ফ্রান্সে শিক্ষক হত্যা মামলায় ৬ টিনএজারের বিচার শুরু
২৭ নভেম্বর ২০২৩
প্যারিসে ২০২০ সালে স্কুলশিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি হত্যায় সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে ছয়জন টিনএজারের বিচার শুরু হয়েছে৷ ৪৭ বছর বয়সি ঐ শিক্ষককে ছুরিকাঘাত করার পর তার মস্তক বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
প্যাটির হামলাকারী ১৮ বছর বয়সি চেচেন শরণার্থী আব্দুল্লাখ আনজরভ ঘটনাস্থলে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়৷
ইতিহাস ও ভূগোলের শিক্ষক প্যাটি শ্রেণিকক্ষে হাস্যরস বিষয়ক ম্যাগাজিন শার্লি এব্দোতে মহানবিকে নিয়ে প্রকাশিত কার্টুন দেখিয়েছেন- সামাজিক মাধ্যমে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে হত্যা করা হয়৷ ফ্রান্সে বাকস্বাধীনতা আইন নিয়ে আলোচনার সময় প্যাটি এই ম্যাগাজিন ব্যবহার করেছিলেন৷ ফ্রান্সে ধর্মঅবমাননা বৈধ এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের নিয়ে হাস্যরসের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে৷
প্যাটি হত্যার কয়েক সপ্তাহ আগে শার্লি এব্দোতে ঐ কার্টুনগুলো আবার ছাপা হয়েছিল৷ ২০১৫ সালে কার্টুনগুলো প্রথমবার প্রকাশের পর বন্দুকধারীরা শার্লি এব্দোর কার্যালয়ে ঢুকে ১২ জনকে হত্যা করেছিল৷
যে ছয় টিনএজারের বিচার চলছে, তাদের মধ্যে পাঁচজনের বয়স প্যাটি হত্যাকাণ্ডের সময় ১৪ বা ১৫ ছিল৷ কিশোর আদালতে তাদের বিচার চলবে৷ তাদের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে হত্যাকারীকে প্যাটিকে চিনিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে৷
এদিকে ষষ্ঠ টিনএজার, যার বয়স হত্যাকাণ্ডের সময় ১৩ ছিল, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে বলেছিল, প্যাটি নাকি কার্টুনগুলো দেখানোর সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকা মুসলিমদের শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিলেন৷
জিজ্ঞাসাবাদের সময় টিনএজাররা দাবি করেছে, তারা ভেবেছিল প্যাটিকে হয়ত সামাজিক মাধ্যমে অপদস্থ করা হতে পারে কিংবা প্রহার করা হতে পারে৷ এটি যে হত্যা পর্যন্ত গড়াতে পারে তা তারা কখনও ভাবেনি বলে দাবি করেছে৷
অভিযুক্ত ছয়জন এখন হাইস্কুলে পড়ছে৷ অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের আড়াই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷
বিচার প্রক্রিয়া ২৭ নভেম্বর শুরু হচ্ছে, চলবে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি)
২০২০ সালের অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...
মুসলিম বিশ্বে মাক্রোঁর সমালোচনা এবং জবাব
চরমপন্থিদের হামলায় নিহত শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে মরনোত্তর লিজিয়ন অফ অনার দিয়ে তাকে পূর্ণ সমর্থন জানানোর পর থেকে মুসলিম বিশ্বে তোপের মুখে পড়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/E. Gaillard
মাক্রোঁ যা বলেছিলেন
গত ২১ অক্টোবর প্যাটিকে মরনোত্তর লিজিয়ন অফ অনারে ভূষিত করে প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ বলেন, ''আমরা কার্টুন ছাড়বো না৷ ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধকে রক্ষা করতে গিয়ে প্যাটি জীবন দিয়েছেন । তিনি এই প্রজাতন্ত্রের মুখ।''
ছবি: Francois Mori/Pool/Reuters
এর্দোয়ানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
মাক্রোঁর বক্তব্য শুনে তাকে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে এক সভায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ান বলেন,‘‘মাক্রোঁ নামের এই ব্যক্তির ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে সমস্যা কী? একজন রাষ্ট্রনেতা যদি বিশ্বাসের স্বাধীনতা না বোঝেন এবং তার দেশে বসবাসরত কয়েক মিলিয়ন ভিন্ন বিশ্বাসের অনুসারীদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন, তাহলে তাকে আর কী বলা যায়!’’
ছবি: Sercan Kucuksahin/AA/picture-alliance
মাক্রোঁর সমালোচনায় ইমরান খান
টুইটারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান লিখেছেন, ‘‘একজন নেতার প্রধান গুণ হলো, তিনি সব মানুষকে বিভক্ত না করে ম্যান্ডেলার মতো ঐক্যবদ্ধ করেন৷এটি এমন এক সময় যখন প্রেসিডেন্ট মাঁক্রো নিরাময়ের ব্যবস্থা নিতে পারতেন এবং চরমপন্থাকে আর ছাড় দিতে অস্বীকার করতে পারতেন, অথচ তিনি আরো মেরুকরণ এবং প্রান্তিকীকরণের পথ ধরলেন যা অনিবার্যভাবেই মৌলবাদের দিকে নিয়ে যায়৷’’
মাক্রোঁর জবাব
তার সমালোচনার জবাবে টুইটারে এমানুয়েল মাক্রোঁ লিখেছেন, ‘‘আমরা কখনো হাল ছাড়বো না৷ আমরা শান্তির চেতনায় সব পার্থক্যকে সম্মান করি৷ আমরা ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য গ্রহণ করি না এবং যুক্তিসঙ্গত বক্তব্যকে রক্ষা করি৷ আমরা সব সময় মানুষের মর্যাদাবোধ এবং সার্বজনীন মূল্যবোধের পাশে থাকবো৷’’
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিশামুদ্দীন হুসেইন এক বিবৃতিতে বলেছেন,
‘‘ইসলাম ধর্মের অবমাননা হয় এমন যে কোনো উত্তেজক বক্তব্য বা কাজের আমরা তীব্র নিন্দা করি৷’’
ছবি: Reuters
‘জনগণকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন মাক্রোঁ’
চেচনিয়ার নেতা রমজান কাদিরভ ইন্সটাগ্রামে এমানুয়েল মাক্রোঁর উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘‘ আপনি জনগণকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন৷ আপনি তরুণদের মস্তিষ্কে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর অবস্থা তৈরি করছেন৷ আপনি খুব সাহস করে নিজেকে আপনার দেশে সন্ত্রাসবাদের নেতা, সন্ত্রাসবাদের প্রেরণাদাতা মনে করতে পারেন৷’’
ছবি: Imago-Images/ITAR-TASS/ Press Office Republic of Chechnya
প্রবাসে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য উদ্বেগ
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, বাংলাদেশ, ইরাক ও মৌরিতানিয়ায় অবস্থানরত সকল ফরাসি নাগরিককে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে৷ সবাইকে সব জনসমাবেশ এবং কার্টুনের বিরুদ্ধে সব প্রতিবাদ সমাবেশ থেকেও দূরে থাকতে বলা হয়েছে বিবৃতিতে৷