শুক্রবার প্যারিসের রাস্তায় এক কলেজ শিক্ষককে জবাই করেছে জঙ্গিবাদ সমর্থক এক তরুণ৷ পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সে৷ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
তদন্তকারীরা জানার চেষ্টা করছেন হামলাকারী একাই ছিলো, নাকি এর পেছনে আরও অনেকে জড়িত৷ সে কারণেই এই নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য৷ চেচনিয়া বংশোদ্ভূত ওই হামলাকারীর বয়স মাত্র ১৮৷
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আততায়ী ‘আল্লাহু আকবর' বলে হামলা চালান৷ হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তি কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক৷ এই মাসের প্রথমদিনে তিনি তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক ক্লাসে মহানবী হযরত মোহাম্মদের কার্টুন দেখিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের৷
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ এই ঘটনাকে ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷
ঘটনার পরপরই হামলাকারীর চার আত্মীয়কে আটক করেছে পুলিশ, এর মধ্যে এক শিশুও আছে৷ এরপর রাতভর অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ৷ এদের মধ্যে দ্যু বয়েস ডি অলনে কলেজের দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক রয়েছেন৷
আইএস এখনো যেসব দেশের জন্য হুমকি
মার্কিন সামরিক অভিযানে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা আবু বকর আল বাগদাদি নিহত হয়েছেন৷ তবে এখনও অনেক দেশের জন্য এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: dpa
ইরাক
দেশটিতে মার্কিন সমর্থিত বাহিনীর কাছে হেরে আইএস যোদ্ধারা গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে৷ এখনও তারা ইরাকের কয়েকটি প্রদেশে অপহরণ ও বোমাবাজি করছে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরাকে প্রায় দুই হাজার আইএস যোদ্ধা সহিংস তৎপরতা চালাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/Dabiq
সিরিয়া
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও গত বছর সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বেশ কয়েকটি আক্রমণ চালিয়েছে আইএস৷ অ্যামেরিকান বাহিনীকেও টার্গেট করেছে তারা৷ ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধারা সিরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মরুভূমিতে সক্রিয় রয়েছে৷
ছবি: DW/Judit Neurink
মিশর
বিগত এক বছরে মিশরে কোনো বড় আক্রমণ না হলেও দেশটিতে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটছে৷ দেশটির সেনাবাহিনী বলছে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিনাই প্রদেশে অভিযানে কয়েকশ উগ্রপন্থি নিহত হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Desouki
সৌদি আরব
সৌদি আরবে বেশ কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণ এবং নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংখ্যালঘু শিয়াদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে আইএস৷ সৌদি আরব যখন আইএসের বিরুদ্ধে প্রচারে অংশ নিয়েছিল তখন তাদের বিরুদ্ধেও আক্রমণ চালানোর আহ্বান জানিয়েছিল গোষ্ঠীটি৷ অ্যামেরিকান থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসি বলছে, আইএস সৌদি আরবে এখনও সক্রিয় এবং সৌদি কর্তৃপক্ষ এ সম্পর্কে ভালো জানে৷
ছবি: dpa
ইয়েমেন
আইএস ২০১৪ সালের শেষদিকে ইয়েমেন শাখা ঘোষণা করে৷ হুতি বিদ্রোহী ও সৌদি আরব সমর্থিত আবদ রাব্বু মনসুর হাদির সরকারের মধ্যে গৃহযুদ্ধ চলছে৷ ইয়েমেনে আইএস আল কায়েদার সাথে লড়াই করছে এবং উভয় দল শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও লড়ছে৷ দেশটিতে অনেক হামলা ও হত্যার দায় আইএস স্বীকার করলেও কোনো অঞ্চল তাদের দখলে নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
নাইজিরিয়া
বোকো হারাম ২০০৯ সাল থেকে উত্তর নাইজেরিয়ায় বেশ কয়েকটি বড় আক্রমণ চালিয়েছে৷ ২০১৬ সালে এই গোষ্ঠীকে দুইটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যার একটি অংশ আইএসের প্রতি অনুগত৷ আইএস পশ্চিম আফ্রিকায় গত বছর বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল৷ এই অঞ্চলে গোষ্ঠীটির আধিপত্য বাড়ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Marte
আফগানিস্তান
দেশটিতে ২০১৫ সাল থেকে সক্রিয় রয়েছে আইএস৷ এখনো নানগারহার প্রদেশে তাদের খুব শক্তিশালী মনে করা হয়৷ অ্যামেরিকান কমান্ডাররা বলছেন, আফগানিস্তানে প্রায় দুই হাজার আইএস যোদ্ধা তালেবানকে আক্রমণ করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/E. Waak
শ্রীলঙ্কা
এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় গির্জা ও হাসপাতালে বোমা হামলায় জড়িত ছিল বলে দাবি করে আইএস৷ শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারা বিস্ফোরণের জন্য তাদের সঙ্গে যুক্ত দুইটি স্থানীয় মুসলিম উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে দায়ি করেন৷ ওই বিস্ফোরণের পর আইএস একটি ভিডিও প্রকাশ করে যাতে আটজনকে তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে দেখা যায়৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
ইন্দোনেশিয়া
বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশটির হাজার হাজার মানুষ আইএসের আদর্শ থেকে অনুপ্রাণিত বলে জানা গেছে৷ ধারণা করা হয় প্রায় ৫০০ ইন্দোনেশিয়ান আইএসের পক্ষে লড়াইয়ে সিরিয়ায় গিয়েছিল৷ গত বছর সুরবায়ায় আত্মঘাতী হামলায় ৩০ জন নিহত হয়৷ ওই হামলার পেছনে আইএস এর মদদপুষ্ট জামাহ আনসারুত দৌলা সংগঠনটির হাত ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ফিলিপাইন্স
ফিলিপাইন্সরা আশঙ্কা করছেন সিরিয়া ও ইরাক থেকে পালিয়ে আসা আইএস উগ্রপন্থিরা মিন্ডানাও প্রদেশের প্রত্যন্ত বন এবং মুসলিম গ্রামগুলোতে আশ্রয় নিতে পারে৷ এই অঞ্চলটি নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং ইসলামী বিদ্রোহের কারণে কুখ্যাত৷ এই অঞ্চলে সংঘটিত হামলা এবং সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের জন্য আইএস দায় নিলেও তার যথার্থতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
ছবি: Reuters/Handout
10 ছবি1 | 10
ফ্রান্সের মুসলিম নেতারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত হেনেছে এটি৷
বোর্দো মসজিদের ইমাম তারেক ওব্রু সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা কোন সভ্য মানুষ করতে পারে না, এটি বর্বরদের কাজ৷'' ইসলামি জঙ্গিরা এবং তাদের মতাদর্শকে যারা মেনে চলে, সেই সব মানুষ ফ্রান্সের মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তিকে ধ্বংস করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
তারেক আরও বলেন, ‘‘যেসব দিনে হামলা হয় না, আমরা আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই৷ এই ধরনের ঘটনা সমাজ, শান্তি এবং ধর্ম, যা আমাদের একত্রিত করে, তার উপর হামলা৷''