২০১৬ সালের ঘটনা৷ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বোন ও সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের মেয়ে হাসা বিনতে সালমান প্যারিসে তার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে প্লাম্বার আশরাফ আইদকে পেটানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ আশরাফ আইদের অপরাধ তিনি বিনা অনুমতিতে ছবি তুলেছেন৷ এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ৪৩ বছর বয়সি রাজকন্যা তার দেহরক্ষীকে বলেন সাইদকে বেঁধে পেটাতে৷ তা-ই করা হয়৷ হাত-পা বেঁধে উপর্যুপরি কিল-ঘুসি মারা হয় সাইদকে৷ পেটানোর সময় রাজকন্যা হাসা চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘‘কুকুরটাকে মেরে ফেলো, ওর বেঁচে থাকার অধিকার নেই৷''
একঘেঁয়ে জীবনে একটুখানি উত্তেজনা পেতে সৌদি তরুণরা এক ধরনের শখ বেছে নিয়েছে, যা বিপজ্জনকও বটে৷ নাম ‘সাইডওয়াল স্কিয়িং’৷
ছবি: Reuters/M. al Hwaityখেলাটির নাম ‘সাইডওয়াল স্কিয়িং’৷ এর মানে হলো চার চাকার গাড়িকে দুই চাকায় চালানো এবং সেই সময় যাত্রীদের কিছু দুঃসাহসী কসরত দেখানো৷ এটিই কিছু সৌদি তরুণদের প্রিয় খেলা হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Reuters/M. al Hwaityচালকের কাজ স্টিয়ারিং ধরে গাড়ির ভারসাম্য রক্ষা করা৷ আর যাত্রী বেশে যারা গাড়িতে থাকেন তারা কেউ হয়ত জানালা দিয়ে শরীর বের করেন, কেউ বাতাসে ভেসে থাকা টায়ার খোলেন৷
ছবি: Reuters/M. al Hwaityদুটি উপায় আছে৷ এক, গাড়ির একপাশের দুই চাকা কোনো ব়্যাম্পে (একতলা থেকে আরেক তলায় যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত ঢালু পথ) তোলা এবং তারপর গাড়ি চালানো শুরু করা৷ দুই, একটি নির্দিষ্ট গতিতে গাড়ি চালিয়ে খুব দ্রুত মোড় নেয়া৷ এছাড়া যে দুই চাকা সড়কের সঙ্গে লাগানো থাকবে সেগুলোর হাওয়া কিছুটা কমিয়ে রাখেন অনেকে৷
ছবি: Reuters/M. al Hwaityডেনমার্কের টোনি পেটারসন ১৯৬৪ সালে নিউইয়র্কে ‘ওয়ার্ল্ড ফেয়ার’ চলাকালীন প্রথমবারের মতো ‘সাইডওয়াল স্কিয়িং’ দেখিয়েছিলেন৷
ছবি: Reuters/M. al Hwaityনাইট রাইডার, দ্য ডিউকস অফ হ্যাজার্ড, ট্রান্সফরমার্স, জেমস বন্ড সিরিজের দুটি মুভিসহ বিভিন্ন টেলিভিশন সিরিজ ও চলচ্চিত্রে এই স্টান্ট ব্যবহার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. al Hwaityসৌদি তরুণরা যখন এমন দুঃসাহসিক স্টান্টে অংশ নেন, তখন তাদের অতিরিক্ত কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায় না৷ সাধারণত মরুভূমি এলাকার মধ্য দিয়ে রাস্তা গেছে, এমন জায়গায় এই খেলা খেলেন তরুণরা৷ কারণ, এমন রাস্তায় তেমন গাড়ি চলাচল করে না৷
ছবি: Reuters/M. al Hwaity প্লাম্বারকে পেটানোর অভিযোগে সৌদি রাজকন্যার বিরুদ্ধে মামলার শুনানি শুরু হয় গত জুলাই মাসে৷ বৃহস্পতিবার প্যারিসের এক আদালত শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করে৷ দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় দশ মাসের স্থগিত কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার ইউরো জরিমানা করে আদালত৷ এছাড়া দেহরক্ষী রানি সাইদাকে আট মাসের স্থগিত কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার ইউরো জরিমানা করা হয়৷ রায় ঘোষণার সময় হাসা বিনতে সালমান আদালতে ছিলেন না৷
প্লাম্বার আরশাদ আইদের দাবি, তিনি নিজের মোবাইলে শুধু রাজকন্যার অ্যাপার্টমেন্টের গোসলখানার ছবি তুলেছিলেন৷ এই অপরাধেই তাকে বেদম পেটানো হয়, মোবাইলটিও ভেঙে ফেলা হয়৷ রাজকন্যা হাসা বিনতে সালমানের আইনজীবী বলেছেন,
মামলাটি কল্পনাপ্রসূত, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে৷
এসিবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)