ফ্রান্সে বামপন্থি জোটকে সরকার গড়তে ডাকবেন না মাক্রোঁ
২৭ আগস্ট ২০২৪
ফ্রান্সে বামপন্থি-জোট সরকার গঠন করতে চেয়েছিল। খারিজ করলেন প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ। ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনতে চায় বামেরা।
বিজ্ঞাপন
সোমবার প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ জানিয়েছেন, রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে তিনি বামপন্থিদের সরকার গঠন করতে ডাকবেন না। এরপরই বামপন্থিরা মাক্রোঁর সমালোচনায় মুখর হয়েছে।
মাক্রোঁর যুক্তি, বামপন্থি সরকার স্থায়ী হবে না। বামপন্থিদের এই জোটে আছে লেফট ফ্রান্স আনবাউন্ড(এলএফআই), সোস্যালিস্ট, কমিউনিস্ট ও গ্রিনরা। এই জোটই গত নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছিল। ৫৭৭ আসনের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বামপন্থিরা পেয়েছিল ১৯০টি আসন, মাক্রোঁর দলের নেতৃত্বাধীন জোট পায় ১৬০টি আসন। দক্ষিণপন্থিরা ১৪০টি আসন।
গ্রিন পার্টি মাক্রোঁর সমালোচনা করে বলেছে, তিনি ভোটের ফলাফলকে উপেক্ষা করছেন। এলএফআই বলেছে, তারা ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখছে।
ভোট পরবর্তী অবস্থা
বাম জোট দাবি করছে, তাদের সরকার গঠনের অধিকার আছে। কিন্তু মাক্রোঁর জোট এবং ডানপন্থিরা তাদের আটকাতে চাইছে। বামেরা সরকার গঠন করলে তারা একজোট হয়ে অনাস্থা প্রস্তাব এনে সরকারের পতন ঘটাবে।
ফ্রান্সের আলোচিত তরুণ রাজনীতিক বারডেলা
ফ্রান্সে সংসদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া ন্যাশনাল ব়্যালি বা আরএন দলের প্রধান ২৮ বছর বয়সি জর্ডান বারডেলা৷ রোববার দ্বিতীয় ধাপে তার দল জয়ী হলে তিনি ফ্রান্সের সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন৷
ছবি: Michel Euler/AP Photo/picture alliance
পরিচয়
ফ্রান্সে ৩০ জুন অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দল হচ্ছে ন্যাশনাল ব়্যালি বা আরএন৷ ডানপন্থি ও অভিবাসনবিরোধী হিসেবে পরিচিত এই দলের প্রধান ২৮ বছর বয়সি জর্ডান বারডেলা৷
ছবি: Sarah Meyssonnier/REUTERS
জন্ম
১৯৯৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে ইটালীয় অভিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি৷ তার দাদির বাবা আলজেরিয়া থেকে ফ্রান্সে গিয়েছিলেন৷ কর্মজীবী শ্রেণির মানুষেরা প্যারিসের যে এলাকায় থাকেন সেই সেন স্যাঁ-ডেনি এলাকায় বেড়ে উঠেছেন বারডেলা৷
ছবি: Eliot Blondet/abaca/picture alliance
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেননি
হাইস্কুলে পড়াশোনা শেষে প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন৷ কিন্তু রাজনীতিতে মনোযোগ দেওয়ার পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি৷
ছবি: JULIEN DE ROSA/AFP
রাজনীতিতে যোগদান
মাত্র ১৬ বছর বয়সে আরএন দলে যোগ দেন৷ ২১ বছর বয়সে তাকে দলের মুখপাত্র নিয়োগ দেন আরএন দলের সেই সময়কার নেতা মারিন ল্য পেন৷ ল্য পেনের বাবা ১৯৭২ সালে আরএন দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷
ছবি: Julien de Rosa/AFP/Getty Images
ইইউ সাংসদ নির্বাচিত
২০১৯ সালে ২৩ বছর বয়সে ইউরোপীয় সাংসদ নির্বাচিত হন বারডেলা৷
