ফ্রান্সের মুলুজ শহরে এক আলজেরীয় ব্যক্তির ছুরি হামলায় এক ব্যক্তি মারা যান, আহত হন সাতজন৷ অভিযুক্ত ব্যক্তি আগে থেকেই সন্ত্রাস দমন সংস্থার নজরে ছিলেন বলে ফ্রান্সের স্বরাষ্টমন্ত্রী জানিয়েছেন৷
মুলুজ শহরে ছুরি হামলার ঘটনাস্থলে কাজ করছেন ফরেনসিক কর্মীরা৷ছবি: Sebastien Bozon/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলের শহর মুলুজের একটি বাজারে শনিবার বিকেলে ছুরি ও স্ক্রুড্রাইভারের আঘাতে ৬৯ বছর বয়সি এক পর্তুগিজ ব্যক্তিকে হত্যা করে ওই আলজেরীয়৷ ঘটনায় অন্তত সাতজন আহত হন৷ আহতদের মধ্যে পাঁচজন পুলিশকর্মী ও দুজন নগর কর্তৃপক্ষের কর্মী৷ আহতরা আঘাত পান হামলাকারীকে থামানোর সময়৷
ফ্রান্সের সন্ত্রাসরোধী সংস্থা পিএনএটি জানায়, হামলাকারীর প্রকৃত লক্ষ্য ছিল পুলিশকর্মীকে আঘাত করা৷ হামলার সময় ‘আল্লাহু আকবর' বলে চিৎকারও দেন তিনি৷ ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ঘটনাটিকে ‘ইসলামিস্ট সন্ত্রাসী হামলা' আখ্যা দেন৷
কিন্তু মুলুজ শহরের মেয়র মিশেল লুৎজ বলেছেন, সন্ত্রাসী যোগের বিষয়টি এখনো আদালতের তরফে নিশ্চিত করা হয়নি৷
তদন্তকারীরা হত্যা ও সন্ত্রাসী উদ্দেশ্যে হত্যার অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখছে৷
বার্তা সংস্থা ডিপিএ জানাচ্ছে, ঘটনায় হামলাকারী ছাড়াও আরো তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যাদের মধ্যে দুজন হামলাকারীর পরিবারের সদস্য৷
জার্মানিতে পুলিশে গুলি করার প্রবণতা বাড়ছে৷ তাতে আহত এবং নিহত হওয়ার ঘটনাও বাড়ছে৷কেন বাড়ছে? পুলিশ কোন কোন পরিস্থিতিতে গুলি করতে পারে? বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/F. Bensch
পুলিশের গুলি করার প্রবণতা বাড়ছে
জার্মানির বিল্ড পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে পুলিশের মাঝে গুলি করার প্রবণতা আগের তুলনায় বেড়েছে৷ ২০১৮ সালে সারা দেশে পুলিশ গুলি চালিয়েছিল মোট ৫৬টি ঘটনায়, ২০১৯ সালে এমন ঘটনা ৬৭টিতে গিয়ে ঠেকে৷ ওই ৬৭টি ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়৷ পাঁচ বছর আগের তুলনায় ২০১৯ সালে পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Scholz
সম্প্রতি ব্রেমেনে যা ঘটেছে
গত ৩ জুলাই জার্মানির ব্রেমেন শহরে পুলিশের গুলিতে এক ব্যক্তি আহত হন৷ হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়৷ বলা হচ্ছে, ছুরি হাতে ওই ব্যক্তি এক পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলা চালালে বাধ্য হয়েই তাকে গুলি করা হয়৷ ঘটনার তদন্ত চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Skolimowska
গেলজেনকির্শেনের ঘটনা
এর আগে গত জানুয়ারি মাসে জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গেলজেনকির্শনেও পুলিশের গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত হয়৷ পুলিশের ভাষ্য, ৩৭ বছর বয়সি ওই ব্যক্তির সম্ভবত মানসিক সমস্যা ছিল, ছুরি হাতে তিনিও পুলিশের ওপর হামলা চালাতে উদ্যত হলে তাকে চারবার গুলি করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/IDA NewsMedia/R. Werner
পুলিশের অস্ত্র
স্বাভাবিক অবস্থায় দায়িত্ব পালনের সময় সব পুলিশ কর্মকর্তার কাছে পিস্তল থাকে৷ তবে কখনো কখনো রিভলভার এবং রাইফেলও সঙ্গে নিতে পারেন তারা৷ এছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে লাঠি এবং পিপার স্প্রে, এমনকি কোনো কোনো রাজ্যে সঙ্গে স্টানগানও রাখতে পারেন৷ তবে সব পরিস্থিতিতে যখন-তখন গুলি করা আইনসম্মত নয়৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
কখন গুলি করতে পারে পুলিশ?
সন্দেহভাজনকে বাগে আনার বা শান্ত করার বাকি সব চেষ্ট ব্যর্থ হলেই কেবল গুলি করতে পারে পুলিশ৷ ভিড়ের মধ্যে গুলি করার আগে সাধারণ মানুষকে সরে যাওয়ার সুযোগ দিতে হয়৷ কোনো ব্যক্তির গায়ে সরাসরি গুলি চালানোর আগে তাকে সতর্ক করতে অন্য কোনো বস্তুর ওপর গুলি চালানোর নিয়মও আছে কোনো কোনো রাজ্যে৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
বিশেষ প্রশিক্ষণ
আইন অনুযায়ী কখন গুলি করা যাবে তা বোঝাতে পুলিশকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ কোনো পুলিশ গুলি চালালে ঘটনার পর তার মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করে দেখা হয়৷ অনেক সময় গুলি চালানো পুলিশ কর্মকর্তা অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করে৷ গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি নিহত না হলেও এমন হয়ে থাকে৷ এমন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে মনরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bildfunk/B. Roessler
6 ছবি1 | 6
হামলাকারী আগে থেকেই ছিল কর্তৃপক্ষের নজরে
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নজরে রাখা হয়েছিল৷ এফএসপিআরটি নামের একটি বিশেষ ওয়াচলিস্ট বা নজরদারি তালিকায় ছিল এই ছুরিকাঘাতের ঘটনার অভিযুক্ত ব্যক্তির নামও৷
হামলাকারী ব্যক্তির মানসিক অসুস্থতা রয়েছে এবং এর আগেও সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের পক্ষ নিয়েছেন তিনি৷ পুলিশের নথিতে তার স্কিৎজোফ্রেনিয়া থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷
অভিবাসন যেভাবে জড়িত
অনিয়মিত পথে ২০১৪ সালে ফ্রান্সে প্রবেশ করার পর তাকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়৷ কিন্তু আলজেরিয়া তাকে ফেরত নিতে একাধিকবার অস্বীকার করে৷
এই প্রসঙ্গে ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ব্রুনো রেটাইলু বলেন, অবিলম্বে আলজেরিয়ার নাগরিকদেরন ফরাসি ভিসা দেবার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা উচিত৷ এই মন্তব্যের জবাবে এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি আলজেরিয়া কর্তৃপক্ষ৷