবে ২০১৫ সালে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল৷’’
জার্মানির সব মসজিদ যেদিন সবার জন্য খোলা
তেসরা অক্টোবর৷ এই দিনে জার্মানির প্রায় এক হাজার মসজিদ দরজা খুলে দেয় অতিথিদের জন্য, ‘শুভ সম্প্রদায়, উন্নততর সমাজ’, এই আদর্শ নিয়ে৷ দিনটি আবার দুই জার্মানির পুনর্মিলন উপলক্ষ্যে জার্মান ঐক্য দিবসও বটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
জার্মানির মসজিদ – জার্মান ঐক্য
১৯৯৭ সাল থেকে জার্মান পুনরেকত্রীকরণ দিবসটিকে ‘মুক্ত মসজিদ দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে৷ পুনরেকত্রীকরণ দিবস সরকারি ছুটির দিন৷ কেন্দ্রীয় মুসলিম পরিষদের বিবৃতি অনুযায়ী, জার্মান জনগণের সঙ্গে মুসলিমদের যোগসূত্র এবং জার্মান ঐক্যের অঙ্গ হিসেবে মুসলিমদের তুলে ধরার জন্য এ দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়৷ এ দিন প্রায় এক লক্ষ অতিথি বিভিন্ন মসজিদে আসেন৷ ছবিতে বার্লিনের সেহিৎলিক মসজিদের সামনে অতিথি সমাগমের দৃশ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
মসজিদ সবার জন্য
এদিন জার্মানির মুসলিমরা অতিথিদের ইসলাম সম্পর্কে স্পষ্টতর ধারণা দিতে চায়৷ এছাড়া মসজিদ যে শুধু প্রার্থনার জায়গা নয়, বরং সম্প্রদায় তথা সমাজের জন্য দেখাসাক্ষাৎ ও মেলামেশার স্থান, সেটাও তুলে ধরা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Paul Zinken
আচার অনুষ্ঠান
যে কোনো ধর্মকে চিনতে হলে, তার আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে পরিচিত হওয়া প্রয়োজন৷ গির্জার সঙ্গে মসজিদের একটি তফাৎ হলো এই যে, মসজিদে ঢুকতে গেলে জুতো খুলে ঢুকতে হয়৷ এছাড়া নামাজ পড়ার আগে ওজু করার প্রথা রয়েছে৷ মুক্ত মসজিদ দিবসে জার্মান অতিথিরা এই সব রীতিনীতি সম্পর্কে জানতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
স্থাপত্য ও ইতিহাস
কোলনের কাছে হ্যুর্থ-এর এই মসজিদটির মতো অনেক মসজিদেই অতিথিদের ঘুরিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা থাকে৷ ফলে অতিথিরা ইসলামি স্থাপত্য, ইতিহাস ও সেই সঙ্গে মসজিদের দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পর্কে একটা ধারনা পান৷ জার্মানির মুসলিমদের সমাজজীবনে মসজিদের ভূমিকাও তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Baumgarten
জার্মানির অন্যতম বড় মসজিদ
ডুইসবুর্গের মেরকেজ মসজিদ হলো জার্মানির অন্যতম বড় মসজিদ৷ মসজিদটি খোলা হয় ২০০৮ সালে৷ ডুইসবুর্গের মুসলিম সমাজ মুসলিমদের জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির উপর বিশেষ জোর দেয়৷ অতিথিরা মসজিদটি ঘুরে দেখার, এছাড়া নামাজে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান৷ সবশেষে এক পেয়ালা চায়ের আমন্ত্রণও বাদ যায় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
অলিন্দ থেকে
তেসরা অক্টোবর অতিথিরা সেহিৎলিক মসজিদের ভিতরের বারান্দা থেকে মুসল্লিদের নামাজ পড়া দেখা ও শোনার সুযোগ পান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Hanschke
তসবিহ
ফ্রাংকফুর্টে মুক্ত মসজিদ দিবসে একটি তসবিহ পেলো এক কিশোর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Rumpenhorst
শুধু এদিনই দুয়ার খোলা নয়
জার্মানির মসজিদগুলি বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বোঝাপড়া বাড়ানোর জন্য অন্যান্য উপলক্ষ্যেও অতিথিদের অভ্যর্থনা জানিয়ে থাকে৷ ছবিতে মানহাইমের ইয়াভুজ সুলতান সেলিম মসজিদটিতে এসেছেন ক্যাথলিক যাজিকারা; তাঁরা একটি ক্যাথলিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য মানহাইমে এসেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভুল ধারণা দূর করা
ড্রেসডেনের মসজিদগুলিও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানে সচেষ্ট৷ আল-মোস্তাফা মসজিদের কর্মকাণ্ডে রয়েছে ইসলাম সম্পর্কে মসজিদের ইমামের মনোজ্ঞ ভাষণ৷ এছাড়া বার্তালাপ, আলোচনার পাশাপাশি স্বভাবতই থাকে অতিথি আপ্যায়নের জন্য খাবারদাবারের ব্যবস্থা৷ যে শহরে ইসলামবিরোধী পেগিডা আন্দোলন মাথা চাড়া দেয়, সেখানে এই উদ্যোগের গুরুত্ব অসীম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kahnert
9 ছবি1 | 9
তদন্তকারীরা বলছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন প্যারিসের নটরডেম ক্যাথেড্রাল আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রতিশোধ নিতেই তিনি এই কাজ করেছেন৷ কারণ তিনি বিশ্বাস করেন ওই ঘটনার জন্য মসুলমানরা দায়ী৷ যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্যাথেড্রালের ওই আগুনটি একটি দুর্ঘটনা৷
৮৪ বছর বয়সি ওই ব্যক্তি পুলিশকে বলেছেন, তিনি কাউকে হত্যার পরিকল্পনা করেননি৷ এরপরও ধারণা করা হচ্ছে এই অপরাধের জন্য তাকে বাকি জীবন কারাগারে বন্দী থাকতে হবে৷
