ফ্রান্সে উগ্র দক্ষিণপন্থিদের বিরুদ্ধে ঐক্যের উদ্যোগ
২ জুলাই ২০২৪
ফ্রান্সে রোববারের নির্বাচনে আরএন দলের সাফল্যের পর দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটগ্রহণে ঐক্যের চেষ্টা করছে মধ্য ও বামপন্থি শিবির৷ উগ্র দক্ষিণপন্থিদের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে অনেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করছেন৷
বিজ্ঞাপন
ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিজের দলের ভরাডুবি ও উগ্র দক্ষিণপন্থি শিবিরের জয়ের পর তিনি আচমকা আগাম সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা করেন৷ কিন্তু সেই চালে কাজ হয় নি৷ গত রোববার প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে আবার ভালো ফল করেছে উগ্র দক্ষিণপন্থি ‘রাসঁব্লে নাসিওনাল’ বা আরএন দল৷ তবে কোনো শিবির সরাসরি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দ্বিতীয় পর্যায়ে আবার ভোটগ্রহণ হবে৷ ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচনে এই দ্বিতীয় সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে আসছে বাকি দলগুলি৷ উগ্র দক্ষিণপন্থি শক্তির উত্থান রুখতে তারা মতবিরোধ ভুলে ঐকবদ্ধ হয়ে ভোটারদের সামনে উপস্থিত হয়েছে৷ এবারও সেই চেষ্টা শুরু হয়েছে৷
প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর মধ্যপন্থি শিবির ও বাম দলগুলির জোট সোমবার সংসদ নির্বাচনের আগামী ৭ জুলাই দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটের জন্য রণকৌশল স্থির করার উদ্যোগ শুরু করেছে৷ রোববারের নির্বাচনে বাম শিবির দ্বিতীয় ও মাক্রোঁর শিবির তৃতীয় স্থান দখল করেছে৷ একাধিক জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী বিরোধী ঐক্য সম্ভব হলে আরএন দল ২৮৯ আসনে জয়লাভ করে সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না৷ রোববার ফল প্রকাশের পর মাক্রোঁ উগ্র দক্ষিণপন্থিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণতান্ত্রিক জোট গড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে প্রার্থীরা দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটের জন্য মনোনয়ন প্রত্যাহার করার সুযোগ পাচ্ছেন৷ সংবাদ সংস্থা এএফপি-র সূত্র অনুযায়ী ইতোমধ্যেই মধ্যপন্থি ও বাম শিবিরের দেড়শোরও বেশি প্রার্থী সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷
আরএন দল ভোটারদের উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় পর্যায়েও জোরালো সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছে৷ প্রথম পর্যায়ে সংসদে ৭৬টি আসনে চূড়ান্ত ফল স্থির হয়ে গেছে৷ বাকি আসনগুলি দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সেই দল৷ কাঙ্খিত ফল পেলে ফ্রান্সের আধুনিক ইতিহাসে এই প্রথম কোনো উগ্র দক্ষিণপন্থি দল ক্ষমতায় আসবে৷ মাক্রোঁ ২০২৭ পর্যন্ত নিজের কার্যকাল শেষ করলে তাঁকে এমন এক সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হবে৷ আগাম নির্বাচন ডাকার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ আগামী রোববার আরএন চূড়ান্ত সাফল্য পেলে তাঁর পদত্যাগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না৷
ফ্রান্সেএমন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, ফ্রান্সে চরম দক্ষিণপন্থিদের সাফল্য উদ্বেগের কারণ৷ তিনি বলেন, আরএন দল ইউরোপকে সমাধানের বদলে সমস্যা হিসেবে দেখে৷ পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টুস্ক এই ফলকে ফ্রান্স ও ইউরোপের জন্য ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ তবে ইটালির চরম দক্ষিণপন্থি প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি ও হাঙ্গেরির উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্সের নির্বাচনের ফলকে স্বাগত জানিয়েছেন৷
