রাশিয়ায় পুটিন বিরোধী রাজনীতিবিদ নাভালনির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। তাঁর বাড়িও কার্যত সিল করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়ার পুটিন-বিরোধী রাজনীতিবিদ নাভালনিকে বিষ দেওয়ার পরের দিনই তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানিয়েছেন নাভালনির মুখপাত্র। তাঁর বক্তব্য, নাভালনিকে ধনে এবং প্রাণে মারার ছক কষা হয়েছিল। তবে শারীরিক ভাবে পুটিন-বিরোধী এই রাজনীতিকের অবস্থা এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। নাভালনির মুখপাত্রের দাবি কয়েক সপ্তাহ পরে দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি।
পুতিনের প্রতিদ্বন্দ্বী নাভালনি!
পুতিন বিরোধী আন্দোলনে রাশিয়ার অন্যতম আলোচিত চরিত্র বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনি৷ ২০১৮ সালে দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে পুতিনের বিরোধিতা করতে বাধা দেয়া হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/navalny.com
রাজনীতিবিদের মুখ
ছিলেন আইনজীবী৷ হয়েছেন সক্রিয় রাজনীতিক৷ চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিনকে৷ ২০০৮ সালের কথা৷ রাশিয়ার রাজনীতি আর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর অপকর্ম নিয়ে ব্লগ লিখে রাতারাতি আলোচনায় আসেন নাভালনি৷ তাঁর লেখা ব্লগের কারণে অনেকেই পদত্যাগ পর্যন্ত করতে বাধ্য হন৷ যা ছিল রাশিয়ার রাজনীতির বিরল দিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/TASS/V. Sharifulin
বিতর্কিত সংসদীয় নির্বাচন
২০১১ সালে প্রথম কারাগারে গেলেন নাভালনি৷ ছিলেন ১৫ দিন৷ অভিযোগ, মস্কোর স্টেট ডুমায় সরকার বিরোধী মিছিল-সমাবেশ৷ পুতিনের ‘ইউনাইটেড রাশিয়া’ নির্বাচনে জয় পায়৷ কিন্তু ভোট কারচুপির অভিযোগ আনা হয় পুতিনের বিরুদ্ধে৷ কারাগারে রেখেও দমানো যায়নি নাভালনিকে৷ বের হয়ে এসে আবারো চাঙ্গা করেন পুতিন বিরোধী আন্দোলন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Stenin
কারাগের দ্বিতীয় সাময়িক
২০১২ সালে পুননির্বাচিত হলেন পুতিন৷ রাশিয়ার তদন্ত কমিটিকে নির্দেশ দিলেন নাভালনির অতীত খুঁজে বের করতে৷ দ্বিতীয় দফায় কারাগারে গেলেন নাভালনি৷ আত্মসাতের অভিযোগ মাথায় নিয়ে জেল খাটলেন পাঁচ বছর৷ উচ্চ আদালতে শেষ পর্যন্ত মুক্তি দেয় তাঁকে৷
ছবি: Reuters
ক্রেমলিন বিরোধী মঞ্চ
আইনি কিছু ঝামেলায় পড়েও, মস্কোর মেয়র পদে নির্বাচনে অনুমতি পান তিনি৷ ২০১৩ সালের ওই নির্বাচনে নাভালনিকে হার মানতে হয়৷ কারণ, পুতিনের মিত্র সের্গেই সোবানিয়ান বিপুল ভোটে জয় পায়৷ আর বিরোধী রাজনীতি আবারো চাপা পড়ে যায় পুতিন জোয়ারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাজনীতিকের সামাজিক যোগাযোগ
ক্রেমিলন বিরোধী আন্দোলনের কারণে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে নিষিদ্ধ হন নাভালনি৷ ফলে, নিজের রাজনৈতিক বার্তা ছড়িয়ে দিতে বেছে নিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ব্লগ৷ গুছিয়ে বলতে পারা, ভাষার ব্যবহার, পুতিনকে নিয়ে হাস্যরসত্মাক কথা আর বিনয়-সবমিলিয়ে তরুণদের কাছে তিনি হয়ে যান নতুন কান্ডারি৷
ছবি: Alexei Navalny/Youtube
রাষ্ট্রপতির হওয়ার আকাঙ্ক্ষা
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ঘোষণা দিলেন প্রেসিডন্ট পদে লড়তে চান তিনি৷ ২০১৮ সালের মার্চকে সামনে রেখে শুরু করলেন প্রচারণা৷ এবার দুর্নীতির অভিযোগে পারলেন না কাঙ্ক্ষিত পদে দৌড়াতে৷ যদিও বলা হয়, রাজনৈতিক হয়রানি শিকার হয়েছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Kudryavtsev
দুর্নীতির দায়
২০১৬ সাল৷ ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আদালত এক রুলে জানায়, কিরভ মামলায় সুবিচার বঞ্চিত হয়েছে নাভালনি৷ রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্টও নাভালনির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বাতিল করে৷ নথি পাঠিয়ে দেয়া হয় কিরভ আদালতে৷ ২০১৭ সালে আবার তাঁর কারাদণ্ড বাতিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/Sputnik/A. Kudenko
অর্ধযুগে মস্কোর বড় বিক্ষোভ