বাওয়ান শহরের প্রসিকিউটর মার্ক মেরি বলেছেন, প্যারিসের কর্তৃপক্ষ তদন্তভার গ্রহণ করবে না৷ কারণ এটি সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে না৷
টুইটারে মসজিদে হামলার ঘটনাকে জঘন্য অপরাধ বলে অভিহিত করে সোমবার টুইট করেছেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল মাক্রোঁ৷ তিনি বলেছেন, ‘‘প্রজাতন্ত্র কখনই বিদ্বেষ সহ্য করবে না৷ দোষীদের শাস্তি এবং আমাদের মুসলিম দেশবাসীকে রক্ষার জন্য সব কিছু করা হবে৷’’
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদটির নির্মান কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে, কোলনে৷ ২০১৭ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে৷ ইতোমধ্যে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এই মসজিদ নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
ইউরোপের অন্যতম বড় মসজিদ
কোলনের কেন্দ্রীয় মসজিদ হিসেবে পরিচিত এই মসজিদটি ইউরোপের অন্যতম বড় এবং জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ৷ এটির আয়তন ৪৫০০ বর্গমিটার৷ এতে একসঙ্গে দুই থেকে চার হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে৷ জার্মানিতে তুর্কি মুসলিমদের সংগঠন ডিটিব মসজিদটি নির্মাণ করেছে৷ নামাজের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সংলাপ, খেলাধুলা আয়োজনের ব্যবস্থা এবং দোকান ও লাইব্রেরি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ভিন্ন ডিজাইনের মসজিদ
‘নন-অটোমান’ ডিজাইন অনুসরন করে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে৷ এতে কংক্রিট এবং কাঁচের দেয়াল ও গম্বুজ রয়েছে৷ দু’টি মিনারতের উচ্চতা ৫৫ মিটার করে৷ আর মসজিদের ভেতরে দেয়ালে বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি রয়েছে৷
ছবি: Picture alliance/dpa/M. Becker
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন
কোলনে বসবাসরত তুর্কিরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন এক মসজিদের স্বপ্ন দেখছিলেন৷ তবে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ এমনকি ২০১১ সালে বিপুল প্রতিবাদের মুখে এটির নির্মাণকাজ কিছুদিনের জন্য মন্থরও করা হয়৷ অভিবাসীবিরোধী চক্র এটি নির্মাণের বিরোধিতা করে৷ তবে পত্রিকার এক জরিপে দেখা যায়, শহরের ৬৩ শতাংশ বাসিন্দা এটি তৈরির পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চোখে পড়ার মতো স্থাপনা
জার্মানিতে প্রায় পাঁচ মিলিয়নের মতো মুসলমান বাস করেন৷ তাঁদের একটি বড় অংশই তুর্কি বংশোদ্ভূত৷ কোলনে বসবাসরত সোয়া লাখ মুসলমানের জন্য সত্তরটির মতো মসজিদ রয়েছে৷ অধিকাংশ মসজিদই এমন জায়গায় তৈরি যা সচরাচর চোখে পড়েনা৷ তবে এই মসজিদটি ব্যতিক্রম৷
ছবি: Picture alliance/dpa/O. Berg
খরচ কম নয়
মসজিদটি তৈরিতে কমপক্ষে সতের মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছে৷ তবে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে৷ এই অর্থের অধিকাংশই দিয়েছে ডিটিব৷ কিছু অর্থ সংগ্রহে সহযোগিতা করেছে একটি গির্জা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Geisler
পল ব্যোম, স্থপতি
কোলন কেন্দ্রীয় মসজিদটির নকশা করেছেন পল ব্যোম৷ তিনি এবং তাঁর বাবা মূলত গির্জার ডিজাইন করার জন্য বিখ্যাত৷ তবে সমজিদটি তৈরির মাধ্যমে তিনি তাঁর দক্ষতাকে অন্যস্তরে নিয়ে গেছেন৷
ছবি: AP
প্রার্থনার এক স্বচ্ছ ঘর
‘উন্মুক্ত’ এবং ‘উজ্জ্বল’৷ মসজিদটির ডিজাইন সম্পর্কে এই দুটো শব্দই উচ্চারণ করেছেন ব্যোম৷ মসজিদটির মধ্যে প্রাকৃতিক আলো নিশ্চিত করতে দেয়ালে প্রচুর কাঁচ ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর মসজিদটি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও উন্মুক্ত৷ যেকেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারেন৷
ছবি: Lichtblick Film GmbH/Raphael Beinder
জার্মান স্টাইলে তৈরি মসজিদ
কোলনের মানুষ মসজিদটিকে স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘ক্যোলশ ম্যুশি’৷ আর মসজিদটির ডিজাইনেও জার্মান ছোঁয়া রয়েছে৷ প্রচলিত তুর্কি মসজিদগুলো যেরকম, এই মসজিদটি মোটেও সেরকম নয়৷
ছবি: picture alliance / dpa
কিছু শর্ত
কোলন কর্তৃপক্ষ মসজিদটি নির্মাণের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সেখানে জার্মান ভাষা শিক্ষার আয়োজন থাকতে হবে৷ পাশাপাশি ইমামকে জার্মান ভাষায় দক্ষ হতে হবে৷ আর খুতবা দিতে হবে এমন ভাষায়, যা নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা বুঝতে পারেন৷ মোটের উপর, প্রার্থনায় অংশ নিতে আসা পুরুষ এবং নারীদের সমান মর্যাদা দিতে হবে৷