ফ্রান্সে স্কুলশিক্ষক হত্যার অভিযোগে ৮ জনের বিচার শুরু
৫ নভেম্বর ২০২৪
প্যারিসে ২০২০ সালে স্কুলশিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি হত্যায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে সোমবার আটজন প্রাপ্তবয়স্কের বিচার শুরু হয়েছে৷ গত বছর এই মামলায় ছয়জন টিনএজারকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
৪৭ বছর বয়সি শিক্ষক প্যাটিকে ছুরিকাঘাত করার পর তার মস্তক বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল৷ তার হামলাকারী ১৮ বছর বয়সি চেচেন শরণার্থী আব্দুল্লাখ আনজরভ ঘটনাস্থলে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান৷
ইতিহাস ও ভূগোলের শিক্ষক প্যাটি শ্রেণিকক্ষে হাস্যরস বিষয়ক ম্যাগাজিন তে মহানবিকে নিয়ে প্রকাশিত কার্টুন দেখিয়েছেন- সামাজিক মাধ্যমে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে হত্যা করা হয়৷ ফ্রান্সে বাকস্বাধীনতা আইন নিয়ে আলোচনার সময় প্যাটি এই ম্যাগাজিন ব্যবহার করেছিলেন৷ ফ্রান্সে ধর্মঅবমাননা বৈধ এবং ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের নিয়ে হাস্যরসের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে৷
প্যাটি হত্যার কয়েক সপ্তাহ আগে শার্লি এব্দোতে ঐ কার্টুনগুলো আবার ছাপা হয়েছিল৷ ২০১৫ সালে কার্টুনগুলো প্রথমবার প্রকাশের পর বন্দুকধারীরা শার্লি এব্দোর কার্যালয়ে ঢুকে ১২ জনকে হত্যা করেছিল৷
বিচারের মুখোমুখি যারা
আটজনের মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে হত্যাকারীকে অস্ত্র কিনতে সহায়তা ও তাকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে৷ অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হতে পারে৷ ফ্রান্সে এর মানে হচ্ছে ৩০ বছরের জেল৷
পুটিনের বিরুদ্ধে এক সংবাদপত্রের অভিনব লড়াই
ভিডিও গেমের সহায়তায় কি কখনো সংবাদ পরিবেশন করা যায়? একেবারে অসম্ভব মনে হলেও ফিনল্যান্ডের একটি সংবাদপত্র কিন্তু তা-ই করে দেখিয়েছে৷ রাশিয়ায় পৌঁছে দিয়েছে তারা ইউক্রেন যুদ্ধের খবর৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Helsingin Sanomat/Reuters
রাশিয়ায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা
ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘যুদ্ধ’ বলে না রাশিয়া৷ ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর ভ্লাদিমির পুটিন বলেছিলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে একটি ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করেছে৷ তারপর থেকে ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসেবেই বর্ণনা করছে পুটিন প্রশাসন৷ রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমও সেই ‘নিয়ম’ মেনেই সংবাদ পরিবেশন করছে৷
ছবি: SPUTNIK via REUTERS
কাউন্টার-স্ট্রাইক দিয়ে পাল্টা আঘাত!
