ফ্রি-ডাইভিং বা অ্যাপনিয়া ডাইভিং-এর অর্থ হল, অক্সিজেন ছাড়াই গভীর জলে ডুব দেওয়া৷ এতোক্ষণ অক্সিজেন ছাড়া তাদের মাথা ঠিকমতো কাজ করে কী করে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বন ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের গবেষকরা৷
বিজ্ঞাপন
অবলীলাক্রমে গভীর জলে ডুব দিতে পারেন এই অ্যাপনিয়া ডাইভার বা ফ্রি-ডাইভাররা, এবং তা অক্সিজেন ছাড়াই৷ একবার বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে এরা যে গভীরে ডুব দিতে পারেন, অন্যরা অক্সিজেনের বোতল নিয়ে আর মুখোশ পরেও তা করতে পারেন না৷ যেমনডরিস হোফারমান, যিনি ছ'মিনিট অবধি নিঃশ্বাস না নিয়ে, দম আটকে থাকতে পারেন৷ দম নেওয়ার বিশেষ পদ্ধতি ও বহু বছরের প্রশিক্ষণ তাঁকে এ কাজে সাহায্য করেছে৷
বন ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের ড. লার্স আইশহর্ন-এর মতো চিকিৎসকদের কাছে অ্যাপনিয়া ডাইভার বা ফ্রি-ডাইভারদের ডুব দেবার রেকর্ডগুলো একটা ধাঁধা৷ মানুষের শরীর এতোক্ষণ ধরে অক্সিজেন ছাড়া থাকতে পারে কি করে? বন ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল কলেজের ডক্টর আইশহর্ন ও তাঁর সতীর্থরা বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন৷
পানির নীচে এসব কাজও করা যায়!
ডাইভিং বা সাঁতার অথবা স্নোরকেলিং কি আর আপনার মনে কোনো রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে না? তাহলে পানির নীচে যেতে পারেন৷ রেস্তোরাঁ এবং জাদুঘরগুলো আপনার অপেক্ষায় আছে৷ দেখে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Jason deCaires Taylor - creator & photographer
বিভিন্ন ড্রামারের ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গ
ড্যানিশ ব্যান্ড ‘বিটুইন মিউজিক’ এমন সব বাদ্যযন্ত্র আবিষ্কার করেছে, যেগুলো আপনি পানির নীচে বাজাতে পারেন৷ এগুলোর মধ্যে আছে হাইড্রাউলোফোন, পানির নীচে বাজে এমন অর্গান, ক্রিস্টালোফোন, গ্লাস হারমোনিকা এবং বিশেষ ড্রাম৷ তাঁদের অ্যালবাম ‘অ্যাকোয়াসনিক’ রেকর্ড করা হয়েছে উষ্ণ পানির বিভিন্ন পুলে, যেখানে তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি৷ তাঁ@রা অবশ্য গান গাওয়ার জন্য বিশেষ কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে থাকেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J, Nackstrand
কোনো সাধারণ বাগান নয়
আপনার অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ কি প্রায়ই সেখানকার উদ্ভিদ খেয়ে ফেলে? তাহলে আপনি ‘অ্যাকোয়াস্কেপিং’ চেষ্টা করে দেখতে পারেন৷ এর মাধ্যমে আপনি পানির নীচে দারুণ সব দৃশ্য সৃষ্টি করতে পারেন৷ কেবল উদ্ভিদ ব্যবহার করেই নয়, পাথর, গাছের শেকড়, কাঠও ব্যবহার করতে পারেন আপনি৷
ছবি: DW
পানির তলদেশে খাওয়া
বেলজিয়ামের রেস্তোরাঁ ‘দ্য পার্ল’ ব্রাসেলসে অবস্থিত, যেটি বিশ্বের অন্যতম গভীর পুলে নির্মাণ করা হয়েছে৷ এর ভেতরে যেতে হলে অতিথিদের সাঁতারের পোশাক পরতে হবে এবং একটা ক্যাপসুলের ভেতর দিয়ে ৫ মিটার সাঁতরে যেতে হবে৷ আর মেন্যুতে কী থাকছে? অবশ্যই সামুদ্রিক খাবার! প্রতিটি খাবার ওয়াটারপ্রুফ কাঁচ দিয়ে প্যাক করা৷ প্রতি জনের খাবারের মূল্য মাত্র ১০০ ইউরো!
