অতি দক্ষিণপন্থিদের ভোট ছাড়াই ফরাসি পার্লামেন্টে এই বিল পাশ হয়েছে। এর ফলে অভিবাসন আইন আগের চেয়ে অনেক কড়া হলো।
বিজ্ঞাপন
ফ্রান্সের অভিবাসন আইন আগের চেয়ে কয়েক গুণ কঠিন হলো। মঙ্গলবার যে শরণার্থী বিল পার্লামেন্টে পাশ হয়েছে, সেখানে অভিবাসন সংক্রান্ত নিয়ম অনেক বেশি কড়া হয়েছে। এমনকী ছাড় দেওয়া হয়নি শিশুদেরও।
এই বিল নিয়ে আলোচনার সময় প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ নিজের দলের ভিতরেই সমালোচিত হয়েছিলেন। বরং তিনি সাহায্য পেয়েছিলেন অতি দক্ষিণপন্থিদের কাছ থেকে। যা নিয়ে মাক্রোঁ খুব খুশি ছিলেন না। কিন্তু শেষপর্যন্ত পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বিলটি পাশ করানোর সময় অতি দক্ষিণপন্থিদের সমর্থন প্রয়োজন হয়নি মাক্রোঁর। তার নিজের দল পাশে দাঁড়িয়েছে।
ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও মঙ্গলবার আনন্দ প্রকাশ করেছেন। আইনটি নিয়ে পার্লামেন্টে তীব্র বিতর্কের আশঙ্কা করেছিলেন তিনি। এবং শেষ পর্যন্ত অতি দক্ষিণপন্থিদের সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবেছিলেন তিনিও। মঙ্গলবার দৃশ্যত খুশি দেখিয়েছে তাকে।
পাচারকারীর টাকা তুলতে ফ্রান্সে মাহমুদের সংগ্রাম
ইউরোপে স্থায়ী হতে ইরাক থেকে প্রথমে সুইডেনে যান মাহমুদ৷ সুইডেনে থাকা হয়নি৷ ফ্রান্স থেকে ব্রিটেনে যাওয়াও হয়ে ওঠেনি টাকার অভাবে৷ এখন চা, স্যান্ডউইচ বিক্রি করে টাকা জমাচ্ছেন মাহমুদ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Juan Medina/REUTERS
ভাগ্যগুণে বেঁচে আছেন মাহমুদ
দাওয়ান আনোয়ার মাহমুদ৷ ৩০ বছর৷ কয়েকদিন আগে পাচারকারীকে ১৬০০ পাউন্ড দিয়েছিলেন ফ্রান্স থেকে নৌকায় ব্রিটেনে পৌঁছে দিতে৷ কিন্তু নৌকার পরিস্থিতি দেখে আর সাহস হয়নি৷ ডুবে মরার ভয়ে পাচারকারীকে জানিয়ে দেন এই দফা তিনি যাবেন না৷ না গেলেও টাকা ফেরত পাননি৷ উল্টে পাচারকারীর লোকজন তাকে পিটিয়েছে, মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেছে৷ তারপর আবার আশায় বুক বেঁধেছেন মাহমুদ৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
অস্থায়ী তাঁবুতে মানবেতর জীবন
গত সপ্তাহে মাহমুদ ছিলেন ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলের দুঁকির্ক অঞ্চলের রেল লাইনের কাছের জঙ্গলে গড়ে তোলা অস্থায়ী তাঁবুতে৷ শীতে এমন জায়গায় বাস করা খুব কঠিন৷ প্রচণ্ড ঠান্ডার সঙ্গে বৃষ্টি যোগ হলে গাছের ডাল, প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদি না পুড়িয়ে আগুন না পোহালে তাঁবুতে বেঁচে থাকা মুশকিল৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
বারবার নতুন ঠিকানায়
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলার পরের দিনই মাহমুদ জানতে পারেন, ফ্রান্সের পুলিশ তাদের এই জায়গা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে৷ সুতরাং আবার যেতে হবে নতুন ঠিকানায়৷ আরেক জায়গায় শুরু হবে অস্তিত্ব রক্ষার অবর্ণনীয় কষ্ট৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
ইরাক থেকে যেভাবে ফ্রান্সে...