কাউন্টার-স্ট্রাইক আসলে একটি ভিডিও গেমের নাম৷ ২০১২ সালে এই গেমটি নিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্রের ভাল্ভ কর্পোরেশন৷ খুব অল্প সময়ে প্রায় সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই শুটার গেম রাশিয়ার কিশোর, তরুণদেরও খুব প্রিয়৷ রুশ নাগরিকদের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধের খবর পৌঁছে দিতে তাই এই ভিডিও গেমের সহায়তা নিয়েছে ফিনল্যান্ডের একটি দৈনিক৷
ছবি: Helsingin Sanomat/Reuters
হেলসিংগিন সানোমাট
সংবাদপত্রটির নাম হেলসিঙ্গিন সানোমাট৷ ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই দৈনিকই সংবাদ পরিবেশনে ভিডিও গেম ব্যবহার করে এখন সংবাদ শিরোনামে৷ ছবির এই মানুষটির নাম আন্তেরো মুক্কা৷ হেলসিঙ্গিন সানোমাটের এডিটর-ইন-চিফ তিনি৷
ছবি: Anne Kauranen/Reuters
হেলসিঙ্গিন সানোমাটের ব্যর্থ ‘অভিযান’
পুটিন সরকার রাশিয়ার গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের কিছুদিন পরই রাশিয়ার মানুষদের কাছে ইউক্রেনের খবর পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করে হেলসিঙ্গিন সানোমাট৷ কিন্তু রুশ ভাষায় লেখা সেসব খবর বেশিদিন রাশিয়ার মানুষের কাছে যেতে পারেনি৷ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই খবরগুলো ‘ব্লক’ করে দেয় রুশ কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Helsingin Sanomat/Reuters
সংবাদ পরিবেশনে কেন ভিডিও গেম?
স্বাভাবিক নিয়মে যে রাশিয়ায় ইউক্রেনের সংবাদ পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হওয়ার পর কী ভেবেছিল হেলসিঙ্গিন সানোমাট? বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে সে কথাই বলেছেন আন্তেরো মুক্কা, ‘‘ রাশিয়ায় গণমাধ্যম এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম৷ তবে মনে হচ্ছিল নতুন কোনো উপায়ে হয়ত রাশিয়ার মানুষদের জন্য ইউক্রেনের নির্ভরযোগ্য খবর পরিবেশন করা সম্ভব৷’’ আর সেই নতুন উপায়ের নামই এখন কাউন্টার-স্ট্রাইক৷
ছবি: Anne Kauranen/Reuters
যেভাবে নিষেধের দেয়াল ভাংলো হেলসিঙ্গিন সানোমাট
ফিনল্যান্ডের দৈনিকটি প্রথমে ইউক্রেনের স্লাভিচ শহরের একটি ম্যাপ তৈরি করে৷ ম্যাপটির নাম দেয়া হয় ‘ডি ভয়না’৷ রুশ ভাষায় ‘ভয়না’ শব্দের অর্থ যুদ্ধ৷ শহরের নাম ‘ডি ভয়না’ দিয়ে আসলে সরাসরি ‘যুদ্ধ’ শব্দটি ব্যবহার না করে রুশদের কাছে যুদ্ধের খবরই পৌঁছে দেয় হেলসিঙ্গিন সানোমাট৷ ‘ডি ভয়না’র আসল কাজ ছিল এক গোপন কুঠুরিকে আড়াল করা যে কুঠুরিতে রয়েছে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর ধ্বংসলীলা এবং নিষ্ঠুরতার অনেক খবর৷
এই ছয়জনের মধ্যে একজন পিতা রয়েছেন, যার মেয়ের বয়স প্যাটি হত্যাকাণ্ডের সময় ১৩ ছিল৷ ঐ মেয়ে তার বাবাকে জানিয়েছিল যে, কার্টুনগুলো দেখানোর সময় শিক্ষক প্যাটি তাকেসহ অন্য মুসলিম শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিলেন৷ কিন্তু পরে জানা যায়, ঐ মেয়ে শ্রেণিকক্ষেই উপস্থিত ছিল না৷ অন্য একটি কারণে তাকে সাময়িকভাবে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল৷ তাই এই বিষয়টি ঢাকতে মেয়েটি একটি অজুহাত খুঁজছিল বলে মনে করা হচ্ছে৷
অথচ মেয়ের কাছ থেকে কথা শোনার পর তার বাবা ক্ষিপ্ত হয়ে অনলাইনে একটি হেট ক্যাম্পেন শুরু করেছিলেন, যেটি প্যাটির হামলাকারীর নজরে পড়েছিল৷