ছবি: DW
পানির তলদেশে শিল্পকর্ম
২০১৬ সালে ব্রিটিশ ভাস্কর জেসন ডি কেয়ার্স টেইলর তাঁর নতুন প্রকল্প চালু করেন ক্যানারিসের ল্যানসারোট উপকূলে৷ তাঁর ‘মুসিও আটলান্টিকো’ শিল্পকর্মটি পানির ১৪ মিটার গর্ভীরে তৈরি করেছেন তিনি, যেখানে ২০০টিরও বেশি ভাস্কর্য রয়েছে৷ পরিবেশবান্ধব পদার্থ ব্যবহার করেই ভাস্কর্যগুলো নির্মাণ করা হয়েছে৷ এর ফলে সমুদ্র তলদেশে প্রাণী বা উদ্ভিদের কোনো ক্ষতি হবে না৷
ছবি: Jason deCaires Taylor - creator & photographer
বুদবুদের মাধ্যমে বার্তা
বিয়ের বর-কনের অবশ্যই অতিথিদের একটা মজার তালিকা হতেই পারে: রঙিন মাছ, শৈবাল, স্টিং রে, এমনকি হাঙর পর্যন্ত৷ আপনি যদি ইউরোপে থাকেন, তাহলে কিন্তু এটা সম্ভব৷ এই মহাদেশজুড়ে এমন অনেক অ্যাকোয়ারিয়াম রয়েছে, যেখানে গিয়ে আপনি বিয়ের কাজটি সেরে ফেলতে পারেন৷ আর বিয়ের অঙ্গীকার, অর্থাৎ ‘আই ডু’ বলার সময় একটি বুদবুদের মাধ্যমে সেই বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার বার্তা পৌঁছে দিতে পারেন অন্য সবার কাছে৷
ছবি: MICHAEL KAPPELER/AFP/Getty Images
5 ছবি1 | 5
ফ্রি-ডাইভারদের বিশেষ ক্ষমতার দরুন তাদের নিয়ে গবেষণা করে লাভ আছে৷ বিভিন্ন পরীক্ষায় তাদের হাত-পা ও মস্তিষ্কে কী পরিমাণ অক্সিজেন আছে, তা মেপে দেখা হয় – যেমন ডরিস হোফারমান৷ তিনি জানালেন, ‘‘প্রাথমিক ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে যে, হাত-পায়ের চেয়ে মাথায় অনেক বেশিক্ষণ ধরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে৷ এখানে আমরা অক্সিজেনের অভাব পূরণের কোনো অজ্ঞাত পদ্ধতির হদিশ পাচ্ছি৷ আমরা জানতে চাই, মস্তিষ্কের ক্ষতি ছাড়াই মানুষ এতোক্ষণ ধরে দম না নিয়ে থাকতে পারে কি করে৷''
এমার্জেন্সিসার্ভিস?
দৃশ্যত মানবশরীরের একটা গোপন আপৎকালীন পরিকল্পনা রয়েছে: সংকটের মুহূর্তে যতক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাকে ধরে রাখার এক আপৎকালীন পরিকল্পনা৷
ফ্রি-ডাইভিং-এ আন্তর্জাতিক রেকর্ড হল ১১ মিনিটের বেশি৷ অপরদিকে সমুদ্রের গভীরে ডুব দেওয়ার ক্ষেত্রে ফ্রি-ডাইভারদের রেকর্ড হল ২০০ মিটারের বেশি৷ ফ্রি-ডাইভাররা তাদের ফুসফুসের প্রতিটি কোণ ভরে দম নিতে ও নাড়ির গতি অত্যন্ত কম রাখতে পারেন৷
পানির নীচে মানবশরীর একটি জটিল পদ্ধতিতে কাজ করে৷ বন-এর গবেষকরা সেই পদ্ধতি বুঝতে চান৷ এক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে, কেননা শরীরের এই অঙ্গটি সারা শরীরে রক্তচলাচল ও তার সঙ্গে অক্সিজেন প্রেরণের ব্যবস্থা করে৷ অ্যাপনিয়া ডাইভারের জীবন্ত হৃৎপিণ্ড দেখে চিকিৎসকরা যা জানতে ও বুঝতে পারছেন, তা হয়তো একদিন এমার্জেন্সি পেশেন্টদের কাজে আসবে৷ কেননা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রোগীর শরীরে অক্সিজেনের অভাব একটি সুপরিচিত সমস্যা৷
বরফজলে সাঁতার রাশিয়ায় অনেক দিনের প্রথা
তাপমাত্রা শূন্যের নীচে হওয়া সত্ত্বেও হাজার হাজার রুশি তাদের ‘আইস সুইমিং’ ক্লাবগুলিতে নিয়মিত বরফঠান্ডা জলে ঝাঁপ দেন৷ এর জন্য নাকি শুধু মানসিক প্রস্তুতি দরকার, বলেন তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Kryazhev
ঠান্ডার মজা
মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রাও সাইবেরিয়ার বরফ সাঁতারুদের ঠান্ডা করতে পারে না৷ বরফের উপর দিয়ে ছুটে তারা বরফ সাঁতারের মরশুমের সূচনা উদযাপন করেন৷
ছবি: Reuters/I. Naymushin
ছোটদের সাহস
দু’বছরের আলিসা আর তার সাত বছর বয়সের বোন লিজাকে ধীরে ধীরে বরফজলে স্নান করায় অভ্যস্ত হতে হবে৷ সাম্প্রতিক কয়েক বছরে রাজধানী মস্কোয় বরফ সাঁতারুদের সংখ্যা বেড়ে ৩০,০০০-এ দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: Reuters/I. Naymushin
বরফ ঠান্ডা জলে রিল্যাক্স করা!?!
