ফ্রান্সের গির্জায় হানা দিয়ে তিনজনকে যে হত্যা করেছে, সে সম্প্রতি তিউনিশিয়া থেকে এসেছিল।
বিজ্ঞাপন
বয়স ২১ বছর। সঙ্গে ছিল ইটালির রেড ক্রসের নথিপত্র। মাস খানেক আগেই ইটালির একটি দ্বীপে পৌঁছয় তিউনিশিয়ার যুবক। ১৪ দিন কোয়ারান্টিনে থাকার পর তাঁকে ইটালি ছেড়ে যেতে বলা হয়। সেখান থেকেই তিউনিশিয়ার যুবক ফ্রান্সে আসে অক্টোবরে। এই যুবকই নিস শহরে গির্জায় ঢুকে তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। তার পকেট থেকে একটি কোরান, দুইটি সেলফোন ও একটি ১২ ইঞ্চির ছুরি পাওয়া গেছে বলে ফ্রান্সের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আরো আক্রমণের চেষ্টা?
দক্ষিণ ফ্রান্সের শহর এভিনিওঁ-তে এক যুবক হ্যান্ডগান নিয়ে ঘুরছিল। পুলিশ তাকে গুলি করে মেরেছে।
নিসের গির্জায় তিনজনের হত্যার পরই লিওঁ শহরে এক আফগান বড় ছুরি নিয়ে ট্রামে উঠতে যাচ্ছিল। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
সৌদি আরবের সরকারি টিভি জানিয়েছে, ফরাসি কনসুলেটের গার্ডকে আক্রমণ করেছিল এক ব্যক্তি। গার্ড আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তবে তাঁর জীবনের ঝুঁকি নেই। আক্রমণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যা আছে
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ২০১৭ সালে জরুরি অবস্থায় প্রযোজ্য আইনের বেশ কিছু ধারা স্বাভাবিক অবস্থায়ও প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷
ছবি: REUTERS/Youssef Boudlal
চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা
সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দিহান ব্যক্তিরা নিজেদের শহর ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারবে না এবং প্রয়োজন হলে তাদের নিয়মিত পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হবে৷ এরকম মানুষদের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় নিষিদ্ধও করা যাবে৷ বলাবাহুল্য, আগে সাধারণত জরুরি অবস্থায় এমন আইন প্রয়োগ করতে পারতো ফরাসি সরকার, যার অর্থ হচ্ছে, একজনকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা৷
ছবি: Reuters/Ch. Platiau
ঘরতল্লাশি
শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের স্বার্থে যে-কারো ঘর তল্লাশি করতে পারবে কর্তৃপক্ষ৷ আগে জরুরি অবস্থার বাইরে এ ধরনের তল্লাশি অভিযান একজন বিচারকের আদেশক্রমে করা যেতো৷ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারির পর প্রথম সাত মাসে ৩,৬০০ বাড়িতে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়৷ এর মধ্যে শুধুমাত্র ছয়টি তল্লাশির সময় সন্ত্রাসবাদের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/L. Notarianni
উপসনালয় বন্ধের ক্ষমতা
উগ্রবাদ বা বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে যে কোনো উপসনালয় বন্ধ করে দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ৷ এর আগে ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা মারিঁ ল্য পেন অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁদের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করা উগ্র ইসলামপন্থার মোকাবিলায় ফ্রান্সের প্রচলিত আইন যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছে না৷
ছবি: REUTERS/Christian Hartmann
বন্দর এবং বিমানবন্দরে পরিচয়পত্র পরীক্ষা
বন্দর এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দশ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে যে কারো পরিচয়পত্র পরীক্ষা করতে পারবে নিরাপত্তা বাহিনী৷ সরকারের প্রস্তাবিত ড্রাফটে অবশ্য বিশ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে এ ধরনের পরীক্ষা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছিল৷ কিন্তু অনুমোদিত আইনে সেটা কমিয়ে দশ বর্গকিলোমিটার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
পাবলিক ইভেন্ট ঘিরে নিরাপত্তা
সন্ত্রাসী হামলার কবলে পড়ার ঝুঁকি আছে এমন বড় পাবলিক ইভেন্টের নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থার মতো আইনি অধিকার পাবে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো৷ এই অধিকারের আওতায় তারা ভেন্যুর কাছাকাছি যে কোনো প্রপার্টিতে এবং সন্দেহভাজন যে কোনো মানুষকে তল্লাশি করতে পারবে৷ এছাড়া নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কর্মরত কোনো সরকারি কর্মী যদি উগ্র মতামত ধারণ করে, তাহলে তাকে বদলি বা চাকুরিচ্যুত করা যাবে৷
ছবি: Reuters/P. Wojazer
5 ছবি1 | 5
মাক্রোঁর নিন্দা
গির্জায় আক্রমণের ঘটনাকে আরেকটি 'মুসলিম জঙ্গি হানা' বলে অভিহিত করেছেন মাক্রোঁ। তিনি বলেছেন, চার্চ, স্কুলের মতো জায়গাগুলিকে রক্ষা করার জন্য সেনার সংখ্যা তিন হাজার থেকে বাড়িয়ে সাত হাজার করা হয়েছে। আক্রমণের তদন্ত শুরু হয়েছে।
মাক্রোঁবলেছেন, ''আমরা যদি আবার আক্রান্ত হই তাহলে বুঝতে হবে আমাদের মূল্যবোধের উপর আঘাত হানা হচ্ছে। এই মূল্যবোধগুলিই আমাদের স্বাধীনতা। আমরা মুক্ত চিন্তার পক্ষে। কোনো জঙ্গি হানার কাছে আমরা মাথা নত করব না। আমি আবার জানাতে চাই, আমরা কোনো কিছুর কাছে আত্মসমর্পণ করব না।''