বাগানের মনোরম পরিবেশে একটু জিরিয়ে নিলে ক্লান্তি, মানসিক চাপ, অবসাদ দূর হতে পারে৷ ফ্রান্সে আন্তর্জাতিক উদ্যান উৎসবে অসাধারণ সব বাগান তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলি স্বর্গোদ্যানের সঙ্গে তুলনীয়৷
বিজ্ঞাপন
স্বর্গোদ্যানের খোঁজ করছেন? পৃথিবীর বুকেই তা পাওয়া যেতে পারে৷ এ বছর ফ্রান্সের শোমঁ-সুয়র-লোয়ার শহরে আন্তর্জাতিক উদ্যান উৎসবের বিষয় ‘গার্ডেন অফ প্যারাডাইস'৷ ১১টি দেশের শিল্পী তাঁদের রঙিন, কাব্যময় ও কল্পনানির্ভর ডিজাইন তুলে ধরেছেন৷
একটি বাগানের উপর যেন সাদা ফুল ভেসে বেড়াচ্ছে৷ শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, সেগুলি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ও শীতের প্রকোপ থেকে সুরক্ষাও দেয়৷ ইটালির ৩ নারী ল্যান্ডস্কেপ মালি হিসেবে ‘বার্ড অফ প্যারাডাইস' ও আকাশের প্রতীক হিসেবে নীচের অংশ ডিজাইন করেছেন৷ বাগান ডিজাইনার স্টেফানিয়া নারেটো বলেন, ‘‘আমাদের কাছে স্বর্গ হলো প্রকৃতির এমন এক স্থান, যেখান দিয়ে হেঁটে গেলে চমকপ্রদ গাছপালা দেখা যায়৷'' আরেক বাগান ডিজাইনার ফ্রানচেস্কা কসমাই-এর মতে, ‘‘এখানে মেঘের আকার আটকোণা দেখায়, যা ‘ফ্লোর পাজল' বা মেঝের ধাঁধা হিসেবেও আমরা ব্যবহার করেছি৷''
এক ফরাসি-থাই শিল্পীর স্বর্গোদ্যানও বেশ কাব্যময় হয়ে উঠেছে৷ সোফি কাও আর্য গোল অ্যাক্রিলিক প্যানেল রং করে পুকুরের উপর ধাতুর ডান্ডায় লাগিয়ে দিয়েছেন৷ সোফি বলেন, ‘‘পুকুর আসলে আকাশের আয়নার মতো৷ তাছাড়া এটি ফুলের বেদির মাঝে গহ্বরের মতো কাজ করে, পানিতেও যার প্রতিফলন ঘটে৷ ফলে এখানে যেন জাগতিক ও আধ্যাত্মিক সত্তার মিলন ঘটে৷ কারণ, বিষয়টাই তো স্বর্গ৷ এটি বাস্তব ও শিল্পের মধ্যে সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন তোলে৷''
ফ্রান্সে পৃথিবীর স্বর্গোদ্যান!
04:12
তাঁর এই স্বর্গরাজ্যে বেশি পানির প্রয়োজন হয় না৷ পানি ছড়ানোর দামী প্রণালীর বদলে সরাসরি মাটি থেকেই গাছপালার জন্য পানি সংগ্রহ করা হয়৷ সোফি কাও আর্য বলেন, ‘‘আমরা ফ্রান্সের দক্ষিণের এই পোড়ামাটির ফুলদানি ব্যবহার করি৷ পানি ভরে সেগুলি মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়৷ গাছপালা সেগুলি থেকে প্রয়োজনমতো পানি গ্রহণ করে৷''
তাঁরা বেগুনি, নীল ও সাদা ফুল বেছে নিয়েছেন৷ ল্যান্ডস্কেপ মালি হিসেবে ফ্লোরিয়ান ফানডেরডংক্ট বলেন, ‘‘আমরা ফ্রান্সের দক্ষিণে এক নার্সারির সঙ্গে কাজ করি৷ তারা আমাদের সেরা ফুল খুঁজতে সাহায্য করে৷ যেমন, আমাদের সুন্দর পেটুনিয়া ফুল রয়েছে৷ এই ফুলের সাদা ছোপ আকাশের মতো৷ সাদা অ্যালিসাম ফুলও রয়েছে৷''
‘লিভিং বিহাইন্ড ওয়াল্স' এই বাগানের মূল বিষয়৷ সেখানে বাইরের প্রভাবের আড়ালে এক নিভৃত স্বর্গরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে৷ উৎসবের পরিচালক শঁতাল কোল্যো-দুমঁ বলেন, ‘‘এটির মতো বেশিরভাগ বাগানই পৃথিবীর বুকে স্বর্গরাজ্য সৃষ্টি করে৷ নির্জন পরিবেশে ভাবনাচিন্তা, একাগ্রতা ও অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে সেই উপলব্ধি হতে পারে৷ এখানে বাইরের দরজা খুলে দেওয়ার বার্তা দেওয়া হচ্ছে৷''
আন্তর্জাতিক উদ্যান উৎসবে ফ্রান্সের কেন্দ্রভাগের স্বর্গীয় পরিবেশে স্বর্গোদ্যান তুলে ধরা হচ্ছে৷
ঢাকার কয়েকটি উদ্যান
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আছে কয়েকটি উদ্যান৷ ইটপথরের শহরের মাঝে এসব উদ্যানগুলো যেন একেকটি সবুজ স্বর্গ৷ ছবিঘরে দেখুন ঢাকা শহরের কয়েকটি উদ্যান৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রমনা পার্ক
ঢাকা শহরের রমনা এলাকায় অবস্থিত এ উদ্যানকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়৷ ১৬১০ সালে মোঘল সেনাপতি ইসলাম খান এই উদ্যানটির প্রতিষ্ঠা করেন৷ প্রায় ৬৯ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এ উদ্যানটি গাছপালায় ভরপুর ৷ প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন এখানে৷ ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান রমনার প্রাচীন বটমূলেই অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
রমনা পার্কের কিছু তথ্য
রমনা পার্কে বর্তমানে ২১১টি প্রজাতির উদ্ভিদ আছে৷ এর মধ্যে ফুল ও শোভাবর্ধক ৮৭টি প্রজাতি, ফলজাতীয় ৩৬টি প্রজাতি, ঔষধি বৃক্ষ ৩৩টি প্রজাতি, কৃষি বনায়নের উদ্ভিদ তিনটি প্রজাতি, বনজ ও জলজ উদ্ভিদ দু’টি প্রজাতি এবং মশলা উদ্ভিদ তিন প্রজাতির৷ পার্কটিতে একটি লেকও আছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
