ফ্রি বা অ্যাপনিয়া ডাইভাররা অক্সিজেন মাস্ক ছাড়াই ডুব দেন৷ তাদের লক্ষ্য, কতটা নীচে নামা যায় আর কতক্ষণ দম না নিয়ে থাকা যায়৷ বিজ্ঞানীরাও জানতে চান, অক্সিজেন ছাড়া মানুষের পেশী ও মস্তিষ্ক এতক্ষণ অক্ষত ও কর্মক্ষম থাকে কী করে৷
বিজ্ঞাপন
এমনভাবে তারা নিঃশব্দে জলের অন্ধকারে তলিয়ে যান, যেন ভারশূন্য৷ শুধু একবার মাত্র দম নিয়ে এই ডুবুরিরা এমন গভীর জলে নেমে যান, যেখানে অক্সিজেন ছাড়া পৌঁছনো সম্ভব নয়৷ ফ্রি ডাইভার ডরিস হোফারমান বলেন, ‘‘ফ্রি ডাইভিংয়ে আমাকে সবচেয়ে মুগ্ধ করে তার নিস্তব্ধতা৷ মানুষ যেন নিজের ভিতরে দেখতে পায়, শুনতে পায়৷ সম্পূর্ণ একা অবস্থায় নিজের ভয়ভীতিগুলোকে চিনতে পারে৷ সেই কারণে কোনো কোনোদিন আগেই ফিরে আসি; আবার কোনোদিন ক্রমেই আরো গভীরে নেমে যাই৷''
ফ্রি ডাইভাররা তাদের বিশেষ দম নেওয়ার পদ্ধতি আর বহু বছরের প্রশিক্ষণের কল্যাণে চিকিৎসাশাস্ত্রের কাছেই এক আশ্চর্য৷ ডরিস হোফারমান ছয় মিনিট অবধি দম আটকে থাকতে পারেন৷ অ্যাপনিয়া ডুবুরিরা এমন সব রেকর্ড সৃষ্টি করেন, বিজ্ঞানে যার ব্যাখ্যা মেলে না৷ মানুষের শরীর এতক্ষণ অক্সিজেন ছাড়া চলতে পারে কি করে? বন শহরের ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকে এই ‘মীন মানবদের' রহস্য ভেদ করার চেষ্টা চলেছে৷
বন ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের অ্যানেস্থেটিস্ট ড. লার্স আইশবর্ন বলেন, ‘‘সাম্প্রতিককালে আমরা (এই অ্যাপনিয়া ডাইভারদের) এমন সব পারফর্মেন্স দেখেছি, যা আগে ভাবাও যেত না৷ চিকিৎসক হিসেবে আমরা এর ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না৷ সেই কারণেই আমরা জানতে চাই, মানুষের শরীর এটা করে কিভাবে৷''
ফ্রি ডাইভারদের আশ্চর্যজনক ক্ষমতার কারণেই তাদের নিয়ে গবেষকদের মাতামাতি৷ পরীক্ষার সময় তাদের হাত-পা ও মস্তিষ্কে অক্সিজেনের পরিমাণ মাপা হয়৷ শরীরের নিঃশ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন মিনিটের পর মিনিট আটকে রাখতে পারেন ডরিস হোফারমান৷ তা করার জন্য তাঁকে নানা আদিম ভয়ভীতি জয় করতে হয়, শরীরকে তার ক্ষমতার সীমানা অবধি ঠেলে নিয়ে যেতে হয়৷ লার্স আইশবর্ন বলেন, ‘‘মাথায় অক্সিজেন থাকে হাত-পায়ের চেয়ে অনেকক্ষণ বেশি৷ আমরা যেন একটা জটিল প্রক্রিয়ার সন্ধান পাচ্ছি৷ আমরা আবিষ্কার করার চেষ্টা করছি, একটা মানুষ কোনোরকম ব্রেন ড্যামেজ ছাড়া এতক্ষণ দম আটকে রাখতে পারে কী করে৷''
দৃশ্যত মানুষের শরীরে কোনো এমার্জেন্সি প্ল্যান বা জরুরি অবস্থা মোকাবেলার ব্যবস্থা আছে, যা সংকট পরিস্থিতিতে মস্তিষ্কের প্রক্রিয়াগুলোকে অনেকক্ষণ চালু রাখে৷
সাগরে শিক্ষা ট্যুর
এটা একটি বিশেষ ধরনের বিদেশ ভ্রমণ৷ সারা জার্মানি থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা অ্যাটলান্টিকের বুকে কাটায় দীর্ঘ ছয় মাস৷ সেখানে তারা বিদেশি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে৷ জাহাজেই চলে এই ক্লাস৷ এমনকি জাহাজটিও চালায় তারা নিজেরাই৷
ছবি: KUS-Projekt
‘টোর হায়ারডাল’
গত প্রায় ২৫ বছর যবত তিন-তিনটি মাস্তুল বিশিষ্ট ‘টোর হায়ারডাল’ নামের এই জাহাজ যুব শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের সাগরের ওপর দিয়ে নিয়ে গেছে বিশ্বের নানা দেশে৷ ২০০৮ সাল থেকে এই জাহাজটি অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ‘সাগরে ক্লাসরুম’ নামের এই প্রজেক্টটির জন্য ‘রিজার্ভ’ করা থাকে৷
