দক্ষিণ ফ্রান্সে তাপমাত্রা এক-দুই দিনের মধ্যেই ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাবে বলে রেড অ্যালার্ট জারি করলো আবহাওয়া দপ্তর।
বিজ্ঞাপন
রেড অ্যাালার্ট জারি করার অর্থ, প্রশাসন মানুষকে গরমের হাত থেকে বাঁচাতে বিশেষ পদক্ষেপ নেবে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণ ফ্রান্সে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। বাকি অর্ধেক ফ্রান্সে তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি হতে পারে। তাই সেখানে অরেঞ্জ অ্য়ালার্ট জারি করা হয়েছে।
ফ্রান্স-সহ ইউরোপে এবার প্রবল গরম পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই অবস্থা হয়েছে বলে আবহাওয়াবিদদের মত।
গ্রিস, স্পেন ও সার্ডিনিয়াতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি বা তার উপরে। গ্রিস ভয়ংকর দাবানলের গ্রাসে পড়েছে। গত জুলাই ছিল গ্রিসের উষ্ণতম মাস।
গরমের সব রেকর্ড ভাঙলো উষ্ণতম জুন মাস
২০২৩-এর জুন মাস ছিল এযাবতকালের মধ্যে উষ্ণতম। ২০১৯-এর রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে ২০২৩-এর জুন মাস।
ছবি: Manu Fernandez/AP/picture alliance
বিশ্বে উষ্ণতম জুন
ইইউ-র কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস জানিয়েছে, জুন মাসে এত গরম আগে কখনো পড়েনি। তারা জানিয়েছে, ২০০১ থেকে ২০২০ সালের গড় তাপমাত্রার তুলনায় এই বছরে জুনের তাপমাত্রা শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়েছে।
ছবি: George Walker/AP/picture alliance
সবচেয়ে গরম এলাকা
কোপারনিকাসের রিপোর্ট বলছে, ক্যানাডার কিছু এলাকা, অ্যামেরিকা, মেক্সিকো, পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ বেশি। উপরের ছবিটি মেক্সিকোর।
ছবি: Ulises Ruiz/AFP
কোথা থেকে তথ্য?
বিশ্বজুড়ে আবহাওয়া কেন্দ্রের রিপোর্ট ছাড়াও উপগ্রহ, জাহাজ ও বিমনের থেকেও তথ্য সংগ্রেহ করেছে কোপারনিকাস কেন্দ্র।
ছবি: EUROPEAN SPACE AGENCY/AFP
সমুদ্রে হিটওয়েভ
কোপারনিকাসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সমুদ্রের উষ্ণতাও জুন মাসে বেশি ছিল। আয়ারল্যান্ড, ব্রিটেন ও বাল্টিকে তো সমুদ্রে তাপপ্রবাহ চলেছে। উত্তর অ্যাটলান্টিকে সমুদ্রের তাপমাত্রা ছিল বেশ বেশি।
ছবি: Clodagh Kilcoyne/REUTERS
জলের আশ্রয়ে
এই গরমে মানুষ জলের সাহায্যে নিজেকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করেছে। নেপালে এবার জুনে রীতিমতো গরম ছিল। মানুষ তাই ভিড় করেছেন সুইমিং পুলে।
জুন মাসে ক্যানাডার দাবানল প্রবল আকার নেয়। দাবানল ছড়াতে থাকে। সেই ধোঁয়া গিয়ে অ্যামেরিকার শহরের মানুষকে নাজেহাল করে দেয়।
ছবি: BC WIldfire Service/Xinhua/IMAGO
জুলাইয়ে আরো গরম?
