ফ্রান্সে কৃষকদের কিছু দাবি মানলো সরকার, অবরোধ উঠছে
২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ফ্রান্সে কৃষকদের দাবি মেনে একগুচ্ছ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা সরকারের। বিক্ষোভে ইতি টানলো একটি কৃষক ইউনিয়ন।
বিজ্ঞাপন
কৃষকদের কর, বিধিনিষেধ ও আয় সংক্রান্ত একাধিক দাবি সরকার মেনে নেবে বলে জানিয়েছে। তারপরই ইয়ং ফার্মার্স(জেএ) নেতা গেইলট জানিয়েছেন, সরকারের এই প্রতিশ্রুতির পর কৌশল বদলের সময় এসেছে। ।
তিনি জানিয়েছেন, ''আমরা আর রাস্তা অবরোধ করব না। আমরা নতুনভাবে সকলকে একত্রিত করব।'' গেইলট যখন এই কথা বলছেন, তখন তার পাশে ছিলেন সবচেয়ে বড় কৃষক ইউনিয়ন এফএনএসইএ-র নেতা আর্নদ রুশো।
রুশো জানিয়েছেন, ''এখন বিক্ষোভকারীদেরএটা বলার সময় এসেছে যে, তারা যেন ঘরে ফিরে যান। তাদের নিজেদের কাজ করার আছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা বাড়ির বাইরে আছেন।''
ব্রাসেলসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ বলেছেন, ''ইউরোপের কৃষকরা প্রবল সংকটে পড়েছে। তাই নিয়ম বদল করাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।''
'রাস্তা অবরোধ করতে দ্বিধা করব না'
গত দুই সপ্তাহ ধরে এই কৃষকদের বিক্ষোভের জেরে ফ্রান্স উত্তাল। তবে সরকার জানিয়েছে, তারা নিয়মকানুন সরল করবে, কৃষকদের অর্থসাহায্য করবে, সস্তা বিদেশি জিনিসের থেকে তাদের বাঁচাবে।
ইউরোপের কৃষকেরা কেন বিক্ষোভ করছেন?
বিভিন্ন দাবি আদায়ে গত ১৮ জানুয়ারি থেকে বিক্ষোভ করছেন ফ্রান্সের কৃষকেরা৷ এর আগে জার্মানি, হল্যান্ড, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি ও বুলগেরিয়ায়ও কৃষক বিক্ষোভ হয়েছে৷
ছবি: Guillaume Souvant/AFP/Getty Images
ফ্রান্সে কৃষকদের বিক্ষোভ
গত ১৮ জানুয়ারি থেকে বিক্ষোভ করছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় কৃষিপণ্য উৎপাদনকারক ফ্রান্সের কৃষকেরা৷ ছবিতে ফ্রান্সের পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের বিক্ষোভের অংশ হিসেবে এক সেতুতে ট্রাক্টর নিয়ে গিয়ে অবরোধ তৈরি করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Fred Tanneau/AFP/Getty Images
কর সুবিধা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা
ডিজেল ক্রয়ে ফ্রান্সের কৃষকেরা যে কর সুবিধা পেয়ে থাকেন সেটি বাতিলের পরিকল্পনা করছে সরকার৷ এছাড়া কৃষকেরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর অংশ হিসেবে সরকার ও খুচরা বিক্রেতারা দাম কমাতে তাদের উপর চাপ দিচ্ছেন৷ কিন্তু জ্বালানি, সার ও পরিবহণের উচ্চমূল্যের কারণে অনেক কৃষকের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না৷ ছবিতে এক বিক্ষোভকারীর ব্যানারে লেখা ‘মাসে ৪০০ ইউরো, সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা, মাক্রোঁ কৃষিকাজ করতে এসেছেন’৷
ছবি: Sylvain Thomas/AFP/Getty Images
কম দামে খাদ্য আমদানি
