প্রায় পাঁচ মাস ধরে নতুন সন্ত্রাসী হামলার আতঙ্কের মাঝে বাস করছে ফ্রান্সের মানুষ৷ সারা দেশে চলছে জরুরি অবস্থা৷ ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইউরো ২০১৬ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকবে৷
বিজ্ঞাপন
কে জিতবে এবারের ইউরোপিয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ? ফুটবল যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের মনে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে৷ ইউরো ২০১৬ শুরু হতে আর যে বেশি দেরি নেই! আগামী ১০ জুন থেকে ফ্রান্সে শুরু হবে এ আসর৷ চলবে এক মাস৷ আসর শুরুর আগের এই সময়টায় স্বাভাবিকভাবেই চলছে নানা ধরণের আলোচনা, বিশ্লেষণ৷ বিশ্লেষকদের কেউ কেউ এবারের ইউরো জয়ের সম্ভাবনায় বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন জার্মানির চেয়েও এগিয়ে রাখছেন স্বাগতিক ফ্রান্সকে৷
তবে ফ্রান্স সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় ভাবনা এখন নিরাপত্তা৷ ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্যারিসে যে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল তারপর থেকে জননিরাপত্তা বিধানই সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ ইউরো-২০১৬ চলার সময় চ্যালেঞ্জটা আরো কঠিন হবে৷ তাই ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছেন, ২৪টি দেশের ফুটবল দল এবং অগুনতি ফুটবলামোদীর নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সম্ভব সব রকমের চেষ্টাই তাঁরা করবেন৷ সে কারণে তাঁর সরকার নভেম্বর থেকে চলে আসা জরুরি অবস্থা ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
অথচ জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার জন্য ফ্রান্স সরকারের ওপর চাপ ছিল৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলে আসছে, এতদিন ধরে জরুরি অবস্থা জারি থাকায় ফ্রান্সের সব মানুষেরই মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে৷ ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভালস জানিয়েছেন তাঁর সরকারের কাছে মানুষের জীবনের নিরাপত্তাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার, অন্য কিছু নয়৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘জরুরি অবস্থা স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নয়৷ তবে (ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের মতো) এমন একটি বড় আয়োজনের আগে আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে পারি না৷ এ কারণেই আমরা জরুরি অবস্থা আরো কিছুদিন জারি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷''
যে রাত বিশ্বকে বদলে দিল
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ১৩ই নভেম্বরের সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১২৯ জন নিহত ও ৩৫২ জন আহত হয়েছে৷ কেঁপে উঠেছে গোটা বিশ্ব৷ বদলে গেছে অনেক কিছু৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
প্রাথমিক খবর
জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন প্যারিসে হামলার প্রাথমিক খবর আসতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মানুষের মনে ভয়
খবর পেয়ে প্যারিসের মানুষের মনে ভয় ও আতঙ্ক ছেয়ে যায়৷ কর্তৃপক্ষ মানুষকে বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পণবন্দি নাটকের মঞ্চ
বাটাক্লঁ কনসার্ট হলে হেভি মেটাল সংগীত চলাকালীন সন্ত্রাসবাদীরা কিছু মানুষকে পণবন্দি করেছিল৷ রাত একটা নাগাদ পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে৷
ছবি: Reuters/C. Hartmann
বিহ্বল প্রেসিডেন্ট
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন৷ ফুটবল ম্যাচের বিরতির সময়ে তিনি স্টেডিয়াম ছেড়ে গিয়েছিলেন৷ তাঁকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়৷
ছবি: Reuters
স্টেডিয়ামে চাপা আতঙ্ক
ফ্রান্স ও জার্মানির জাতীয় দল এবং দর্শকরা কিন্তু স্টেডিয়াম ছেড়ে যাবার অনুমতি পাননি৷ সে সময়ে তাঁদের মনের অবস্থা কী ছিল, তা অনুমান করা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Alexandre
হামলাকারীদের দশা
প্রায় সব আততায়ী নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ একজন সীমান্ত পেরিয়ে বেলজিয়ামে প্রবেশ করেছে৷ পুলিশ সূত্র অনুযায়ী হামলাকারীদের মধ্যে কমপক্ষে দু’জন বেলজিয়ামে বসবাস করতো৷
ছবি: Getty Images/K. Tribouillard
আহতদের অবস্থা সংকটজনক
প্যারিসে একাধিক হামলায় আহত অনেক মানুষের অবস্থা সংকটজনক৷ ফলে নিহতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bureau
কড়া নিরাপত্তার বেড়াজাল
প্যারিসে হামলার পর আন্তর্জাতিক স্তরেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ যেমন নিউ ইয়র্কে ফরাসি কনসুলেটের সামনে আরও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
গোটা বিশ্বে সংহতি