ছবি: KUS-Projekt
দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য প্যাকিং
মোট ১৯০ দিন সাগরে বসবাস, কাজেই সবকিছু সাথে নিতে হয়৷ বলা বাহুল্য তার মধ্যে খাবার-দাবার অন্যতম৷ ভ্রমণের চারদিন আগে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নতুন ‘বাড়ি’, মানে এই জাহাজে সব জিনিস-পত্র তোলার ব্যাপারে একে-অন্যকে সাহায্য করে থাকে৷
ছবি: KUS-Projekt
আনন্দদায়ক এক জাহাজ
জার্মানির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ৩৪ জন ছাত্র-ছাত্রী ইটালির বিশিষ্ট নাবিক ক্রিস্টোফার কলোম্বাস এবং বিশ্বখ্যাত আবিষ্কারক আলেক্সান্ডার ফন হুমবোল্ড-এর পথ অনুসরণ করছে৷ ছবিতে দেখুন, কেমন করে তারা জার্মানির কিল শহর থেকে বিভিন্ন চ্যানেলের ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়ছে নতুন জগতে৷
ছবি: KUS-Projekt
প্রথম দিন
সুন্দর আবহাওয়া, সাগরের জল শান্ত – ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি এমন একটি দিনে শিক্ষার্থীরা সমুদ্র পথে যাত্রা শুরু করে৷ তারা উত্তর সাগরের একটি চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে থেকে ইংলিশ চ্যানেল এবং স্পেনের বিস্কায়া হয়ে টেনেরিফা পর্যন্ত পাড়ি দেয়৷
ছবি: KUS-Projekt
পাহাড়ের ছায়ায় ক্লাস
টেনেরিফার সেন্ট ক্রুজে জাহাজটি প্রথম এসে নাঙর ফেলে৷ সেখানে অতিথি বা ‘হোস্ট’ পরিবারে রাত কাটানোর পর শিক্ষার্থীরা স্পেনের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় ‘পিকো ডেল টেইডে’-র চূড়ায় ওঠতে থাকে৷ পথেই ওদের জীববিদ্যার ক্লাস হয়৷
ছবি: KUS-Projekt
সাগরের অনুভূতি
অ্যাটলান্টিক মহাসাগর বা অতলান্ত সাহর পার হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের নিজেদের অনেকটা নাবিকদের মতোই লাগে৷ জাহাজ ক্রু’র নির্দেশনায় জাহাজের সমস্ত কাজ ছাত্র-ছাত্রীরাই করে৷ এমন কি রান্না এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজও৷
ছবি: KUS-Projekt
যথেষ্ট হয়েছে রোদ আর পামগাছ দেখা
ক্যারিবিকে পৌঁছানোর পর আনন্দ যেন আর ধরে না তাদের! দীর্ঘ ২৪ দিন সাগরে কাটানোর পর এই সবুজ দ্বীপে নাঙর ফেলে এবং এত সুন্দর একটা সমুদ্রসৈকত দেখে শিক্ষার্থীদের মন ভরে যায়৷ এমনটাই তো আশা করেছিল তারা! স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে আলহামরা-খ্যাত গ্রানাডা শহরেও হোস্ট পরিবার বাড়িতে ওরা রাত কাটায়৷
ছবি: KUS-Projekt
ইন্ডিয়ানাদের সাথে বাস
শিক্ষার্থীরা পানামাতে কয়েকদিন হোস্ট পরিবারে থাকা এবং কফি বাগানে কাজ করার সুবাদে কুনা-ইন্ডিয়ানাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানা ও দেখার সুযোগ পেয়ে যায়৷
ছবি: KUS-Projekt
সাইকেলে কিউবা ঘুরে বেড়ানো
সাইকেল চালিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই কিউবার বিখ্যাত তামাক উৎপাদনকারী এলাকায় চলে যায়৷ সেখানে তারা কিউবার শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করে, গল্প করে, আর আড্ডা মারতে মারতে ঘুরে দেখে রাজধানী হাভানা৷
ছবি: KUS-Projekt
দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ঘরে ফেরা
সব শেষে বারমুডা এবং আৎসোরেন দ্বীপে ছোট্ট একটা বিরতির পর শিক্ষার্থীরা ফিরে আসে নিজ দেশে৷ সাগরে দীর্ঘদিনের এই শিক্ষা ভ্রমণ ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় তো কাজে লাগবেই, একজন সম্পূর্ণ মানুষ হতেও হয়ত সাহায্য করবে অনেকটাই৷