১০ বছর আগে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় ইরাকের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল তাকে৷ ছয় মাসের জেল হলো৷ জেলে পুলিশের নির্যাতনে একটা পায়ে স্থায়ী সমস্যা দেখা দিলো৷ ২০১৫ সালে দেশ ছাড়লেন৷ সুইডেনে চলে গেলেন বোনের কাছে৷ ছয় বছর চেষ্টা করেও সেখানে থাকতে পারেননি৷ তার অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্য্যান করে সুইডেন সরকার৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
অস্থায়ী তাঁবুতেই বাড়তি আয়
সুইডেনে থাকার সময় কুর্দিদের এক রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন মাহমুদ৷ ওই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই এখন অস্থায়ী তাঁবুতেও বাড়তি আয়ের চেষ্টা করেন৷ স্যান্ডউচ, চা, কাবাব, রুটি, মুরগির কলিজা ইত্যাদি রান্না করে যা আয় হয় তা থেকে কিছু টাকা জমিয়ে রাখেন৷ পাচারকারীকে টাকা দিতে হবে, পাচারকারী তাকে নিরাপদে ব্রিটেনে পৌঁছে দেবে- এই স্বপ্ন স্থায়ী হয়ে গেছে মাহমুদের মনে৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
নিরাপদ যাত্রা ব্যয়বহুল
ব্রিটেনে যাওয়ার জন্য এক পাচারকারীকে ১৬০০ পাউন্ড দিয়েছিলেন মাহমুদ৷ নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে দেখেন নৌকায় তিল রাখার জায়গা নেই৷ ছোট নৌকায় ৪৮ তম যাত্রী হওয়ার সাহস হয়নি বলে পিটুনি খেয়ে, মোবাইল হারিয়েও ফিরে এসেছেন মাহমুদ৷ তবে আশা ছাড়েননি৷ ভাবছেন ২৫০০ থেকে ৩০০০ পাউন্ড খরচ করে কম মানুষ নেয়া হয় এমন নৌকায় যাবেন৷ আরেকটু বেশি টাকা জমাতে পারলে যাবেন ট্রাকে৷ ট্রাকে যেতে চাইলে ৪০০০ পাউন্ড দিতে হবে মানবপাচারকারীকে৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
দৈনিক আয়
স্যান্ডউইচ, চা, কাবাব, রুটি ইত্যাদি বিক্রি করে দিনে ৪০ থেকে ৭০ ইউরো আয় করেন মাহমুদ৷ তবে পুরো টাকা সঞ্চয় করতে পারেন না৷ নিজের খাওয়ার খরচ তো আছেই, পাশাপাশি দুজন সহকারীকে প্রতিদিন দিতে হয় ২৫ ইউরো৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
লক্ষ্যে স্থির মাহমুদ
সুইডেনে থাকতে পারেননি৷ ফ্রান্সেও মেলেনি উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা৷ তাতে কী! মাহমুদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য একটাই এবং সেই লক্ষ্যের কথা সরাসরিই জানান সবাইকে, ‘‘আমার কাছে ফ্রান্স বা ইউকে বা জার্মানি বা বেলজিয়াম- সবই সমান৷ আমি এখানে এসেছি নতুন করে জীবন শুরু করতে৷ এখনো তা-ই চাই৷’’
ছবি: Juan Medina/REUTERS
8 ছবি1 | 8
কী আছে আইনে
আইনটির খসড়া পার্লামেন্টেএকাধিকবার বদলেছে। বামপন্থিদের বক্তব্য, অতি দক্ষিণপন্থিদের চাপে বিলটি বার বার বদলানো হয়েছে। শরণার্থীরা রেসিডেন্সি পারমিট আগে যত সহজে এবং দ্রুত পেতেন, নতুন আইনে তা আর পাওয়া যাবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশ থেকে আশা শরণার্থীর জন্য বহু নিয়ম এখনো আগের মতোই থাকবে। কিন্তু শরণার্থী ইইউ-র না হলে ফ্রান্সে হাউসিং বেনেফিট বা বাড়ি পাওয়ার অধিকার পেতে অন্তত পাঁচ বছর সময় লাগবে।
মাইগ্রেশন কোটাও তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে শরণার্থী শিশুদের ফরাসি নাগরিকত্ব পেতে অসুবিধা হবে। শুধু তা-ই নয়, অবৈধ শরণার্থীদের সহজেই এই আইনের ফলে দেশ থেকে বার করে দেওয়া যাবে। ছাড় দেওয়া হবে না ১৪ বছরের নিচের ব্যক্তিদেরও।
বিলটি নিয়ে আলোচনার সময় থেকেই এনিয়ে তীব্র আন্দোলন হচ্ছে ফ্রান্সে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, বিলটি পাশ হলেও তাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।