অ্যামেরিকার ন্যাশনাল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট প্রেডিকশন জানিয়েছে, ৭ জুলাই বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটাও রেকর্ড। ফলে এবার জুলাইও গরমের রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে।
ছবি: Bryan Olin Dozier/NurPhoto/IMAGO
8 ছবি1 | 8
আবহাওয়াবিদদের মতে, উষ্ণায়নের ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে। আর গ্রিন গ্যাস নিঃসরণের ফলে আরো বেশি করে গরম হচ্ছে বিশ্ব।
নেচার মেডিসিনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, গত বছর ইউরোপে ৬১ হাজার মানুষ তাপপ্রবাহের ফলে মারা গেছেন।
অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচতে যা করা যেতে পারে
গ্রীষ্মে বাংলাদেশ, ভারত এমনকি ইউরোপের দেশগুলোতে তাপপ্রবাহ খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভবিষ্যতে আরও দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ চলবে এবং গরম আরও বাড়বে৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/M. Simoni
শহরকে সাদা রঙে রাঙানো
গ্রীষ্মের সূর্যের প্রচণ্ড তাপ থেকে বাঁচতে আপনি বাসার ছাদে সাদা রঙ করতে পারেন৷ গ্রিসে কিন্তু বাসা ঠাণ্ডা রাখতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়৷ সাদা বা হালকা রঙ সূর্যের তাপকে প্রতিফলিত করে, অর্থাৎ শোষণ করে না৷ ফলে বাড়ির ভেতরটা ঠাণ্ডা থাকে৷ এর ফলে কার্বন নিঃসরণ কম হয় এবং জ্বালানি খরচও বাঁচে৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online
শহরে জলাশয়
জলাশয়, যেমন লেক, খাল এবং নদ-নদী যে-কোনো শহরের তাপমাত্রাকে শীতল রাখতে সাহায্য করে৷ এসব জলাশয়ের পানি বাষ্প হয়ে চারপাশকে ঠাণ্ডা রাখে৷ বড় বড় শহরে জায়গার অভাব রয়েছে, ফলে যেসব এলাকায় হয়ত লেকের মতো জলাশয় তৈরি করা সম্ভব না, সেখানে পানির ঝর্ণা বা ফোয়ারা তৈরি করা যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Grubitzsch
সবুজের কাছাকাছি
শহরে যত বেশি সবুজ থাকবে, তাপমাত্রাও তত সহনীয় পর্যায়ে থাকবে৷ বিশেষ করে গাছের শীতল ছায়া আর গাছের পাতা থেকে যে অক্সিজেন বের হয়, সেটি বিশাল পার্থক্য তৈরি করে৷ তাই বিভিন্ন ভবনের পাশে গাছ লাগালে এগুলো সত্যিই ভবনের ভেতরে তাপমাত্রা শীতল রাখতে সাহায্য করে৷
ছবি: picture alliance/robertharding/H.-P. Merten
পার্ক এবং বাগান
মিউনিখের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা অনুযায়ী, একটি শহরকে শীতল রাখার জন্য বড় কোনো পার্কের প্রয়োজন নেই, ছোট ছোট কয়েকটি পার্ক এর চেয়ে বেশি কাজ করে৷ কেননা বড় একটি পার্ক কেবল নির্দিষ্ট একটি জায়গার তামপাত্রাকে শীতল করে, অথচ ছোট ছোট পার্কগুলো বিস্তৃত এলাকা জুড়ে তাপমাত্রা কমিয়ে আনে৷ এছাড়া ভবনের ভেতরে, বারান্দায় গাছ লাগালেও বাতাস চলাচল বাড়ে এবং তাপমাত্রা কমে যায়৷
যদি আপনি আপনার বাড়ির ছাদে সাদা রঙ করতে না চান তাহলে ছাদে বাগান করুন৷ নগরীতে এই পদ্ধতিতেও ভবনগুলোকে ঠাণ্ডা রাখা যায়৷ ছাদের উপর বাগান করলে ঐ গাছগুলো তাপ শুষে নেয় এবং এয়ারকন্ডিশনিং এর প্রয়োজনকে কমিয়ে দেয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Lopez
ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার
যখন আপনি ছাদে বাগান করবেন, তখন অবশ্যই কিছু মরিচের গাছ লাগাবেন৷ এর কারণ হলো মসলাযুক্ত বা ঝাল খাবার আপনার শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে৷ ঝাল খাবার খেলে আপনার শরীরে ঘাম হবে এবং শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/D. Epperly
গরম পানীয় পান
তাপমাত্রা যখন ৩০ ডিগ্রির বেশি হয়, তখন স্বভাবতই ঠাণ্ডা জুস বা আইসক্রিম বা পানীয় খেতে ইচ্ছা করে৷ তবে বিশেষজ্ঞরা কিন্তু অন্য কথা বলছেন৷ তাঁরা বলছেন, ঝাল খাবারের মতোই গরম চা বেশি গরমে আপনার শরীরকে ঘামতে সাহায্য করবে৷ ফলে আপনার শরীর হবে ঠাণ্ডা৷