পারিবারিক কলহের জেরে আটক এক নারীকে উদ্ধার করতে গিয়ে ফ্রান্সে বন্দুকধারীর গুলিতে তিন পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে৷ আটক নারীকে অক্ষত উদ্ধার করেছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার মধ্যরাতে ফ্রান্সের পুয়ে-দে-দোম গ্রামের এক বাড়িতে সহিংস কলহের খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে যায় পুলিশ৷ জানা যায়, সেই বাড়ির ছাদে এক নারীকে আটকে রাখা হয়েছে৷ তাকে উদ্ধার করতে পুলিশ কর্মকর্তারা এগিয়ে গেলে ৪৮ বছর বয়সি এক ব্যক্তি গুলি চালাতে শুরু করে৷ গুলিবিদ্ধ তিন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত এবং একজন আহত হন৷
বন্দুকধারী ব্যক্তি পুলিশের ওপর গুলি চালানোর পর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন৷ দমকল বাহিনি এখনো আগুন নেভানোর চেষ্টায় ব্যস্ত৷
ফ্রান্সের সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পুলিশের ওপর গুলি চালানো ব্যক্তিকে এখনো পাওয়া যায়নি৷ তিনি আগুনে পুড়ে গেছেন, নাকি আগুন লাগিয়ে দিয়ে পালিয়েছেন, সে সম্পর্কেও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জঁ কাস্তঁ এক বিবৃতিতে বুধবারের ঘটনাকে ‘ট্র্যাজেডি’ হিসেবে উল্লেখ করে নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরাল্ড দার্নানিনও এক টুইট বার্তায় গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নিহত তিন পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি৷
এসিবি/কেএম (এএফপি, রয়টার্স)
ফ্রান্সের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যা আছে
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ২০১৭ সালে জরুরি অবস্থায় প্রযোজ্য আইনের বেশ কিছু ধারা স্বাভাবিক অবস্থায়ও প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷
ছবি: REUTERS/Youssef Boudlal
চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা
সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দিহান ব্যক্তিরা নিজেদের শহর ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারবে না এবং প্রয়োজন হলে তাদের নিয়মিত পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হবে৷ এরকম মানুষদের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় নিষিদ্ধও করা যাবে৷ বলাবাহুল্য, আগে সাধারণত জরুরি অবস্থায় এমন আইন প্রয়োগ করতে পারতো ফরাসি সরকার, যার অর্থ হচ্ছে, একজনকে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা৷
ছবি: Reuters/Ch. Platiau
ঘরতল্লাশি
শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের স্বার্থে যে-কারো ঘর তল্লাশি করতে পারবে কর্তৃপক্ষ৷ আগে জরুরি অবস্থার বাইরে এ ধরনের তল্লাশি অভিযান একজন বিচারকের আদেশক্রমে করা যেতো৷ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারির পর প্রথম সাত মাসে ৩,৬০০ বাড়িতে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হয়৷ এর মধ্যে শুধুমাত্র ছয়টি তল্লাশির সময় সন্ত্রাসবাদের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/L. Notarianni
উপসনালয় বন্ধের ক্ষমতা
উগ্রবাদ বা বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে যে কোনো উপসনালয় বন্ধ করে দিতে পারবে কর্তৃপক্ষ৷ এর আগে ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা মারিঁ ল্য পেন অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁদের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করা উগ্র ইসলামপন্থার মোকাবিলায় ফ্রান্সের প্রচলিত আইন যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছে না৷
ছবি: REUTERS/Christian Hartmann
বন্দর এবং বিমানবন্দরে পরিচয়পত্র পরীক্ষা
বন্দর এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দশ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে যে কারো পরিচয়পত্র পরীক্ষা করতে পারবে নিরাপত্তা বাহিনী৷ সরকারের প্রস্তাবিত ড্রাফটে অবশ্য বিশ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে এ ধরনের পরীক্ষা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছিল৷ কিন্তু অনুমোদিত আইনে সেটা কমিয়ে দশ বর্গকিলোমিটার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/B. Tessier
পাবলিক ইভেন্ট ঘিরে নিরাপত্তা
সন্ত্রাসী হামলার কবলে পড়ার ঝুঁকি আছে এমন বড় পাবলিক ইভেন্টের নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থার মতো আইনি অধিকার পাবে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো৷ এই অধিকারের আওতায় তারা ভেন্যুর কাছাকাছি যে কোনো প্রপার্টিতে এবং সন্দেহভাজন যে কোনো মানুষকে তল্লাশি করতে পারবে৷ এছাড়া নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কর্মরত কোনো সরকারি কর্মী যদি উগ্র মতামত ধারণ করে, তাহলে তাকে বদলি বা চাকুরিচ্যুত করা যাবে৷