ছবি: Shootpix/ABACA/picture alliance
দলীয় প্রধানের দায়িত্ব
আরএন দলের নেতা ল্য পেন (বামে) দুবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমানুয়েল মাক্রোঁর কাছে হেরেছেন৷ ২০২৭ সালে আবার তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে চান৷ সেই প্রচেষ্টায় পূর্ণ মনোযোগী হতে তিনি ২০২২ সালে বারডেলাকে আরএন দলের প্রধান নির্বাচন করেন৷
ছবি: Alain Jocard/AFP/Getty Images
নিজের সম্পর্কে বারডেলা যা বলেন
আরএন দলের প্রতি তরুণ প্রজন্মের আকর্ষণ বাড়ার পেছনে বারডেলার অবদান রয়েছে বলে মনে করা হয়৷ টিকটকে তার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ৷ ‘‘আমি অন্য জায়গা থেকে এসেছি, কিন্তু, আজ আমার যা পরিচয়, তা এখানেই হয়েছে৷ আমি ফ্রান্সের ইতিহাসকে বিয়ে করেছি,’’ টিকটকে নিজের পরিচয় সম্পর্কে এভাবেই বলেছেন বারডেলা৷
ছবি: Michel Euler/AP Photo/picture alliance
শান্তির বার্তা
বারডেলা একজন কট্টর অভিবাসনবিরোধী বলে ডিডাব্লিউকে জানান কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডানপন্থা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মার্টা লরিমে৷ তবে ৩০ জুন প্রথম ধাপের নির্বাচনে জয়ের পর বারডেলার কণ্ঠে কিছুটা শান্তির বার্তা শোনা গেছে৷ তিনি বলেছেন, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে জয় পেলে তিনি সব ফরাসি নাগরিকের প্রধানমন্ত্রী হবেন, সবার কথা শুনবেন, জাতীয় ঐক্যের কথা মনে রাখবেন৷
ছবি: Julien de Rosa/AFP
8 ছবি1 | 8
মাক্রোঁ বলেছেন, তিনি এমন একজন প্রধানমন্ত্রীকে বেছে নিতে চান না, যিনি পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের মোকাবিলা করতে পারবেন না। তিনি বলেছেন, ''আমার দায়িত্ব হলো, দেশে যেন অচলাবস্থা তৈরি না হয় বা দেশ যেন দুর্বল হয়ে না পড়ে।'' তিনি সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের বলেছেন, তারা যেন আরো দায়িত্বশীল হন এবং পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সাহায্য করেন।
এলএফআইয়ের ক্ষোভ
এলএফআই-এর জাতীয় কোঅর্ডিনেটর ম্যানুয়েল বম্পার্ড বলেছেন, ''মাক্রোঁর কথা মেনে নেয়া যায় না। তিনি অগণতান্ত্রিক কথা বলছেন।''
এলএফআই জানিয়েছে, তারা মানুষের কাছে আবেদন জানিয়ে বলবে, মানুষই যেন এর উপযুক্ত জবাব দেয়। তাছাড়া প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব নিয়েও রাজনীতিকদের ভাবতে অনুরোধ করা হয়েছে।
কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ফ্যাবিয়েন রউসেল বলেছেন, ''নতুন করে আর আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। বরং এখন মানুষকে নিয়ে এগিয়ে চলার সময় এসেছে।''
গ্রিন পার্টির নেতারা বলেছেন, মাক্রোঁ বিশৃঙ্খলা তৈরি করছেন। তিনি স্থায়িত্ব চান না। তাই গণতন্ত্রের স্বার্থে মাক্রোঁকে সরাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী মাক্রোঁ কাকে বেছে নেবেন তা এখন দেখার। তবে তিনি? যাকেই বাছুন, তিনি পার্লামেন্টে কী করে সমর্থন জোগাড় করবেন, সেটা বড় প্রশ্ন। ফলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ফ্রান্সের রাজনৈতিক সংকট কাটার আশু কোনও সম্ভাবনা নেই।