ফ্রি ডাইভিং মানে অক্সিজেন ছাড়া গভীর জলে ডুব দেওয়া আর অনেকক্ষণ ডুবে থাকা৷ জলের দু'শ মিটার নীচে এগারো মিনিট পর্যন্ত অক্সিজেন ছাড়া শুধু দম আটকে থাকা কি সম্ভব? বিজ্ঞানীরা সেটাই জানতে চান৷
বিজ্ঞাপন
ফ্রি ডাইভিং-এর বিশ্বরেকর্ড হলো ১১ মিনিট! ফ্রি ডাইভাররা দু'শ মিটারের বেশি জলের তলায় নেমেছেন, এমনও শোনা গেছে৷ ফ্রি ডাইভাররা তাদের ফুসফুসের প্রতিটি অংশ ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন – অথচ এর ফলে তাদের নাড়ির স্পন্দন বাড়ে না৷
তবে অ্যাপনিয়া ডুবুরিদের গোপন রহস্য হল তাদের মানসিক শক্তি – চরম পরিস্থিতিতে পুরোপুরি শান্ত থাকার ক্ষমতা৷ ফ্রি ডাইভার ডরিস হোফারমান বলেন, ‘‘খেলাধুলো করার অভ্যাস থাকলে, সেটা একটা সুবিধা – তবে ফ্রি ডাইভিং-এ সবচেয়ে জরুরি হলো মানসিক দিকটা৷ ভালো পারফর্মেন্স করার জন্য শরীর ও মনকে ইচ্ছেমতো পুরোপুরি রিল্যাক্স করার ক্ষমতা থাকতে হবে – অথচ ডাইভিং-এর কায়দা-কানুনের প্রতি মনঃসংযোগ একবিন্দু না খুইয়ে৷''
জলের তলায় মানুষের শরীরে নানা জটিল প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ বন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়াগুলোকে আরো ভালোভাবে বুঝতে চান৷ হৃৎপিণ্ডের একটা বড় ভূমিকা আছে: হার্ট থেকে সারা শরীরে রক্ত যায়, আর সেই সঙ্গে অক্সিজেন৷ বন ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের অ্যানাস্থেটিস্ট ড. লার্স আইশবর্ন বলেন, ‘‘আমাদের গবেষণার বিস্ময়কর দিকটা হলো, এমআরটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা এই প্রথম পানির তলে শরীরে কি ঘটে, তা দেখতে পাচ্ছি৷ আমরা অ্যাপনিয়া ডাইভিং-এর সময় হৃৎপিণ্ডের ওপর সরাসরি নজর রাখতে পারছি৷''
সাগরে শিক্ষা ট্যুর
এটা একটি বিশেষ ধরনের বিদেশ ভ্রমণ৷ সারা জার্মানি থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা অ্যাটলান্টিকের বুকে কাটায় দীর্ঘ ছয় মাস৷ সেখানে তারা বিদেশি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে৷ জাহাজেই চলে এই ক্লাস৷ এমনকি জাহাজটিও চালায় তারা নিজেরাই৷
ছবি: KUS-Projekt
‘টোর হায়ারডাল’
গত প্রায় ২৫ বছর যবত তিন-তিনটি মাস্তুল বিশিষ্ট ‘টোর হায়ারডাল’ নামের এই জাহাজ যুব শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের সাগরের ওপর দিয়ে নিয়ে গেছে বিশ্বের নানা দেশে৷ ২০০৮ সাল থেকে এই জাহাজটি অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ‘সাগরে ক্লাসরুম’ নামের এই প্রজেক্টটির জন্য ‘রিজার্ভ’ করা থাকে৷
ছবি: KUS-Projekt
দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য প্যাকিং
মোট ১৯০ দিন সাগরে বসবাস, কাজেই সবকিছু সাথে নিতে হয়৷ বলা বাহুল্য তার মধ্যে খাবার-দাবার অন্যতম৷ ভ্রমণের চারদিন আগে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নতুন ‘বাড়ি’, মানে এই জাহাজে সব জিনিস-পত্র তোলার ব্যাপারে একে-অন্যকে সাহায্য করে থাকে৷
ছবি: KUS-Projekt
আনন্দদায়ক এক জাহাজ
জার্মানির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ৩৪ জন ছাত্র-ছাত্রী ইটালির বিশিষ্ট নাবিক ক্রিস্টোফার কলোম্বাস এবং বিশ্বখ্যাত আবিষ্কারক আলেক্সান্ডার ফন হুমবোল্ড-এর পথ অনুসরণ করছে৷ ছবিতে দেখুন, কেমন করে তারা জার্মানির কিল শহর থেকে বিভিন্ন চ্যানেলের ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়ছে নতুন জগতে৷
ছবি: KUS-Projekt
প্রথম দিন
