ফ্রান্সের বিমানবন্দরে ভারতীয়দের নিয়ে আটক বিমান মঙ্গলবার ভোররাতে মুম্বই পৌঁছাল। বিমানে ছিলেন ২৭৬ যাত্রী।
বিজ্ঞাপন
তবে ২৭ জন যাত্রী বিমানের সঙ্গে আসেননি। এর মধ্যে পাঁচজন অপ্রাপ্তবয়স্ক-সহ ২৫ জন ফ্রান্সে আশ্রয়ের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। দুইজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী, আশ্রয় চাইলে তাদের আবেদনের ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত ফেরত পাঠানো যায় না। তবে তারা কোন দেশের নাগরিক তা জানানো হয়নি।
বিমানটি ভোর চারটের সময় মুম্বই পৌঁছেছে।
এই চার্টার বিমানটি দুবাই থেকে নিকারাগুয়া যাচ্ছিল। জ্বালানি ভরার জন্য তা ফ্রান্সের বিমানবন্দরে নেমেছিল। তখন এক অজ্ঞাত ব্যক্তি ফ্রান্সের কর্মকর্তাদের জানায়, এই বিমানে মানবপাচার করা হচ্ছে। তখন বিমানটিকে আটক করা হয়। যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়।
এই ঘটনার চারদিন পর বিমানটি মুম্বই এসে পৌঁছাল।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, নিকারাগুয়া থেকে যাত্রীরা অ্যামেরিকায় ঢোকার চেষ্টা করতেন। মার্কিন কাস্টমস ও বর্ডার পেট্রোলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয়দের বেআইনিভাবে অ্যামেরিকায় ঢোকার চেষ্টা অনেকটাই বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালে ৯৬ হাজার ৯১৭ জন ভারতীয় এইভাবে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। যে সংখ্য়া আগের বছরের তুলনায় ৫১ শতাংশেরও বেশি। ৪১ হাজারের মতো ভারতীয় মেক্সিকোর সীমান্ত পার হয়ে অ্যামেরিকায় ঢোকার চেষ্টা করেছেন।
অঙ্গহানি ও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ প্রায় অসম্ভব করে তুলেছিল ট্রাম্পের জারি করা একটি আইন৷ সেই আইন আপাতত অকার্যকর৷ তবে শিগগিরই আসছে কঠোর আরেক আইন৷ তাই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা কিভাবে মালগাড়িতে চড়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চাইছেন, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Gustavo Graf/REUTERS
মালগাড়িতে ‘বিদেশযাত্রা’
যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাছে স্বপ্নের এক দেশ৷ কোনোরকমে সীমান্ত পেরিয়ে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ছোট্ট শহর এল পাসোতে ঢুকতে পারলেই জীবনের মোড় ঘুরে যাবে বলে বিশ্বাস করেন তারা৷ তাই এভাবে মালগাড়ির ছাদে উঠে শুরু করছেন দীর্ঘ এবং ঝুঁকিপূর্ণ এক যাত্রা৷
ছবি: Gustavo Graf/REUTERS
মেক্সিকান কম
সাম্প্রতিক সময়ে মেক্সিকো থেকে মালগাড়িতে চড়ে যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করছেন তাদের বেশিরভাগই ভেনিজুয়েলার নাগরিক৷
ছবি: Jose Luis Gonzalez /REUTERS
মানুষ কেন ‘পশু’!
আগেও অবশ্য এভাবে মালগাড়িতে চড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাবার চেষ্টা করতেন অনেকে৷ পথে দৃর্বৃত্তের হামলা, হাঁড় কাপানো শীত বা তার ঠিক বিপরীত আবহাওয়া, অর্থাৎ প্রচণ্ড গরমে ট্রেনে কাটা পড়ার ঝুঁকি নিয়ে দেশান্তরের চেষ্টাকে ‘পশুসুলভ’ মনে করেন অনেকে৷ তাই সেন্ট্রাল অ্যামেরিকার এই দরিদ্র মানুষদের তারা ডাকেন ‘ লা বেতিস্তা’ (দ্য বিস্ট), অর্থাৎ ‘পশু’ নামে৷
ছবি: Jose Luis Gonzalez /REUTERS
আবর্জনার স্তূপের কাছেই বিশ্রাম
মালগাড়িতে উঠলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একইভাবে বসে থাকতে হয়৷ মেক্সিকো সিটির উত্তর দিকের হুয়েহুয়েতোকা অঞ্চলের এক জায়গায় আশপাশের সব এলাকার আবর্জনা ফেলা হয়৷ এর ফলে সেখানে আবর্জনার যে ছোটখাটো এক পাহাড় গড়ে উঠেছে সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য থামে মালগাড়ি৷ ওই সুযোগে একবার নেমে শরীরে রক্তচলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷
ছবি: Gustavo Graf/REUTERS
কেন আবার এমন ঢল?
সম্প্রতি খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, করোনা মহামারি শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার সব অভিবাসনপ্রত্যাশীকে সীমান্ত থেকেই ফিরিয়ে দিতে যে আইন করেছিল, ‘টাইটেল ৪২’ নামের সেই আইন অবশেষে প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ সুতরাং ‘টাইটেল ৪২’-এর কার্যকারিতা একেবারে শেষ৷ ট্রাম্পের আমলে চালু হওয়া সেই আইনের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার খবর ছড়ানো মাত্রই মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে শত শত মানুষ৷
ছবি: Jose Luis Gonzalez /REUTERS
নতুন শঙ্কা
তবে ‘টাইটেল ৪২’ বিলুপ্ত হলেও আসছে নতুন আইন৷ আগেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়া ভাইদের কাছ থেকে সেই ‘দুঃসংবাদ’ই শুনছেন ফ্রাঙ্কলিন চুয়েরভাস৷ ফ্রাঙ্কলিন বুঝতে পারছেন হাতে বেশি সময় নেই, আরো কঠোর আইন আসার আগেই স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে হবে তাকে৷
ছবি: Gustavo Graf/REUTERS
6 ছবি1 | 6
এই ক্ষেত্রে অভিবাসীরা একটা নির্দিষ্ট কৌশল নেয়। তারা 'ডাঙ্কি' ফ্লাইটে তৃতীয় কোনো দেশে এসে পৌঁছায়। যে দেশে ট্রাভেল ডকুমেন্টের কড়াকড়ি কম। সেখান থেকে তারা অ্যামেরিকায় ঢোকার চেষ্টা করে।
বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ওই বিমানের সঙ্গে ক্রাইম সিন্ডিকেটের যোগ থাকতে পারে, যে অপরাধী গোষ্ঠী অ্যামেরিকায় মানুষ পাচার করে।
বিচারকের সিদ্ধান্ত
ফ্রান্সের আদালতের এক বিচারক এই বিমানের যাত্রীদের আটক না রেখে ভারতে পাঠাতে বলেন। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বিচারক জনমতের চাপ উপেক্ষা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার ফলে যাত্রীরা মুক্তি পেয়েছেন।
ফরাসি কর্তৃপক্ষ এখনো এই ঘটনার তদন্ত করছে। তবে তারা আর মানবপাচারের বিষয়টি দেখছে না। তারা ফ্রান্সের অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।