ফ্রান্সে ডানপন্থি উত্থানে জার্মানির সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হবে?
৩ জুলাই ২০২৪
ফ্রান্সে প্রথম ধাপের নির্বাচনে উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল ব়্যালির (আরএন) জয় জার্মান রাজনীতিবিদদেরকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে৷ তারা এর ফলে ফ্রাঙ্কো-জার্মান সম্পর্কের ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছেন৷
জার্মান রাজনীতিবিদরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ তারা মনে করছেন, এই ফল ফ্রাঙ্কো-জার্মান সম্পর্কে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে৷
সবুজ দলের নেতা রিকার্ডা লাং এবং বিরোধী দল সিডিইউর মারিও ফোগ্ট সেই জার্মান রাজনীতিবিদদের মধ্যে আছেন যারা মনে করেন যে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ভুল করেছেন৷
আরএন দলের নেতা জর্ডান বারডেলা অবশ্য নির্বাচনের আগেই জানিয়েছেন যে তিনি সরকারপ্রধান হলে বার্লিনের সঙ্গে সম্পর্কে আপাতত কোনো পরিবর্তন আনবেন না৷
তবে বার্লিনভিত্তিক জার্মান ইন্সটিটিউটি ফর ইন্টারন্যাশনাল এন্ড সিকিউরিটি এফেয়ার্সের গবেষক রনিয়া ক্যাম্পিন বলেন, ‘‘আরএন বরাবরই জার্মানির সমালোচনা করেছে এবং কখনো কখনো শত্রুতাপূর্ণ মনোভাবও দেখিয়েছে৷ তারা অভিযোগ করেছে যে মাক্রোঁ জার্মানির কাছে ফ্রান্সের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছেন এবং ক্ষমতায় গেলে তারা এই বিষয়টির ইতি ঘটাবে৷''
আরএন ক্ষমতায় গেলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং বার্লিনের সঙ্গে প্যারিসের যেসব বিষয় নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ইইউতে ফ্রান্সের আর্থিক প্রতিশ্রুতি কমিয়ে দেয়া, ইইউর বিদ্যুতের বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়া, অভিবাসন চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং ইইউর বাইরে থাকা দেশগুলোর মানুষদের উপর দেশটি ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ৷ এসব সিদ্ধান্ত আদৌ দলটি বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা তা নিশ্চিত নয়৷ পাশাপাশি ইউক্রেনের প্রতি ফ্রান্সের প্রতিশ্রুতিতেও পরিবর্তন আসতে পারে, যদি উগ্রডানপন্থিরা ক্ষমতায় যায়৷
ফরাসি এই নির্বাচনের কারণে অবশ্য প্রেসিডেন্ট পদে পরিবর্তন আসছে না৷ তবে মাক্রোঁ ক্ষমতায় থাকলেও তার পক্ষে অনেক কিছু করাই কঠিন হয়ে পড়বে এবং আরএন দলের নেতা বারডেলাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়ে তার কাজ করতে হতে পারে৷
আর আরএন নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও পরিস্থিতি জটিলই থাকবে মাক্রোঁর জন্য৷ কারণ তখন জাতীয় সংসদে ডানপন্থি এবং বামপন্থিরা একে অপরের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে থাকলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে৷
ফলে আগামী মাসগুলোতে জার্মান সরকারকে সবচেয়ে বড় প্রতিবেশির সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কঠিন সময়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে৷
ক্রিস্টফ হেসেলবাখ/এআই/জেডএইচ
ফ্রান্সে উগ্র ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের প্রতিবাদ
ফরাসি সংসদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল ব়্যালির জয়ের প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী৷ তারা নতুন বামপন্থি জোটের উপর আস্থা রাখতে চাচ্ছেন৷
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
রাজপথে হাজার হাজার প্রতিবাদকারী