নিউ ইয়র্কে ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’-এর অ্যান্টেনায় ফরাসি জাতীয় রং ফুটিয়ে তোলা হয়৷ নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো বলেন, ‘‘আমরা ফরাসি জাতির সঙ্গে সংহতির বন্ধনে আবদ্ধ৷’’
ছবি: Reuters/C. Allegri
9 ছবি1 | 9
ইউরো ২০১৬-তে ২৪টি দেশ অংশ নেবে৷ মোট ৫১টি ম্যাচ হবে এ আসরে৷ উদ্বোধনী এবং ফাইনাল ম্যাচটি হবে প্যারিসের জাতীয় স্টেডিয়াম স্টাড দ্য ফ্রঁস-এ৷ গত নভেম্বরে এই স্টেডিয়ামেই সবচেয়ে বড় হামলাটি চালিয়েছিল আইএস জঙ্গিরা৷ প্যারিসের সে হামলায় নিহত হয়েছিল ১৩০ জন, আহত হয়েছিল অনেক মানুষ৷
যে ১০টি কারণে আপনিও হয়ত ইউরো ২০১৬ দেখবেন
শুরু হয়ে গেছে কাউন্টডাউন৷ ইউরোপীয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ান্ত লড়াই শুরু হতে আর বেশি বাকি নেই৷ ফ্রান্সে অনুষ্ঠেয় এ আসর উপভোগ করার জন্য মুখিয়ে আছেন সবাই৷ অন্তত দশটি কারণে ইউরো ২০১৬ দেখবেন অনেকে৷
ছবি: Getty Images/M. Hangt
এই প্রথম ২৪ দল
৫৬ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে থাকছে ২৪টি দল৷ চূড়ান্ত পর্বে দল বাড়ানোর লক্ষ্যে বাছাই পর্বও হয়েছে নতুন আদলে৷ সেই সুবাদে এবার ছয়টি দল বেশি থাকছে চূড়ান্ত পর্বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দর্শকও বেশি
প্রায় ২৫ লক্ষ দর্শক এবার স্টেডিয়ামে বসে ফ্রান্সের এই আসর উপভোগ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ ২৫ লক্ষের মধ্যে ১৫ লক্ষই হবে বিদেশি দর্শক৷ অন্যান্য দেশ থেকে ফ্রান্সে খেলা দেখতে এসে ফুটবলামোদীরা অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার খরচ করবেন বলেও বিশেষজ্ঞদের অনুমান৷
ছবি: Reuters/Kacper Pempel
প্রায় সারা বিশ্বেই দেখা যাবে
বিশ্বের অন্তত ২৩০টি অঞ্চলে সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হবে ইউরো ২০১৬-র খেলা৷ প্রতিটি ম্যাচ গড়ে অন্তত ১৫ কোটি মানুষ দেখবেন৷
ছবি: Imago/A. Heyder
হবে নতুন ইতিহাস
ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে এ পর্যন্ত ২৩৫টি ম্যাচ হয়েছে৷ ২৩৫টি ম্যাচে ২ দশমিক ৪৬ গড়ে গোল হয়েছে ৫৭৯টি৷ এবার দল বাড়ছে৷ সুতরাং আশা করা হচ্ছে এক আসরে সবচেয়ে বেশি গোলের নতুন ইতিহাসও হবে৷
ছবি: Imago
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
লড়াইটা জমজমাট করার সব রকম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে৷ প্রতিটি দলকে গ্রুপ পর্বে নিজেদের তিনটি ম্যাচ খেলতে হবে তিনটি স্টেডিয়ামে৷ প্রতিটি ম্যাচের পরে সব দলই দু দিনের বিশ্রাম পাবে৷
ছবি: Franck Fife/AFP/Getty Images
নতুনের আবাহন
এবার এক আসরেই অভিষেক হচ্ছে পাঁচটি নতুন দলের৷ বাছাই পর্ব উতরে যাওয়ায় এবার প্রথম বারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে খেলবে আলবেনিয়া, আইসল্যান্ড, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও ওয়েলস৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Guez
জার্মানি আর স্পেনের লড়াই
ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে বেশি চারবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্পেন এবং জার্মানি৷ ফিফা বিশ্বকাপের সর্বশেষ দুই চ্যাম্পিয়নও তারা৷ স্পেন সর্বশেষ ইউরো জিতেছিল ২০১২ সালে৷ আর ফিফা বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি সর্বশেষ ইউরো সাফল্য পেয়েছিল ২০ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে৷ দু’দলের সামনেই এবার পঞ্চম শিরোপা জয়ের সুযোগ৷
ছবি: Reuters
সেরা স্কোরারদের লড়াই
বাছাই পর্বে যে তিনজন সবচেয়ে বেশি গোল করেছিলেন তাঁরা তিনজনই থাকছেন চূড়ান্ত পর্বে৷ পোল্যান্ডের রবার্ট লেভান্ডোস্কি বাছাই পর্বে করেছিলেন ১৩ গোল, এছাড়া সুইডেনের ইব্রাহিমোভিচ ১১ বার আর জার্মানির টোমাস ম্যুলার ন’বার বল পাঠিয়েছিলেন প্রতিপক্ষের জালে৷ চূড়ান্ত আসরে তাঁদের লড়াই দেখার আকর্ষণটাও অন্যরকমই হবে৷
ছবি: Reuters/Russell Cheyne
বিশেষ আসর, বিশেষ পুরস্কার
ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফির মর্যাদাও অনেক৷ চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে তুলে দেয়া হয় অঁরি দেলনে কাপ৷ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত উয়েফার মহাসচিব ছিলেন দেলনে৷ ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের সেরার পুরস্কারে তাঁকে স্মরণ করা হয়৷
ছবি: Getty Images/M. Hangt
তারকাদের বিদায়
এবার অনেক বড় তারকাই হয়ত শেষ বারের মতো অংশ নেবেন ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে৷ জার্মানির অধিনায়ক বাস্তিয়ান শোয়াইনস্টাইগার, ইটালির অধিনায়ক জিয়ানলুয়িজি বুফন আর সুইডেনের অধিনায়ক স্লাতান ইব্রাহিমোভিচসহ বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলারেরই হয়ত ক্যারিয়ারের শেষ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ হবে এটি৷