ফ্রান্সে চরমপন্থী ইসলাম নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তার সমাধানসূত্রের সন্ধান দিলেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার আবু জায়েদ।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ফরাসি প্রশাসন দেশ জুড়ে ৮০টি মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে। ধর্মীয় চরমপন্থা প্রচারের অভিযোগে মসজিদগুলি বন্ধ করা হয়েছে। যার জেরে ফ্রান্সে মুসলিমদের সঙ্গে সরকারের দ্বন্দ্ব আরো তীব্র হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার মুহম্মদ আবু জায়েদ শান্তি প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিলেন ফরাসি সরকার এবং দেশের মুসলিম জনগণকে। বললেন, আলোচনাই একমাত্র রাস্তা।
লেবাননের সব চেয়ে বড় মসজিদের প্রধান জায়েদ। এর আগে শার্লে এবদো কার্টুন বিতর্কেও সরব হয়েছিলেন তিনি। অ্যামেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম বিষয়ক পাঠ্যক্রম পড়িয়েছেন তিনি। ইউরোপে তাঁকে বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার বলেই মনে করা হয়। সম্প্রতি ডিডাব্লিউকে তিনি জানিয়েছেন, তিনটি বিষয়ে এই মুহূর্তে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ফরাসি প্রশাসন যে ভাবে মসজিদ বন্ধ করে দিচ্ছে, তাতে সমস্যা আরো বাড়বে বলেই তিনি মনে করেন। কারণ, মানুষ প্রার্থনা করতে মসজিদে যাবেনই। জরুরি বিষয় হলো, মসজিদগুলির ইমামদের সঙ্গে সরকারের নিয়মিত যোগাযোগ। মসজিদগুলিতে কী হচ্ছে, কী বলা হচ্ছে, সরকার তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে। তা হলেই সমস্যার সুরাহা হয়।
মুসলিম বিশ্বে মাক্রোঁর সমালোচনা এবং জবাব
চরমপন্থিদের হামলায় নিহত শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে মরনোত্তর লিজিয়ন অফ অনার দিয়ে তাকে পূর্ণ সমর্থন জানানোর পর থেকে মুসলিম বিশ্বে তোপের মুখে পড়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/E. Gaillard
মাক্রোঁ যা বলেছিলেন
গত ২১ অক্টোবর প্যাটিকে মরনোত্তর লিজিয়ন অফ অনারে ভূষিত করে প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ বলেন, ''আমরা কার্টুন ছাড়বো না৷ ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধকে রক্ষা করতে গিয়ে প্যাটি জীবন দিয়েছেন । তিনি এই প্রজাতন্ত্রের মুখ।''
ছবি: Francois Mori/Pool/Reuters
এর্দোয়ানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
মাক্রোঁর বক্তব্য শুনে তাকে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে এক সভায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ান বলেন,‘‘মাক্রোঁ নামের এই ব্যক্তির ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে সমস্যা কী? একজন রাষ্ট্রনেতা যদি বিশ্বাসের স্বাধীনতা না বোঝেন এবং তার দেশে বসবাসরত কয়েক মিলিয়ন ভিন্ন বিশ্বাসের অনুসারীদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন, তাহলে তাকে আর কী বলা যায়!’’
ছবি: Sercan Kucuksahin/AA/picture-alliance
মাক্রোঁর সমালোচনায় ইমরান খান
টুইটারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান লিখেছেন, ‘‘একজন নেতার প্রধান গুণ হলো, তিনি সব মানুষকে বিভক্ত না করে ম্যান্ডেলার মতো ঐক্যবদ্ধ করেন৷এটি এমন এক সময় যখন প্রেসিডেন্ট মাঁক্রো নিরাময়ের ব্যবস্থা নিতে পারতেন এবং চরমপন্থাকে আর ছাড় দিতে অস্বীকার করতে পারতেন, অথচ তিনি আরো মেরুকরণ এবং প্রান্তিকীকরণের পথ ধরলেন যা অনিবার্যভাবেই মৌলবাদের দিকে নিয়ে যায়৷’’
মাক্রোঁর জবাব
তার সমালোচনার জবাবে টুইটারে এমানুয়েল মাক্রোঁ লিখেছেন, ‘‘আমরা কখনো হাল ছাড়বো না৷ আমরা শান্তির চেতনায় সব পার্থক্যকে সম্মান করি৷ আমরা ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য গ্রহণ করি না এবং যুক্তিসঙ্গত বক্তব্যকে রক্ষা করি৷ আমরা সব সময় মানুষের মর্যাদাবোধ এবং সার্বজনীন মূল্যবোধের পাশে থাকবো৷’’
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিশামুদ্দীন হুসেইন এক বিবৃতিতে বলেছেন,
‘‘ইসলাম ধর্মের অবমাননা হয় এমন যে কোনো উত্তেজক বক্তব্য বা কাজের আমরা তীব্র নিন্দা করি৷’’
ছবি: Reuters
‘জনগণকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন মাক্রোঁ’
চেচনিয়ার নেতা রমজান কাদিরভ ইন্সটাগ্রামে এমানুয়েল মাক্রোঁর উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘‘ আপনি জনগণকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন৷ আপনি তরুণদের মস্তিষ্কে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর অবস্থা তৈরি করছেন৷ আপনি খুব সাহস করে নিজেকে আপনার দেশে সন্ত্রাসবাদের নেতা, সন্ত্রাসবাদের প্রেরণাদাতা মনে করতে পারেন৷’’
ছবি: Imago-Images/ITAR-TASS/ Press Office Republic of Chechnya
প্রবাসে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য উদ্বেগ
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, বাংলাদেশ, ইরাক ও মৌরিতানিয়ায় অবস্থানরত সকল ফরাসি নাগরিককে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে৷ সবাইকে সব জনসমাবেশ এবং কার্টুনের বিরুদ্ধে সব প্রতিবাদ সমাবেশ থেকেও দূরে থাকতে বলা হয়েছে বিবৃতিতে৷
ছবি: Reuters/E. Gaillard
7 ছবি1 | 7
অন্য দিকে, ফ্রান্সের মুসলিম জনগণের প্রতি তাঁর পরামর্শ-- কেউ পাকিস্তান, কেউ ভারত, কেউ তুরস্ক বা আরব বিশ্ব থেকে ফ্রান্সে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করেছেন। ফ্রান্সে থাকতে হলে সে দেশের সংস্কৃতি মেনেই চলতে হবে। নিজের দেশের সংস্কৃতি সেখানে থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। মুসলিম নাগরিকদের মানিয়ে নিতে হবে। জায়েদের বক্তব্য, ফ্রান্সে প্রশাসন এবং মুসলিম নাগরিক দুইপক্ষই আপস মীমাংসায় যাচ্ছেন না। আলোচনা না করলে সমস্যার সমাধান হওয়া মুশকিল।
ফ্রান্সে প্রায় ছয় মিলিয়ন মুসলিম থাকেন। ইউরোপে সর্বোচ্চ। প্রায় ২৮০০ মসজিদ আছে সেখানে। সম্প্রতি সেখানে শার্লি এবদোর বিতর্কিত কার্টুন দেখিয়ে ক্লাসে পড়াচ্ছিলেন এক শিক্ষক। মুসলিম চরমপন্থীরা ওই শিক্ষককে গলা কেটে হত্যা করেন। তারপরেই দেশ জুড়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ চরমপন্থী ইসলামের বিরুদ্ধে সরব হন। মাক্রোঁর মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ফ্রান্সের সংঘাত শুরু হয়। সেই বিতর্কের সমাধানসূত্রের পথই দেখালেন জায়েদ।