ফ্রান্সে রোববার সন্ধ্যায় নির্বাচনের আংশিক ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেশটির বিভিন্ন শহরে উগ্রডানপন্থি ন্যাশনাল ব়্যালির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন হাজার হাজার মানুষ৷ প্যারিসের রাস্তায় এই নারী এক ‘ঘৃণাপূর্ণ যুগের’ বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন৷ পপুলিস্ট দলটি নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৩৩ শতাংশের মতো ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছে৷
ছবি: ARNAUD FINISTRE/AFP/Getty Images
আতশবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ
বামপন্থি জোট ‘নিউ পপুলার ফ্রন্টের’ আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক মানুষ প্যারিসের ‘প্ল্যা দ্যুঁ লা রিপাবলিকে’ জড়ো হন৷ নির্বাচনে ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে এই জোট৷ কিছু বিক্ষোভকারী সেখানকার স্মৃতিস্তম্ভে উঠে ব্যানার উড়িয়ে এবং আতশবাতি জ্বালিয়ে উগ্র ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ বামদলের শীর্ষ নেতারাও সেই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন৷
ভোটাভুটির প্রথম দফায় ন্যাশনাল ব়্যালি জিতেছে৷ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি শিবির ২১ শতাংশের কম ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে৷ ইউরোপের দেশটিতে ল্য পেনের ডানপন্থি পপুলিস্টদের বিরুদ্ধে লড়ছে বামপন্থি এবং মধ্যপন্থি দলগুলো৷
ছবি: Yves Herman/REUTERS
‘বিতৃষ্ণা, দুঃখ এবং ভয়’
ন্যাশনাল ব়্যালির জয় দেখে অনেক ফরাসি ভোটার হতাশ হয়েছেন৷ ৩৩ বছর বয়সি নাজিয়া খালদি প্যারিসে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন৷ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘আমি বিক্ষোভে অভ্যস্ত নই৷’’ তারপরও তিনি তার ‘বিতৃষ্ণা, দুঃখ এবং ভয়ের’ বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন৷
ছবি: ARNAUD FINISTRE/AFP/Getty Images
পরিষ্কার বার্তা
ফ্রান্সের পশ্চিমের শহর ন্যঁতে ডানপন্থিদের উত্থানের প্রতিবাদে এক পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা৷ তাদের হাতে থাকা একটি ব্যানারে লেখা: ‘আমরা ব্যালট বাক্স থেকে যা পাবো না, রাস্তায় তা পাবো৷’ অন্য ব্যানারে লেখা: ‘দিনে পাঁচটি পুলিশ এবং নাৎসি খান’৷
ছবি: SEBASTIEN SALOM-GOMIS/AFP/Getty Images
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
ন্যঁৎ শহরে কিছু প্রতিবাদকারী মুখোশ পরা ছিলেন৷ তাদের বিক্ষোভ ভেঙে পড়লে কয়েকজন প্রতিবাদকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হন৷ পুলিশ তাদের থামাতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে৷
ছবি: SEBASTIEN SALOM-GOMIS/AFP/Getty Images
ব্যারিকেড, বোতল এবং আতশবাজি
দ্যিঁজ, লিল এবং মার্সেই শহরেও অনেক প্রতিবাদকারীকে রাজপথে দেখা গেছে৷ স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ফ্রান্সের তৃতীয় বৃহত্তম শহর লিওঁতেও পুলিশ এবং বিক্ষোভাকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করে বিক্ষোভকারীদের রুখতে চেয়েছে৷ আর বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে বোতল এবং আতশবাজি ছুঁড়ে মেরেছে৷
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
আগামী ৭ জুলাই দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন শেষ না হওয়া অবধি ফ্রান্সের জাতীয় সংসদের ৫৭৭টি আসন কীভাবে বিন্যস্ত করা হবে তা জানা যাবে না৷ এই ছবিতে যে প্রতিবাদকারীদের দেখা যাচ্ছে তারা বামপন্থি ‘নিউ পপুলার ফ্রন্টের’ উপর আশা রাখছেন৷ তবে ভোটের ফলাফলের যে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে তাতে ন্যাশনাল ব়্যালি আবারো জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে৷ তবে দলটি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাও পেতে পারে৷