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি৷ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভের বিলিয়ন-ইউরোর সাম্রাজ্য নিয়ে রিপোর্ট লিখেন নাভালনি৷ সেই ঘটনাকে ঘিরে রাশিয়ার অন্তত ১২টি শহরে শুরু হয় দুর্নীতি বিরোধী মিছিল-সমাবেশ৷ নাভালনিসহ অন্তত হাজারো রাজনৈতিক কর্মীকে সেদিন গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০১১ সালের পর এতো বড় বিক্ষোভ আর দেখেনি মস্কোবাসী৷ ১৫ দিন কারাবাসের পর মুক্তি পায় নাভালনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Evgeny Feldman for Alexey Navalny's campaign
শারীরিক লাঞ্চনা
দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের দুই মাস পর হাসপাতাল ঠিকানা হয় তাঁর৷ নাভালনির মুখে ছোঁড়া হয় সবুজ রঙের রাসায়নিক৷ ডান চোখের কর্নিয়া তাতে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়৷ চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে দেয়া হয়নি তাঁকে৷ কারণ তখনও দুর্নীতির অভিযোগ ঝুলছিল তাঁর গলায়৷ পরে ক্রেমলিনের মানবাধিকার কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে চোখের অপারেশনের জন্য স্পেন যাওয়ার অনুমতি পান নাভালনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Feldman
গ্রেপ্তার এবং গ্রেপ্তার
গেল বছরের গোড়ার দিকে এক মাস জেল খেটেছেন নাভালনি৷ তার কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবারো গ্রেপ্তার হন তিনি৷ গেল সেপ্টেম্বরে জামিন পান৷ এ বছরের এপ্রিলে, তাঁর পক্ষে রুল জারি করে ইউরোপের মানবাধিকার কোর্ট৷ বলা হয়, কিরভ মামলায় ২০১৪ সাল থেকে এক প্রকার গৃহবন্দি রেখে নাভালনির অধিকার হরণ করেছে রাশিয়া৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
এবার বিষক্রিয়া
১০ দিন জেল খেটে বের হবার পর, সাতদিনও কাটেনি৷ এ বছরের জুলাইতে আবারো গ্রেপ্তার হন তিনি৷ রাশিয়ার কঠোর প্রতিবাদ আইন ভঙ্গের অভিযোগে আবারো ৩০দিনের জন্য জেলে ঢুকলেন তিনি৷ কারাগারে তাঁর শরীরে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ তুলেছেন পুতিন বিরোধী এই রাজনীতিবিদ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/navalny.com
11 ছবি1 | 11
প্রাথমিক ভাবে তিনি একজন ব্লগার। সেই সূত্রেই রাশিয়ার রাজনীতিতে তাঁর প্রবেশ। পুটিনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার ছিলেন নাভালনি। একাধিকবার রাজনৈতিক ভাবে পুটিনের দলের সঙ্গে তাঁর বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার রাজনীতিতে নাভালনির দল এখন সামনের সারিতে। এই পরিস্থিতিতেই নাভালনিকে রাশিয়ার প্রশাসন বিষ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ। জার্মানি সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কিছু দেশ এ বিষয়ে সরাসরি পুটিনের কাছেই জবাবদিহি চেয়েছিল। রাশিয়া অবশ্য বিষ দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে।
ঘটনা হলো, সপ্তাহখানেক আগে ডোমেস্টিক ফ্লাইটে যাত্রা করার সময় প্রথম অসুস্থ হয়ে পড়েন নাভালনি। দ্রুত তাঁকে জার্মানির একটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তিনি কোমায় চলে যান। তাঁর জলের বোতল পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেখানেই বিষ ছিল। বিষয়টি নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে ইউরোপের রাজনীতি। স্বয়ং জার্মান চ্যান্সেলর এ বিষয়ে মন্তব্য করেন এবং রাশিয়ার প্রশাসনের কাছে জবাব চান।
নাভালনি এখন অনেকটাই সুস্থ। কয়েক সপ্তাহ পরে তিনি ফের রাশিয়ায় যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে নতুন তথ্য সামনে আনলেন তাঁর মুখপাত্র। জানালেন, নাভালনি যে দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন, সেই দিনই তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়। তাঁর বাড়ি গিয়ে অ্যারেস্ট নোটিসও ঝুলিয়ে দিয়ে আসা হয়েছে। যার অর্থ, ওই বাড়িতে থাকা যাবে না, বিক্রি করা যাবে না এবং মর্টগেজ রাখা যাবে না। কয়েক বছরের পুরনো একটি মামলার নিরিখে এ কাজ করেছে রাশিয়ার প্রশাসন। বস্তুত, সেই মামলায় পুটিন-ঘনিষ্ঠ এক খাবার চেনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন নাভালনি। অভিযোগ করেছিলেন, ওই খাবার সংস্থাটি রাশিয়ার বিভিন্ন স্কুলে খাবার দেয়। যে খাবার খেয়ে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। এত দিন পরে কেন সেই মামলায় এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলো নাভালনির বিরুদ্ধে? তাঁর উপর বিষ প্রয়োগ এবং পুরনো মামলায় নতুন পদক্ষেপ একই সঙ্গে কেন হলো, তা নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন উঠছে।