নোভোসিবির্স্কের এই ভদ্রলোক যেন ঐ বরফ ঠান্ডা জলে একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন৷ নয়ত ঐ জলে নামলে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে, অথবা নিউমোনিয়া হবে৷ কিন্তু অনুরাগীদের মতে বরফ সাঁতারে নাকি শরীর তাজা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Kryazhev
সিন্ধুঘোটক
রুশ বরফ সাঁতারুরা নিজেদের বলেন ‘মর্ঝি’ বা সিন্ধুঘোটক৷ ‘সিন্ধুঘোটক ক্লাবের’ সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে একবার করে বরফ ঠান্ডা পানিতে ঝাঁপ খান – কোনোরকম ডাইভিং সুট কিংবা অন্য কোনো ধরনের সুরক্ষা ছাড়া, শুধুমাত্র গ্রীষ্মের সুইমসুট পরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Kryazhev
‘যেন হাজারটা সুচ ফুটছে’
নোভোসিবির্স্কে বরফ সাঁতারুরা একটি জলের ট্যাংকে নামছেন৷ এক মহিলার ভাষায়: ‘‘যেন একসঙ্গে এক হাজারটা সুচ ফুটল!’’
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Kryazhev
খ্রিষ্টীয় এপিফানি পরব
রাশিয়ায় বরফ সাঁতারের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংস্করণটি হলো তথাকথিত বরফে ব্যাপটিজম: পুরু বরফে ক্রুশের আকারের গর্ত খোঁড়া হয়৷ রাশিয়ার সনাতনপন্থি খ্রিষ্টানরা এপিফানি পরব পালন করেন ১৯শে জানুয়ারি তারিখে৷ প্রথায় বলে, এদিন নাকি পানি পবিত্র হয়ে যায় ও সব পাপ ধুয়ে দিতে পারে৷
ছবি: Reuters
সোভিয়েত আমলের পরের প্রথা
১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লবের আগে রাশিয়ার খুব কম মানুষই বরফে সাঁতার কাটতেন৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কিন্তু বরফ সাঁতার খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ প্রসঙ্গত, কমিউনিস্ট শাসনের অন্তের পর রাশিয়ায় ধর্মীয় অনুভূতিও জোরদার হয়েছে – যদিও সনাতনপন্থি গির্জা সরকারিভাবে বরফ সাঁতার অনুমোদন করেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Kryazhev
বিপজ্জনক সখ
অভিজ্ঞ ‘সিন্ধুঘোটক’ না হলে, বরফ সাঁতার সাধারণ মানুষের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে৷ পানিতে শরীরের তাপমাত্রা কমে বাতাসের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি তাড়াতাড়ি৷ কাজেই তিন মিনিটের বেশি সময় বরফ ঠান্ডা জলে কাটালে জ্ঞান হারানোর ভয় আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Kryazhev
8 ছবি1 | 8
ড. আইশহর্ন বললেন, ‘‘স্বভাবতই সাধারণ রোগীদের নিয়ে এ ধরনের পরীক্ষা চালানো যায় না৷ ফ্রি-ডাইভারদের নিয়ে পরীক্ষা করে আমরা দেখতে পারি, চরম পরিস্থিতিতে মানুষের শরীর কীভাবে কম অক্সিজেন সত্ত্বেও কাজ চালিয়ে নিতে পারে৷ আমরা দেখি, একটি সুস্থ মানুষের শরীর কীভাবে অক্সিজেনের অভাব পুষিয়ে নেয় – তা থেকে হয়তো আমরা ভবিষ্যতে রোগীদের আরো ভালোমতো সাহায্য করতে পারব৷''