সোহরাওয়ার্দি উদ্যান
রমনা পার্কের পাশেই অবস্থিত৷ আগে এটা রমনা রেসকোর্স নামে পরিচিত ছিল৷ ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রমনা রেসকোর্সের মহাসমাবেশে বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন৷ দীর্ঘ ন’মাস যুদ্ধের পরে ৭১’ এর ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনারা এখানেই নতি স্বীকার করে৷ বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে গড়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা স্তম্ভ ও জাদুঘর৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘটনাবলী স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৯ সালে এখানে স্থাপন কর হয় ‘শিখা চিরন্তনী’৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বলধা গার্ডেন
ঢাকার ওয়ারী এলাকায় অবস্থিত প্রাচীন উদ্ভিদ উদ্যান৷ ভাওয়াল জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ১৯০৯ সালে তাঁর বাগানবাড়ি হিসেবে উদ্যানটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ এর দু’টি অংশ হলো ‘সিবিলি’ ও ‘সাইকি’৷ নরেন্দ্র নারায়ণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে দুর্লভ প্রজাতির গাছপালা এনে বাগানটি ক্রমাগত সমৃদ্ধ করেছেন৷ বলধা গার্ডেন বর্তমানে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটি অংশ হিসেবে বন বিভাগের অধীনে আছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাহাদুর শাহ পার্ক
এ পার্কের অতীত নাম ছিল ভিক্টোরিয়া পার্ক৷ উনিশ শতকের প্রথমার্ধে নওয়াব স্যার আব্দুল গণির উদ্যোগে ঢাকার সদরঘাট এলাকায় এ পার্কটি তৈরি করা হয়েছিল৷ ১৮৫৭ সনের সিপাহী বিদ্রোহের সময় কয়েকজন বিদ্রোহীকে ফাঁসি দেওয়া হয় এখানে৷ স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের স্মরণে ১৯৫৭ সালে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়৷ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ’র স্মরণে পার্কের পুনঃনামকরণ করা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ওসমানী উদ্যান
প্রায় ২৩ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত উদ্যানটি ঢাকার সচিবালয় ও নগর ভবনের মাঝে অবস্থিত৷ মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনয়াক লে. জে. এম এ জি ওসমানির নামে এর নামকরণ করা হয়েছিল৷ ঢাকার সবচেয়ে অরক্ষিত উদ্যান বলা যায় এটাকে৷ তার ওপর এর ভেতরে সংরক্ষিত মীর জুমলার কামান দেখতে অনেকেই যান সেখানে৷ সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রধান সেনাপতি মীর জুমলা এই কামানটি আসাম যুদ্ধে ব্যবহার করেছিলেন বলে কথিত আছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
চন্দ্রিমা উদ্যান
ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে অবস্থিত বিশাল উদ্যান৷ এরশাদ সরকারের সময়ে প্রতিষ্ঠিত এ উদ্যানটির নাম ছিল ‘চন্দ্রিমা উদ্যান’৷ বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সমাধিস্থ করার পর বিএনপি সরকার এর নাম রাখে ‘জিয়া উদ্যান’৷ এরপরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকারের আমলে কয়েক দফায় নাম পাল্টাপাল্টি করে করে বর্তমানে ‘চন্দ্রিমা উদ্যান’ নামেই আছে৷ ৭৪ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এ উদ্যানের পাশেই ক্রিসেন্ট লেক৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান
ঢাকার মিরপুরে চিড়িয়াখানার পাশে অবস্থিত এ উদ্যান ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন নামেই বেশি পরিচিত৷ বাংলাদেশের উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শনের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র এটি৷ ১৯৬১ সালে প্রায় ২০৮ একর জায়গা জুড়ে এ উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের কিছু তথ্য
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে ১১৭টি গোত্রভুক্ত ৯৫২ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে৷ এর মধ্যে ২৫৬টি প্রজাতির ৩৫ হাজার বৃক্ষ, ৩১০ প্রজাতির ১০ হাজার গুল্ম , ৩৭৮ প্রজাতির ১২ হাজার লতা জাতীয় উদ্ভিদ৷ এতে আছে বিভিন্ন আকারের মোট সাতটি জলাশয়৷ শীতে এ সব জলাশয়ে অতিথি পাখির সমাগম ঘটে৷ দেশীয় পাখির অভয়ারণ্যও এই উদ্যান৷