গোটা বিশ্বের মতো ফ্রান্সেও বাড়ছে দক্ষিণপন্থিদের সমর্থন। দক্ষিণপন্থি নেত্রী ঘোষণা করে দিলেন ২০২২ সালের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ব জুড়ে অতি দক্ষিণপন্থি শক্তি ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে ইতিমধ্যেই সরকার গঠন করে ফেলেছে দক্ষিণপন্থি দল। জার্মানিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে অতি দক্ষিণপন্থি এএফডি-র জনপ্রিয়তা। তারই মধ্যে ফ্রান্সে প্রেসিডেন্টের লড়াইয়ে অংশগ্রহণের কথা জানিয়ে দিলেন অতি দক্ষিণপন্থি নেত্রী মারিন ল্য পেন।
এই প্রথম নয়, এর আগেও দু'বার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ভোটে লড়াই করেছেন পেন। কিন্তু কখনওই জিততে পারেননি। বৃহস্পতিবার নিজেই টুইট করে তিনি জানিয়েছেন, তৃতীয়বারের জন্য লড়াইয়ে অংশ নেবেন তিনি।
২০২২ সালে ফ্রান্সে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। পেন জানিয়েছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁর বিরুদ্ধে একটি মহাজোট তৈরি করে লড়াই করবেন তিনি। যার ফলে দেশ আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে এবং জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী হবে।
২০১৭ সালে বিপুল ভোট পেয়ে মাঁক্রো ক্ষমতায় এলেও এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক অসন্তোষ। ধর্মঘট, আন্দোলনে জেরবার শাসক। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশ জুড়ে মাক্রোঁর জনপ্রিয়তা ক্রমশ কমছে। এমন পরিস্থিতিতে পেন নিজের জায়গা তৈরি করতে পারবেন কি না, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। ২০১৭ সালের নির্বাচনে শেষবার লড়াই করেছিলেন পেন। কিন্তু মধ্যপন্থি মাক্রোঁর কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। অভিবাসন, উদ্বাস্তু এবং অনুপ্রবেশকারী নিয়ে স্পষ্ট মত আছে পেনের। তিনি ফ্রান্সকে অভিবাসী মুক্ত করতে চান। ২০১৭ সালের নির্বাচনে এই কথাটাই দিকে দিকে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু ফ্রান্সের মানুষ তাঁর অভিমতকে গুরুত্ব দেননি। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পেনের জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে বেড়েছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। ফলে ২০২২ সালে কী ঘটবে, তা নিয়ে এখন থেকেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। আরও একটি কাজ শুরু করে দিয়েছেন পেন। মধ্যপন্থি কিন্তু মাক্রোঁ বিরোধী নেতাদের সঙ্গেও আলোচনার আগ্রহ দেখিয়েছেন তিনি। তাঁদের নিয়েই মহাজোটের পরিকল্পনা তাঁর।
ইউরোপের কয়েকজন ডানপন্থি নেত্রী
ডানপন্থি পপুলিস্ট দলকে সমর্থন করার মতো নারীদের সংখ্যা ইউরোপে দিন দিন বাড়ছে৷ এক্ষেত্রে যে নারী নেত্রীরা ভূমিকা রাখছেন, তাঁদের কয়েকজনের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/E. Gailard
ফ্রান্স: মারিন ল্য পেন
২০১১ সাল থেকে ফ্রান্সের চরম ডানপন্থি দল ‘ন্যাশনাল ব়্যালি’র প্রধান তিনি৷ দলটির নাম আগে ছিল ‘ন্যাশনাল ফ্রন্ট’৷ দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি দলের চরম ডানপন্থি ভাবমূর্তিতে কিছুটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন৷ এবং তা করতে নিজের বাবাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন মারিন ল্য পেন৷ দেশটির সবশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমানুয়েল মাক্রোঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/E. Gailard
জার্মানি: ফ্রাউকে পেট্রি
মুসলমান ও অভিবাসীবিরোধী নীতি অনুসরণ করে চরম ডানপন্থি দল ‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ বা এএফডিকে গত বছর জার্মান সংসদে নিয়ে যেতে সমর্থ হন এই নেত্রী৷ যদিও দলের কিছু নেতার উগ্র বিবৃতির প্রতিবাদ করে পরবর্তীতে দল থেকে পদত্যাগ করেন তিনি৷ পেট্রির অভিযোগ, এই ধরনের মন্তব্য ‘গঠনমূলক বিরোধিতা’র পরিপন্থি৷ বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সংসদে স্বতন্ত্র সাংসদ হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: picture-alliance/Eventpress
জার্মানি: আলিস ভাইডেল
ফ্রাউকে পেট্রি দল থেকে চলে যাওয়ার পর এএফডি দলের অন্যতম প্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন ভাইডেল৷ ২০১৩ সালে তাঁর একটি ইমেল প্রকাশিত হয়েছিল৷ ঐ ইমেলে তিনি বলেছিলেন, আরব, সিনটি ও রোমাদের মতো বিদেশিরা জার্মানিতে ভরে গেছে৷ এছাড়া ইমেলে তিনি তৎকালীন সরকারকে ‘শূকর’ ও ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার মিত্রদের হাতের পুতুল’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. von Jutrczenka
পোল্যান্ড: বেয়াটা শিডওয়া
তিনি বর্তমানে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ডানপন্থি দল ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান৷ ইউরোপে প্রবেশ করা শরণার্থীদের গ্রহণে যে কোটা ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল, তার বিরোধিতা করেছিল শিডওয়ার দল৷ ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সাবেক এক নাৎসি শিবিরে উপস্থিত হয়ে তিনি তাঁর অভিবাসন-বিরোধিতার বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images
নরওয়ে: সিভ ইয়েনসেন
দেশটির বর্তমান মধ্য-ডানপন্থি সরকারি জোটের অংশ প্রোগ্রেস পার্টির নেতা ইয়েনসেন৷ তিনি ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক এবং নরওয়ের দূতাবাস তেল আভিভ থেকে জেরুসালেমে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব করেছেন৷ তাঁর রাজনৈতিক গুরুর মধ্যে একজন হলেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইটালি: জর্জা মেলোনি
রক্ষণশীল ‘ব্রাদার্স অফ ইটালি’ দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা৷ মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি নব্য ফ্যাসিবাদ দল ইটালিয়ান সোশ্যাল মুভমেন্টের যুব দল ইয়ুথ ফ্রন্টে যোগ দিয়েছিলেন তিনি৷ মেলোনির দল বর্তমানে ইটালির জোট সরকারের অংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডেনমার্ক: পিয়া কিয়ের্সগর্ট
১৯৯৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চরম ডানপন্থি দল ড্যানিশ পিপলস পার্টির প্রধান ছিলেন তিনি৷ এই দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও তিনি৷ ডেনমার্কে অভিবাসীদের প্রবেশ বন্ধ তাঁর অন্যতম আগ্রহের বিষয়৷ বহুসংস্কৃতিবিরোধী ও অভিবাসনবিরোধিতার জন্য পরিচিত কিয়ের্সগর্ট৷