সুন্দর আবহাওয়া, সাগরের জল শান্ত – ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি এমন একটি দিনে শিক্ষার্থীরা সমুদ্র পথে যাত্রা শুরু করে৷ তারা উত্তর সাগরের একটি চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে থেকে ইংলিশ চ্যানেল এবং স্পেনের বিস্কায়া হয়ে টেনেরিফা পর্যন্ত পাড়ি দেয়৷
ছবি: KUS-Projekt
পাহাড়ের ছায়ায় ক্লাস
টেনেরিফার সেন্ট ক্রুজে জাহাজটি প্রথম এসে নাঙর ফেলে৷ সেখানে অতিথি বা ‘হোস্ট’ পরিবারে রাত কাটানোর পর শিক্ষার্থীরা স্পেনের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় ‘পিকো ডেল টেইডে’-র চূড়ায় ওঠতে থাকে৷ পথেই ওদের জীববিদ্যার ক্লাস হয়৷
ছবি: KUS-Projekt
সাগরের অনুভূতি
অ্যাটলান্টিক মহাসাগর বা অতলান্ত সাহর পার হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের নিজেদের অনেকটা নাবিকদের মতোই লাগে৷ জাহাজ ক্রু’র নির্দেশনায় জাহাজের সমস্ত কাজ ছাত্র-ছাত্রীরাই করে৷ এমন কি রান্না এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজও৷
ছবি: KUS-Projekt
যথেষ্ট হয়েছে রোদ আর পামগাছ দেখা
ক্যারিবিকে পৌঁছানোর পর আনন্দ যেন আর ধরে না তাদের! দীর্ঘ ২৪ দিন সাগরে কাটানোর পর এই সবুজ দ্বীপে নাঙর ফেলে এবং এত সুন্দর একটা সমুদ্রসৈকত দেখে শিক্ষার্থীদের মন ভরে যায়৷ এমনটাই তো আশা করেছিল তারা! স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে আলহামরা-খ্যাত গ্রানাডা শহরেও হোস্ট পরিবার বাড়িতে ওরা রাত কাটায়৷
ছবি: KUS-Projekt
ইন্ডিয়ানাদের সাথে বাস
শিক্ষার্থীরা পানামাতে কয়েকদিন হোস্ট পরিবারে থাকা এবং কফি বাগানে কাজ করার সুবাদে কুনা-ইন্ডিয়ানাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানা ও দেখার সুযোগ পেয়ে যায়৷
ছবি: KUS-Projekt
সাইকেলে কিউবা ঘুরে বেড়ানো
সাইকেল চালিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই কিউবার বিখ্যাত তামাক উৎপাদনকারী এলাকায় চলে যায়৷ সেখানে তারা কিউবার শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করে, গল্প করে, আর আড্ডা মারতে মারতে ঘুরে দেখে রাজধানী হাভানা৷
ছবি: KUS-Projekt
দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ঘরে ফেরা
সব শেষে বারমুডা এবং আৎসোরেন দ্বীপে ছোট্ট একটা বিরতির পর শিক্ষার্থীরা ফিরে আসে নিজ দেশে৷ সাগরে দীর্ঘদিনের এই শিক্ষা ভ্রমণ ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় তো কাজে লাগবেই, একজন সম্পূর্ণ মানুষ হতেও হয়ত সাহায্য করবে অনেকটাই৷
ছবি: KUS-Projekt
10 ছবি1 | 10
এ জন্য টেস্ট চলার সময় ফ্রি ডাইভাররা তাদের দম বন্ধ করে রাখার পদ্ধতি প্রয়োগ করেন৷ বিজ্ঞানীরা দেখতে চান, দম বন্ধ থাকার সময় হৃৎপিণ্ড কিভাবে সারা শরীরে রক্তচলাচল বজায় রাখে৷
একটি স্পন্দনরত হৃৎপিণ্ডের ছবি৷ এই সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে যা জানা যাচ্ছে, তা থেকে ভবিষ্যতে রোগীদের সংকটের মুহূর্তে সাহায্য করা সম্ভব হবে, কেননা জরুরি চিকিৎসার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো রোগীর শরীরে যাতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে, তার ব্যবস্থা করা৷ ড. লার্স আইশবর্ন বলেন, ‘‘স্বভাবতই আমরা রোগীদের নিয়ে কোনো চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারি না৷ কিন্তু অ্যাপনিয়া ডাইভারদের নিয়ে আমরা চরম পরিস্থিতির অনুকরণ করতে পারি৷ তা থেকে আমরা দেখতে পাই, শরীর কিভাবে অক্সিজেনের ঘাটতি পুষিয়ে নেয় – যার ফলে আমরা হয়ত ভবিষ্যতে রোগীদের আরো ভালোভাবে সাহায্য করতে পারব৷''
ফ্রি ডাইভাররা চিকিৎসাশাস্ত্রের একটি ধাঁধা – বা আশ্চর্য – বিজ্ঞান যা প্রায় ধরে ফেলেছে, বা ধরে ফেলতে চলেছে৷