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেন থেকে খাদ্য আমদানিতে কোটা ও শুল্ক প্রত্যাহার করেছে ইইউ৷ সে কারণে ইউক্রেন থেকে আমদানি করা খাদ্যশস্যের দাম ফ্রান্সের বাজারে কম৷ সেই দামের সাথে পেরে উঠছেন না ফরাসি কৃষকেরা৷ এছাড়া দক্ষিণ অ্যামেরিকার বাণিজ্য ব্লক ‘ম্যার্কোসুয়র’ এর সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও আলোচনা করছে ইইউ৷ তাই চিনি, মাংস ও শস্য খাতে অন্যায্য প্রতিযোগিতার মুখে পড়ার আশঙ্কা ফ্রান্সের কৃষকদের৷
ছবি: Philippe Lopez/AFP/Getty Images
পরিবেশ নীতির কারণে সমস্যা
পরিবেশ রক্ষার কথা বলে কৃষকদের কঠোর নিয়মনীতির মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ফ্রান্সের কৃষকদের৷ একই মনোভাব ইইউ সাংসদ টোমাস ভাইটসের৷ অস্ট্রিয়ার নাগরিক ভাইটস নিজেও একজন কৃষক৷ তিনি বলেন, ইইউর কৃষকদের যেমন পরিবেশ রক্ষার নীতি মানতে বলা হচ্ছে, তেমনি ইইউর বাইরের যাদের কাছ থেকে আমদানি করা হচ্ছে তারাও যেন এসব নীতি মানেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে৷ ‘‘তা নাহলে ইইউর কৃষকেরা অন্যায্য প্রতিযোগিতায় পড়বেন৷’’
ছবি: Sylvain Thomas/AFP/Getty Images
ইইউর অন্য দেশেও বিক্ষোভ
এর আগে জার্মানি, হল্যান্ড, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি ও বুলগেরিয়ায়ও কৃষক বিক্ষোভ হয়েছে৷
ছবি: Nadja Wohlleben/REUTERS
চিন্তিত ইইউর শীর্ষ নেতারা
জুন মাসে ইইউর সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ তার আগে বিভিন্ন দেশে কৃষকদের এমন বিক্ষোভ ইইউর শীর্ষ নেতাদের ভাবাচ্ছে৷ তাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার কৃষকদের সংগঠন, এগ্রি-বিজনেস কোম্পানি, এনজিও ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ‘কৌশলগত’ আলোচনা শুরু করেছে ইউরোপীয় কমিশন৷
ছবি: Yves Herman/REUTERS
6 ছবি1 | 6
রুশো বলেছেন, ''সরকার আমাদের কথা শুনেছে এবং আমাদের সংকটটা বোঝার চেষ্টা করেছে। তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে, কিছু জরুরি ব্যবস্থার কথা জানিয়েছে।''
তার আশা, প্রাথমিকভাবে এর সুফল পাওয়া যাবে। এই মাসের শেষে কৃষি বাণিজ্য মেলা শুরু হবে। তার আগেই কৃষকরা সরকারি ব্যবস্থায় লাভবান হবেন।
তিনি এটাও বলেছেন, যদি প্রতিশ্রুতি পূরণ করা না হয়, তাহলে তারা আবার অবস্থান বিক্ষোভ দেখাতে এক মুহূর্ত দেরি করবেন না।
ইইউ নিয়ে হতাশা
ইউনিয়নের কথা মেনে কৃষকরা তাদের বিক্ষোভ শেষ করে বাড়ি ফিরবেন কিনা, তা এবার বোঝা যাবে। তবে তারা ইইউ-র নীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ। তাছাড়া তাদের অনেক দাবি এখনো মানা হয়নি।
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা ইউক্রেনকে সাহায্য করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। সেখানেও বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে। তারপর ইউক্রেন থেকে সস্তায় সবজি এসে ইউরোপের কৃষকদের ক্ষতি করছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের কৃষিজ জিনিসের আমদানি বেঁধে দিতে পারে ইইউ।