ফ্রান্সের গির্জায় আক্রমণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা তিনজনকে ছেড়ে দেয়া হলো। রোববার ওই গির্জায় প্রার্থনাও হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
নিস শহরে গির্জার মধ্যে ঢুকে তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করছিল তিউনিশিয়ার এক যুবক। সেই সূত্রে ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিস্তারিত তদন্তের পর তিনজনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কারণ, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সংবাদসংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, ছেড়ে দেয়া তিনজনের বয়স ৪৭, ৩৫ ও ৩৩ বছর।
তবে আরো তিনজন এখনো পুলিশি হেফাজতে আছে। তার মধ্যে একজন তিউনিশিয়ার হত্যাকারীর সঙ্গে ফ্রান্সে ঢুকেছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা, গির্জায় আক্রমণের সঙ্গে মহানবী(সাঃ)-র কার্টুনের যোগ আছে। শার্লি এব্দো পত্রিকায় ওই কার্টুন প্রকাশিত হয়েছিল এবং তা দেখিয়েই শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি স্কুলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাখ্যা করেছিলেন। সেই ক্ষোভের জেরেই গির্জায় আক্রমণ করে তিনজনকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।
মুসলিম বিশ্বে ফ্রান্সের গির্জায় হত্যার প্রতিবাদ
মুসলিম বিশ্বেও চলছে নিস শহরে ছুরি মেরে তিনজনকে হত্যার ঘটনার প্রতিবাদ৷ ছবিঘরে দেখুন কী বলছে মুসলিম বিশ্ব...
ছবি: Serge Haouzi/Xinhua/picture alliance
কী ঘটেছিল?
ফ্রান্সের নিস শহরের এক গির্জায় ছুরি হামলায় তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন৷ আহত হয়েছেন কয়েকজন৷ তিউনিশিয়া থেকে আসা হামলাকারীকে আটক করা হয়েছে৷
ছবি: Gaillard Eric/abaca/picture alliance
ফ্রান্সের মুসলিম সংগঠনের নিন্দা
ফ্রান্সের মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল ফর দ্য মুসলিম ফেইথ-এর মুখপাত্র বলেন, ‘‘মৃতদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা ও মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে আমরা ফ্রান্সের সকল মুসলমানকে (ঈদে মিলাদুন্নবী) উদযাপন স্থগিত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি৷’’ এই হামলার নিন্দাও জানায় সংগঠনটি৷
ছবি: NorbertScanella/PanoramiC/imago images
৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্রের জোট ওআইসি-র বক্তব্য
অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) বলেছে এই হামলার ঘটনায় তাদের ‘‘কড়া অবস্থান, যা সব ধরনের চরমপন্থা ও স্পষ্টভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে৷’’ জোটের পক্ষ থেকে বলা হয় ‘‘কারণ যা-ই হোক না কেন, আমাদের অবস্থান সব ধরনের ঘৃণা ও হিংসার বিরুদ্ধে৷’’
ছবি: Laily Rachev/Biro Pers Setpres
তুরস্ক যা বলেছে
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কড়াভাষায় এই হামলার সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে৷ মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘‘কাউকে মেরে ফেলা বা সহিংসতার জন্য কোনো কারণই যথেষ্ট নয়৷ একটি পবিত্র ধর্মীয় স্থানে যারা এই কাজ করেছে, তাদের মধ্যে কোনো ধরনের ধর্মীয়, মানবিক বা নৈতিক গুণ নেই৷’’
ছবি: picture-alliance/TASS/dpa/S. Bobylev
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিন্দা
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ এক টুইটে বলেন, এই ধরনের হামলা আসলে ধারাবাহিক উসকানি ও সহিংসতার অংশ, যা অবলিম্বে বন্ধ হওয়া উচিত৷ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই চলমান ঘৃণা, উসকানি ও সহিংসতার ধারাবাহিকতাকে যুক্তি দিয়ে থামাতে হবে৷ আমাদের বুঝতে হবে যে, চরমপন্থা থেকে কেবল চরমপন্থাই জন্ম নেয়, এমন উসকানির মাধ্যমে শান্তি সম্ভব নয়৷’’
মিশরের রাজধানী কায়রোর আল-আজহার গ্রান্ড মুফতি আহমেদ আল-তায়েব বলেছেন, ‘‘এই ধরনের ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না৷ এর সাথে উসলাম বা মহানবির কোনো সম্পর্ক নেই৷’’
হামলাকারীর দেশ তিউনিশিয়াও কড়া ভাষায় এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে৷ তিউনিশিয়া বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা এই সন্ত্রাসবাদী কাজের তীব্র নিন্দা করছে এবং পুরোপুরি ফ্রান্সের পাশে আছে৷
ছবি: Serge Haouzi/Xinhua/picture alliance
ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিল
যুক্তরাজ্যের মুসলিম কাউন্সিল টুইট করে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে৷ টুইটে বলা হয়েছে, ‘‘এই ধরনের সহিংসতা, বিশেষ করে একটি ধর্মীয় স্থানে, কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়৷’’
ছবি: picture-alliance/empics/D. Dawson
এবং সৌদি আরব
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও টুইটারে প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেশটি বলেছে, সৌদি আরব ‘‘এমন সব আচরণকেই পুরোপুরি নাকচ করে, যা সব ধর্মীয় ও মানবিক বিশ্বাসের বিরোধী৷’’
ছবি: Imago/imagebroker
9 ছবি1 | 9
কড়া নিরাপত্তায় প্রার্থনা
রোববার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে নত্র-দাম ব্যাসিলিকায় প্রার্থনা হয়েছে। গির্জায় আক্রমণের পর এটাই প্রথম প্রার্থনা। রোববার অল সেন্টস ডে-র প্রার্থনায় যোগ দিতে ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই সঙ্গে ছিল চোখে পড়ার মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শুধু এই গির্জা নয়, অধিকাংশ গির্জাতেই কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল।
নিসের মেয়র জানিয়েছেন, গির্জায় সুরক্ষা দেয়ার জন্য ১২০ জন পুলিশ ও ৬০ জন সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। চার্চ ঘিরে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। এই নিরাপত্তার মধ্যে কয়েকশ মানুষ প্রার্থনায় অংশ নেন।