ফ্রান্সের গির্জায় আক্রমণের নিন্দায় পুরো বিশ্ব। ইউরোপ তো বটেই, মুসলিম দেশগুলিও ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে।
বিজ্ঞাপন
নিন্দায় মুখর বিশ্ব। ফ্রান্সের গির্জায় আক্রমণ ও নৃশংসভাবে তিনজনকে হত্যা করা নিয়ে। জার্মানির চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, ''এই ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডে আমি প্রবলভাবে ধাক্কা খেয়েছি। এই কঠিন সময়ে আমরা ফ্রান্সের পাশে আছি।'' ম্যার্কেলের এই প্রতিক্রিয়া টুইট করেছেন তাঁর মুখপাত্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ''আমরা ফ্রান্সের মানুষের সঙ্গে আছি। এই লড়াইয়ে অ্যামেরিকা তার ঘনিষ্ঠতম বন্ধু দেশের পাশে আছে।'' ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন জানিয়েছেন, আমরা একত্রে এই বর্বরতা ও উন্মাদনার মোকাবিলা করব। ইটালির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ''এই কাপুরুষোচিত আক্রমণ স্বাধীনতা ও শান্তির উপর আঘাত হেনেছে।''
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের টুইট, ''এই আক্রমণ বর্বরোচিত। সন্ত্রাস ও অসহিষ্ণুতার মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য ফ্রান্সের পাশে আছে।'' স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো স্যানচেজ জানিয়েছেন, ''এই আক্রমণের বিরোধিতায় পুরো ইউরোপ এক।''
ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যা আছে
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ২০১৭ সালে জরুরি অবস্থায় প্রযোজ্য আইনের বেশ কিছু ধারা স্বাভাবিক অবস্থায়ও প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷
ছবি: REUTERS/Youssef Boudlal
চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা
সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দিহান ব্যক্তিরা নিজেদের শহর ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারবে না এবং প্রয়োজন হলে তাদের নিয়মিত পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হবে৷ এরকম মানুষদের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় নিষিদ্ধও করা যাবে৷ বলাবাহুল্য, আগে সাধারণত জরুরি অবস্থায় এমন আইন প্রয়োগ করতে পারতো ফরাসি সরকার, যার অর্থ হচ্ছে, একজনকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা৷
ছবি: Reuters/Ch. Platiau
ঘরতল্লাশি
শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের স্বার্থে যে-কারো ঘর তল্লাশি করতে পারবে কর্তৃপক্ষ৷ আগে জরুরি অবস্থার বাইরে এ ধরনের তল্লাশি অভিযান একজন বিচারকের আদেশক্রমে করা যেতো৷ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারির পর প্রথম সাত মাসে ৩,৬০০ বাড়িতে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়৷ এর মধ্যে শুধুমাত্র ছয়টি তল্লাশির সময় সন্ত্রাসবাদের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/L. Notarianni
উপসনালয় বন্ধের ক্ষমতা
উগ্রবাদ বা বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে যে কোনো উপসনালয় বন্ধ করে দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ৷ এর আগে ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা মারিঁ ল্য পেন অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁদের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করা উগ্র ইসলামপন্থার মোকাবিলায় ফ্রান্সের প্রচলিত আইন যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছে না৷
ছবি: REUTERS/Christian Hartmann
বন্দর এবং বিমানবন্দরে পরিচয়পত্র পরীক্ষা
বন্দর এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দশ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে যে কারো পরিচয়পত্র পরীক্ষা করতে পারবে নিরাপত্তা বাহিনী৷ সরকারের প্রস্তাবিত ড্রাফটে অবশ্য বিশ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে এ ধরনের পরীক্ষা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছিল৷ কিন্তু অনুমোদিত আইনে সেটা কমিয়ে দশ বর্গকিলোমিটার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
পাবলিক ইভেন্ট ঘিরে নিরাপত্তা
সন্ত্রাসী হামলার কবলে পড়ার ঝুঁকি আছে এমন বড় পাবলিক ইভেন্টের নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থার মতো আইনি অধিকার পাবে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো৷ এই অধিকারের আওতায় তারা ভেন্যুর কাছাকাছি যে কোনো প্রপার্টিতে এবং সন্দেহভাজন যে কোনো মানুষকে তল্লাশি করতে পারবে৷ এছাড়া নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কর্মরত কোনো সরকারি কর্মী যদি উগ্র মতামত ধারণ করে, তাহলে তাকে বদলি বা চাকুরিচ্যুত করা যাবে৷
ছবি: Reuters/P. Wojazer
5 ছবি1 | 5
মুসলিম দেশের নিন্দা
তুরস্ক সহ মুসলিম দেশগুলিও এই ঘনার তীব্র নিন্দা করেছে। মহানবীর কার্টুন নিয়ে তুরস্ক ও ফ্রান্সের মধ্যে সম্প্রতি বিরোধ সামনে এসেছে। তবে এই ঘটনার পর তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ''সন্ত্রাস ও সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা। এই বিষয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে আছি।'' তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের মুখপাত্র টুইট করে বলেছেন, ''আমরা একযোগে সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।''
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুরেশি বলেছেন, তাঁরা যে কোনো জায়গায় সহিংসতার নিন্দা করেন। সৌদি আরব বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ''কোনো ধর্মই সহিংসতা, চরমপন্থাকে সমর্থন করে না।'' ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাবাদ জারিফের টুইট, ''ঘৃণাপূর্ণ ভাষণ, উস্কানি, সহিংসতার এই চক্র যুক্তি দিয়ে ভাঙতে হবে।''
আক্রমণকারী এসেছিল তিউনিশিয়া থেকে। সেই তিউনিশিয়া বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা এই সন্ত্রাসবাদী কাজের তীব্র নিন্দা করছে এবং পুরোপুরি ফ্রান্সের পাশে আছে।
পোপের নিন্দা
পোপ ফ্রান্সিস জানিয়েছেন, তিনি গির্জায় নিহতদের জন্য প্রার্থনা করছেন। তাঁর মতে, সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংসতা কখনোই মানা যায় না। সকলকে এক হয়ে এই অশুভের বিরুদ্ধে শুভের লড়াই লড়তে হবে।
ভ্যাটিকানের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ''ভালোবাসার জায়গায় হত্যা হলো।''