ফ্রান্সে চলছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথম পর্বের ভোটগ্রহণ৷ ডান-বাম এবং মধ্যপন্থি মিলিয়ে ১২ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন এ নির্বাচনে৷ কী ভাবছেন ভোটাররা, প্যারিস থেকে জানাচ্ছেন ডয়চে ভেলের খালেদ মুহিউদ্দীন এবং যুবায়ের আহমেদ৷
বিজ্ঞাপন
২০০২ সালের পর থেকে কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্ট পরপর দুবার নির্বাচিত হননি৷ তবে এবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ আবার বিজয়ী হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে জরিপে৷ নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ডানপন্থি মারিন ল্যঁ পেনের চেয়ে বেশ কয়েক পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন মাক্রোঁ৷
প্রথম রাউন্ডে কোনো একক প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পেলে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীকে নিয়ে দুই সপ্তাহ পর আরেকটি ভোট হবে৷ সেটিতে জয়ী প্রার্থীই হবেন ফ্রান্সের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট৷
কিন্তু ভোটাররা আসলে কোন বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন? নিজে ভোট দেয়ার পর ডয়চে ভেলেকে একটি ভোটকেন্দ্র এবং ভোট দেয়ার প্রক্রিয়া ঘুরে দেখান প্যারিস প্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ফরাসি নাগরিক টিএম রেজা৷ তিনি জানান, ভোটকেন্দ্রে রাজনৈতিক দলগুলোর পোলিং এজেন্ট নিয়োগের সুযোগ থাকলেও দলগুলো সাধারণত তেমন কোনো পোলিং এজেন্ট কেন্দ্রে নিয়োগ করে না৷ শহর পরিচালনা কর্তৃপক্ষই এই নির্বাচনের প্রক্রিয়া দেখভাল করে৷
ভোট দিতে যাওয়া ফরাসি নাগরিকদের কাছে ডয়চে ভেলের প্রশ্ন ছিল, ভোট দেয়ার সময় প্রার্থী বাছাইয়ে ভোটাররা কোন বিষয়টি নজরে রাখেন৷ একজন ভোটার জানান, ‘‘যার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বেশি, তাকেই ভোট দিবো৷''
আরেকজন জানান, ‘‘আমরা সব প্রার্থীকে চিনি৷ ফলে আমরা জানি কে দেশের সবার জন্য কথা বলে৷ যে দেশের জন্য কতা বলে তাকেই আমরা ভোট দিব৷''
এক নারী ভোটার জানান, ‘‘আমি তাকেই পছন্দ করবো যে সব মানুষের কথা, মানবতার কথা বলবে৷ সে মুসলিম হোক, বা অন্য কোনো বংশোদ্ভূত হোক৷'' তিনি জানান, ফ্রান্সে সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে সমানভাবে দেখা হয়, ধর্ম বা জাতি বা বর্ণ অনুসারে বৈষম্য করা হয় না৷
মুসলিম বিশ্বে মাক্রোঁর সমালোচনা এবং জবাব
চরমপন্থিদের হামলায় নিহত শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে মরনোত্তর লিজিয়ন অফ অনার দিয়ে তাকে পূর্ণ সমর্থন জানানোর পর থেকে মুসলিম বিশ্বে তোপের মুখে পড়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/E. Gaillard
মাক্রোঁ যা বলেছিলেন
গত ২১ অক্টোবর প্যাটিকে মরনোত্তর লিজিয়ন অফ অনারে ভূষিত করে প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ বলেন, ''আমরা কার্টুন ছাড়বো না৷ ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধকে রক্ষা করতে গিয়ে প্যাটি জীবন দিয়েছেন । তিনি এই প্রজাতন্ত্রের মুখ।''
ছবি: Francois Mori/Pool/Reuters
এর্দোয়ানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
মাক্রোঁর বক্তব্য শুনে তাকে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে এক সভায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ান বলেন,‘‘মাক্রোঁ নামের এই ব্যক্তির ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে সমস্যা কী? একজন রাষ্ট্রনেতা যদি বিশ্বাসের স্বাধীনতা না বোঝেন এবং তার দেশে বসবাসরত কয়েক মিলিয়ন ভিন্ন বিশ্বাসের অনুসারীদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন, তাহলে তাকে আর কী বলা যায়!’’
ছবি: Sercan Kucuksahin/AA/picture-alliance
মাক্রোঁর সমালোচনায় ইমরান খান
টুইটারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান লিখেছেন, ‘‘একজন নেতার প্রধান গুণ হলো, তিনি সব মানুষকে বিভক্ত না করে ম্যান্ডেলার মতো ঐক্যবদ্ধ করেন৷এটি এমন এক সময় যখন প্রেসিডেন্ট মাঁক্রো নিরাময়ের ব্যবস্থা নিতে পারতেন এবং চরমপন্থাকে আর ছাড় দিতে অস্বীকার করতে পারতেন, অথচ তিনি আরো মেরুকরণ এবং প্রান্তিকীকরণের পথ ধরলেন যা অনিবার্যভাবেই মৌলবাদের দিকে নিয়ে যায়৷’’
মাক্রোঁর জবাব
তার সমালোচনার জবাবে টুইটারে এমানুয়েল মাক্রোঁ লিখেছেন, ‘‘আমরা কখনো হাল ছাড়বো না৷ আমরা শান্তির চেতনায় সব পার্থক্যকে সম্মান করি৷ আমরা ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য গ্রহণ করি না এবং যুক্তিসঙ্গত বক্তব্যকে রক্ষা করি৷ আমরা সব সময় মানুষের মর্যাদাবোধ এবং সার্বজনীন মূল্যবোধের পাশে থাকবো৷’’
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিশামুদ্দীন হুসেইন এক বিবৃতিতে বলেছেন,
‘‘ইসলাম ধর্মের অবমাননা হয় এমন যে কোনো উত্তেজক বক্তব্য বা কাজের আমরা তীব্র নিন্দা করি৷’’
ছবি: Reuters
‘জনগণকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন মাক্রোঁ’
চেচনিয়ার নেতা রমজান কাদিরভ ইন্সটাগ্রামে এমানুয়েল মাক্রোঁর উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘‘ আপনি জনগণকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন৷ আপনি তরুণদের মস্তিষ্কে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর অবস্থা তৈরি করছেন৷ আপনি খুব সাহস করে নিজেকে আপনার দেশে সন্ত্রাসবাদের নেতা, সন্ত্রাসবাদের প্রেরণাদাতা মনে করতে পারেন৷’’
ছবি: Imago-Images/ITAR-TASS/ Press Office Republic of Chechnya
প্রবাসে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য উদ্বেগ
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, বাংলাদেশ, ইরাক ও মৌরিতানিয়ায় অবস্থানরত সকল ফরাসি নাগরিককে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে৷ সবাইকে সব জনসমাবেশ এবং কার্টুনের বিরুদ্ধে সব প্রতিবাদ সমাবেশ থেকেও দূরে থাকতে বলা হয়েছে বিবৃতিতে৷