ফ্রান্স : অর্থ আত্মসাতের দায়ে ল্য পেনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
৩১ মার্চ ২০২৫
ফ্রান্সের চরম ডানপন্থি রাজনীতিক মারিঁ ল্য পেনকে পাঁচ বছর সব নির্বাচনে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি কারাদণ্ডও দিয়েছে আদালত৷ ইউরোপিয়ান সংসদের টাকা তছরুপ করে দলের কাজে খরচের দায়ে এ শাস্তি হয়েছে তার৷
ফ্রান্সের একটি আদালত সে দেশের চরম ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র্যালি পার্টিরনেত্রী মারিঁ ল্য পেনকে দোষী সাব্যস্ত করে এ শাস্তি ঘোষণা করে৷ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে সংসদীয় সহকারীদের জন্য বরাদ্দ তিন মিলিয়ন ইউরো দলের কাজে ব্যয় করেছেন৷
দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ল্য পেন আগামী পাঁচ বছর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না৷ অর্থাৎ, এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জয়ী না হলে ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবেন না৷
পাঁচ বছরের নির্বাচনি নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে চার বছরের কারাবাসের সাজাও ঘোষণা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ তবে চার বছরের মধ্যে দু'বছর স্থগিত কারাদণ্ড এবং বাকি দু বছর গৃহবন্দি থাকবেন তিনি৷ গৃহে বন্দি থাকার সময় ইলেক্ট্রনিক ট্যাগ লাগাতে হবে তাকে৷
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের বরাদ্দ করা টাকা ২০০৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে দলের সদস্যদের পেছনে ব্যয় করেছেন বলে আদালতের রায়ে বলা হয়েছে৷
৫৬ বছর বয়সি ল্য পেন এই সব অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেছেন, মামলাটি আসলে তার রাজনৈতিক কেরিয়ারকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে৷
রায় ঘোষণা শেষ হবার আগেই আদালত চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে যান ল্য পেন৷
ইউরোপের কয়েকজন ডানপন্থি নেত্রী
ডানপন্থি পপুলিস্ট দলকে সমর্থন করার মতো নারীদের সংখ্যা ইউরোপে দিন দিন বাড়ছে৷ এক্ষেত্রে যে নারী নেত্রীরা ভূমিকা রাখছেন, তাঁদের কয়েকজনের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/E. Gailard
ফ্রান্স: মারিন ল্য পেন
২০১১ সাল থেকে ফ্রান্সের চরম ডানপন্থি দল ‘ন্যাশনাল ব়্যালি’র প্রধান তিনি৷ দলটির নাম আগে ছিল ‘ন্যাশনাল ফ্রন্ট’৷ দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি দলের চরম ডানপন্থি ভাবমূর্তিতে কিছুটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন৷ এবং তা করতে নিজের বাবাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন মারিন ল্য পেন৷ দেশটির সবশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমানুয়েল মাক্রোঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/E. Gailard
জার্মানি: ফ্রাউকে পেট্রি
মুসলমান ও অভিবাসীবিরোধী নীতি অনুসরণ করে চরম ডানপন্থি দল ‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ বা এএফডিকে গত বছর জার্মান সংসদে নিয়ে যেতে সমর্থ হন এই নেত্রী৷ যদিও দলের কিছু নেতার উগ্র বিবৃতির প্রতিবাদ করে পরবর্তীতে দল থেকে পদত্যাগ করেন তিনি৷ পেট্রির অভিযোগ, এই ধরনের মন্তব্য ‘গঠনমূলক বিরোধিতা’র পরিপন্থি৷ বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সংসদে স্বতন্ত্র সাংসদ হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: picture-alliance/Eventpress
জার্মানি: আলিস ভাইডেল
