ইহুদিবিদ্বেষ কমায় ইহুদি-মুসলিমদের সংগঠন
১৫ নভেম্বর ২০২৩ফ্রান্সের এক মসজিদের ইমাম হাজি মৌলোইদ এলোয়াসিয়া ৷ ২০ বছর ধরে রাব্বি মিশেল সেরফাতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব তার৷ বন্ধুত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হয়েছিল মসজিদটির কারণেই৷ রাব্বি মিশেল সেরফাতি না থাকলে মসজিদটা যে তৈরিই হতো না!
ইমাম সাহেব এখনো সেই ঘটনা সানন্দে বলেন সবাইকে, ‘‘এই রাস্তার পাশে আমরা যে ২০ বছর আগে এই মসজিদটা করতে পেরেছিলাম, তার জন্য রাব্বি মিশেল সেরফাতিকে ধন্যবাদ দিতেই হয়৷ তিনি (সেরফাতি) সেদিন মেয়রকে ফোন করেছিলেনেন, ফোন করে বলেছিল মসজিদ করার মতো একটা ভবন আছে এখানে৷জবাবে মেয়র বলেছিলেন- তুমি কি মুসলমানদের ভয় পাও না? মি. সেরফাতি তখন বলেছিলেন- না৷'' ফ্রান্সে যখন ইহুদিবিদ্বেষ বাড়ছে তখনও তাই হাজি মৌলোইদ এলোয়াসিয়ার মুখে বিদ্বেষ নয়, মুসলমান-ইহুদি মৈত্রীর কথা, ‘‘আমরা চাই তারা সব সময় আমাদের কাছাকাছি থাকুক যাতে একে অন্যের প্রতিবেশী হতে পারি৷''
মানুষ মানুষের কাছাকাছি থাকবে, সবার মধ্যে সৌহার্দ্য থাকবে- চিরকাল এমনটাই চেয়ে এসেছেন রাব্বি মিশেল সেরফাতি৷ কিন্তু ফ্রান্সে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি যেন তার বিপরীত৷
সাম্প্রতিক সময়ে ইহুদিবিদ্বেষমূলক ঘটনা বেড়েছে খুব আশঙ্কাজনক হারে৷ ইউরোপে ইহুদিদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ের দেশটিতে এমন বিদ্বেষ আগেও ছিল৷ গত কয়েক বছর তা বাড়লেও ইহুদিবিদ্বেষমূলক ঘটনা বছরে চারশ'র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো৷ তবে ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরুর পর এমন ঘটনা মাত্র একমাসে ১২৫০ ছাড়িয়েছে৷
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন জানিয়েছেন, এমন ঘটনা রুখতে সারা দেশের ৯০০ সিনাগগ ও স্কুলের নিরাপত্তায় দশ হাজারেরও বেশি পুলিশ ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷ এছাড়া ইহুদিবিদ্বষী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় এ পর্যন্ত ৪৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
তা সত্ত্বেও ইহুদিদের আতঙ্ক কমছে না৷ রবিবার ইহুদিবিদ্বেষবিরোধী বিশাল এক মিছিল হয়েছে৷ এক লাখ ৮২ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন সেই মিছিলে৷
মঙ্গলবার রিস-ওরাঙ্গিসে ইহুদি-মুসলমানদের এক সংগঠনের কর্মসূচি সবার নজর কাড়ে৷ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা রাব্বি মিশেল সেরফাতি৷ ইহুদি-মুসলমান বন্ধুত্ব (এজেএমএফ) নামের এই সংগঠনটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ২০ বছর আগে৷ হ্যাঁ, যখন থেকে তার সহায়তায় গড়া মসজিদে মুসলমানরা দিনে পাঁচবার নামাজ আদায় করছেন, তখনই এজেএমএফ-এর পথ চলা শুরু৷ রাব্বি মিশেল সেরফাতি ডয়চে ভেলেকে জানান, তার এই সংগঠনের হয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন আটজন কর্মী৷ আটজনই মুসলিম তরুণ৷ তিনি আরো জানান, এই সংগঠনের উদ্দেশ্য সবার মাঝে সচেতনতা বাড়িয়ে সব ধর্মের মানুষদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়া৷ ইহুদিবিদ্বেষ কমাতে বন্ধুত্বের বন্ধন গড়াই তো বেশি জরুরি৷
লিসা লুইস/এসিবি