‘জেন্ডার পে গ্যাপ' বা পারিশ্রমিকে লিঙ্গ ভিত্তিক ব্যবধান৷ তা ঘোচানোর জন্য ফরাসি সরকার এবার সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলির জরিমানার ব্যবস্থা করতে চলেছে৷
বিজ্ঞাপন
ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার ফিলিপ বুধবার নতুন নিয়মাবলী ঘোষণা করেন, যার লক্ষ্য হবে ফরাসি কোম্পানিগুলিকে নারী-পুরুষের পারিশ্রমিকের মধ্যে ব্যবধান ঘোচাতে বাধ্য করা৷ কোম্পানিগুলি এ কাজের জন্য ২০২০ সাল অবধি সময় পাবে, তারপর গাফিলতির ক্ষেত্রে জরিমানা আরোপ করা হবে৷
ফিলিপ প্যারিসে তাঁর বাসভবনে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবর্গ ও কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি সাক্ষাতের অবকাশে বলেন যে, বর্তমান নিয়মাবলী অনুযায়ী কোম্পানিগুলি ‘‘বড় বেশি গড়িমসি করছে৷'' ফরাসি ‘ল্য প্যারিজিয়্যাঁ' দৈনিক এ খবর দেয়৷ উল্লেখ্য, ফ্রান্সে গত ৪৫ বছর ধরে নারী-পুরুষের সমান পারিশ্রমিক সংক্রান্ত আইনকানুন রয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সেদেশে পুরুষরা একই কাজের জন্য মহিলাদের চেয়ে গড়ে নয় শতাংশ বেশি পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন৷
‘‘পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে এ ধরনের অযৌক্তিক ব্যবধান নিছক বৈষম্য এবং বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একটি আইনগত অস্ত্রসম্ভার থাকা সত্ত্বেও বিশেষ প্রগতি অর্জিত হচ্ছে না,'' বলে ফরাসি শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে মন্তব্য করা হয়েছে৷ সে কারণে বিভিন্ন নতুন পদক্ষেপের কথা ভাবা হয়েছে, যেমন ৫০ জনের বেশি কর্মীবিশিষ্ট প্রতিটি কোম্পানিকে পারিশ্রমিকের বৈষম্যের উপর নজর রাখার জন্য একটি বিশেষ সফ্টওয়্যার ব্যবহার করতে হবে৷
সুইজারল্যান্ড ও লুক্সেমবুর্গে ইতিমধ্যেই এ ধরনের সফটওয়্যার চালু আছে৷ এছাড়া ফরাসি সরকার পারিশ্রমিকের ব্যবধান দূরীকরণ সংক্রান্ত আইন মেনে চলা হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য অঘোষিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা করবে৷
ফ্রান্সের জন্য প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর পাঁচশালা পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো শ্রম ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য দূর করা৷ সরকার এ কারণে আগামী কয়েক মাস ধরে বিশেষজ্ঞ, শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবর্গ ও শিল্পপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করবেন ও সেই অনুযায়ী নতুন আইন প্রণয়নের কথা ভাববেন৷
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ২০১৭ সালের শেষে যে জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট পেশ করে, তা অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের পুরুষদের সমান পারিশ্রমিক পেতে আরো ২১৭ বছর সময় লেগে যাবে৷ প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ডাবলিউইএফ রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে, নারী-পুরুষের পারিশ্রমিক এক হতে ১৭০ বছর সময় লাগবে৷ অপরদিকে ২০১৫ সালের রিপোর্ট বলেছিল যে, সমান পারিশ্রমিক আসবে ১১৮ বছর পরে৷ তাহলে কি নারী-পুরুষের সমান পারিশ্রমিকের আশা মরীচিকার মতো ক্রমেই আরো দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে?
বেশি বেতন পাওয়া সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা
কোন দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান সবচেয়ে বেশি বেতন পান? ছবিঘরে দেখুন তেমন কয়েকজনের বাৎসরিক বেতনের তালিকা৷
ছবি: Reuters
সিংগাপুরের প্রধানমন্ত্রী
রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেতন পান সিংগাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং৷ তার বাৎসরিক বেতন ১৬ লাখ দশ হাজার ডলার৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Rahman
হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেতন পান হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী কেরি লাম৷ তার বাৎসরিক বেতন পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার চারশ’ ডলার৷
তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি৷ তার বাৎসরিক বেতন চার লাখ ৮২ হাজার নয়শ’ ৫৮ ডলার৷
ছবি: picture-alliance/robertharding
মার্কিন প্রেসিডেন্ট
বেশি বেতন পাওয়াদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ জো বাইডেনের বাৎসরিক বেতন চার লাখ ডলার৷
ছবি: Evan Vucci/AP/picture alliance
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী
তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন৷ তার বাৎসরিক বেতন তিন লাখ ৭৮ হাজার চারশ’ ১৫ ডলার৷
ছবি: Sam Mooy/Getty Images
জার্মান চ্যান্সেলর
জার্মান চ্যান্সেলরের বাৎসরিক বেতন তিন লাখ ৬৯ হাজার ৭২৭ ডলার৷
ছবি: Clemens Bilan/Getty Images
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্নের বাৎসরিক বেতন তিন লাখ ৩৯ হাজার আটশ’ ৬২ ডলার৷ বেশি বেতন পাওয়া রাষ্ট্র প্রধানদের তালিকায় আট নাম্বারে আছেন তিনি৷
ছবি: Mark Mitchell/New Zealand Herald via AP/picture alliance
মৌরিতানিয়ার প্রেসিডেন্ট
আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ার প্রেসিডেন্ট বেশি বেতন পাওয়াদের তালিকার নয় নাম্বার স্থানে আছেন৷ তার বাৎসরিক বেতন তিন লাখ ৩০ হাজার ডলার৷ দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট হলেন মোহামেদ ঔল্ড গাজুয়ানি৷
ছবি: Reuters/R. Duvignau
লুক্সেমবুর্গের প্রধানমন্ত্রী
তালিকার দশ নাম্বারে আছেন ইউরোপের ছোট্ট, ধনী দেশ লুক্সেমবুর্গের প্রধানমন্ত্রী৷ দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হলেন জাভিয়ার বেটেল৷ তার বাৎসরিক বেতন দুই লাখ ৭৮ হাজার ৩৫ ডলার৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
নরেন্দ্র মোদী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বছরে ৩০ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার বেতন পান৷ দেশটির হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা জানায়, করোনার মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকাতে নিজের বেতন শতকরা ৩০ ভাগ কমিয়েছেন মোদী৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Rahman
শেখ হাসিনা
২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মাসিক বেতন ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা করা হয়৷ মে মাসে এ সংক্রান্ত একটি বিল পাস হয়৷ বেতন বাড়ার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বছরে মোট বেতন দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বা ১৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার৷