আবায়া হলো পুরো শরীর ঢাকা ঢিলেঢালা পোশাক, যা ফ্রান্সের স্কুলেও মুসলিম মেয়েরা পরেন। আবায়া নিষিদ্ধ করছে শিক্ষা বিভাগ।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষাবিভাগের বক্তব্য, স্কুলে এমন কোনো পোশাক পরা ঠিক নয়, যা দেখে ধর্মীয় পরিচয় জানা যায়।
রোববার সন্ধ্যায় ফ্রান্সের শিক্ষামন্ত্রী একটি সাক্ষাৎকারে আবায়া নিষিদ্ধ করার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ''যখন কেউ ক্লাসে ঢুকছে, তখন পোশাক দেখে তাদের ধর্ম জেনে যাওয়ার কোনো দরকার নেই।''
কেন এই পদক্ষেপ?
গত ২০০৪ সালে ফ্রান্সের স্কুলের পোশাকে ধর্মীয় প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সেসময় আবায়া নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
গত নভেম্বরে শিক্ষামন্ত্রণালয় একটি সার্কুলার জারি করে। সেখানে বলা হয়েছিল, আবায়া-সহ কিছু ধর্মীয় পোশাক যদি এমনভাবে পরা হয়, যাতে পড়ুয়ারা কোন ধর্মের তা চিহ্নিত করা যায়, তবে তা নিষিদ্ধ করা হতে পারে।
আবায়া না পরা দুই সৌদি তরুণী
কালো রংয়ের ঢিলেঢালা পোশাকের নাম আবায়া৷ সৌদি আরবে নারীদের এই পোশাক পরা বাধ্যতামূলক৷ তবে এই নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করছেন কয়েকজন৷
ছবি: AFP/F. Nureldine
পোশাকের নাম আবায়া
পুরো শরীর ঢাকা এই পোশাকের নাম আবায়া৷ এর রং সাধারণত কালো হয়ে থাকে৷ সৌদি আরবে নারীদের এই পোশাক পরা বাধ্যতামূলক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
ধর্মীয় পুলিশ
বাইরে বের হওয়া সৌদি নারীরা এই পোশাক পরছেন কিনা তা দেখাশোনার জন্য একসময় ধর্মীয় পুলিশ ছিল৷ তবে এখন আর তারা নেই৷
ছবি: AFP/F. Nureldine
পরিবর্তনের আভাস
সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান গতবছর মার্কিন সিবিএস চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মেয়েদের পোশাক পরার আইন শিথিল করার আভাস দিয়েছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, ইসলাম ধর্মে এই পোশাক বাধ্যতামূলক করা হয়নি৷ তিনি বলেছিলেন, মেয়েরা ‘শোভন ও সম্মানজনক পোশাক’ পরবে বলে আশা করা হয়৷ এবং সেটা যে আবায়া হতে হবে এমন নয়৷
ছবি: picture-alliance/abaca/Balkis Press
তবুও ভয়
ক্রাউন প্রিন্সের বক্তব্যের পর আনুষ্ঠানিক কোনো ডিক্রি জারি না হওয়ায় এখনও সৌদি নারীরা আবায়া ছাড়া বের হতে সাহস করেন না৷
ছবি: picture alliance/JOKER/K. Eglau
ব্যতিক্রম মাশায়েল আল-জালুদ
৩৩ বছর বয়সি মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ কয়েকমাস ধরে নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করছেন৷ মাঝেমধ্যে তিনি আবায়া না পরে বাইরে বের হন৷ এইসময় আশেপাশের মানুষজন তাঁকে নিয়ে কানাঘুষা শুরু করেন৷ কেউ কেউ তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কোনো তারকা, কিংবা মডেল কিনা৷
ছবি: AFP/F. Nureldine
শপিং মলে ঢোকায় বাধা
জালুদ জানান, আবায়া না পরায় গত জুলাই মাসে তাঁকে রিয়াদের একটি শপিং মলে ঢুকতে দেয়া হয়নি৷ ঐ মলের নিরাপত্তাকর্মীকে ক্রাউন প্রিন্সের টেলিভিশন বক্তব্য দেখানোর পরও তিনি ঢুকতে পারেননি৷
ছবি: AFP/F. Nureldine
শাস্তি দাবি
টুইটারে আপলোড করা এক ভিডিওতে এই ঘটনাটি জানিয়েছিলেন জালুদ৷ এরপর এক টুইটে ঐ মল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল যে, তারা ‘নৈতিকতা ভঙ্গকারীদের’ ঢুকতে দিতে পারে না৷ সৌদি পরিবারের এক সদস্যও সেই সময় জালুদের শাস্তি দাবি করেছিলেন৷
ছবি: AFP/F. Nureldine
অফিসে আবায়া
শপিং মল কিংবা সুপারমার্কেটে আবায়া পরে বের হলেও অফিসে যাওয়ার সময় আবায়া ও হেডস্কার্ফ পরেন জালুদ৷ চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে তাঁকে এই পোশাক পরতে হয় বলে জানান তিনি৷
ছবি: AFP/F. Nureldine
জালুদের আরেক সঙ্গী
জালুদ ছাড়াও ২৫ বছরের অ্যাক্টিভিস্ট মানাহেল আল-ওতাইবি গত চার মাস ধরে আবায়া ছাড়া ঘোরাফেরা শুরু করেছেন৷ ‘‘আমি যেভাবে চাই সেভাবে জীবনযাপন করতে চাই৷ আমি যা পরতে চাই না, তা পরতে আমাকে বাধ্য করা উচিত নয়,’’ এএফপিকে বলেন তিনি৷
ছবি: AFP/F. Nureldine
9 ছবি1 | 9
২০২০ সালে চেচেনরা ফ্রান্সে এক শিক্ষককে গলা কেটে হত্যা করার পর আবার আবায়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
কী প্রতিক্রিয়া?
শিক্ষক ইউনিয়নের নেতা ব্রুনো এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ''আগে বিষয়টি স্পষ্ট ছিল না। এখন একেবারে স্পষ্ট। আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।''
দক্ষিণপন্থি বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা এরিক সিয়োতো জানিয়েছেন, তারা আগে বহুবার স্কুলে আবায়া নিষিদ্ধ করার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন।
তবে ফ্রান্সের বামপন্থি দলের নেত্রী এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেছেন, সরকার পোশাক-পুলিশের ভূমিকা নিতে পারে না।