ফ্রান্সে কয়েকদিন পর আগাম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ এতে কট্টর ডানপন্থিদের সম্ভাব্য জয় নিয়ে সে দেশের মুসলমানেরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: Alain Pitton/NurPhoto/picture alliance
আগাম সংসদ নির্বাচন
৩০ জুন ও ৭ জুলাই ফ্রান্সে আগাম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ ৬ থেকে ৯ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনে ফ্রান্সের কট্টর ডানপন্থিরা ভালো করার পর প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁকে আগাম নির্বাচন দেওয়ার চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন৷ মাক্রোঁ সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন৷
ছবি: Ludovic MARIN/AFP
জরিপের ফল
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত তিনটি জরিপ বলছে, সংসদ নির্বাচনে মারিঁ ল্য পেনের কট্টর ডানপন্থি ন্যাশনাল ব়্যালি পার্টি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে৷ এরপরে আছে বামপন্থি পপুলার ফ্রন্ট ও মাক্রোঁর রেনেসাঁ পার্টি৷
ছবি: Andre Pain/EPA
মুসলমানদের মনে শঙ্কা
ফ্রান্সে প্রায় ৬০ লাখ মুসলমান বাস করেন৷ তারা আশঙ্কা করছেন, সংসদ নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থিরা জয়ী হলে তাদের উপর কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে৷ ২৩ বছর বয়সি সারাহ এএফপিকে বলেন, ল্য পেনের দল জিতলে পোশাক ও প্রার্থনা বিষয়ে তারা ইচ্ছেমতো নতুন আইন করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন৷ ৭০ বছর বয়সি আরেক নারী ফাতিমাও বলেছেন, তিনি নির্বাচনের সম্ভাব্য ফল নিয়ে শঙ্কিত৷
ছবি: Alain Pitton/NurPhoto/picture alliance
বিল প্রস্তাব
২০২১ সালে ন্যাশনাল ব়্যালি পার্টি জনসম্মুখে হিজাব পরা ও ‘ইসলামি মতাদর্শের’ উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত একটি বিল প্রস্তাব করেছিল৷ এছাড়া হালাল ও কোশর মাংসের উপরও নিষেধাজ্ঞা চায় দলটি৷ দলের নেতা জর্ডান বারদেলা সম্প্রতি বলেছেন, তারা জনসম্মুখে হিজাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা দিতে চান৷ তবে তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনে তার দল জিতলেও ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি কার্যকর হবে না৷
ছবি: Michel Euler/AP Photo/picture alliance
পোশাক সংক্রান্ত বর্তমান আইন
সরকারি স্কুলে হিজাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে৷ এছাড়া জনসম্মুখে মুখসহ পুরো শরীর ঢাকা বোরকা পরাও নিষিদ্ধ৷ এই স্কুল বছর থেকে স্কুলে আবায়া পরার উপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মাক্রোঁ সরকার৷
ছবি: Frederic Speich/MAXPPP/dpa/picture alliance
মুসলিমদের প্রতি বৈরী আচরণ ‘বৈধতা’ পেতে পারে
ফ্রান্সের নাগরিক সারাহ বলছেন, কট্টর ডানপন্থি দল ক্ষমতায় গেলে মুসলিমদের প্রতি বৈরী আচরণ ‘বৈধতা’ পেতে পারে৷ ‘‘প্রকাশ্যে স্বীকার করা একটি বর্ণবাদী দল যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকে তাহলে ইসলামোফোবিক কর্মকাণ্ড বহুগুনে বাড়তে পারে,’’ বলে আশঙ্কা তার৷ ছবিটি প্রতীকী৷
ছবি: JEAN-PHILIPPE KSIAZEK/AFP
‘ইউরোপ থেকে ইসলাম তাড়িয়ে দাও’
গত শনিবার সন্ধ্যায় লিও শহরের রাস্তায় প্রায় ৪০ জন উগ্র ডানপন্থি সমর্থক মিছিল করে ‘আমরা নাৎসি’, ‘ইউরোপ থেকে ইসলাম তাড়িয়ে দাও’ এমন শ্লোগান দিয়েছে বলে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে৷
ছবি: Vanessa Meyer/dpa/picture alliance
সন্তানদের প্রতি মায়ের পরামর্শ
প্যারিসের গ্র্যান্ড মসজিদের সামনে মরিয়ম নামের ৪৬ বছর বয়সি এক নারী এএফপিকে জানান, বর্তমানে ফ্রান্সে মুসলিম হিসেবে জীবনযাপন ১৫ বছর আগের তুলনায় কঠিন হয়ে উঠেছে৷ ২০১৫ সালে ইসলামের নামে ফ্রান্সে কয়েকটি জঙ্গি হামলার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে৷ সে কারণে তিনি তার সন্তানদের ভালো করে পড়াশোনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন যেন তারা অন্য কোথাও চলে যেতে পারে৷