ফ্রাউকে পেট্রি দল থেকে চলে যাওয়ার পর এএফডি দলের অন্যতম প্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন ভাইডেল৷ ২০১৩ সালে তাঁর একটি ইমেল প্রকাশিত হয়েছিল৷ ঐ ইমেলে তিনি বলেছিলেন, আরব, সিনটি ও রোমাদের মতো বিদেশিরা জার্মানিতে ভরে গেছে৷ এছাড়া ইমেলে তিনি তৎকালীন সরকারকে ‘শূকর’ ও ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার মিত্রদের হাতের পুতুল’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. von Jutrczenka
পোল্যান্ড: বেয়াটা শিডওয়া
তিনি বর্তমানে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ডানপন্থি দল ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান৷ ইউরোপে প্রবেশ করা শরণার্থীদের গ্রহণে যে কোটা ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল, তার বিরোধিতা করেছিল শিডওয়ার দল৷ ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সাবেক এক নাৎসি শিবিরে উপস্থিত হয়ে তিনি তাঁর অভিবাসন-বিরোধিতার বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images
নরওয়ে: সিভ ইয়েনসেন
দেশটির বর্তমান মধ্য-ডানপন্থি সরকারি জোটের অংশ প্রোগ্রেস পার্টির নেতা ইয়েনসেন৷ তিনি ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক এবং নরওয়ের দূতাবাস তেল আভিভ থেকে জেরুসালেমে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব করেছেন৷ তাঁর রাজনৈতিক গুরুর মধ্যে একজন হলেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইটালি: জর্জা মেলোনি
রক্ষণশীল ‘ব্রাদার্স অফ ইটালি’ দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা৷ মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি নব্য ফ্যাসিবাদ দল ইটালিয়ান সোশ্যাল মুভমেন্টের যুব দল ইয়ুথ ফ্রন্টে যোগ দিয়েছিলেন তিনি৷ মেলোনির দল বর্তমানে ইটালির জোট সরকারের অংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডেনমার্ক: পিয়া কিয়ের্সগর্ট
১৯৯৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চরম ডানপন্থি দল ড্যানিশ পিপলস পার্টির প্রধান ছিলেন তিনি৷ এই দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও তিনি৷ ডেনমার্কে অভিবাসীদের প্রবেশ বন্ধ তাঁর অন্যতম আগ্রহের বিষয়৷ বহুসংস্কৃতিবিরোধী ও অভিবাসনবিরোধিতার জন্য পরিচিত কিয়ের্সগর্ট৷
ছবি: AP
7 ছবি1 | 7
রায়ের প্রতিক্রিয়া
ল্য পেনের দল মামলাটিকে ‘জুডিশিয়াল ওভাররিচ' হিসাবে দেখছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে করা মামলার ক্ষেত্রেও একই কথা বলেছিলেন৷
ল্য পেনের রাজনৈতিক বিরোধী, যেমন প্রধানমন্ত্রী ফ্রসোয়াঁ বায়রু মনে করেন যেভাবে আদালতগুলি ঠিক করে দিচ্ছে নির্বাচনে কারা লড়তে পারবেন, সেটা আশঙ্কার কারণ৷
কিন্তু ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় সচিব ফাবিয়েন রুসেল আদালতের রায়কে সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন৷
ইউরোপজুড়ে বাড়ছে রাজনৈতিক সহিংসতার শঙ্কা
01:29
This browser does not support the video element.
ল্য পেনের দলের আট সদস্যদের বিরুদ্ধেও শাস্তির ঘোষণা দিয়েছে আদালত৷ ল্য পেনের মতো তারাও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন৷ এছাড়া ১২জন সংসদীয় সহকারীকেও সাজা শোনানো হয়৷
তবে রাশিয়া মনে করে আদালতের এ রায়ের ফলে ইউরোপে গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ৷ ক্রেমলিনের মুখপাত্র ডিমিট্রি পেসকভ বলেন, ‘‘আরো বেশি সংখ্যক ইউরোপিয়ান রাজধানী গণতন্ত্রের নীতির বিরুদ্ধপথে হাঁটছে৷''
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানও এ রায়ের সমালোচনা করেছেন৷ ল্য পেনের পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি৷